সুওয়াল-১৯মসজিদ স্থানান্তর করার স্বপক্ষে কেউ কেউ বলে থাকে যে, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে কূফার দায়িত্বশীল ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু। একদা মসজিদ হতে বাইতুল মাল চুরি হয়ে গেলে সে ঘটনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে জানানো হয়। তিনি মসজিদ স্থানান্তর করার নির্দেশ দেন। ফলে মসজিদ স্থানান্তরিত করা হয় এবং পূর্বের স্থান খেজুর বিক্রির বাজারে পরিণত হয়। আর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, তোমাদের উপর অপরিহার্য হলো, আমার সুন্নত ও আমার খুলাফায়ে রাশিদীন উনাদের সুন্নতকে আকড়ে ধরা। অতএব, একান্ত প্রয়োজনে মসজিদ স্থানান্তর করা যায়। তারা দলীল হিসেবে যে কিতাব সমূহের নাম উল্লেখ করেছে তা হচ্ছে ১. ফতওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়াহ ৩১ খ-, ২১৭ পৃষ্ঠা, ইমাম তবারানী আল মু’জামুল কবীর, হা/৮৮৫৪, ২. আবূ দাউদ হা/৪৬০৭, তিরমিযী হা/২৬৭৬, মিশকাত হা/১৬৫।তাদের উক্ত বক্তব্য ও দলীল কতটুকু ঠিক? জাওয়াব দিয়ে বিভ্রান্তি দূর করার আরজি জানাচ্ছি।

সুওয়াল-১৯মসজিদ স্থানান্তর করার স্বপক্ষে কেউ কেউ বলে থাকে যে, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে কূফার দায়িত্বশীল ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু। একদা মসজিদ হতে বাইতুল মাল চুরি হয়ে গেলে সে ঘটনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে জানানো হয়। তিনি মসজিদ স্থানান্তর করার নির্দেশ দেন। ফলে মসজিদ স্থানান্তরিত করা হয় এবং পূর্বের স্থান খেজুর বিক্রির বাজারে পরিণত হয়। আর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, তোমাদের উপর অপরিহার্য হলো, আমার সুন্নত ও আমার খুলাফায়ে রাশিদীন উনাদের সুন্নতকে আকড়ে ধরা। অতএব, একান্ত প্রয়োজনে মসজিদ স্থানান্তর করা যায়। তারা দলীল হিসেবে যে কিতাব সমূহের নাম উল্লেখ করেছে তা হচ্ছে ১. ফতওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়াহ ৩১ খ-, ২১৭ পৃষ্ঠা, ইমাম তবারানী আল মু’জামুল কবীর, হা/৮৮৫৪, ২. আবূ দাউদ হা/৪৬০৭, তিরমিযী হা/২৬৭৬, মিশকাত হা/১৬৫।তাদের উক্ত বক্তব্য ও দলীল কতটুকু ঠিক? জাওয়াব দিয়ে বিভ্রান্তি দূর করার আরজি জানাচ্ছি।


জাওয়াব: মসজিদ স্থানান্তর করার বিষয়ে তাদের উক্ত বক্তব্য ও দলীল মোটেও সঠিক হয়নি। বরং তা সম্পূর্ণ মনগড়া, মিথ্যা, জালিয়াতিপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর, গোমরাহীমূলক, হারাম ও কুফরী হয়েছে।
তারা মসজিদ স্থানান্তর করার বিষয়ে ফতওয়ায়ে ইবনে তায়মিয়াহ ও আল মু’জামুল কাবীর লিত তবারানী কিতাব দু’টির দলীল দিয়েছে।
আর হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুন্নত আঁকড়ে ধরা অপরিহার্য সে বিষয়ে দলীল দিয়েছে আবূ দাউদ, তিরমিযী ও মিশকাত শরীফ কিতাব তিনটির। কিন্তু তারা দলীল হিসেবে ৫টি কিতাবের নাম একসাথে উল্লেখ করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। কারণ সাধারণ মানুষ মনে করবে, মসজিদ স্থানান্তর করার বিষয়ে হয়তো উক্ত ৫টি কিতাবেই উল্লেখ রয়েছে। অথচ শুধুমাত্র ইবনে তাইমিয়ার কিতাবটি ব্যতীত আর বাকী ৪টি কিতাবের কোন কিতাবেই মসজিদ স্থানান্তর করার বিষয়টি উল্লেখ নেই।
কিন্তু সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের অনুসারীদের নিকট এবং বিশেষ করে সম্মানিত হানাফী মাযহাবের অনুসারীদেরও নিকট ইবনে তাইমিয়ার ফতওয়া আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ইবনে তায়মিয়াহ বাতিল ৭২ ফিরক্বার অন্যতম মুশাব্বিহা ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত। তার বহু আক্বীদা ও আমলে কুফরী রয়েছে।

যেমন- সে তার সমসাময়িক আলিম-উলামাদেরকে গালি-গালাজ করতো। নাঊযুবিল্লাহ! ছোট-বড়, প্রবীন ও নবীন সকল আলিম-উলামাদের বিরোধিতা করতো। নাঊযুবিল্লাহ! এমনকি সে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সমালোচনাকালে উনাকে কোন এক বিষয়ে ভ্রান্ত বলে উল্লেখ করে। নাঊযুবিল্লাহ!
শুধু তাই নয়, সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কেও বলে যে, তিনি ১৭টি মাসয়ালায় ভুল করেছেন এবং পবিত্র কুরআন শরীফ উনার খিলাফ করেছেন। নাউযুবিল্লাহ!

সে একবার জুমুয়ার দিন বলে যে, আমি যেরূপ (মিম্বরের উপরিস্থ তাক থেকে নি¤œ তাকে) নামছি, সেরূপ মহান আল্লাহ পাক তিনিও (আরশ হতে) প্রথম আকাশে নেমে থাকেন। নাঊযুবিল্লাহ!
পূর্ববর্তী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম ও আলিমগণ এমনকি তার সমসাময়িক আলিমগণ সম্পর্কেও সে বদ ধারণা পোষণ করতো। নাঊযুবিল্লাহ!

তার আরো বক্তব্য হচ্ছে, রাত্রিতে অপবিত্র অর্থাৎ গোসল ফরজ হলে গোসল ব্যতীত তাহাজ্জুদ পড়ে নিবে, নাঊযুবিল্লাহ! কুরআন শরীফ মাখলুক্ব, নাঊযুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও আকৃতি আছে, নাঊযুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি আরশে থাকেন, নাঊযুবিল্লাহ! তিনি আরশের পরিমাণ আয়তন বিশিষ্ট, নাঊযুবিল্লাহ! তিনি আকাশ হতে নেমে আসেন, নাঊযুবিল্লাহ! নবীগণ নিষ্পাপ নন, নাঊযুবিল্লাহ! রওজা শরীফ যিয়ারতের নিয়তে সফর করা হারাম, নাঊযুবিল্লাহ! এবং তাওরাত শরীফ ও ইনজীল শরীফ-এর শব্দ পরিবর্তন হয় নাই।” নাঊযুবিল্লাহ! অনুরূপ আরো বহু শরীয়ত বিরোধী আক্বীদা-আমল রয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! (দলীলসমূহ: আদ্-দুরারুল কামিনাহ, রিহ্লাতু ইবনে বতুতা, লিসানুল মীযান, শরহে মাওয়াহিব লিয যারকানী, তুহফাতুন নাজার, ফতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ, আল-জাওহারুল মুনায্যাম, তবাকাতুল কুবরা ইত্যাদি)
উক্তসব কুফরী আক্বীদা ও আমলের কারণে তার সমসাময়িক অনুসরণীয় হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ ইবনে তাইমিয়াকে হত্যা অথবা কারারুদ্ধ করার জন্য বাদশাহকে বাধ্য করেন। বাদশাহ তাকে বন্দী করেন এবং সে কারারুদ্ধ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।
আর তারা যে ‘আল মু’জামুল কাবীর লিত তবারানী’ কিতাবের হাদীছ শরীফখানার কথা বলেছে তাতে তারা চরম মিথ্যা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! তাদের সেই চরম মিথ্যা, জালিয়াতি ও বিভ্রন্তি থেকে মুসলমানদের হিফাজতের লক্ষ্যে উল্লেখিত হাদীছ শরীফখানা মূল কিতাব হতে উল্লেখ করা হলো-
عَنْ حَضْرَتِ الْقَاسِمِ رَحـْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ قَدِمَ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ وَقَدْ بَنٰى حَضْرَتْ سَعْدٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ الْقَصْرَ وَاتَّـخَذَ مَسْجِدًا فِـيْ أَصْحَابِ التَّمْرِ فَكَانَ يَـخْرُجُ إِلَيْهِ فِـي الصَّلَوَاتِ فَلَمَّا وَلـِيَ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ بَيْتَ الْمَالِ نَقَبَ بَيْتَ الْمَالِ فَأَخَذَ الرَّجُلَ فَكَتَبَ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ إِلٰـى حَضْرَتْ عُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَكَتَبَ حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ أَنْ لَّا تَقْطَعْهُ وَانْقُلِ الْمَسْجِدَ وَاجْعَلْ بَيْتَ الْمَالِ مِـمَّا يَلِى الْقِبْلَةَ فَإِنَّهٗ لَا يَزَالُ فِـي الْمَسْجِدِ مَنْ يُّصَلِّيْ فَنَقَلَهٗ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ وَخَطَّ هَذِهِ الْخُطَّةَ وَكَانَ الْقَصْرُ الَّذِيْ بَنٰى حَضْرَتْ سَعْدٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ شَاذَرَ وَاِنْ كَانَ الْإِمَامُ يَقُوْمُ عَلَيْهِ فَأَمَرَ بِه حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ فَنُقِضَ حَتَّى اسْتَوٰى مَقَامُ الْإِمَامِ مَعَ النَّاسِ.
অর্থ: “হযরত ক্বাসিম ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি কূফায় আগমন করেন। সেখানে হযরত সা’দ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি একটি ভবন নির্মাণ করেছেন। আর (উক্ত ভবনের একটা অংশে) তিনি খেজুর মালিকদের জন্য নামাযের স্থান নির্ধারণ করেছেন। তিনি সেখানে নামায আদায়ের জন্য তাশরীফ নিতেন। অতঃপর যখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি ‘বাইতুল মালের’ দায়িত্বশীল হলেন, তখন কোনো এক লোক বাইতুল মালে সিঁধ কেটে প্রবেশ করলো। তিনি লোকটিকে ধরলেন।

অতঃপর এই বিষয়টি জানিয়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট চিঠি লিখলেন। উক্ত চিঠির জবাবে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি চিঠি লিখে পাঠালেন যে, আপনি তার হাত কাটবেন না। বরং আপনি নামাযের স্থানটি (একটু পেছনে) সরিয়ে নেন। আর ‘বাইতুল মাল’ সামনের দিকে ক্বিবলা বরাবর নির্ধারণ করুন। কেননা, নামায আদায়ের স্থানে (সাধারণতঃ) মুছল্লীগণ সবসময় অবস্থান করবেন (তখন বাইতুল মাল সামনে থাকায় কোনো ক্ষতি হবে না)। অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি উক্ত নামায আদায়ের স্থানটি সরিয়ে নিলেন (আর বাইতুল মালকে ক্বিবলার দিকে রাখলেন) এবং তিনি উক্ত স্থানটির সীমানা চিহ্নিত করার জন্য দাগ দিলেন। হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি যে ভবনটি নির্মাণ করেছেন তা প্রশস্ত ছিলো। অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার নির্দেশ মুবারকে ইমাম দাঁড়ানোর স্থানকে ভেঙ্গে ফেলা হয়, এমনকি ইমামের স্থান মুক্তাদির স্থানে স্থির করা হয়। (আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ৯/১৯২, মাজমাউয যাওয়াইদ লিল হাইছামী ৬/২৭৫)
উক্ত হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা দ্বারা প্রতিভাত যে,
(এক) হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র নামায ঘরের স্থানকে সরানোর জন্য বলেছেন, তাই উনার নির্দেশ অনুযায়ী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি শুধুমাত্র ইমামের দাঁড়ানোর স্থানটিকে ভেঙ্গে সেখানে বাইতুল মাল স্থাপন করেন। ফলে ইমামের দাঁড়ানোর স্থান মুক্তাদির কাতারে স্থিরকৃত হয়।

(দুই) বাইতুল মাল থেকে মাল চুরি হয়নি। বরং চুরির জন্য বাইতুল মালে কেবল প্রবেশ করেছিল। তাই ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত ব্যক্তির হাত কাটতে নিষেধ করেছিলেন।
(তিন) নামায ঘরে শুধুমাত্র ইমামের দাঁড়ানোর স্থানটি ভেঙ্গে সেখানে বাইতুল মাল নির্ধারণ করা হয়। ফলে সেখানে খেজুর বিক্রির বাজার হওয়ার কোনো সুযোগই নেই।

অতএব, ক্বিল্লতে ইলম-ক্বিল্লতে ফাহম তথা কম ইলম ও কম বুঝের কারণে কতক মূর্খ, গুমরাহ, লা-মাযহাবী, নীম মোল্লা শ্রেণীর লোক পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার সঠিক মর্মার্থ উদঘাটন করতে অক্ষম হয়ে মিথ্যা, মনগড়া ও ভুল অর্থ করে সাধারণ মুসলমান উনাদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। কেননা উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার মধ্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে-
وَقَدْ بَنٰى حَضْرَتْ سَعْدٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ الْقَصْرَ وَاتَّـخَذَ مَسْجِدًا فِـيْ أَصْحَابِ التَّمْرِ.
অর্থ: “হযরত সা’দ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি একটি ভবন নির্মাণ করেছেন। আর তিনি (উক্ত ভবনের একটা অংশে) খেজুর মালিকদের জন্য নামাযের স্থান নির্ধারণ করেছেন।”
কিন্তু এখানে বলা হয়নি যে, তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মাণ করেছেন।

প্রকৃতপক্ষে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফে مَسْجِدًا (মসজিদ) শব্দ মুবারক দ্বারা মূলতঃ নামায পড়ার ঘর বা স্থানকে বুঝানো হয়েছে। শরয়ী কোন মসজিদকে নয়।

স্মরণীয় যে, مَسْجِد (মসজিদ) শব্দ উল্লেখ থাকলেই যে, মসজিদ বা জামে মসজিদকে বুঝাবে, বিষয়টি এমন নয়। বরং مَسْجِد (মসজিদ) শব্দ মুবারক দ্বারা নামাযের সময়কেও বুঝানো হয়ে থাকে আবার নামাযের সাধারণ স্থানকেও বুঝানো হয়ে থাকে। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ উনার ২৯ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَأَقِيْمُوْا وُجُوْهَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ
অর্থ: আর তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় স্বীয় মুখমন্ডল সোজা রাখ অর্থাৎ সোজা ক্বিবলার দিকে রাখতে যতœবান হও।
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে ইবনে আব্বাস’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-
{عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ} عِنْدَ كُلِّ صَلَاةٍ
অর্থাৎ “...প্রত্যেক নামাযের সময়।”
অনুরূপ উক্ত পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ উনার ৩১ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
يَا بَنِـيْۤ اٰدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ
অর্থ: হে বনী আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় উত্তম পোশাক তথা তাক্বওয়ার পোশাক বা সুন্নতী পোশাক পরিধান করে নাও।
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে مَسْجِد (মসজিদ) শব্দ মুবারক দ্বারা নামাযের সময়কে বুঝানো হয়েছে।
একইভাবে مَسْجِد (মসজিদ) শব্দ মুবারক দ্বারা নামাযের সাধারণ স্থানকে বুঝানো হয়েছে। সে সম্পর্কে একাধিক বর্ণনা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
جُعِلَتْ لـِىَ الْاَرْضُ مَسْجِدًا وَّطَهُوْرًا
অর্থ: “আমার জন্য সমস্ত যমীনকে পবিত্র ও নামাযের স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
خَيْـرُ مَسَاجِدِ النِّسَآءِ قَعْرُ بُيُوْتِـهِنَّ
অর্থ: “মহিলাদের জন্য নামাযের শ্রেষ্ঠ স্থান হচ্ছে তাদের ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠ।” (মুসতাদরাকে হাকিম)
উক্ত হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ইমাম ত্ববারানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
خَيْـرُ صَلَاةِ النِّسَآءِ فـِيْ قَعْرِ بُيُوْتِـهِنَّ
অর্থ: “মহিলাদের ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠের নামাযই শ্রেষ্ঠ নামায।” (ত্ববারানী শরীফ)
উল্লেখিত হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে যথাক্রমে مَسْجِدًا ও مَسَاجِد শব্দ মুবারক দ্বারা আমভাবে মসজিদ বা জামে মসজিদ কোনটাই বুঝানো হয়নি। বরং নামাযের সাধারণ স্থানকে বুঝানো হয়েছে।
তাহলে কি মূর্খ, গুমরাহ, লা-মাযহাবী ও নীম মোল্লা শ্রেণীর লোকেরা মহিলাদের প্রত্যেকটি ঘরকে মসজিদ বা জামে মসজিদ বলবে? নাকি সমস্ত যমীনকে বলবে?
মূলতঃ উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে মহিলাদের প্রত্যেকটি ঘর এবং সমস্ত যমীনকে মসজিদ বা জামে মসজিদ কোনটিই বুঝানো হয়নি। এ বিষয়টিই মূর্খ, গুমরাহ, লা-মাযহাবী, নীম মোল্লাদের জানা নেই। তাই এদের ব্যাপারে কিতাবে লিখা হয়-
نیم حکیم خطر جان+ نیم ملا خطر ایمان
“নীম হেকীম খত্বরে জান, নীম মোল্লা খত্বরে ঈমান।”
অর্থ: “আধা ডাক্তাররা জীবন নাশের কারণ, আধা মোল্লারা ঈমান ধ্বংসের কারণ।”

