সুওয়াল-৭: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন, প্রশস্তকরণ, পুরাতন ভবন ভেঙ্গে নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ বা মসজিদ সংশ্লিষ্ট যে কোন ধরণের উন্নয়নের জন্য ভাঙ্গা, আর রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, নদী রক্ষণাবক্ষেণ বা সরকারী/বেসরকারী যে কোনো প্রয়োজনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গার হুকুম কি একই রকম? দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।



জাওয়াব: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন, প্রশস্তকরণ, পুরাতন ভবন ভেঙ্গে নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ বা যে কোন ধরনের উন্নয়নের উদ্দেশ্যে আর রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, নদী রক্ষণাবেক্ষণ বা সরকারী/বেসরকারী যে কোনো প্রয়োজনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা কখনোই এক নয়।
অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার কাজে মসজিদ সংস্কার আর মসজিদ উনার সংস্কার কাজ ব্যতীত মসজিদ ভাঙ্গার হুকুম এক নয়। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার কাজে মসজিদ ভাঙ্গা শরীয়ত সম্মত কিন্তু গায়েরে মসজিদ বা বাইরের কোন উদ্দেশ্যে মসজিদ ভাঙ্গা হারাম-নাজায়িয ও কুফরী।
মূলতঃ সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন, প্রশস্তকরণ, বহুতল ভবন নির্মাণ বা যে কোনো ধরনের উন্নয়ন মূলক কাজ করা হাক্বীক্বতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ আবাদ বা তৈরী করারই অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে যিনি খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ِـىْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ মুবারক করেন- সম্মান করার জন্য এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার জন্য অর্থাৎ না ভাঙ্গার জন্য, ঐ সকল মুবারক ঘরসমূহ উনাদেরকে যে সকল মুবারক ঘরসমূহে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক স্মরণ করা হয় ও তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করা হয় সকাল-সন্ধ্যায়।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা নূর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে ত্ববারী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ فِىْ قَوْلِهٖ {فِـىْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ} يَعْنِـىْ كُلَّ مَسْجِدٍ يُصَلّٰى فِيْهِ جَامِعٍ اَوْ غَيْرِهٖ
অর্থ: “রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি فِـىْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ “মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ মুবারক করেন- সম্মান করার জন্য এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে আবাদ বা সংরক্ষণ করার জন্য ঐ সমস্ত ঘর মুবারক” এই আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে বলেন-

كُلَّ مَسْجِدٍ يُصَلّٰى فِيْهِ جَامِعٍ اَوْ غَيْرِهٖ
“অর্থাৎ প্রত্যেক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যেখানে নামায পড়া হয়। সেটা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জামি’ মসজিদ মুবারক হোক অথবা অন্য যে কোন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকই হোক।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে ত্ববারী শরীফ ১৯/১৮৯)
অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সংস্কার, সৌন্দর্য্যবর্ধন, প্রশস্তকরণ, বহুতল ভবন নির্মাণ এগুলো সব মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ আবাদ করারই নামান্তর। যা মহান আল্লাহ পাক উনারই সম্মানিত নির্দেশ মুবারক।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ قِرْصَافَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَنَّهٗ سَـمِعَ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ اِبْنُوا الْمَسَاجِدَ وَاَخْرِجُوا الْقُمَامَةَ مِنْهَا فَمَنْ بَنٰـى لِلّٰهِ مَسْجِدًا بَنَى اللهُ لَهٗ بَيْتًا فِى الْـجَنَّةِ قَالَ رَجُلٌ يَّا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهٰذِهِ الْمَسَاجِدُ الَّتِـىْ تُبْنٰى فِى الطَّرِيْقِ قَالَ نَعَمْ وَاِخْرَاجُ الْقُمَامَةِ مِنْهَا مُهُوْرُ حُوْرِ الْعِيْنِ
অর্থ: “হযরত আবূ ক্বিরছাফাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, তোমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করো এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখো। অর্থাৎ বেশী বেশী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মাণ করো এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করো অর্থাৎ প্রশস্ত করো, সৌন্দর্য্যবর্ধন করো। সুবহানাল্লাহ! কেননা যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য একটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক আবাদ বা নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ একটি বালাখানা নির্মাণ করবেন। সুবহানাল্লাহ! একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে সকল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক রাস্তায় নির্মাণ করা হয়?