অপরদিকে বলতে হয় যে, সুওয়ালে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখিত নামাযের স্থানকে যদি মসজিদ বা জামে মসজিদ-ই বুঝানো হতো তবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ইবারতে وَقَدْ بَنٰى... الْقَصْرَ (তিনি ভবন বানালেন) এর স্থলে وَقَدْ بَنٰى... مَسْجِدًا (তিনি মসজিদ বানালেন) উল্লেখ থাকতো। মূলতঃ হযরত সা’দ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি উনার প্রয়োজনে একটি ভবন নির্মাণ করেছিলেন এবং উক্ত ভবনের কোনো একটি কক্ষের একটি অংশকে সেখানে আগমনকারী লোকদের সুবিধার্থে নামাযের স্থান হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। পরবর্তীতে বাইতুল মাল চুরি হওয়ার আশংকায় ইমামের দাঁড়ানোর স্থানকে কিছুটা পেছনে নিয়ে বাইতুল মালকে ক্বিবলার দিকে মুছল্লীদের সামনে রাখা হয় যেন তা চুরি না হয়। যেহেতু নামাযের উক্ত স্থানটি কোনো মসজিদ ছিলো না সেহেতু তা আগে-পিছে করা বা পরিবর্তন করা স্বাভাবিকই ছিলো।
কিন্তু এই পবিত্র হাদীছ শরীফকে মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তর বৈধ হওয়ার দলীল হিসেবে ব্যবহার করা কোনোভাবেই জায়িয হবে না। বরং হারাম-নাজায়িয ও কাট্টা কুফরী হবে। কেননা নামায পড়ার সাধারণ স্থান ও শরয়ী মসজিদ একই বিষয় নয়। নামায পড়ার সাধারণ স্থানকে প্রয়োজনে সরানো বা স্থানান্তরিত করা যায়, কিন্তু মসজিদের জন্য বরাদ্দকৃত স্থানকে কোনোভাবেই ভাঙ্গা বা স্থানান্তরিত করা জায়িয নেই। এটাই হচ্ছে মহাসম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার সর্বস্বীকৃত মত বা ফতওয়া।

সুতরাং মেট্রো রেলের নামে হোক, নদী রক্ষার নামে হোক, রাস্তা সম্প্রসারণের নামে হোক, উন্নয়ন কর্মসূচীর নামে হোক বা যেকোনো অজুহাতেই হোক মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তর করা কস্মিনকালেও শরীয়তসম্মত নয়; বরং তা সুস্পষ্ট হারাম ও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত এবং জাহান্নামী হওয়ার কারণ। নাঊযুবিল্লাহ!

{দলীলসমূহঃ (১) তবারানী শরীফ (২) বায়হাক্বী শরীফ (৩) মাজমাউয যাওয়ায়িদ (৪) জামিউল কাবীর (৫) জামিউছ ছগীর (৬) ফতহুল বারী (৭) ইরশাদুল ক্বারী (৮) মুসতাদরাকে হাকিম (৯) ফতহুল কাবীর (১০) ইবনে খুযাইমাহ (১১) মাওসূআতুল ফিক¡িহয়্যাহ (১২) মুসনাদে আযহারী (১৩) মিরআতুল মাফাতীহ (১৪) মুসলিম শরীফ (১৫) মিশকাত শরীফ (১৬) মিরকাত শরীফ (১৭) ফতহুল মুলহিম (১৮) কান্যুল উম্মাল (১৯) আল্-ফিরদাউস (২০) জামিউল আহাদীছ (২১) নাইলুল আওতার (২২) তারগীব-তারহীব (২৩) মুসনাদে শিহাব (২৪) আবূ ইয়া’লা (২৫) তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিল্ জাসসাস (২৬) তাফসীরে কুরতুবী (২৭) তাফসীরে তাবারী (২৮) তাফসীরে বায়দ্ববী (২৯) তাফসীরে রুহুল মা‘য়ানী (৩০) তাফসীরে রুহুল বায়ান (৩১) তাফসীরে ইবনে কাছীর (৩২) তাফসীরে দুররে মানছূর (৩৩) তাফসীরে জালালাইন (৩৪) তাফসীরে কামালাইন (৩৫) তাফসীরে মাযহারী (৩৬) তাফসীরে কবীর (৩৭) ফতওয়ায়ে শামী (৩৮) দূরারুল হুক্কাম (৩৯) দূররুল মুখতার (৪০) বাহ্রুর রায়িক (৪১) ফতওয়ায়ে আলমগীরী (৪২) মাজমুয়ায়ে ফতওয়া-আব্দুল হাই লখনৌবী (৪৩) ফতওয়ায়ে দারুল ইফতাহ্্ মিছর, (৪৪) ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, (৪৫) ইমদাদুল ফতওয়া (৪৬) লুগাতুল কুরআন (৪৭) লুগাতুল আহাদীছ (৪৮) লিসানুল আরব (৪৯) মিছবাহুল লুগাত (৫০) আল-মুনজিদ ইত্যাদি}

সুওয়াল-১৮একাধিক ছোট ছোট আকারের মসজিদ উনার জমি সরকারী/বেসরকারী কাজে ব্যবহার করে তার বদলে অন্যত্র একটি বড় মসজিদ নির্মাণ করল, সেটা কি বৈধ হবে?

সুওয়াল-১৮একাধিক ছোট ছোট আকারের মসজিদ উনার জমি সরকারী/বেসরকারী কাজে ব্যবহার করে তার বদলে অন্যত্র একটি বড় মসজিদ নির্মাণ করল, সেটা কি বৈধ হবে?


জাওয়াব: যা মসজিদ হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে তা ছোট হোক, মাঝারি হোক কিংবা বড় হোক কোনটাই ভাঙ্গা যাবে না। যে স্থান মসজিদ হিসেবে নির্ধারিত তা ক্বিয়ামত পর্যন্ত মসজিদ হিসেবেই বহাল থাকবে। উক্ত স্থান সরকারী/বেসরকারী কোন কাজেই ব্যবহার করা যাবে না। ব্যবহার করলে হারাম ও কুফরী হবে।
মসজিদ বড় বানাতে হবে এমন আদেশ শরীয়তে নেই। বরং অবস্থাভেদে মসজিদ ছোট, বড়, মাঝারি সবধরণের হতে পারে। এটাই সম্মানিত শরীয়ত উনার বিধান। এক স্থানের ছোট মসজিদ ভেঙ্গে অন্য স্থানে বড় মসজিদ বানানো, এটা সম্মানিত শরীয়তে সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয, হারাম এবং কুফরী। এ কুফরী থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক ঈমানদারের জন্যেই ফরয।
দলীলসমূহ: তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে আহমদী, তাফসীরে খাযিন, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, ক্বাযীখান, আইনুল হিদায়া ইত্যাদি।

সুওয়াল-১৭সরকারী কাজে যদি অন্য উপায় না থাকে, তবে বিকল্প মসজিদ বানিয়ে দেয়ার শর্তে মসজিদ ভাঙ্গা যায়। এই কথা কতটুকু শরীয়ত সম্মত?

সুওয়াল-১৭সরকারী কাজে যদি অন্য উপায় না থাকে, তবে বিকল্প মসজিদ বানিয়ে দেয়ার শর্তে মসজিদ ভাঙ্গা যায়। এই কথা কতটুকু শরীয়ত সম্মত?


জাওয়াব: উক্ত কথা মোটেও শরীয়ত সম্মত নয়। বরং সম্পূর্ণরূপে সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ।
কাজেই, সরকারী কাজে হোক অথবা বেসরকারী কাজে হোক, অন্য কোন উপায় থাকুক বা না থাকুক বিকল্প মসজিদ বানিয়ে দেয়ার শর্তে কোন মসজিদ ভাঙ্গা যাবে না। কারণ শরয়ী মসজিদ যেখানে হয়েছে বা রয়েছে উক্ত স্থানের হুকুম মসজিদের হুকুম হিসেবেই কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
অতএব, বিকল্প যত মসজিদই বানানো হোক তার পরিবর্তে কোন মসজিদই ভাঙ্গা জায়িয হবে না। তা সরকারী প্রয়োজনে হোক অথবা অন্য প্রয়োজনে হোক।
মূলতঃ মসজিদ ভাঙ্গার চিন্তা কিংবা কোন অজুহাত পেশ করা সবই কুফরী এবং ঈমান নষ্টের কারণ।
দলীলসমূহ: তাফসীরে আহমদী, তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে নীসাপূরী, মাজমাউয যাওয়াদ, জামিউল আহাদীছ, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ফতওয়ায়ে মজমুয়া ইত্যাদি।

সুওয়াল-১৫অনেক এলাকায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তরের জন্য বছরের পর বছর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মধ্যে সম্মানিত ছলাত আদায় করা বন্ধ আছে, সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে এর ফায়সালা কি?

সুওয়াল-১৫অনেক এলাকায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তরের জন্য বছরের পর বছর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মধ্যে সম্মানিত ছলাত আদায় করা বন্ধ আছে, সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে এর ফায়সালা কি?


জাওয়াব: সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তর করা জায়েয নেই। অর্থাৎ দুনিয়াবী কোনো উদ্দেশ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তর করা সম্পূর্ণরূপে হারাম-নাজায়েয এবং কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। যদি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার কোনো কারণে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তরিত করতে হয়, তাহলে পূর্বে যেই জায়গায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ছিলো, সে জায়গায় দুনিয়াবী কোনো ফায়দা হাছিলের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা জায়েয নেই; বরং কাট্টা হারাম ও কুফরী। উল্লেখ্য, উক্ত জায়গায় গাছ-গাছালী লাগিয়ে রাখতে পারে তা থেকে যা আয় হবে সেই অর্থ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার কাজে খরচ করতে হবে। তাছাড়া মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার স্থানে অন্য কোনো কিছু করা জায়েয নেই। আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তরের নামে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক বন্ধ রেখে সম্মানিত মুসলমান উনাদেরকে সম্মানিত ছলাত আদায় করা থেকে বিরত রাখা সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে কাট্টা হারাম-নাজায়েয এবং কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। না‘ঊযুবিল্লাহ!
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَمَنْ اَظْلَمُ مِـمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ وَسَعٰى فِـىْ خَرَابِـهَا اُولٰٓئِكَ مَا كَانَ لَـهُمْ اَنْ يَّدْخُلُوْهَا اِلَّا خَآئِفِيْـنَ لَـهُمْ فِـى الدُّنْيَا خِزْىٌ وَّلَـهُمْ فِـى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ.
অর্থ: “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে? যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় ইস্ম বা নাম মুবারক উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় বা বিরান করতে চেষ্টা করে। (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না, ভেঙ্গে ফেলে অর্থাৎ যথাযথ তা’যীম-তাকরীম করে না,) তাদের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় অর্থাৎ খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করা ব্যতীত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে প্রবেশ করা জায়িয নেই। তাদের জন্য রয়েছে ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪)
এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে আহমদী” উনার ৫৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
اِنَّ هٰذِهِ الْاٰيَةَ تَدُلُّ عَلٰى اَنَّ هَدْمَ الْـمَسَاجِدِ وَتَـخْـرِيْبَهَا مَـمْنُوْعٌ وَكَذَا الْـمَنْعُ عَنِ الصَّلٰوةِ وَالْعِبَادَةِ وَاِنْ كَانَ مَـمْلُوْكًا لِّلْمَانِعِ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ তথা হারাম। অনুরূপভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ সম্মানিত ছলাত আদায় এবং ইবাদত করতে নিষেধ করাও হারাম, যদিও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকটি নিষেধকারীর অধীনে থাকে।” (তাফসীরে আহমদী ৫৫৬ নং পৃষ্ঠা)
‘দুরারুল হুক্কাম’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,
قَالَ حَضْرَتْ اَبُوْ يُوْسُفَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ هُوَ مَسْجِدٌ اَبَدًا اِلـٰى قِيَامِ السَّاعَةِ لَا يَعُوْدُ مِيْرَاثًا وَلَا يَـجُوْزُ نَقْلُهٗ وَنَقْلُ مَالِهٖ اِلـٰى مَسْجِدٍ اٰخَرَ سَوَاءٌ كَانُوْا يُصَلُّوْنَ فِيْهِ اَوْ لَا وَهُوَ الْفَتْوٰى.
অর্থ: “হযরত ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ক্বিয়ামত পর্যন্ত আবাদুল আবাদ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক হিসেবেই থাকবেন, কোনো উত্তরাধিকারীর অধিকারভুক্ত হবে না। আর উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তর করা এবং উনার সম্পত্তি অন্য কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ স্থানান্তর করাও জায়িয হবে না, লোকজন সেখানে নামায পড়ুক অথবা না পড়–ক। এটাই হচ্ছে ফতওয়া।” সুবহানাল্লাহ! (দুরারুল হুক্কাম ২/১৩৫)
বিশ্বখ্যাত ফিক্বহের কিতাবসমূহে বর্ণিত রয়েছে,
وَاِذَا بَنٰـى مَسْجِدًا لَـمْ يَزُلْ مِلْكُهٗ عَنْهُ حَتّٰـى يَفْرِزَهٗ عَنْ مِلْكِهٖ بِطَرِيْقِهٖ وَيَاْذَنَ لِلنَّاسِ بِالصَّلٰوةِ فِيْهِ فَاِذَا صَلّٰى فِيْهِ وَاحِدٌ زَالَ عِنْدَ اَبِـىْ حَنِيْفَةَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ مِلْكِهٖ)
অর্থ: “যদি কেউ কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করে, তবে ততক্ষণ পর্যন্ত উনার মালিকানা দূরিভূত হবে না, যতক্ষন পর্যন্ত সে উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক রাস্তাসহ তার মালিকানা থেকে পৃথক করে লোকদেরকে উনার মধ্যে ছলাত বা নামায পড়ার অনুমতি না দিবে। অত:পর যখন উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ একজন মুছল্লীও ছলাত বা নামায পড়বে, তখন ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে তার মালিকানা দূর হয়ে যাবে।” (হেদায়াহ্ ৩/২০, বিদায়াহ্ ১/১২৯, ইনায়াহ্ ৬/২৩৩, বিনায়াহ্ ৭/৪৫৩, লিসানুল হুক্কাম ১/২৯৫, আল লুবাব ফী শরহিল কিতাব ২/১৮৬)
আরো বর্ণিত রয়েছে,
وَقَالَ اَبُوْ يُوْسُفَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ يَزُوْلُ مِلْكُهٗ بِقَوْلِهٖ جَعَلْتُهٗ مَسْجِدًا.
অর্থ: “আর ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তার এ কথার দ্বারা মালিকানা দূর হয়ে যাবে যে, আমি উনাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক বানিয়েছি।” (হেদায়াহ্ ৩/২০, বিদায়াহ্ ১/১২৯, ইনায়াহ্ ৬/২৩৩, তাবঈনুল হাক্বাইক্ব ৩/৩৩০, আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ্ ১/৩৩৭, বিনায়াহ্ ৭/৪৫৪, লিসানুল হুক্কাম ১/২৯৫, আল বাহ্রুর রাইক্ব ৫/২৬৮ ইত্যাদি)
‘ফতওয়ায়ে আলমগীরী’ কিতাবের ২য় খ- ৩৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
اَمَّا حُكْمُهٗ فَعِنْدَهُـمَا زَوَالُ الْـعَيْـنِ عَنْ مِلْكِهٖ اِلَـى اللهِ تَعَالـٰى.
অর্থ: “হযরত ছাহেবাইন রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের নিকট ওয়াক্ফের হুকুম হলো এই যে, ওয়াক্ফকৃত সম্পদের স্বত্ত্ব বা মালিকানা ওয়াক্ফকারীর অধিকারমুক্ত হয়ে তা মহান আল্লাহ পাক উনার হাক্বীক্বী মালিকানায় চলে যায় অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি মালিক হয়ে যান।”
‘শারহু যাদিল মুস্তাক্বনি’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
اَلشَّخْصُ اِذَا اَوْقَفَ مَسْجِدًا خَرَجَ مِنْ مِلْكِهٖ حَتّٰـى صَاحِبُ الْاَرْضِ لَا يَسْتَطِيْعُ اَنْ يَّتَصَرَّفَ فِيْهِ لِاَنَّهٗ خَرَجَ مِنْ مِلْكِيَّتِهٖ لِلّٰهِ{وَاَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلّٰهِ} فَالْـمَسْجِدُ اِذَا اَوْقَفَ خَرَجَ عَنْ مِلْكِيَّةِ صَاحِبِهٖ.
অর্থ: “কোনো ব্যক্তি যখন কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ওয়াক্বফ করে, তখন উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক তার মালিকানা থেকে বের হয়ে যায়। এমনকি যে ব্যক্তি জায়গা দান করেছে, সে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করারও ক্ষমতা রাখে না। কেননা উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক তার মালিকানা থেকে বের হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার মালিকানায় চলে গেছেন। (আর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,) নিশ্চয়ই সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। অর্থাৎ সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উনাদের মালিক হচ্ছেন স্বয়ং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি। সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা জিন শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮) সুতরাং যখন কেউ কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ওয়াক্বফ করে, তখন তা তার মালিকানা থেকে বের হয়ে যায়।”
দেওবন্দীদের গুরু আশরাফ আলী থানবী তার ‘বেহেশতী জেওর’ কিতাবের ৩য় খ-ের ৬৯ পৃষ্ঠায় বলেছে,
جس چیز کو وقف کر دیا اب وه چیز اسکی نہی رہی اللہ تعالی کی ہو گئی اب اسکو بیچنا کسی کو دینا درست نہیں-
অর্থ: “কোনো জিনিস ওয়াক্বফ করার পর সেটা আর নিজের থাকে না, সেটা মহান আল্লাহ পাক উনার হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! সেটা বেচা-কেনা করা বা কাউকে দান করা জায়েয নেই।” (বেহেশতী জেওর ৩/৬৯)
কাজেই, এলাকাবাসী ও মুছুল্লীদের জন্য ফরয হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তরের নামে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক বন্ধ রাখার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিবাদ করা এবং অতিশীঘ্রই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক খুলে দিয়ে সম্মানিত ছলাত আদায় করার যথাযথ ব্যবস্থা করা। অন্যথায় এলাকাবাসী এবং মুছুল্লীসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই কাট্টা যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে ইহকাল ও পরকালে কঠিন আযাব-গযবে গ্রেফতার হবে। না‘ঊযুবিল্লাহ! (তথ্যসূত্র: ১. মহাসম্মানিত ও মহাপবত্রি কুরআন শরীফ, ২. মুসনাদে আহমদ, ৩. শরহুস সুন্নাহ, ৪. শু‘য়াবুল ঈমান, ৫. ছহীহ ইবনে হিব্বান, ৬. হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৭. শরহুল বুখারী শরীফ, ৮. মিশকাত শরীফ, ৯. মিরক্বাত, ১০. তাফসীরে কুরতুবী শরীফ, ১১. দুররে মানছূর, ১২. আব্দুর রাজ্জাক্ব ১৩. ইবনে আবী হাতিম, ১৪. ত্ববারী, ১৫. তাফসীরে ইবনে কাছীর, ১৬. আল মুহাররুল ওয়াজীয, ১৭. তাফসীরে জালালাইন, ১৮. তাফসীরে সমরকন্দী, ১৯. তাফসীরে খাযিন, ২০. তাফসীরে বাগবী, ২১. ফাতহুল ক্বদীর, ২২. তাফসীরে কবীর, ২৩. তাফসীরে বায়যাবী, ২৪. তাফসীরে মাযহারী ২৫. তাফসীরে মাওয়ারদী, ২৬. তাফসীরে রূহুল মা‘য়ানী, ২৭. তাফসীরে রূহুল বায়ান, ২৮. তাফসীরে আহমদী, ২৯. হেদায়াহ্, ৩০. বিদায়াহ্, ৩১. ইনায়াহ্, ৩২. বিনায়াহ্, ৩৩. লিসানুল হুক্কাম, ৩৪. আল লুবাব ফী শরহিল কিতাব, ৩৫. তাবঈনুল হাক্বাইক্ব, ৩৬. আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ্, ৩৭. আল বাহ্রুর রাইক্ব, ৩৮. ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ৩৯. র্দুরুল মুখতার, ৪০. দুরারুল হুক্কাম, ৪১. বেহেশতী জেওর, ৪২. ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ইত্যাদি)

সুওয়াল-১২: নদী রক্ষার্থে মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তর করা কতটুকু শরীয়ত সম্মত?

সুওয়াল-১২: নদী রক্ষার্থে মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তর করা কতটুকু শরীয়ত সম্মত?

জাওয়াব: নদী রক্ষার্থে মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তর করা জায়িয তো হবেই না বরং কাট্টা হারাম, নাজায়িয ও কুফরী হবে। কারণ মসজিদ ভাঙ্গার আগে আমাদেরকে জানতে হবে মসজিদ কিভাবে হলো এবং মসজিদের মালিক কে? উল্লেখ্য যে, কোন সম্পত্তি বা জায়গা মসজিদের জন্য ওয়াক্ফ করার পর মসজিদ কর্তৃপক্ষ সে জায়গাতে নামায আদায় করার জন্য মসজিদ নির্মাণ করে এবং আযান দিয়ে নামায আদায় করে ফেললেই উক্ত জায়গা হাক্বীক্বীভাবে ওয়াক্ফকৃত মসজিদ হিসেবে গণ্য হবে।
আর এই ওয়াক্ফকৃত মসজিদে আযান- ইক্বামত দিয়ে নামায আদায় করলেই মসজিদ হস্তান্তর সাব্যস্ত হয়ে যাবে।” অর্থাৎ খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার মালিকানায় চলে যাবে অর্থাৎ উক্ত মসজিদের মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি।
যেমন “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খ-ের ৩৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
اَلتَّسْلِيْمُ فِـى الْـمَـسْجِدِ اَنْ تُصَلِّىْ فِيْهِ الْـجَمَاعَةِ بِاِذْنِهٖ
অর্থ: “দাতার অনুমতিক্রমে জামায়াতের সাথে নামায আদায় করার দ্বারা মসজিদ হস্তান্তর সাব্যস্ত হয়ে যাবে।”
অর্থাৎ মসজিদ খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার মালিকানায় চলে যাবে অর্থাৎ উক্ত মসজিদের মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি হয়ে যান।
শুধু তাই নয় যদি একজন ব্যক্তিকে ইমাম ও মুয়াজ্জিন নিযুক্ত করা হয় এবং তিনি যদি আযান- ইক্বামত দিয়ে একাকী নামায আদায় করেন, তাহলেও সকল ইমাম মুজতাহিদ ও উলামায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ঐক্যমতে মসজিদ হয়ে যাবে। অর্থাৎ মসজিদের মালিকানা খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার মালিকানায় চলে যাবে তথা উক্ত মসজিদের মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি হয়ে যান।
যেমন, বিশ্বখ্যাত ফতওয়ার কিতাব “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খ-ের ৪৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
لَوْ جُعِلَ رَجُلًا وَاحِدًا مُؤَذِّنًا وَاِمَامًا فَاَذَّنَ وَأَقَامَ وَصَلَّى وَحْدَه صَارَ مَسْجِدًا بِالْاِتِّفَاقِ كَذَا فِـى الْكِفَايَةِ وَفَتْحِ الْقَدِيْرِ.
অর্থ: “যদি একজন ব্যক্তিকে ইমাম ও মুয়াজ্জিন হিসাবে নিযুক্ত করা হয় এবং তিনি যদি আযান-ইক্বামত দিয়ে একাকী নামায আদায় করেন, তাহলেও সকল ইমাম মুজতাহিদ ও উলামায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ঐক্যমতে ওয়াক্ফকৃত মসজিদ হয়ে যাবে।”
অর্থাৎ মসজিদের মালিকানা খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার মালিকানায় চলে যাবে তথা উক্ত মসজিদের মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি হয়ে যান। অনুরূপভাবে কিফায়া ও ফতহুল ক্বাদীর কিতাবেও উল্লেখ আছে।
“মুখতাছারুল কুদূরী” কিতাবের ১৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَاِذَا بُنِـىَ مَسْجِدًا ...بِطَرِيْقِهٖ وَيُاَذِّنُ لِلنَّاسِ بِالصَّلٰوةِ فِيْهِ فَاِذَا صَلَّى فِيْهِ وَاحِدًا زَالَ مِلْكُه عِنْدَ اَبِـىْ حَنِيْفَةَ رَحِمَهُ اللهُ تَعَالٰى .
অর্থ: “যখন যাতায়াতের রাস্তাসহ মসজিদ নির্মাণ করা হবে...এবং মানুষদেরকে সেই মসজিদে নামায পড়ার অনুমতি দেয়া হবে। তখন একজন ব্যক্তিও যদি উক্ত মসজিদে নামায আদায় করেন, তাহলে ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মতেও ওয়াক্ফকারীর মালিকানা দূরীভূত হবে। অর্থাৎ মসজিদ খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার মালিকানায় চলে যাবে তথা উক্ত মসজিদের মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি হয়ে যান।”
“ঈনায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে-
فَاِنْ أَذَّنَ رَجُلٌ وَاحِدٌ وأَقَامَ وَصَلَّى وَحْدَه صَارَ مَسْجِدًا بِالْاِتِّفَاقِ لِاَنَّ صَلَاتَه عَلٰى هٰذَا الْوَصْفِ كَالْـجَمَاعَةِ
অর্থ: “যদি একই ব্যক্তি আযান ও ইক্বামত দিয়ে একাকী নামায আদায় করেন, তাহলে সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও উলামায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ঐক্যমতে তা ওয়াক্্ফকৃত মসজিদ হয়ে যাবে। কেননা এভাবে আযান-ইক্বামত দিয়ে নামায আদায় করলে তা জামায়াতের সাথে নামায আদায়েরই অনুরূপ।”
“হেদায়া মা’য়াদ দেরায়া” কিতাবের ২য় খ-ের ৬৪৪ পৃষ্ঠার ৩নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-
عِنْدَهُمَا وَلَوْ جُعِلَ لَه مُوَذِّنًا وَاِمَامًا فَاَذَّنَ وَاَقَامَ وَصَلَّى وَحْدَه صَارَ مَسْجِدًا بِالْاِتِّفَاقِ لِاَنَّ اَدَاءَ الصَّلٰوةِ عَلٰى هٰذَا الْوَجْهِ كَالْـجَمَاعَةِ .
অর্থ: “হযরত ছাহেবাইন রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের মতে যদি মসজিদের জন্য একজন ব্যক্তিকে ইমাম ও মুয়াজ্জিন হিসাবে নিযুক্ত করা হয় এবং তিনি যদি আযান-ইক্বামত দিয়ে একাকী নামায আদায় করেন, তাহলেও সকল ইমাম মুজতাহিদ ও উলামায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ঐক্যমতে তা ওয়াক্্ফকৃত মসজিদ হয়ে যাবে। কেননা এভাবে আযান ইক্বামত দিয়ে নামায আদায় করলে তা জামায়াতের সাথে নামায আদায়েরই অনুরূপ।”
“ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ৫ম খ-ের ৪৪৩ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-
فَاِنْ أَذَّنَ رَجُلٌ وَاحِدٌ وأَقَامَ وَصَلَّى وَحْدَه صَارَ مَسْجِدًا بِالْاِتِّفَاقِ لِاَنَّ صَلَاتَه عَلٰى هٰذَا الْوَصْفِ كَالْـجَمَاعَةِ
অর্থ: “যদি একই ব্যক্তি আযান ও ইক্বামত দিয়ে একাকী নামায আদায় করেন, তাহলে সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও উলামায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ঐক্যমতে তা ওয়াক্্ফকৃত মসজিদ হয়ে যাবে। কেননা এভাবে আযান-ইক্বামত দিয়ে নামায আদায় করলে তা জামায়াতের সাথে নামায আদায়েরই অনুরূপ।”
আরো উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র মৌখিকভাবে ওয়াক্ফকৃত মসজিদেরও মালিকানা ওয়াক্ফকারীর মালিকানা থেকে হস্তান্তর হয়ে মহান খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার মালিকানায় চলে যাবে অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি মালিক হয়ে যান।”
যেমন, “মুখতাছারুল কুদূরী” কিতাবের ১৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَقَالَ اَبُوْ يُوْسُفَ رَحِمَهُ اللهُ تَعَالٰى يَزُوْلُ الْـمِلْكُ بِمُجَرَّدِ الْقَوْلِ وَ عَلَيْهِ الْفَتْوٰى.
অর্থ: “হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “ওয়াক্ফ-এর কথা মৌখিকভাবে বললেই ওয়াক্্ফকৃত বস্তু ওয়াক্ফকারীর মালিকানা থেকে দূরীভুত হয়ে যাবে। আর এটার উপরেই ফতওয়া দেয়া হয়েছে।”
“আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ” কিতাবের ১ম খ-ের ৪৩০ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-
وَقَالَ اَبُوْ يُوْسُفَ رَحِمَهُ اللهُ تَعَالٰى يَزُوْلُ الْـمِلْكُ بِمُجَرَّدِ الْقَوْلِ
অর্থ: “হযরত ইমামআবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “ওয়াক্ফ-এর কথা মৌখিকভাবে বললেই ওয়াক্্ফকৃত বস্তু ওয়াক্ফকারীর মালিকানা থেকে দূরীভূত হয়ে যাবে।”
“আল লুবাব লিল মায়দানী” কিতাবে উল্লেখ আছে-
وَقَالَ اَبُوْ يُوْسُفَ رَحِمَهُ اللهُ تَعَالٰى يَزُوْلُ الْـمِلْكُ بِمُجَرَّدِ الْقَوْلِ
অর্থ: “হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “ওয়াক্ফ-এর কথা মৌখিকভাবে বললেই ওয়াক্্ফকৃত বস্তু ওয়াক্ফকারীর মালিকানা থেকে দূরীভূত হয়ে যাবে।”
“আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ” কিতাবের ১ম খ-ের ৪৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَقَالَ اَبُوْ يُوْسُفَ رَحِمَهُ اللهُ تَعَالٰى يَزُوْلُ الْـمِلْكُ بِمُجَرَّدِ الْقَوْلِ ৃ وَ عَلَيْهِ الْفَتْوٰى.
অর্থ: “হযরত ইমামআবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “ওয়াক্ফ-এর কথা মৌখিকভাবে বললেই ওয়াক্্ফকৃত বস্তু ওয়াক্ফকারীর মালিকানা থেকে দূরীভূত হয়ে যাবে। .... আর এটার উপরেই ফতওয়া দেয়া হয়েছে।”
“আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ” কিতাবের ১ম খ-ের ৪৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَقَالَ اَبُوْ يُوْسُفَ رَحِمَهُ اللهُ تَعَالٰى يَزُوْلُ مِلْكُه بِقَوْلِهٖ جَعَلْتُهَ مَسْجِدًا.
অর্থ: “হযরত ইমামআবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আমি জায়গাটিকে মসজিদ বানালাম” ওয়াক্ফকারীর এমন কথার দ্বারাই মসজিদ থেকে তার মালিকানা দূরীভূত হয়ে যাবে। ”
“আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ” কিতাবের ১ম খ-ের ৪৩৫ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-
( وَقَالَ اَبُوْ يُوْسُفَ رَحِمَهُ اللهُ تَعَالٰى يَزُوْلُ مِلْكُه عَنْهُ) اَىِ الْـمَسْجِدِ (بِقَوْلِهٖ جَعَلْتُهَ مَسْجِدًا) لِاَنَّ التَّسْلِيْمَ عَنْدَه لَيْسَ بَشَرْطٍ لِاَنَّه اِسْقَاطُ لْـمِلْكِهٖ فَيَصِيْرُ خَالِصًا لِلّٰهِ تَعَالٰى بِسُقَوْطِ حَقِّهٖ.
অর্থ: “ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আমি জায়গাটিকে মসজিদ বানালাম” ওয়াক্ফকারীর এমন কথার দ্বারাই মসজিদ থেকে তার মালিকানা দূরীভূত হয়ে যাবে। কেননা ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট ওয়াক্্ফকারীর মালিকানা দূরীভূত হওয়ার জন্য সোপর্দ করা শর্ত নয়, মালিকানা সাকেত হওয়াই যথেষ্ট। অত:পর ওয়াক্্ফকারীর হক্ব সাকেত হওয়ার দ্বারাই উক্ত মসজিদ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য খালেছভাবে হয়ে যাবে।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি মালিক হয়ে যান।

“আল লুবাব লিল মায়দানী” কিতাবে উল্লেখ আছে-
( وَقَالَ اَبُوْ يُوْسُفَ رَحِمَهُ اللهُ تَعَالٰى يَزُوْلُ مِلْكُه عَنْهُ) اَىِ الْـمَسْجِدِ (بِقَوْلِهٖ جَعَلْتُهَ مَسْجِدًا) لِاَنَّ التَّسْلِيْمَ عَنْدَه لَيْسَ بَشَرْطٍ لِاَنَّه اِسْقَاطُ الْـمِلْكِهٖ فَيَصِيْرُ خَالِصًا لِلّٰهِ تَعَالٰى بِسُقَوْطِ حَقِّهٖ.
অর্থ: “ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আমি জায়গাটিকে মসজিদ বানালাম” ওয়াক্ফকারীর এমন কথার দ্বারাই মসজিদ থেকে তার মালিকানা দূরীভূত হয়ে যাবে। কেননা ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট ওয়াক্্ফকারীর মালিকানা দূরীভূত হওয়ার জন্য সোপর্দ করা শর্ত নয়, মালিকানা সাকেত হওয়াই যথেষ্ট। অত:পর ওয়াক্্ফকারীর হক্ব সাকেত হওয়ার দ্বারাই উক্ত মসজিদ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য খালেছভাবে হয়ে যাবে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পরিপূর্ণ মালিক হয়ে যান।”
“হেদায়া মা’য়াদ দেরায়া” কিতাবের ২য় খ-ের ৬৩৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَقَالَ اَبُوْ يُوْسُفَ رَحْمَةُ اللهُ تَعَالٰى يَزُوْلُ مِلْكُه بِمُجَرَّدِ الْقَوْلِ وَبِهٖ اَخَذَ مَشَايِخُ بـُخَارَا.
অর্থ: “হযরত ইমামআবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “ওয়াক্ফ-এর কথা মৌখিকভাবে বললেই ওয়াক্্ফকৃত বস্তুর মালিকানা ওয়াক্ফকারীর নিকট থেকে দূরীভুত হয়ে যাবে।” আর এই মতটিকেই বুখারার মাশায়িখে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা গ্রহণ করেছেন।”
“ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ৫ম খ-ের ৪১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَقَالَ اَبُوْ يُوْسُفَ رَحْمَةُ اللهُ تَعَالٰى يَزُوْلُ مِلْكُه بِمُجَرَّدِ الْقَوْلِ.
অর্থ: “হযরত ইমামআবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “ওয়াক্ফ-এর কথা মৌখিকভাবে বললেই ওয়াক্্ফকৃত বস্তুর মালিকানা ওয়াক্ফকারীর নিকট থেকে দূরীভুত হয়ে যাবে।”
“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ২য় খ-ের ৩৫১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَاِذَا كَانَ الْـمِلْكُ يَزُوْلَ عِنْدَهُمَا يَزُوْلُ بِالْقَوْلِ عِنْدَ اَبِـىْ يُوْسُفَ رَحِمَهُ اللهُ تَعَالٰى وَهُوَ قَوْلِ الْاَئِمَّةِ الثَّلَاثَةِ وَهُوَ قَوْلُ أَكْثَرَ أَهْلِ الْعِلْمِ وَعَلٰى هٰذَا مَشَائِخُ بَلَخ وَفِـىْ الْـمُنِيَةِ وَعَلَيْهِ الْفَتْوٰى كَذَا فِـى فَتْحِ الْقَدِيْرِ وَعَلَيْهِ الْفَتْوٰى كَذَا فِـى السِّرَاجِ الْوَهَّاجِ.