(সেই সকল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনাদের হুকুম কী? ওই সকল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা নির্মাণ করবেন, উনাদের জন্যও কি জান্নাতে বালাখানা নির্মাণ করা হবে?) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হ্যাঁ। সুবহানাল্লাহ! আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক থেকে ময়লা দূর করা তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, সৌন্দর্য্যবর্ধন করা সম্মানিত জান্নাতী হুর উনাদের মোহরানাস্বরূপ। সুবহানাল্লাহ! (ত্ববারনী শরীফ ৩/১৯, দুরররে মানছূর ৪/১৪৪, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১১৩, জামি‘উছ ছগীর ১/৫, ফাতহুল কাবীর ১/২১, জামি‘উল আহাদীছ ১/১৩৭, কাশফুল খফা ২/৩৪, আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ ৩/৪৮৮, কানযুল ‘উম্মাল ৭/৬৫৫ ইত্যাদি)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ اَلصِّدِّيْقَةِ (حَضْرَتْ عَائِشَةَ) عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ اَمَرَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِبِنَاءِ الْمَسَاجِدِ فِى الدُّوْرِ وَاَنْ تُنَظَّفَ وَتُطَيَّبَ
অর্থ: “সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাড়িতে বাড়িতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করার জন্য সম্মানিত আদেশ মুবারক করেছেন এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় সৌন্দর্য্যমন্ডিত করে রাখার জন্য উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার জন্য সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, ইত্যাদি)
অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সংস্কার করা, সৌন্দয্যবর্ধন করা, প্রশস্তকরা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সংরক্ষন বা আবাদ করারই অন্তর্ভুক্ত। যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনারই নির্দেশ মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
পক্ষান্তরে রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল নির্মাণ, নদী রক্ষণাবেক্ষণ বা সরকারী বেসরকারী যে কোনো প্রয়োজনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তর করা অর্থ হচ্ছে হাক্বীক্বতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বিরান বা ধ্বংস করা। নাউযুবিল্লাহ!
অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার বাইরের কাজের জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার গায়ে হাত দেয়া যাবে না।
এ প্রসঙ্গে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَنْ اَظْلَمُ مِـمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ وَسَعٰى فِـىْ خَرَابِـهَا اُولٰٓئِكَ مَا كَانَ لَـهُمْ اَنْ يَّدْخُلُوْهَا اِلَّا خَآئِفِيْنَ لَـهُمْ فِـى الدُّنْيَا خِزْىٌ وَّلَـهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ.
অর্থ: “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে? যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে বিরান করতে চেষ্টা করে।
(অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভেঙ্গে ফেলে বা বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না তা’যীম-তাকরীম করে না) তাদের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় অর্থাৎ খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করা ব্যতীত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে প্রবেশ করা জায়িয নেই। তাদের জন্য রয়েছে ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪)
এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে জালালাইন শরীফ ও তাফসীরে মাযহারী শরীফ’ উনাদের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
لَا اَحَدَ اَظْـلَمُ مِـمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ
অর্থ: “ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে বড় যালিম, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক স্মরণ করতে বাধা দেয়।” (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বিরাণ করে বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না তা’যীম তাকরীম করে না) (তাফসীরে জালালাইন ১/২৪, তাফসীরে মাযহারী ১/১১৬)