অর্থ : “হযরত তরফাইন রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের মতে ওয়াক্ফকৃত মালের মালিকানা ওয়াক্ফকারীর নিকট থেকে দূর হয়ে যাবে। আর ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “ওয়াক্ফ-এর কথা মৌখিকভাবে বললেই ওয়াক্্ফকৃত বস্তুর মালিকানা ওয়াক্ফকারীর নিকট থেকে দূরীভুত হয়ে যাবে।” আর এটাই তিনজন ইমাম অর্থাৎ হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মত। আর এটাই অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরও অভিমত। আর এই মতের উপরেই বলখের মাশায়িখে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও একমত পোষণ করেছেন। “মুনিয়া” কিতাবেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। আর এই মতের উপরেই ফতওয়া দেয়া হয়েছে। যেমন, “সিরাজুল ওয়াহ্হাজ” কিতাবেও উল্লেখ আছে।”
“কিফায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে-
وَعِنْدَهُمَا زَوَالُ الْعَيْنِ اِلَى اللهِ تَعَالٰى فَيَصِيْرُ مَـحْبُوْسًا فِـىْ مِلْكِ اللهِ تَعَالٰى.
অর্থ: “হযরত ছাহেবাইন রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের মতে ওয়াক্ফকৃত মাল মহান আল্লাহ্ পাক উনার মালিকানায় চলে যাবে। অত:পর উক্ত ওয়াক্ফকৃত মাল মহান আল্লাহ্ পাক উনার মালিকানায় আবদ্ধ থাকবে। অর্থাৎ এই মালিকানা আর হস্তান্তরের কোন সুযোগ নেই।”
“ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ৫ম খ-ের ৪২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَاِذَا كَانَ الْـمِلْكُ يَزُوْلَ عِنْدَهُمَا يَزُوْلُ بِالْقَوْلِ عِنْدَ اَبِـىْ يُوْسُفَ رَحِمَهُ اللهُ تَعَالٰى وَهُوَ قَوْلِ الْاَئِمَّةِ الثَّلَاثَةِ وَقَوْلُ أَكْثَرَ أَهْلِ الْعِلْمِ لِاَنَّه اِسْقَاطُ الْـمِلْكِهٖ... وَفِـىْ الْـمُنِيَةِ الْفَتْوٰى عَلٰى قَوْلِ أَبِـىْ يُوْسُفَ وَهٰذَا قَوْلُ مَشَايِخِ بَلَخ.
অর্থ: “হযরত তরফাইন রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের মতে ওয়াক্ফকৃত মালের মালিকানা ওয়াক্ফকারীর নিকট থেকে দূর হয়ে যাবে। আর ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “ওয়াক্ফ-এর কথা মৌখিকভাবে বললেই ওয়াক্্ফকৃত বস্তুর মালিকানা ওয়াক্ফকারীর নিকট থেকে দূরীভুত হয়ে যাবে। আর এটাই তিনজন ইমাম অর্থাৎ হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মত। আর এটাই অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরও অভিমত। কেননা ওয়াক্্ফ করলে মালিকানা ছাকেত হয়ে যায়। ... আর “মুনিয়া” কিতাবে ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতের উপরেই ফতওয়া দেয়া হয়েছে। আর এই মতের উপরেই বলখের মাশায়িখে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও একমত পোষণ করেছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ওয়াক্ফ কাকে বলে? এর জবাবে বলতে হয় যে, সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার ইমাম, হযরত আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মতে কোন মাল-সম্পদ বা জায়গাকে খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার মালিকানায় দিয়ে দেয়ার নামই ওয়াক্ফ।”
যেমন এ প্রসঙ্গে “হেদায়া মা’য়াদ দেরায়া” কিতাবের ২য় খ-ের ৬৩৮ পৃষ্ঠার ৭নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-
اَلْوَقْفُ تَـمْلِيْكٌ لِلّٰهِ تَعَالٰى وَهُوَ مَالِكَ الْاَشْيَاءِ
অর্থঃ “ওয়াক্ফ হচ্ছে খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার জন্য মালিকানা নির্দিষ্ট করে দেয়া। যদিও তিনি সমস্ত কিছুর মালিক। অর্থাৎ উক্ত ওয়াক্ফকৃত সম্পদের মালিক স্বয়ং খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্ পাক তিনি।
“বাহরুর রায়েক” কিতাবের ৫ম খ-ের ১৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(قَوْلُهٗ حَبْسُ الْعَيْنِ عَلٰى مِلْكِ الوَاقِفِ وَالتَّصَدَّقَ بِالْـمَـنْفَعَةِ) يَعْنِي عِنْدَ أَبِي حَنِيْفَةَ رَضَيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَعِنْدَهُمَا هُوَ حَبْسُ الْعَيْنِ عَلٰى حُكْمِ مِلْكِ اللهِ تَعَالٰى.
অর্থ: “কোনো মাল-সম্পদ বা জায়গাকে ওয়াক্ফকারীর মালিকানায় আবদ্ধ রেখে মুনাফা ছদ্ক্বা করে দেয়াকেই ওয়াক্ফ বলে। এটাই ইমাম আ’যম হযরত আবূ হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত। আর ছহেবাইন রহমতুল্লাহি আলাইহিমা তথা ইমাম হযরত আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মতে কোন মাল-সম্পদ বা জায়গাকে খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার মালিকানার বিধানের ভিত্তিতে আবদ্ধ করার নামই ওয়াক্ফ।” আর ছহেবাইন রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের উপরই ফতওয়া।
“কিফায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে-
وَ مَا قَالَاهُ وَ هُوَ حَبْسُ الْعَيْنِ عَلٰى حُكْمِ مِلْكِ اللهِ تَعَالٰى.
অর্থ: “ওয়াক্ফ সম্পর্কে হযরত ছহেবাইন রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা তথা হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারা যা বলেছেন তাহলো, কোন মাল-সম্পদ, বস্তু বা জায়গাকে খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার মালিকানার বিধানের ভিত্তিতে আবদ্ধ করার নামই ওয়াক্ফ।” অর্থাৎ উক্ত সম্পদের মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি। “ঈনায়া” কিতাবেও অনুরূপ উল্লেখ আছে।

আরো উল্লেখ্য যে, ওয়াক্ফকৃত স¤পদের মালিকানা ওয়াক্ফকারীর নিকট থেকে রহিত হয়ে মহান আল্লাহ্ পাক উনার মালিকানায় এমনভাবে চলে য়ায় যে, তা বিক্রি করা যাবে না, হিবা করা যাবে না, বন্ধক রাখা যাবে না এবং মীরাছ রূপে বণ্টন করাও যাবে না। এমনকি রাস্তা বর্ধনের নামে, নদী রক্ষার নামে, শহর পরিকল্পনার নামে ইত্যাদি অজুহাত দিয়ে মসজিদ স্থানান্তর করা বা মসজিদ ভাঙ্গা যাবে না। যা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার মধ্যে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব “হেদায়া মা’য়াদ দেরায়া” কিতাবের ২য় খ-ের ৬৩৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَعِنْدَهُمَا حَبْسُ الْعَيْنِ عَلٰى حُكْمِ مِلْكِ اللهِ تَعَالٰى فَيَزُوْلُ مِلْكُ الْوَاقِفِ عَنْهٗ إِلٰى اللهِ تَعَالٰى عَلَى وَجْهِ تَعُوْدُ مَـْنفَعَتُهٗ إِلَى الْعِبَادِ فَيَلْزَمُ وَلَايُبَاعُ وَلَايُوْهَبُ وَلَايُوْرَثُ ... لَـهُمَا قَوْلُ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِـحَضْرَتْ عُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ حِيْنَ اَرَادَ اَنْ يَّتَصَدَّقَ بِاَرْضٍ لَهُ تُدْعَى ثَـمغ تَصَدَّقْ بِاَصْلِهَا لَايُبَاعُ وَلَايُوْرَثُ وَلَايُوْهَبُ وَلَاِنَّ الْـحَاجَةَ مَاسَّةٌ اِلَى أَنْ يَلْزَمَ الْوَقْفُ مِنْهُ لِيَصِلَ ثَوَابُهٗ اِلَيْهِ عَلَى الَّدوَامِ وَقَدْ أَمْكَنَ دَفْعَ حَاجَتُهٗ بِاِسْقَاطِ الْـمِلْكِ وَجَعَلَهُ لِلّٰهِ تَعَالٰى اِذْ لَهٗ نَظِيْرٌ فِى الشَّرْعِ وَهُوَ الْـمَسْجِدُ فَيُجْعَلُ كَذَلِكَ.
অর্থ: “আমাদের সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার ইমাম, হযরত আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মতে কোন মাল-সম্পদ বা জায়গাকে খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার মালিকানার বিধানের ভিত্তিতে আবদ্ধ করার নামই ওয়াক্ফ। আর ওয়াক্্ফ হওয়া মাত্রই ওয়াক্ফকৃত স¤পদ থেকে ওয়াক্ফকারীর মালিকানা রহিত হয়ে মহান আল্লাহ্ পাক উনার মালিকানায় এমনভাবে চলে য়ায় যে, উক্ত ওয়াক্ফকৃত সম্পদের মুনাফা বান্দাদের দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়। সুতরাং তার মালিকানা মহান আল্লাহ্্ পাক উনার হয়ে যায়। অতএব তা বিক্রি করা যাবে না, হিবা করা যাবে না এবং মীরাছ রূপে বণ্টন করাও যাবে না। ... হযরত ছহেবাইন রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের দলীল হলো এই যে, একদা ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যখন উনার মালিকানাধীন খায়বরের ‘ছামাগ’ নামক জমিটি ছদকা করতে ইচ্ছা পোষণ করলেন, তখন নূরে মুজাস্্সাম হাবীবুল্লাহ্্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বলেছিলেন যে, “আপনি মূল জমিটিকে এমনভাবে ছদক্বা করুন, যা কখনোই বিক্রি করা যাবে না, মীরাছ রূপে বণ্টন করা যাবে না এবং হিবাও করা যাবে না। কেননা ওয়াক্্ফকারীর দিক থেকে ওয়াক্্ফ বাধ্যতামূলক হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, যাতে ওয়াক্ফ-এর ছওয়াব দায়েমীভাবে তার দিকে পৌঁছতে থাকে।
আর ওয়াক্্ফকারীর মালিকানা রহিত করে মহান আল্লাহ্্ পাক উনার জন্য মালিকানা নির্দিষ্ট করে দেয়ার মাধ্যমে তার প্রয়োজনকে পূর্ণ করা সম্ভব। কেননা সম্মানিত শরীয়তে এর নজীর রয়েছে। যেমন মসজিদ । সুতরাং এটাকেও সেরূপ করা হবে। অর্থাৎ খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার জন্য মসজিদ উনার মালিকানা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। যদিও তিনি সমস্ত কিছুর মালিক। সুতরাং মসজিদ উনার মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজেই।”
আর মহান আল্লাহ্্ পাক উনার সম্পদ বিক্রি করা বা অপর কাউকে উক্ত সম্পদের মালিক বানানো কোনোটিই বৈধ হবে না।
যেমন “হেদায়া মা’য়াদ দেরায়া” কিতাবের ২য় খ-ের ৬৩৭ পৃষ্ঠার ৪নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-
নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,
تَصَدَّقَ بِاَصْلِهِ لَايُبَاعُ وَلَايُوْهَبُ وَلَايُوْرَثُ
অর্থাৎ “মূল ভূমিকে ছদকা করো, যা কখনো বিক্রি করা যাবে না, হিবা (দান) করা যাবে না এবং মীরাছরূপে বণ্টন করা যাবে না।”
“ঈনায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে-
وَعِنْدَهُمَا هُوَ حَبْسُ الْعَيْنِ عَلٰى حُكْمِ مِلْكِ اللهِ تَعَالٰى فَيَزُوْلُ مِلْكُ الَوَاقِفِ عَنْهُ اِلَى اللهِ تَعَالٰى عَلٰى وَجْهٍ تَعُوْدُ الْـمَـنْفَعَةُ اِلَى الْعِبَادِ فَيَلْزَمُ وَلَايُبَاعُ وَلَايُوْرَثُ.
অর্থ: “সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার ইমাম, হযরত আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মতে কোন মাল-সম্পদ বা জায়গাকে খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার মালিকানার বিধানের ভিত্তিতে আবদ্ধ করার নামই ওয়াক্ফ। আর ওয়াক্্ফ হওয়া মাত্রই ওয়াক্ফকৃত স¤পদ থেকে ওয়াক্ফকারীর মালিকানা রহিত হয়ে মহান আল্লাহ্ পাক উনার মালিকানায় এমনভাবে চলে যায় যে, উক্ত ওয়াক্ফকৃত সম্পদের মুনাফা বান্দাদের দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়। সুতরাং তার মালিকানা মহান আল্লাহ্্ পাক উনার হয়ে যায়। অতএব তা বিক্রি করা যাবে না এবং মীরাছ রূপে বণ্টন করাও যাবে না।”
কেননা উক্ত সম্পদের মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজেই।
“ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ৫ম খ-ের ৪১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
قَالَ الْـمُـصَنِّفُ وَعِنْدَهُمَا هُوَ حَبْسُ الْعَيْنِ عَلَى حُكْمِ مِلْكِ اللهِ تَعَالٰى فَيَزُوْلُ مِلْكُ الوَاقِفِ عَنْهُ اِلَى اللهِ تَعَالٰى عَلَى وَجْهِ تَعُوْدُ مَـنْفَعَتُهٗ اِلَى الْعِبَادِ ... لَكِنْ لَايُبَاعُ وَلَايُوْرَثُ وَلَايُوْهَبُ.
অর্থ: “ফতহুল ক্বাদীর কিতাবের মুছান্নিফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ছাহেবাইন রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা তথা হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মতে কোন মাল-সম্পদ বা জায়গাকে খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার মালিকানার বিধানের ভিত্তিতে আবদ্ধ করার নামই ওয়াক্ফ। আর ওয়াক্্ফ হওয়া মাত্রই ওয়াক্ফকৃত স¤পদ থেকে ওয়াক্ফকারীর মালিকানা রহিত হয়ে মহান আল্লাহ্ পাক উনার মালিকানায় এমনভাবে চলে য়ায় যে, উক্ত ওয়াক্ফকৃত সম্পদের মুনাফা বান্দাদের দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়। .... সুতরাং তা বিক্রি করা যাবে না, মীরাছ রূপে বণ্টন করা যাবে না এবং হিবা বা দান করাও যাবে না।” কেননা উক্ত সম্পদের মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজে। (“ফতহুল ক্বাদীর” ৫ম খ- ৪১৯ পৃষ্ঠার “হাশিয়া” )
“মুখতাছারুল কুদূরী” কিতাবের ১৩৮ পৃষ্ঠার ৭নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-
وَقَالَ أَبُوْ يُوْسُفَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَمُـحَمَّدٌ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ هُوَ عِبَارَةٌ عَنْ حَبْسِ الْعَيْنِ عَلٰى حُكْمِ مِلْكِ اللهِ تَعَالٰى عَلَى وَجْهٍ تَصِلُ الْـمَـنْفَعَةُ إِلَى اْلعِبَادِ‘ فَيَزُوْلُ مِلْكُ الْوَقْفِ عَنْهُ إِلَى اللهِ تَعَالٰى فَيَلْزَمُ وَلَايُبَاعُ وَلَايَرْهَنُ وَلَايُوْارَثُ.
অর্থ: “হযরত আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম হযরত মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মতে কোন মাল-সম্পদ বা জায়গাকে খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার মালিকানার বিধানের ভিত্তিতে আবদ্ধ করার নামই ওয়াক্ফ। ওয়াক্্ফকৃত সম্পদের মুনাফা বান্দাদের দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়। আর ওয়াক্্ফ হওয়া মাত্রই ওয়াক্ফকৃত স¤পদের মালিকানা ওয়াক্ফকারীর নিকট থেকে রহিত হয়ে মহান আল্লাহ্ পাক উনার মালিকানায় এমনভাবে চলে য়ায় যে, তার মালিকানা মহান আল্লাহ্্ পাক উনার হয়ে যায়। অতএব তা বিক্রি করা যাবে না, বন্ধক রাখা যাবে না এবং মীরাছ রূপে বণ্টন করাও যাবে না।” অর্থাৎ উক্ত সম্পদের মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজে।” (“আল লুবাব লিল মায়দানী” কিতাবে এবং “আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ” কিতাবের ১ম খ-ের ৪৩০ পৃষ্ঠায়ও আছে)
“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ২য় খ-ের ৩৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَعِنْدَهُمَا حَبْسُ الْعَيْنِ عَلٰى حُكْمِ مِلْكِ اللهِ تَعَالٰى عَلَى وَجْهٍ تَعُوْدُ مَنْفَعَتُهٗ اِلَى العِبَادِ فَيَلْزَمُ وَلَا يُبَاعُ وَلَا يُوْهَبُ وَلَايُوْرَثُ.كَذَا فِى الـهِدَايَةِ وَفِى الْعُيُوْنِ وَالْيَتِيْمَةِ اَنَّ الْفَتْوٰى عَلَى قَوْلِـهِمَا.
অর্থ: “সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার ইমাম, হযরত আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মতে কোন মাল-সম্পদ বা জায়গাকে খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার মালিকানার বিধানের ভিত্তিতে আবদ্ধ করার নামই ওয়াক্ফ। ওয়াক্্ফকৃত সম্পদের মুনাফা বান্দাদের দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়। আর ওয়াক্্ফ হওয়া মাত্রই ওয়াক্ফকৃত স¤পদের মালিকানা ওয়াক্ফকারীর নিকট থেকে রহিত হয়ে মহান আল্লাহ্ পাক উনার মালিকানায় এমনভাবে চলে য়ায় যে, তার মালিকানা মহান আল্লাহ্্ পাক উনার হয়ে যায়। অতএব তা বিক্রি করা যাবে না, বন্ধক রাখা যাবে না এবং মীরাছ রূপে বণ্টন করাও যাবে না।” অর্থাৎ উক্ত সম্পদের মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি।
অনুরূপ হেদায়া কিতাবে বর্ণিত আছে। আর উয়ূন ও ইয়াতিমা কিতাবে উল্লেখ আছে নিশ্চয়ই ফতওয়া হলো ছহেবাইন রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের ক্বওল শরীফের উপর।
“ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ৫ম খ-ের ৪২৪ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-
اِذَا صَحَّ الْوَقْفُ..... خَرَجَ عَنْ مِلْكِ الوَاقِفِ
অর্থ: “ওয়াক্ফ যখন ছহীহ হয়ে যাবে, তখন ওয়াক্ফকৃত সম্পদ থেকে ওয়াক্ফকারীর মালিকানা থেকে বের হয়ে যাবে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক উনার মালিকানায় চলে য়াবে তথা উক্ত সম্পদের মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজে হয়ে যান।” (অনুরূপ “ঈনায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে।)
“ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ৫ম খ-ের ৪২১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَالْـخُرُوْجُ عَنْ مِلْكِهٖ وَقَوْلُهُ كَالْـمَسْجِدِ نَظِيْرٌ مَا خَرَجَ عَنِ الـمِلْكِ بِالْاِجْمَاعِ.
অর্থ: “ওয়াক্ফকৃত সম্পদ থেকে ওয়াক্ফকারীর মালিকানা থেকে বের হয়ে যাবে। যেমন মসজিদ ওয়াক্ফ করলে ওয়াক্ফকারীর মালিকানা বের হয়ে যাওয়ার নজীর রয়েছে। যা ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক উনার মালিকানায় মসজিদ চলে য়াবে তথা উক্ত মসজিদ-এর মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজেই হয়ে যান।”
“ঈনায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে-
بِـخُرُوْجِ الْوَقْفِ عَنْ مِلْكِ الوَاقِفِ اِذَا صَحَّ الْوَقْفُ قَوْلُـهُمَا.
অর্থ: “হযরত ছহেবাইন রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা তথা ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম হযরত মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মতে ওয়াক্ফ যখন ছহীহ হয়ে যাবে, তখন ওয়াক্ফকৃত সম্পদ থেকে ওয়াক্ফকারীর মালিকানা থেকে বের হয়ে যাবে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক উনার মালিকানায় চলে য়াবে তথা উক্ত সম্পদের মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজেই হয়ে যান।”
(অনুরূপ “ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ৫ম খ-ের ৪২৫ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে।)
“ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ৫ম খ-ের ৪২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
فَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ تَصَدَّق بِاَصْلِهِ لَايُبَاعُ وَلَايُوْهَبُ وَلَايُوْرَثُ.
অর্থ: “নূরে মুজাস্্সাম হাবীবুল্লাহ্্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “মূল জমিটিকে এমনভাবে ছদক্বা করুন, যা কখনোই বিক্রি করা যাবে না, হিবা করা যাবে না এবং মীরাছ রূপে বণ্টন করাও যাবে না।” (কেননা উক্ত সম্পদের মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজেই হয়ে যান। (অনুরূপ “কিফায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে।)
“ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ৫ম খ-ের ৪২০ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-
لَـهُمَا قَوْلُ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ ....... قَالَ تَصَدَّق بِاَصْلِهِ لَايُبَاعُ وَلَايُوْهَبُ وَلَايُوْرَثُ.
অর্থ: “হযরত ছহেবাইন রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের দলীল হলো এই যে, একদা নূরে মুজাস্্সাম হাবীবুল্লাহ্্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ফারূকে আযম আলাইহিস সালাম উনাকে বলেছিলেন যে, “আপনি মূল জমিটিকে এমনভাবে ছদক্বা করুন, যা কখনোই বিক্রি করা যাবে না, হিবা করা যাবে না এবং মীরাছ রূপে বণ্টন করা যাবে না।” কেননা উক্ত সম্পদের মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজে। (অনুরূপ “ঈনায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে।)
“মুখতাছারুল কুদূরী” কিতাবের ১৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَاِذَا صَحَّ الْوَقْفُ لَـمْ يَـجُزْ بَيْعُهٗ وَلَاتَـمْلِيْكُهٗ.
অর্থ: “আর ওয়াক্ফ যখন ছহীহ হয়ে যাবে, তখন ওয়াক্ফকৃত সম্পদ বিক্রয় করা জায়িয হবে না এবং কাউকে মালিক বানানোও জায়িয হবে না।” কেননা উক্ত সম্পদের মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজেই।
“ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ৫ম খ-ের ৪৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَاِذَا صَحَّ الْوَقْفُ خَرُجَ عَنْ مِلْكِ الْوَاقِفِ ثُـمَّ قَوْلُهٗ (لَـمْ يَـجُزْ بَيْعُهٗ وَلَاتَـمْلِيْكُهٗ) هُوَ بِاِجْمَاعِ الْفُقَهَاءِ.
অর্থ: “ওয়াক্ফ যখন ছহীহ হয়ে যাবে, তখন ওয়াক্ফকৃত সম্পদ থেকে ওয়াক্ফকারীর মালিকানা থেকে বের হয়ে যাবে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক উনার মালিকানায় চলে য়াবে তথা উক্ত সম্পদের মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি। অত:পর ইমাম কুদূরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ভাষায় উক্ত ওয়াক্্ফকৃত সম্পদ বিক্রি করা জায়িয হবে না এবং কাউকে মালিক বানানোও জায়িয হবে না। এটা সমস্ত ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে।” কেননা উক্ত সম্পদের মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজেই।
“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ২য় খন্ডের ৪৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
فِي الْكُبْرَى مَسْجِدٌ مَبْنِيٌّ اَرَادَ رَجُلٌ اَنْ يَنْقُضَهُ وَيَبْنِيَهُ ثَانِيًا اَحْكَمَ مِنْ الْبِنَاءِ الْاَوَّلِ لَيْسَ لَهُ ذَلِكَ؛ لِاَنَّهُ لَا وِلَايَة لَهُ.
অর্থ: “ফতওয়ায়ে কুরবা” কিতাবে উল্লেখ আছে যে, যদি কোন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠিত কোন মসজিদ ভেঙ্গে তদস্থলে প্রথম মসজিদটির চেয়ে আরো মজবুত করে দ্বিতীয়বার মসজিদ তৈরী করতে চায়। এমতাবস্থায় প্রতিষ্ঠিত মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলার অধিকার তার নেই। কেননা এ ব্যাপারে তার কোন মালিকানা বা কর্তৃত্ব নেই।”
“মুযমিরাত” কিতাবে উল্লেখ আছে-
مَسْجِدٌ مَبْنِيُّ أَرَادَ رَجُلٌ أَنْ يَنْقُضَهُ وَيَبْنِيَهُ ثَانِيًا أَحْكَمَ مِنَ الْبِنَاءِ الأَوَّلِ لَيْسَ لَهٗ ذَلِكَ؛ لِأَنَّهُ لَا وِلَايَةَ لَهُ.
অর্থ: “ফতওয়ায়ে কুরবা” কিতাবে উল্লেখ আছে যে, যদি কোন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠিত কোন মসজিদ ভেঙ্গে তদস্থলে প্রথম মসজিদটির চেয়ে আরো মজবুত করে দ্বিতীয়বার মসজিদ তৈরী করতে চায়। এমতাবস্থায় প্রতিষ্ঠিত মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলার অধিকার তার নেই। কেননা এ ব্যাপারে তার কোন মালিকানা বা কর্তৃত্ব নেই।”
“ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ৪র্থ খন্ডের ১৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
کبرے مین ہی کہ ایک مسجد بنی ہوئی ہی پس ایک شخص نےچاہا کہ اسکو توڑ کردوبارہ اسکو اس عمارت سے مضبوط عمارت کے ساتھ بناوے تو اسکو اختیار نہیں ہی کیونکہ اسکو کوئی ولایت حاصل نہیں ہی
অর্থ: “ফতওয়ায়ে কুরবা” কিতাবে উল্লেখ আছে, একটি মসজিদ বানানো হয়েছে, কোন এক ব্যক্তি চাচ্ছে যে, মসজিদকে ভেঙ্গে পুনরায় মজবুত করে বানাতে। কিন্তু এই ইখতিয়ার তার নেই। কেননা মসজিদের উপর তার কোন কর্তৃত্ব নেই।” এটা “মুযমারাত” কিতাবে উল্লেখ আছে।
উপরোক্ত দলীল-আদিল্লাহর ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো যে, যেখানে মজবুত করে মসজিদ তৈরী করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত মসজিদ ভাঙ্গাই জায়িয নাই। সেক্ষেত্রে নদী রক্ষার নামে, মেট্রোরেল, রাস্তা বর্ধণের নামে সৌন্দর্য বর্ধণের নামে মসজিদ ভাঙ্গা, স্থানান্তর করা জায়িয তো নয়ই বরং কাট্টা হারাম ও কুফরির অন্তর্ভুক্ত এবং জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে এবং সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার দৃষ্টিতে পবিত্র ছলাত বা নামায উনার আহকাম, ফাযায়িল ও জরুরী মাসয়ালা-মাসায়িল (পর্ব-৩)

পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে এবং সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার দৃষ্টিতে পবিত্র ছলাত বা নামায উনার আহকাম, ফাযায়িল ও জরুরী মাসয়ালা-মাসায়িল (পর্ব-৩)


মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَأْمُرْ‌ اَهْلَكَ بِالصَّلٰوةِ وَاصْطَبِرْ‌ عَلَيْهَا
অর্থ: “আপনার আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম এবং অনুসারী উনাদেরকে পবিত্র নামায উনার জন্য নির্দেশ মুবারক করুন এবং উনার উপর ধৈর্যধারণ বা অটল থাকতে বলুন।” (পবিত্র সূরা ত্বা-হা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩২)
অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরয হলো, পবিত্র নামায উনার গুরুত্ব ও ফযীলত অনুধাবন করে নিজে পবিত্র নামায আদায় করার সাথে সাথে পরিবারবর্গ বা অধীনস্থদেরকে আদায় করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সেজন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-
قُوا اَنْفُسَكُمْ وَاَهْلِيْكُمْ نَارً‌ا
অর্থ: “জাহান্নামের আগুন থেকে তোমরা নিজে বাঁচো এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনদেরকে বাঁচাও।” (পবিত্র সূরা আত্তাহরীম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
অতএব, প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয হচ্ছে- পবিত্র নামায উনার সম্পর্কে ইলম অর্জন করে সঠিকভাবে পবিত্র নামায আদায় করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের কোশেশ করা। আর সে লক্ষ্যেই অত্র “মি’রাজুল মু’মিনীন” কিতাবখানা প্রকাশ করা হলো।
স্মরণীয় যে, পবিত্র নামায আদায় করার জন্য যেরূপ উযু পূর্বশর্ত, তদ্রƒপ পবিত্র নামায কবুল হওয়ার জন্য পূর্বশর্ত হলো ইখলাছ।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا اُمِرُ‌وْا اِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُـخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ
অর্থ: “বান্দাদেরকে আদেশ করা হয়েছে, তারা যেন ইখলাছের সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করে।” (পবিত্র সূরা বাইয়্যিনাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)
ইখলাছ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
ان تعبد الله كانك تراه فان لـم تكن تراه فانه يراك
অর্থ: “এমনভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করো অর্থাৎ মুসলমান উনাদের প্রতিটি মুহূর্তই যেহেতু ইবাদত উনার অন্তর্ভুক্ত, সেহেতু প্রতিটি মুহূর্ত এমনভাবে অতিবাহিত করো- যেন তুমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখছো। আর যদি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখতে না পারো, তবে ধারণা করো যে- তিনি তোমাকে দেখছেন।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র বুখারী শরীফ ও পবিত্র মুসলিম শরীফ)
এখন ইখলাছ উনার উক্ত দু’অবস্থা কিংবা দু’অবস্থার এক অবস্থা অবশ্যই অর্জন করতে হবে। অন্যথায় পবিত্র নামায, পবিত্র রোযা, পবিত্র হজ্জ, পবিত্র যাকাত ইত্যাদি যে ইবাদতই করা হোক না কেন, তা আদৌ কবুলযোগ্য হবে না। উপরন্তু ইবাদতকারীর জন্য জাহান্নাম অপরিহার্য হয়ে যাবে। যেমন পবিত্র সূরা মাঊন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ ﴿٤﴾ اَلَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلٰوتِـهِمْ سَاهُوْنَ ﴿٥﴾ اَلَّذِيْنَ هُمْ يُرَ‌اءُونَ ﴿٦﴾
অর্থ: “ওইসব নামাযীদের জন্য ওয়ায়িল (জাহান্নাম), যারা গাফলতির সাথে এবং মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে নামায আদায় করে।” (পবিত্র সূরা মাঊন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪, ৫, ৬)
অতএব, পবিত্র নামাযসহ যাবতীয় ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য ইলমুল ইখলাছ বা ইলমে তাছাউফ অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয। অর্থাৎ একজন কামিল ওলীআল্লাহ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ বা তরীক্বত অনুযায়ী ক্বলবী যিকির ও অন্যান্য সবক আদায়ের মাধ্যমে ইখলাছ অর্জন করতে হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে তাওফীক্ব দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন। (চলবে)

সুওয়াল-১৪: নদী ভাঙ্গনের কারণে অনেক মসজিদের স্থান নদীর মাঝখানে চলে গেছে। এতে এলাকাবাসী নতুন জেগে ওঠা চরে স্থান নির্দিষ্ট করে ঐ মসজিদের বদল হিসেবে ব্যবহার করছে। এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত?

সুওয়াল-১৪: নদী ভাঙ্গনের কারণে অনেক মসজিদের স্থান নদীর মাঝখানে চলে গেছে। এতে এলাকাবাসী নতুন জেগে ওঠা চরে স্থান নির্দিষ্ট করে ঐ মসজিদের বদল হিসেবে ব্যবহার করছে। এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত?


জাওয়াব: উপরোক্ত সুওয়ালের জাওয়াবে বলতে হয় যে, যদি নদী ভাঙ্গনের ফলে কোন মসজিদের স্থান নদীগর্ভে চলে যায়, এমতাবস্থায় এলাকাবাসী নদীর পার্শ্ববর্তী কোন চরে উক্ত মসজিদের বদলে বা পরিবর্তে নতুন কোন মসজিদ তৈরী করে, তাহলে প্রথম মসজিদের মালিকানা রহিত হবে না বরং নতুন মসজিদটি ভিন্ন আরেকটি মসজিদ হিসেবে সাব্যস্ত হবে।

তবে যদি কখনোও নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে প্রথম মসজিদের স্থান পুনরায় জেগে উঠে তাহলে সেই স্থানটি মসজিদের স্থান হিসেবে ধর্তব্য হবে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তা বহাল থাকবে। উক্ত জমি থেকে জনসাধারণ দুনিয়াবী কোন ফায়দা হাছিল করতে পারবে না।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, উক্ত মসজিদের জেগে উঠা জায়গাটির হুকুম কী হবে?

এর জবাবে বলতে হয় যে, মসজিদের জেগে উঠা জায়গাটি যেহেতু মসজিদেরই হুকুম রাখে সেহেতু তা সীমানা নির্ধারণ করে চিহ্নিত করে হেফাযত করতে হবে। অথবা বিভিন্ন ফল-ফলাদি বা দামী কাঠের গাছ লাগানো যেতে পারে, যাতে লাগানো গাছের ফল বা উপযুক্ত গাছ বিক্রি করে তার অর্থ স্বীয় এলাকার মসজিদের কাজে খরচ করা যায়। পরবর্তী সময়ে সে স্থানে আবার কখনো জনবসতি গড়ে উঠলে যেন তারা ওয়াকফকৃত মসজিদের স্থানকে পুনরায় মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। কারণ ওয়াক্বফকৃত স্থানে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ থাকুক বা না থাকুক সে স্থানটির মালিক হচ্ছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই। আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার জায়গাটি ক্বিয়ামত পর্যন্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মসজিদ হিসেবেই গণ্য হবে। এর ব্যতিক্রম করা কাট্টা হারাম ও কুফরী। যারা ব্যতিক্রম করবে তাদের জন্য জাহান্নাম ফরজ হবে।

{দলীলসমূহঃ (১) “ফতওয়ায়ে কাযীখান” (২) “আল মুখতারুল কুদূরী” (৩) “আল জাওহারতুন নাইয়্যারাহ” (৪) “আল লুবাব লিল মায়দানী” (৫) “আল হেদায়া মা’য়াদ দেরায়া” (৬) “আইনুল হিদায়া” (৭) “ফতহুল ক্বাদীর” (৮) “আল কিফায়া” (৯) “আল ঈনায়া” (১০) “হাশিয়ায়ে চলপী” (১১) “বাদায়েয়ুস সানায়া” (১২) “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” (১৩) “আল বাহরুর রায়েক” (১৪) “আল মুযমিরাত” (১৫) “ফতওয়ায়ে কুরবা” (১৬) “আয্্ যাখীরাহ” (১৭) “খাযানাতুল মুফতীন” (১৮) “ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” (১৯) “আল কুনিয়া” (২০) “আল মুনিয়া” (২১) “মুহীতে সারাখসী” (২২) “সিরাজুল ওয়াহ্হাজ” (২৩) “ফতওয়ায়ে শামী” (২৪) “ই’লাউস সুনান” (২৫) “ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ” ইত্যাদি}

উপজাতি-পাহাড়িদের ‘যুদ্ধাপরাধ’ ও ‘রাজাকারগিরি’র উপাখ্যান (পর্ব-২)

উপজাতি-পাহাড়িদের ‘যুদ্ধাপরাধ’ ও ‘রাজাকারগিরি’র উপাখ্যান (পর্ব-২)
উপজাতি চাকমা ত্রিদিব ছিলো তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা ও পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গামাটি সার্কেলের চাকমা নেতা এবং আত্মস্বীকৃত কুখ্যাত রাজাকার।
উল্লেখ্য, ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত রাজাকার ত্রিদিব চাকমা সার্কেল চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।
পরে ১৯৭৭ সালে তার অনুপস্থিতিতেই তার ছেলে সার্কেল চিফ দেবাশীষ চাকমা সার্কেলের দায়িত্বভার গ্রহণ করে।
৬ দফা দাবির বিরোধিতা:
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। উপজাতি চাকমা রাজাকার ত্রিদিব এই কর্মসূচির সমর্থক ছিলো না। সেসময় সে বিভিন্নভাবে ছয় দফার বিরোধিতা করে।
১৯৭০-এর নির্বাচন আওয়ামী বিরোধী এমপি:
১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার দলের পক্ষে নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য ত্রিদিবকে আহ্বান জানান। কিন্তু রাজাকার ত্রিদিব এই অনুরোধে সাড়া দেয়নি। সে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনে সে বিজয়ী হয়। এবং পাকিস্তান সরকারকে সমর্থন দেয়।

উপজাতি-পাহাড়িদের ‘যুদ্ধাপরাধ’ ও ‘রাজাকারগিরি’র উপাখ্যান (পর্ব-১)

উপজাতি-পাহাড়িদের ‘যুদ্ধাপরাধ’ ও ‘রাজাকারগিরি’র উপাখ্যান (পর্ব-১)
রাজাকার ত্রিদিবের নামে সব স্থাপনার নাম মুছে ফেলার নিদের্শনা দিয়েছে উচ্চ আদালত।
মূলত, উপজাতি চাকমা ত্রিদিব ছিলো তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা ও পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গামাটি সার্কেলের চাকমা নেতা এবং আত্মস্বীকৃত কুখ্যাত রাজাকার। এই উপজাতি রাজাকার ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রবল বিরোধিতা করেছিলো। শুধু তাই নয়; দেশ স্বাধীন হওয়ায় সে রাগে, ক্ষোভে ও ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে পাকিস্তান চলে যায়।
সে ছিলো রাঙ্গামাটি সার্কেলের চাকমা নেতা ও সার্কেল চীফ। তার বাবা নলিনাক্ষ ১৯৫২ সালের ৭ অক্টোবর মারা গেলে ত্রিদিব ১৯৫৩ সালের ২ মার্চ নেতৃত্ব গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালে দেশ ত্যাগ করে এবং ২০১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানেই মারা যায়। বর্তমানে তার ছেলে ব্যারিস্টার দেবাশীষ রাঙ্গামাটি সার্কেলের চিফ ও চাকমা নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।
রাজাকার ত্রিদিব সে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানে চলে যায়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৪২ বছর ধরে সে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বসবাস করে আসছিলো।
পাকিস্তানের মন্ত্রী ও বিশেষ দূত উপজাতি রাজাকার ত্রিদিব:
১৯৭০-এর দশকে ত্রিদিব সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলো।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের বিশেষ দূত নিযুক্ত হয়ে বাংলাদেশেল স্বাধীনতা বিপক্ষে জনমত গঠনে পৃথিবীর বৌদ্ধপ্রধান রাষ্ট্রগুলো চষে বেড়ায়।

বক্তাদের ক্ষেত্রে "শব্দচয়ন" বড় একটা ব্যাপার।

বক্তাদের ক্ষেত্রে "শব্দচয়ন" বড় একটা ব্যাপার।
বক্তাদের ক্ষেত্রে "শব্দচয়ন" বড় একটা ব্যাপার। আবার তিনি যদি ইসলামিক বক্তা হোন তাহলে তো কোন কথাই নেই,উনাকে শব্দচয়নের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। কিভাবে, কোথায়, কখন কি কথা বলতে হবে,কি বলা উচিত, কি বলা উচিত নয়- উনাকে এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। আবার বক্তার সেই ভূল শব্দচয়নে জন্য বিপথগামী হতে পারে অনেকেই।
যেমন ধরুন,এখন যদি আপনি বলেন- জান্নাতে মদ খাওয়া জায়েজ (নাউজুবিল্লাহ)।এটা শুনতে নিশ্চিত ভাল লাগার কথা নয়? এখন যদি কোন যুবকের মাথায় এটা ঢুকে যায় যে, হুজুরের বক্তব্যে তো শুনলাম জান্নাতে মদ খাওয়া জায়েজ তাহলে দুনিয়ায় খেলে কি আর এমন হবে। তাহলে বুঝুন ব্যাপারটা কি হতে পারে।আবার সেই হুজুরই যদি মদের জায়গায় শরাব বলেন, পাশাপাশি সেই শরাব খেতে কেমন হবে সেটা ও যদি বলে দেন, তাহলে এমন ভাবার প্রশ্নই আসবে না তার। মনে রাখা উচিত, সাইকোলোজি বা মনোবিজ্ঞানের ভাষায় মানুষের মনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো- চেতন মন (Conscious mind) ও 
অবচেতন মন (Sub-Conscious mind)। উপরের অংশটি হলো চেতন মন, আর ভেতরের স্মৃতি সংরক্ষণ ও বিশ্বাস গঠনের অংশটি হলো অবচেতন মন। আর এই অবচেতন মন অনেক কিছু ধরে রাখে। আমাদের তাই শব্দচয়ন মারাত্মক একটা বিষয়।
একটা উদাহরণ দিলে বেশি বুঝতে সহজ হবে।
এক বিদেশি খুব ভালভাবে ব্যাকরণগতভাবে বাংলা ভাষাটা রপ্ত করল। কথা প্রসঙ্গে,তার বাসায় কাজ করত একটা ছোটো বাংলাদেশি ছেলেকে বলল -"তোমার চেয়ে আমি অনেক ভাল বাংলা বলতে পারি এখন।তখন সেই ছোট ছেলেটা বলল- স্যার,আপনি সারা জীবন বাংলা শিখলেও আমার চেয়ে ভাল বাংলা বলতে পারবেন না।তিনি বলল তাই নাকি? সে বলল জী,স্যার।তখন বিদেশি বলল তুমি কি এমন জানো যেটা আমি জানি না।ছেলেটা বলল চলেন স্যার আপনার বাংলা জানার পরিক্ষা নেই।
ছেলেটা বিদেশিকে একটা নদীর পারে নিয়ে গেলেন।তারপর বলল, ওই যে নদীর ওপারে মাঝিটা যে নৌকা নিয়ে বসে আছে, তাকে বলেন এপারে এসে আপনাকে নদী পার করে নিয়ে যেতে। বিদেশি বলল এটা আর এমন কি বিষয়।বিদেশি ডাকা শুরু করল- 
" ও হে কান্ডারি! তুমি তোমার তরী লইয়া তটে আসো।সমবিহরে পার হইয়া যাইবা।"
মাঝি তো কোন কথাই শুনে না।মাঝির চোদ্দগুষ্টি এই কথা শুনে নাই সে আর কি জবাব দেবে সে তার মত চুপ করে আছে। তিনি আবার ডাকল তাও মাঝি শোনে না।এভাবে কয়েকবার ডাক দিলেন কিন্তু মাঝি শুনল না।এরপর ছেলেটা বলল- স্যার এবার আমি ডাকি।ছেলেটা মাঝি কে বলল- ও মাঝি ভাই,একটু ওপারের পার করে দাও। মাঝি বলল, খাড়ান! আইতাছি।
গল্পের মূল কথা হল- বিদেশি যে বাংলা ভাষা জানে না, সেটা কিন্তু নয়। সে অনেক ভাল বাংলা জানে। কিন্তু কোন জায়গায় কোন শব্দ বলা দরকার সেটা সে বোঝে নাই। আর ছেলেটার রক্তে বাংলা.....
তাই শব্দচয়ন বড় একটা ব্যাপার।
পরিশেষে একটা ঘটনা দিয়ে শেষ করবো। বুখারি শরিফের হাদীস নং-৩৬১০, মুসলিম শরিফের হাদীস নং- ১০৬৪, যেই হাদীস শরীফখানায় বলা হয়েছে, জুল খুয়াইসরা আত তামিমি সম্পর্কে। যে কালিমাতে বিশ্বাসী মুসলমান ছিল, নামাজ পড়ত অনেক বেশি, কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত করত অনেক বেশি, বাহ্যিক সুন্নাতের অনুসরণ করত অনেক বেশি। কিন্তু প্রিয় নবিজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নাম ধরে ডেকে সে আদেশ দিয়েছিল এই বলে, "হে মুহাম্মাদ আপনি ন্যায়বিচার করুন!" সাথে সাথে খারেজিদের পূর্বপুরুষে পরিণত হয়েছে। হজরত আবু সায়িদ খুদরি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম থেকে অনেক অনেক সনদে ও রেওয়ায়াতে এসেছে এই হাদীস শরীফখানা।
শব্দচয়নের জন্য শুধু ফেত্না হবে তা নয়, বরং আপনি নিজেই সামান্য ভূলের জন্য মুরতাদ তথা কাফেরে পরিনত হতে পারেন।তাই বাংলাদেশের সেলিব্রিটি ইসলামিক বক্তাদের উচিত শব্দচয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া।বিশেষ করে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আহলে বাইত শরিফ উনাদের ব্যাপারে।
নিম্নে কয়েকটি হাদিস শরিফ দেয়া হলোঃ
১.প্রথমতো রাসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উচ্চারন বা স্মরণ করার আদব রক্ষা করা ফরজ, কারণ মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ
অর্থঃ (হে ইমানদারগণ) তোমরা একে অপরকে যেভাবে আহ্বান করে থাকো, সেভাবে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আহ্বান করো না। [সূরাহ নূর শরীফঃ ২৪/৬৩]
২. মহান আল্লাহ পাক উনি হযরত উম্মাহাতুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শানে মুবারক আয়াত নাযিল করে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিলেনঃ 
অর্থঃ হে নবী পত্নীগণ! আপনারা অন্য নারীদের মত নন। [সূরাহ আল আহযাব শরীফঃ ৩৩/৩২] অর্থাৎ হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যমিনের কোন মহিলাদের মত নন। উনাদের মর্যাদা সমস্ত মুমিন মহিলাদেরও ঊর্ধে।
৩. হাদীছ শরীফে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের (উম্মুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারাও আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত) স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেনঃ
অর্থঃ আমি তোমাদেরকে আমার আহলে বাইতের ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। [সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদীছ শরীফ নং ২৪০৮]
কেউ যদি মহান আল্লাহ পাক, রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উম্মুল মু’মিনিন আলাইহিন্নাস সালাম, খোলাফায়ে রাশেদিন আলাইহিমুস সালাম, সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, তাবেঈ তবে তাবেঈন রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের শানে আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করে, মনগড়া কিচ্চা কাহিনী বলে,সে সাথে সাথেই মুরতাদ তথা কাফেরে পরিনত হয়ে যাবে -এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই।
মহান আল্লাহ পাক যেন আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করেন। আমিন।

সুওয়াল-১১: নদী/রাস্তার সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য মসজিদ স্থানান্তর করার দ্বারা কি ছাবিত হয় না যে, মসজিদ তথা মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর কদাকার এবং সেটা কোন কিছুর সৌন্দর্যহানীর কারণ? নাঊযুবিল্লাহ!

সুওয়াল-১১: নদী/রাস্তার সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য মসজিদ স্থানান্তর করার দ্বারা কি ছাবিত হয় না যে, মসজিদ তথা মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর কদাকার এবং সেটা কোন কিছুর সৌন্দর্যহানীর কারণ? নাঊযুবিল্লাহ!


জাওয়াব : হ্যাঁ, নদী ও রাস্তার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য মসজিদ স্থানান্তর করার দ্বারা সেটাই ছাবিত বা প্রমাণিত হয়। শুধু তাই নয়, বরং নদী বা রাস্তার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য মসজিদ স্থানান্তর করার দ্বারা মসজিদের প্রতি ইহানতও করা হয়। যা সম্পূর্ণরূপে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

উল্লেখ্য, মসজিদ হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ঘর এবং যমীনের বুকে সর্বোত্তম ও সুন্দরতম স্থান। তাই কোন স্থানে মসজিদ থাকাটা পার্শ্ববর্তী স্থানের জন্য তথা রাস্তা-ঘাট, নদী-নালা, হাট-বাজার ইত্যাদির জন্য সৌন্দর্যহানির কারণ নয়। বরং সৌন্দর্য ও শোভাবর্ধনেরই কারণ। সাথে সাথে বরকত লাভেরও কারণ। সুবহানাল্লাহ!

যেমন এ প্রসঙ্গে সূরা বাণী ইসরাঈল শরীফ উনার ১ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
سُبْحَانَ الَّذِيْ اَسْرٰى بِعَبْدِه لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلَى الْمَسْجِدِ الْاَقْصَى الَّذِيْ بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا ۚ اِنَّهُ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ
অর্থ: পরম পবিত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি যিনি উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদুল হারাম শরীফ থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদুল আকসা শরীফ উনার দিকে। যার চারদিক আমি বরকতময় করেছি, যাতে আমি উনাকে কুদরতের কিছু নিদর্শন মুবারক দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বদ্রষ্টা।

অর্থাৎ মসজিদ মহান আল্লাহ পাক উনার এতটাই সম্মানিত, মর্যাদাম-িত, মহাপবিত্র, পছন্দনীয়, রহমতপূর্ণ ও বরকতপূর্ণ ঘর বা স্থান যে, উনার সম্মানার্থে উনার আশ-পাশের সমস্ত কিছুই বরকতপূর্ণ হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং যে স্থানে মসজিদ রয়েছে সে স্থানে বা এলাকায় মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত বরকত বিরাজ করছে। তাহলে সেই রহমত ও বরকত লাভের ঘর মসজিদ কি করে সরানো যাবে বা স্থানান্তরিত করা যাবে। বরং মসজিদ যাতে স্থানান্তরিত করতে না হয় সে ব্যবস্থাই গ্রহণ করতে হবে। কারণ যেখানে মসজিদ থাকবে সেখানে মসজিদ উনার উসীলায় মানুষ ইহকালীন ফায়দা লাভ করার সাথে সাথে পরকালীন ফায়দাও লাভ করে থাকে। এজন্য দেখা যায়, অনেকে ইন্তিকাল করার সময় ওসীয়ত করে থাকে, তাকে যেন মসজিদের পাশে দাফন করা হয় বা কবর দেয়া হয়। এক্ষেত্রে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম উনার কবিতার ছন্দমালা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য-

“মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই,
যেনো গোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই।”
কাজেই, মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ঘর মসজিদ উনার পবিত্রতা রক্ষা করা মুসলমান মাত্রই প্রত্যেকের জন্য ফরয এবং ফযীলত, মর্তবা হাছিলের কারণ।

ফলে, মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ঘর মসজিদের হুরমত বা সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষা করতে গিয়ে প্রয়োজনে নদী হোক, রাস্তা হোক তা ঘুরিয়ে নিতে হবে। কারণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার হুরমত ও পবিত্রতা রক্ষা করার মধ্যে মুসলমানের নাজাত, ফযীলত ও কামিয়াবী হাছিলের বিষয় জড়িত।
পক্ষান্তরে নদী ও রাস্তার উন্নয়নের মধ্যে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা রয়েছে বটে। তবে নদী ও রাস্তার মাধ্যমে পরকালীন ফায়দা হতেও পারে আবার নাও হতে পারে।
কাজেই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার জন্য স্থায়ী আখিরাতের ফায়দাকে প্রাধান্য দেয়া মুসলমানদের কাজ নয়।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
بَلْ تُؤْثِرُوْنَ الْـحَيَاةَ الدُّنْيَا. وَالْاٰخِرَةُ خَيْرٌ وَاَبْقٰى.
অর্থ : “তোমরা দুনিয়াবী জিন্দেগীকে প্রাধান্য দিচ্ছ। অথচ আখিরাত হচ্ছে শ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী।” (পবিত্র সূরা আ’লা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬,১৭)
অতএব, নদী ও রাস্তার জন্য কখনই মসজিদ স্থানান্তর করা যাবে না। বরং মসজিদ রক্ষার জন্য নদী ও রাস্তা সরাতে হবে বা স্থানান্তর করতে হবে।

দলীলসমূহ: (১) তাফসীরে আহ্কামুল কুরআন- লিল জাস্সাস, (২) তাফসীরে কুরতুবী, (৩) তাফসীরে বায়যাবী, (৪) তাফসীরে রূহুল মায়ানী, (৫) তাফসীরে খাযিন, (৬) তাফসীরে ইবনে কাছীর, (৭) তাফসীরে বাগবী, (৮) তাফসীরে মাদারিক, (৯) তাফসীরে ফতহুল ক্বাদীর, (১০) তাফসীরে রুহুল বয়ান, (১১) তাফসীরে মাযহারী, (১২) তাফসীরে কবীর, (১৩) তাফসীরে দুররে মনছূর, (১৪) তাফসীরে তাবারী, (১৫) মায়ালিমুত তানযীল, (১৬) তাফসীরে আবিস সউদ (১৭) মাআরিফুল কুরআন ইত্যাদি।

সুওয়াল-১০:একটি মসজিদকে রাস্তা বানিয়ে অন্যত্র যদি একাধিক বহুতল মসজিদ বানিয়ে দেয়া হয়, তবে সেটা কি শরীয়ত সম্মত হবে?

সুওয়াল-১০:একটি মসজিদকে রাস্তা বানিয়ে অন্যত্র যদি একাধিক বহুতল মসজিদ বানিয়ে দেয়া হয়, তবে সেটা কি শরীয়ত সম্মত হবে?


জাওয়াব : না, কখনোই শরীয়তসম্মত হবে না। রাস্তা, বাড়ী, ঘর ইত্যাদিকে মসজিদ বানানো যাবে। কিন্তু মসজিদকে কখনোই রাস্তা বানানো যাবে না। মসজিদের জন্য নির্ধারিত স্থান ক্বিয়ামত পর্যন্ত মসজিদই থাকবে। সেখানে বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করিয়ে দুনিয়াবী ক্ষমতা খাটিয়ে  জোড় করে রাস্তা বানালেই যে উক্ত স্থান মসজিদের হুকুম থেকে রহিত হবে তা নয়। আর অন্যত্র একাধিক বহুতল মসজিদ বানানোর অজুহাতেও কোন মসজিদ ভাঙ্গা যাবে না। 
মূলকথা হচ্ছে, মসজিদ হিসেবে যা নির্ধারিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা কোন অজুহাতেই ভাঙ্গা যাবে না। এটাই সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়ছালা।
দলীলসমূহ: তাফসীরে কবীর, তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে আহমদী এবং সমূহ ফিক্বাহর কিতাব।

সুওয়াল-৯: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদের জমি রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, নদী রক্ষণাবক্ষেণ বা সরকারী-বেসরকারী যে কোনো প্রয়োজনে স্থানান্তর করা জায়িয আছে কি?

সুওয়াল-৯: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদের জমি রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, নদী রক্ষণাবক্ষেণ বা সরকারী-বেসরকারী যে কোনো প্রয়োজনে স্থানান্তর করা জায়িয আছে কি?


জাওয়াব: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদের জমি রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, নদী রক্ষণাবক্ষেণ বা সরকারী-বেসরকারী যে কোনো প্রয়োজনে স্থানান্তর করা জায়িয নেই। কারণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদের জমি বা মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত জমি উনার একমাত্র মালিক হচ্ছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি। এখানে যদি কখনো মসজিদ ঘর নাও থাকে কিন্তু জমিটি কিয়ামত পর্যন্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদের জমি হিসেবেই থাকবে এবং মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত মসজিদ হিসেবে সংরক্ষণ করা ফরয। ব্যতিক্রম করা কাট্টা কুফরী। উক্ত স্থানে রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি ইত্যাদি করা, উক্ত জমি স্থানান্তর বা বিক্রি করা, পরিবর্তন করা কখনোই জায়িয হবেনা বরং কাট্টা হারাম ও কুফরী হবে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَنْ اَظْلَمُ مِـمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ وَسَعٰى فِـىْ خَرَابِـهَا اُولٰٓئِكَ مَا كَانَ لَـهُمْ اَنْ يَّدْخُلُوْهَا اِلَّا خَآئِفِيْنَ لَـهُمْ فِـى الدُّنْيَا خِزْىٌ وَّلَـهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ.
অর্থ: “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে? যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে বিরান করতে চেষ্টা করে। (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভেঙ্গে ফেলে বা বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না তা’যীম-তাকরীম করে না) তাদের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় অর্থাৎ খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করা ব্যতীত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে প্রবেশ করা জায়িয নেই। তাদের জন্য রয়েছে ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর “তাফসীরে আহমদী” উনার ১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
اِنَّـهَا تَدُلُّ عَلٰى اَنَّ هَدْمَ الْمسَاجِدِ وَ تَخْرِيْبَهَا مَمْنُوْعٌ وَ كَذَا الْمَنْعٌ عَنِ الصَّلٰوةِ وَ الْعِبَادَةِ وَ اِنْ كَانَ مَمْلُوْكَاَ لِلْمَانِعِ
অর্থ: “উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা বুঝা যায় যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ধ্বংস করা বা বিরান করা নিষিদ্ধ। অনুরূপ উহাতে নামায ও ইবাদত করতে নিষেধ করাও হারাম ও কুফরী, যদিও মসজিদটি নিষেধকারীর অধীনে থাকে।”
ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব “ফতওয়ায়ে আলমগীরীর” ২য় খন্ডের ৪৪৪ পৃষ্ঠায়-
وَلَوْ كَانَ مَسْجِدٌ فِىْ مَـحَلَّةٍ ضَاقَ عَلٰى اَهْلِهٖ وَلَا يَسَعُهُمْ اِنْ سَاَلَـهُمْ بَعْضُ الْـجِيْرَانِ اَنْ يَّـجْعَلُوْا ذَالِكَ الْـمَسَجِدَ لَهٗ لَيَدْخُلُهٗ فِىْ دَارِهٖ وَ يُعْطِيْهِمْ مَكَانَهٗ عَرْضًا مَا هُوَ خَيْرٌ لَهٗ فَيَسَعُ فِيْهِ اَهْلُ الْـمَحَلَّةِ قَالَ مُـحَمَّدٌ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ لَايَسَعُهُمْ ذَالِكَ كَذَا فِى الذَّخِيْرَةِ
অর্থ: যদি কোন মহল্লায় একটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ থাকে, তথাকার অধিবাসীদের পক্ষে উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদে স্থান সংকুলান না হয়, এবং তারা উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদের আয়তন বৃদ্ধি করতে সক্ষম না হয়, আর এই কারণে কোন প্রতিবেশী যদি তাদের নিকট আবেদন করে যে, তারা যেন উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদটি তার অধিকারভুক্ত করে দেন, যাতে করে সে ব্যক্তি উহা আপন বাড়ির অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পারে এবং তার পরিবর্তে সে ব্যক্তি তাদেরকে তদাপেক্ষা একটি উৎকৃষ্ট স্থান প্রদান করবে, যার মধ্যে মহল্লাবাসীদের (নামাযের) স্থান সংকুলান হবে। হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এরূপ করাটা তাদের জন্য জায়িয হবে না। জখীরা কিতাবেও অনুরূপ বর্ণিত আছে।
ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব “ফতওয়ায়ে আলমগীরীর” ২য় খন্ডের ৪৪৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
فِـىْ فَتَاوَى الْـحُجَّةِ لَوْ صَارَ اَحَدُ مَسْجِدَيْنِ قَدِيـْمًا وَتَدَاعِىْ اِلَـى الْـخَرَابِ فَاَرَادَ اَهْلُ السّكة بِبَيْعِ الْقَدْيـْمِ وَ صَرْفِهِ الْـمَسْجِدِ الْـجَدِيْدِ فَاِنَّه لَا يَـجُوْزُ اَمَّا عَلٰى قَوْلِ اَبِـىْ يُوْسُفَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فُلَانٌ الْـمَسْجِدِ وَاِنْ خَرَبَ وَاسْتَغْنٰـى عَنْهُ اَهْلُه لَا يَعُوْدُ اِلٰى مِلْكِ الْبَانِـىِّ وَ الْفَتْوٰى عَلٰى قَوْلِ اَبِـىْ يُوْسُفَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اِنَّه لَايَعُوْدُ اِلٰى مِلْكِ مَالِكٍ اَبَدًا كَذَا فِى الْـمُضْمِرَاتِ
অর্থ: ফতওয়ায়ে হুজ্জত নামক কিতাবে আছে, যদি দুইটি মসজিদ উনার মধ্যে একটি পুরাতন হয় ও বিরাণ হয়ে যায়, অতঃপর গ্রামবাসীরা মসজিদটি বিক্রি করে উহার মূল্য নতুন মসজিদে ব্যায় করার ইচ্ছা পোষণ করে, হযরত ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতানুসারে উহা জায়িয হবেনা। কেননা যদিও একটি মসজিদ বিরান হয়ে যায় এবং উহার পরিচালকগণ উহার পরিচালনা ছেড়ে দেন তাহলেও উক্ত মসজিদ উহার নির্মানকারীর অধিকারভুক্ত হতে পারেনা। ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতের উপরেই ফতওয়া। এক্ষেত্রে উক্ত মসজিদ কখনো কোন ব্যক্তি মালিকের অধিকারভুক্ত হবেনা। ইহা মুজমারাত কিতাবেও আছে। অর্থাৎ কারো পক্ষেই উক্ত মসজিদ বিক্রি বা স্থানান্তর করার অধিকার নেই। কারণ ওয়াক্বফকৃত স্থানে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ থাকুক বা না থাকুক সে স্থানটির মালিক হচ্ছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি। (উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র স্থানটুকু সংরক্ষণ করা সকলের জন্যই ফরয বিপরীত করা কাট্টা কুফরী ও হারাম)
“ফতওয়ায়ে শামী”, ৩য় খন্ড ৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে
( وَلَوْ خَرَبَ مَا حَوْلُه الخ) اَىْ وَلَوْ مَعَ بَقَائِهٖ عَامِرًا وَكَذَا لَوْ خَرَبَ وَلَيْسَ لَه مَا يَعْمُرُبِهٖ وَقَدْ اِسْتَغْنَى النَّاسَ عَنْهُ لِبِنَاءِ مَسْجِدٍ اٰخَرٍ (حَوْلَه عِنْدَ الْاِمَامِ وَالثَّانِـىِّ) فَلَا يَعُوْدُ مِيْرَاثًا وَلَا يـَجُوْزُ نَقْلُه وَ نَقْلُ مَالِهٖ اِلٰـى مَسْجِدٍ اُخَرٍ سِوَاءٍ كَانُوْا يُصَلُّوْنَ فِيْهِ اَوْ لَا وَهُوَ الْفَتْوٰى حَاوِىٍ قُدْسِىٍّ وَاَكْثَرُ الْـمَشَائِخِ عَلَيْهِ مُـجْتَبٰـى وَ اِلَّا وَجْهَ فَتْحٍ بـَحْرٍ
অর্থ: যদি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার পার্শ্ববর্তী স্থান বিরাণ হয়ে যায়, কিন্তু মসজিদটি স্থায়ী থাকে, এমনভাবে যে, যদি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বিরাণ হয়ে যায় এবং উহার সংস্কার করার কোন উপায় না থাকে, লোকজন অন্য মসজিদ তৈরী করেছে এজন্য উহাতে নামায পড়া ত্যাগ করে থাকে, তবে ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মতে উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ কোনো উত্তরাধিকারীর অধিকারভুক্ত হবেনা। এবং উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ এবং উহার সম্পত্তি অন্য কোনো মসজিদে স্থানান্তরিত করাও জায়িয হবেনা। লোকজন উহাতে নামায পড়–ক আর নাই পড়–ক। হাবী কুদছী এর উপরেই ফতওয়া দিয়েছেন। মুজতবা বলেন- অধিকাংশ প্রাচীন আলিম উনারা এই মত সর্মথন করেছেন। ফতহুল ক্বদীরে আছে ইহাই সমধিক যুক্তিযুক্ত মত। ইহা বাহরুর রায়েকেও আছে। যদি বিরান মসজিদও স্থানান্তরিত করা জায়িয না হয় তবে চালু বা সচল মসজিদ স্থানান্তরিত করা জায়িয হয় কিভাবে?
উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার একচ্ছত্র মালিক যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি, তাই কোনো অবস্থাতেই অন্য কারো জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার জায়গা স্থানান্তরিত করা অর্থাৎ রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, নদী রক্ষণাবক্ষেণ বা সরকারী-বেসরকারী যে কোনো প্রয়োজনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার জায়গা স্থানান্তরিত করা জায়িয নেই বরং হারাম ও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
দলীলসমূহ: ১. তাফসীরে ত্ববারী শরীফ, ২. তাফসীরে খাযিন শরীফ, ৩. তাফসীরে বাগবী শরীফ, ৪. তাফসীরে মাযহারী শরীফ, ৫. তাফসীরে আহমদী শরীফ, ৬. তাফসীরে সামারকন্দী শরীফ, ৭. তাফসীরে জালালাইন শরীফ, ৮. তাফসীরে দুররে মানছূর শরীফ, ৯. তাফসীরে নিশাপুরী, ১০. তাফসীরে মাওয়ারাদী, ১১. মাজমাউয যাওয়াইদ, ১২. জামি‘উছ ছগীর, ১৩. ফাতহুল কাবীর, ১৪. জামি‘উল আহাদীছ, ১৫. কাশফুল খফা, ১৬. আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ, ১৭. কানযুল ‘উম্মাল, ১৮. সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী, ১৯. মুছান্নাফে আবী শায়বা, ২০. শুয়াবুল ঈমান, ২১. ত্ববারানী শরীফ, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ২২. ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, ২৩. ফতহুল ক্বাদীর, ২৪. জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ, ২৫. বাহরুর রায়িক, ২৬. আইনী, ২৭. ইনায়া, ২৮. আইনুল হিদায়া, ২৯. হিদায়া মায়াদ দিরায়াহ, ৩০. দুররুল মুখতার, ৩১. কুদরী, ৩২. ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ইত্যাদি।
বি: দ্র: এখানে সংক্ষিপ্তাকারে জাওয়াব দেয়া হলো। প্রয়োজনে আরো দলীলসহ বিস্তারিতভাবে ফতওয়া প্রদান করা হবে। ইনশাআল্লাহ!

সুওয়াল-৮: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার জমি রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল নির্মাণ, নদী রক্ষণাবেক্ষণ বা যে কোনো সরকারী বেসরকারী প্রয়োজনে বিক্রি করা জায়িয আছে কি? দলীল ভিত্তিক জাওয়াব জানতে চাই।

সুওয়াল-৮: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার জমি রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল নির্মাণ, নদী রক্ষণাবেক্ষণ বা যে কোনো সরকারী বেসরকারী প্রয়োজনে বিক্রি করা জায়িয আছে কি? দলীল ভিত্তিক জাওয়াব জানতে চাই।
🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌

🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌

জাওয়াব: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার জমি বা জায়গা যত বড় প্রয়োজনেই হোক না কেন কোনো অবস্থাতেই বিক্রয় করা জায়িয তো নয়ই বরং হারাম ও কবীরা গুনাহ আর বিক্রয় করাকে জায়িয বলা বা মনে করা কুফরী। কারণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার একমাত্র মালিক হচ্ছেন খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- 
وَاَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلّٰهِ
অর্থ: “আর নিশ্চয়ই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার।” (পবিত্র সূরা জ্বিন শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ- ১৮)
অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার এ কথার অর্থ হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সমূহ উনার মালিক হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক তিনি। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اَلْـمَسْجِدُ بَيْتُ اللهِ
অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর।” সুবহানাল্লাহ!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে অন্যের মালিকানাধীন জমি বা ঘর কারো জন্য বিক্রি করা, ভাঙ্গা বা স্থানান্তর করা জায়িয আছে কি? কস্মিনকালেও জায়িয নেই, তাহলে কারো জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার জমি বিক্রি করা কি করে জায়িয হতে পারে? সে তো এই জমির মালিক না।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ اللهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ اَنْفُسَهُمْ وَاَمْوَالَـهُمْ بِاَنَّ لَـهُمُ الْـجَنَّةَ ۚ
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি মু’মিনদের জান ও মাল খরীদ করে নিয়েছেন সম্মানিত জান্নাত উনার বিনিময়ে।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১১)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার উপর ভিত্তি করে ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কারো জন্য তার শরীরের রক্ত বা কোনো অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রি করা জায়িয নেই। কারণ এগুলোর মালিক সে নয় বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি এগুলোর মালিক। ঠিক একইভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার একচ্ছত্র মালিক হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক তিনি। তাই অন্য কারো জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার জমি বিক্রয় করা জায়িয নয়।
এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব কুদূরীর মধ্যে উল্লেখ আছে-
وَاِذَا بَنٰى مَسْجِدًا لَـمْ يَزَلْ مُلْكَهٗ عَنْهُ حَتّٰى يُفَرِّزَهٗ عَنْ مُلْكِهٖ بِطَرِيْقِهٖ وَيَاْذَنُ لِلنَّاسِ بِالصَّلٰوةِ فَاِذَا صَلّٰى فِيْهِ وَاحِدٌ زَالَ مُلْكُهٗ عِنْدَ اَبِـىْ حَنِيْفَةَ رَحْـمَةُ اللهِ تَعَالٰى وَقَالَ اَبِـىْ يُوْسُفَ رَحْـمَةُ اللهِ تَعَالٰى يَزُوْلُ مُلْكُهٗ عَنْهُ بِقَوْلِهٖ جَعَلْتُ مَسْجِدًا
অর্থ: যদি কেউ কোনো মসজিদ নির্মাণ করে, তবে ততক্ষণ পর্যন্ত উহার মালিকানা দূরীভূত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে লোকদেরকে উক্ত মসজিদের মধ্যে ছলাত বা নামায পড়ার অনুমতি না দিবে। অতঃপর যখন উক্ত মসজিদে একজন মুছল্লীও ছলাত বা নামায পড়বে তখন ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে মালিকানা দূর হয়ে যাবে। আর ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তার এ কথার দ্বারা মালিকানা দূর হয়ে যাবে যে, আমি উহাকে মসজিদ বানিয়েছি।
অর্থাৎ কোনো জমি বা স্থানে মসজিদ নির্মাণ করে ছলাত বা নামায আদায় করলে বা ইযনে আম থাকলেই সে স্থানে ওয়াকফ কার্যকর হয়ে যাবে। আর ওয়াকফকৃত স্থানের মালিক হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক তিনি। উক্ত স্থান বিক্রি করতে হলে মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে অনুমতি নিতে হবে, যা কস্মিনকালেও সম্ভব না। সুতরাং মসজিদের জায়গা বা জমি বিক্রি করাও যাবে না।
এ প্রসঙ্গে ফিক্বহের বিখ্যাত কিতাব ‘কুদূরীর’ মধ্যে উল্লেখ আছে-
لَـمْ يَـجُزْ بَيْعُهٗ
অর্থাৎ এ ব্যাপারে সকল ইমাম মুজতাহিদ একমত যে, ওয়াকফকৃত সম্পদ বিক্রি করা বা অন্যকে মালিক বানানো জায়িয নেই।
এ প্রসঙ্গে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
تَصَدَّقْ بِاَصْلِهَا لَا يُبَاعُ وَلَا يُوْرَثُ وَلَا يُوْهَبُ
অর্থ: “মূল যমীনটি এমনভাবে ছদক্বা বা ওয়াক্ফ কর যেন উহা বিক্রয় করা না যায়, মিরাছ সাব্যস্ত না হয় এবং উহা যেনো হিবা বা দান করা না যায়।” (কুদুরী)
অর্থাৎ ওয়াকফকৃত মসজিদের জমি বিক্রয় করা যাবে না। উক্ত জমির ওয়ারিছ সাব্যস্ত হবে না এবং উক্ত জমি হেবা বা দানও করা যাবে না, এটাই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার ফতওয়া।
উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার জমি রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, নদী সংরক্ষণ বা সরকারী-বেসরকারী যে কোন প্রয়োজনে বিক্রয় করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কবীরা গুনাহ। হালাল বা জায়িয বলা কুফরী।
দলীলসমূহ: ১. তাফসীরে ত্ববারী শরীফ, ২. তাফসীরে খাযিন শরীফ, ৩. তাফসীরে বাগবী শরীফ, ৪. তাফসীরে মাযহারী শরীফ, ৫. তাফসীরে আহমদী শরীফ, ৬. তাফসীরে সামারকন্দী শরীফ, ৭. তাফসীরে জালালাইন শরীফ, ৮. তাফসীরে দুররে মানছূর শরীফ, ৯. তাফসীরে নিশাপুরী, ১০. ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ১১. ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১২. ফতহুল ক্বাদীর, ১৩. জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ, ১৪. বাহরুর রায়িক, ১৫. আইনী, ১৬. ইনায়া, ১৭. আইনুল হিদায়া, ১৮. হিদায়া মায়াদ দিরায়াহ, ১৯. দুররুল মুখতার, ২০. কুদরী, ২১. ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ইত্যাদি।
বি: দ্র: এখানে সংক্ষিপ্তাকারে জাওয়াব দেয়া হলো। প্রয়োজনে আরো দলীলসহ বিস্তারিতভাবে ফতওয়া প্রদান করা হবে। ইনশাআল্লাহ!

সুওয়াল-৭: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন, প্রশস্তকরণ, পুরাতন ভবন ভেঙ্গে নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ বা মসজিদ সংশ্লিষ্ট যে কোন ধরণের উন্নয়নের জন্য ভাঙ্গা, আর রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, নদী রক্ষণাবক্ষেণ বা সরকারী/বেসরকারী যে কোনো প্রয়োজনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গার হুকুম কি একই রকম? দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

সুওয়াল-৭: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন, প্রশস্তকরণ, পুরাতন ভবন ভেঙ্গে নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ বা মসজিদ সংশ্লিষ্ট যে কোন ধরণের উন্নয়নের জন্য ভাঙ্গা, আর রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, নদী রক্ষণাবক্ষেণ বা সরকারী/বেসরকারী যে কোনো প্রয়োজনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গার হুকুম কি একই রকম? দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।


জাওয়াব: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন, প্রশস্তকরণ, পুরাতন ভবন ভেঙ্গে নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ বা যে কোন ধরনের উন্নয়নের উদ্দেশ্যে আর রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, নদী রক্ষণাবেক্ষণ বা সরকারী/বেসরকারী যে কোনো প্রয়োজনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা কখনোই এক নয়।
অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার কাজে মসজিদ সংস্কার আর মসজিদ উনার সংস্কার কাজ ব্যতীত মসজিদ ভাঙ্গার হুকুম এক নয়। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার কাজে মসজিদ ভাঙ্গা শরীয়ত সম্মত কিন্তু গায়েরে মসজিদ বা বাইরের কোন উদ্দেশ্যে মসজিদ ভাঙ্গা হারাম-নাজায়িয ও কুফরী।
মূলতঃ সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন, প্রশস্তকরণ, বহুতল ভবন নির্মাণ বা যে কোনো ধরনের উন্নয়ন মূলক কাজ করা হাক্বীক্বতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ আবাদ বা তৈরী করারই অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে যিনি খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ِـىْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ মুবারক করেন- সম্মান করার জন্য এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার জন্য অর্থাৎ না ভাঙ্গার জন্য, ঐ সকল মুবারক ঘরসমূহ উনাদেরকে যে সকল মুবারক ঘরসমূহে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক স্মরণ করা হয় ও তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করা হয় সকাল-সন্ধ্যায়।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা নূর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে ত্ববারী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ فِىْ قَوْلِهٖ {فِـىْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ} يَعْنِـىْ كُلَّ مَسْجِدٍ يُصَلّٰى فِيْهِ جَامِعٍ اَوْ غَيْرِهٖ
অর্থ: “রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি فِـىْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ “মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ মুবারক করেন- সম্মান করার জন্য এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে আবাদ বা সংরক্ষণ করার জন্য ঐ সমস্ত ঘর মুবারক” এই আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে বলেন-

كُلَّ مَسْجِدٍ يُصَلّٰى فِيْهِ جَامِعٍ اَوْ غَيْرِهٖ
“অর্থাৎ প্রত্যেক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যেখানে নামায পড়া হয়। সেটা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জামি’ মসজিদ মুবারক হোক অথবা অন্য যে কোন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকই হোক।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে ত্ববারী শরীফ ১৯/১৮৯)
অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সংস্কার, সৌন্দর্য্যবর্ধন, প্রশস্তকরণ, বহুতল ভবন নির্মাণ এগুলো সব মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ আবাদ করারই নামান্তর। যা মহান আল্লাহ পাক উনারই সম্মানিত নির্দেশ মুবারক।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ قِرْصَافَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَنَّهٗ سَـمِعَ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ اِبْنُوا الْمَسَاجِدَ وَاَخْرِجُوا الْقُمَامَةَ مِنْهَا فَمَنْ بَنٰـى لِلّٰهِ مَسْجِدًا بَنَى اللهُ لَهٗ بَيْتًا فِى الْـجَنَّةِ قَالَ رَجُلٌ يَّا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهٰذِهِ الْمَسَاجِدُ الَّتِـىْ تُبْنٰى فِى الطَّرِيْقِ قَالَ نَعَمْ وَاِخْرَاجُ الْقُمَامَةِ مِنْهَا مُهُوْرُ حُوْرِ الْعِيْنِ
অর্থ: “হযরত আবূ ক্বিরছাফাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, তোমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করো এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখো। অর্থাৎ বেশী বেশী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মাণ করো এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করো অর্থাৎ প্রশস্ত করো, সৌন্দর্য্যবর্ধন করো। সুবহানাল্লাহ! কেননা যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য একটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক আবাদ বা নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ একটি বালাখানা নির্মাণ করবেন। সুবহানাল্লাহ! একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে সকল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক রাস্তায় নির্মাণ করা হয়?
(সেই সকল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনাদের হুকুম কী? ওই সকল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা নির্মাণ করবেন, উনাদের জন্যও কি জান্নাতে বালাখানা নির্মাণ করা হবে?) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হ্যাঁ। সুবহানাল্লাহ! আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক থেকে ময়লা দূর করা তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, সৌন্দর্য্যবর্ধন করা সম্মানিত জান্নাতী হুর উনাদের মোহরানাস্বরূপ। সুবহানাল্লাহ! (ত্ববারনী শরীফ ৩/১৯, দুরররে মানছূর ৪/১৪৪, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১১৩, জামি‘উছ ছগীর ১/৫, ফাতহুল কাবীর ১/২১, জামি‘উল আহাদীছ ১/১৩৭, কাশফুল খফা ২/৩৪, আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ ৩/৪৮৮, কানযুল ‘উম্মাল ৭/৬৫৫ ইত্যাদি)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ اَلصِّدِّيْقَةِ (حَضْرَتْ عَائِشَةَ) عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ اَمَرَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِبِنَاءِ الْمَسَاجِدِ فِى الدُّوْرِ وَاَنْ تُنَظَّفَ وَتُطَيَّبَ
অর্থ: “সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাড়িতে বাড়িতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করার জন্য সম্মানিত আদেশ মুবারক করেছেন এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় সৌন্দর্য্যমন্ডিত করে রাখার জন্য উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার জন্য সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, ইত্যাদি)
অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সংস্কার করা, সৌন্দয্যবর্ধন করা, প্রশস্তকরা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সংরক্ষন বা আবাদ করারই অন্তর্ভুক্ত। যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনারই নির্দেশ মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
পক্ষান্তরে রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল নির্মাণ, নদী রক্ষণাবেক্ষণ বা সরকারী বেসরকারী যে কোনো প্রয়োজনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তর করা অর্থ হচ্ছে হাক্বীক্বতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বিরান বা ধ্বংস করা। নাউযুবিল্লাহ!
অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার বাইরের কাজের জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার গায়ে হাত দেয়া যাবে না।
এ প্রসঙ্গে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَنْ اَظْلَمُ مِـمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ وَسَعٰى فِـىْ خَرَابِـهَا اُولٰٓئِكَ مَا كَانَ لَـهُمْ اَنْ يَّدْخُلُوْهَا اِلَّا خَآئِفِيْنَ لَـهُمْ فِـى الدُّنْيَا خِزْىٌ وَّلَـهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ.
অর্থ: “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে? যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে বিরান করতে চেষ্টা করে।
(অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভেঙ্গে ফেলে বা বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না তা’যীম-তাকরীম করে না) তাদের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় অর্থাৎ খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করা ব্যতীত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে প্রবেশ করা জায়িয নেই। তাদের জন্য রয়েছে ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪)
এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে জালালাইন শরীফ ও তাফসীরে মাযহারী শরীফ’ উনাদের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
لَا اَحَدَ اَظْـلَمُ مِـمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ
অর্থ: “ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে বড় যালিম, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক স্মরণ করতে বাধা দেয়।” (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বিরাণ করে বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না তা’যীম তাকরীম করে না) (তাফসীরে জালালাইন ১/২৪, তাফসীরে মাযহারী ১/১১৬)
‘তাফসীরে সমরকন্দী শরীফ, তাফসীরে খাযিন শরীফ ও তাফসীরে বাগবী শরীফ’ উনার মধ্যে وَمَنْ اَظْـلَمُ “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে?” এই অংশের ব্যাখ্যায় উল্লেখ রয়েছে, وَمَنْ اَكْفَرُ “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় কাফির আর কে? অর্থাৎ ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় বা বিরাণ করতে চেষ্টা করে।” (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বন্ধ করে রাখে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গে বা ভাঙ্গার কোশেশ করে অর্থাৎ হক্ব আদায় করে না, তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করে না) না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে সমরকন্দী শরীফ ১/৮৬, তাফসীরে খাযিন শরীফ ১/৭২, তাফসীরে বাগবী শরীফ ১/১৫৭)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর “তাফসীরে আহমদী” উনার ১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
اِنَّـهَا تَدُلُّ عَلٰى اَنَّ هَدْمَ الْمسَاجِدِ وَ تَخْرِيْبَهَا مَمْنُوْعٌ وَ كَذَا الْمَنْعٌ عَنِ الصَّلٰوةِ وَ الْعِبَادَةِ وَ اِنْ كَانَ مَمْلُوْكَاَ لِلْمَانِعِ
অর্থ: উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা বুঝা যায় যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ধ্বংস করা বা বিরান করা নিষিদ্ধ। অনুরূপ উহাতে নামায ও ইবাদত করতে নিষেধ করাও হারাম, যদিও মসজিদটি নিষেধকারীর অধীনে থাকে।
যারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বিরান বা ধ্বংস করবে তাদের পরিণতি সম্পর্কে আল্লামা কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে মাযহারী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
لَـهُمْ فِـى الدُّنْيَا خِزْىٌ قَتْلٌ وَسَبْـىٌ وَّذِلَّةٌ بِضَرْبِ الْـجِزْيَةِ وَّلَـهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ. اَلنَّارُ الْـمُؤَبَّدَةُ بِكُفْرِهِمْ وَظُـلْمِهِمْ.
অর্থ: “তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়ার যমীনে লাঞ্ছনা। (অর্থাৎ) কতল (হত্যা, মৃত্যুদ-), বন্দিত্ব (জেল-হাজত) এবং জিযিয়া কর প্রদানের অবমাননা। আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। (অর্থাৎ পরকালে) তাদের জন্য রয়েছে তাদের কুফরী ও যুলুমের কারণে চিরস্থায়ী জাহান্নাম।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী শরীফ ১/১১৬)
উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সংস্কার, সৌন্দর্য্যবর্ধন, প্রশস্তকরণ, বহুতলকরণ বা যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য পূণঃনির্মাণ করা আর রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল নির্মাণ, নদী রক্ষণাবেক্ষণ বা সরকারী বেসরকারী যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজের জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা কখনোই এক নয়। কারণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মাণ বা তৈরী করা আর বিরান বা ধ্বংস করা দুটো কখনোই এক হতে পারেনা। যারা এটাকে এক বলে তারা আশাদ্দুদ দরজার জাহিল অর্থাৎ চরম পর্যায়ের মূর্খ। তাদের বক্তব্য সম্মানিত শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।
দলীলসমূহ: ১. তাফসীরে ত্ববারী শরীফ, ২. তাফসীরে খাযিন শরীফ, ৩. তাফসীরে বাগবী শরীফ, ৪. তাফসীরে মাযহারী শরীফ, ৫. তাফসীরে আহমদী শরীফ, ৬. তাফসীরে সামারকন্দী শরীফ, ৭. তাফসীরে জালালাইন শরীফ, ৮. তাফসীরে দুররে মানছূর শরীফ, ৯. তাফসীরে নিশাপুরী, ১০. মাজমাউয যাওয়াইদ, ১১. জামি‘উছ ছগীর, ১২. ফাতহুল কাবীর, ১৩. জামি‘উল আহাদীছ, ১৪. কাশফুল খফা, ১৫. আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ, ১৬. কানযুল ‘উম্মাল, ১৭. সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী, ১৮. মুছান্নাফে আবী শায়বা, ১৯. শুয়াবুল ঈমান, ২০. ত্ববারানী শরীফ ইত্যাদি।
বি: দ্র: এখানে সংক্ষিপ্তাকারে জাওয়াব দেয়া হলো। প্রয়োজনে আরো দলীলসহ বিস্তারিতভাবে ফতওয়া প্রদান করা হবে। ইনশাআল্লাহ!