‘তাফসীরে সমরকন্দী শরীফ, তাফসীরে খাযিন শরীফ ও তাফসীরে বাগবী শরীফ’ উনার মধ্যে وَمَنْ اَظْـلَمُ “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে?” এই অংশের ব্যাখ্যায় উল্লেখ রয়েছে, وَمَنْ اَكْفَرُ “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় কাফির আর কে? অর্থাৎ ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় বা বিরাণ করতে চেষ্টা করে।” (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বন্ধ করে রাখে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গে বা ভাঙ্গার কোশেশ করে অর্থাৎ হক্ব আদায় করে না, তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করে না) না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে সমরকন্দী শরীফ ১/৮৬, তাফসীরে খাযিন শরীফ ১/৭২, তাফসীরে বাগবী শরীফ ১/১৫৭)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর “তাফসীরে আহমদী” উনার ১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
اِنَّـهَا تَدُلُّ عَلٰى اَنَّ هَدْمَ الْمسَاجِدِ وَ تَخْرِيْبَهَا مَمْنُوْعٌ وَ كَذَا الْمَنْعٌ عَنِ الصَّلٰوةِ وَ الْعِبَادَةِ وَ اِنْ كَانَ مَمْلُوْكَاَ لِلْمَانِعِ
অর্থ: উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা বুঝা যায় যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ধ্বংস করা বা বিরান করা নিষিদ্ধ। অনুরূপ উহাতে নামায ও ইবাদত করতে নিষেধ করাও হারাম, যদিও মসজিদটি নিষেধকারীর অধীনে থাকে।
যারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বিরান বা ধ্বংস করবে তাদের পরিণতি সম্পর্কে আল্লামা কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে মাযহারী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
لَـهُمْ فِـى الدُّنْيَا خِزْىٌ قَتْلٌ وَسَبْـىٌ وَّذِلَّةٌ بِضَرْبِ الْـجِزْيَةِ وَّلَـهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ. اَلنَّارُ الْـمُؤَبَّدَةُ بِكُفْرِهِمْ وَظُـلْمِهِمْ.
অর্থ: “তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়ার যমীনে লাঞ্ছনা। (অর্থাৎ) কতল (হত্যা, মৃত্যুদ-), বন্দিত্ব (জেল-হাজত) এবং জিযিয়া কর প্রদানের অবমাননা। আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। (অর্থাৎ পরকালে) তাদের জন্য রয়েছে তাদের কুফরী ও যুলুমের কারণে চিরস্থায়ী জাহান্নাম।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী শরীফ ১/১১৬)
উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সংস্কার, সৌন্দর্য্যবর্ধন, প্রশস্তকরণ, বহুতলকরণ বা যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য পূণঃনির্মাণ করা আর রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল নির্মাণ, নদী রক্ষণাবেক্ষণ বা সরকারী বেসরকারী যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজের জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা কখনোই এক নয়। কারণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মাণ বা তৈরী করা আর বিরান বা ধ্বংস করা দুটো কখনোই এক হতে পারেনা। যারা এটাকে এক বলে তারা আশাদ্দুদ দরজার জাহিল অর্থাৎ চরম পর্যায়ের মূর্খ। তাদের বক্তব্য সম্মানিত শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।
দলীলসমূহ: ১. তাফসীরে ত্ববারী শরীফ, ২. তাফসীরে খাযিন শরীফ, ৩. তাফসীরে বাগবী শরীফ, ৪. তাফসীরে মাযহারী শরীফ, ৫. তাফসীরে আহমদী শরীফ, ৬. তাফসীরে সামারকন্দী শরীফ, ৭. তাফসীরে জালালাইন শরীফ, ৮. তাফসীরে দুররে মানছূর শরীফ, ৯. তাফসীরে নিশাপুরী, ১০. মাজমাউয যাওয়াইদ, ১১. জামি‘উছ ছগীর, ১২. ফাতহুল কাবীর, ১৩. জামি‘উল আহাদীছ, ১৪. কাশফুল খফা, ১৫. আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ, ১৬. কানযুল ‘উম্মাল, ১৭. সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী, ১৮. মুছান্নাফে আবী শায়বা, ১৯. শুয়াবুল ঈমান, ২০. ত্ববারানী শরীফ ইত্যাদি।
বি: দ্র: এখানে সংক্ষিপ্তাকারে জাওয়াব দেয়া হলো। প্রয়োজনে আরো দলীলসহ বিস্তারিতভাবে ফতওয়া প্রদান করা হবে। ইনশাআল্লাহ!

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট