সুওয়াল-১১: নদী/রাস্তার সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য মসজিদ স্থানান্তর করার দ্বারা কি ছাবিত হয় না যে, মসজিদ তথা মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর কদাকার এবং সেটা কোন কিছুর সৌন্দর্যহানীর কারণ? নাঊযুবিল্লাহ!



জাওয়াব : হ্যাঁ, নদী ও রাস্তার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য মসজিদ স্থানান্তর করার দ্বারা সেটাই ছাবিত বা প্রমাণিত হয়। শুধু তাই নয়, বরং নদী বা রাস্তার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য মসজিদ স্থানান্তর করার দ্বারা মসজিদের প্রতি ইহানতও করা হয়। যা সম্পূর্ণরূপে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

উল্লেখ্য, মসজিদ হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ঘর এবং যমীনের বুকে সর্বোত্তম ও সুন্দরতম স্থান। তাই কোন স্থানে মসজিদ থাকাটা পার্শ্ববর্তী স্থানের জন্য তথা রাস্তা-ঘাট, নদী-নালা, হাট-বাজার ইত্যাদির জন্য সৌন্দর্যহানির কারণ নয়। বরং সৌন্দর্য ও শোভাবর্ধনেরই কারণ। সাথে সাথে বরকত লাভেরও কারণ। সুবহানাল্লাহ!

যেমন এ প্রসঙ্গে সূরা বাণী ইসরাঈল শরীফ উনার ১ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
سُبْحَانَ الَّذِيْ اَسْرٰى بِعَبْدِه لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلَى الْمَسْجِدِ الْاَقْصَى الَّذِيْ بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا ۚ اِنَّهُ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ
অর্থ: পরম পবিত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি যিনি উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদুল হারাম শরীফ থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদুল আকসা শরীফ উনার দিকে। যার চারদিক আমি বরকতময় করেছি, যাতে আমি উনাকে কুদরতের কিছু নিদর্শন মুবারক দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বদ্রষ্টা।

অর্থাৎ মসজিদ মহান আল্লাহ পাক উনার এতটাই সম্মানিত, মর্যাদাম-িত, মহাপবিত্র, পছন্দনীয়, রহমতপূর্ণ ও বরকতপূর্ণ ঘর বা স্থান যে, উনার সম্মানার্থে উনার আশ-পাশের সমস্ত কিছুই বরকতপূর্ণ হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং যে স্থানে মসজিদ রয়েছে সে স্থানে বা এলাকায় মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত বরকত বিরাজ করছে। তাহলে সেই রহমত ও বরকত লাভের ঘর মসজিদ কি করে সরানো যাবে বা স্থানান্তরিত করা যাবে। বরং মসজিদ যাতে স্থানান্তরিত করতে না হয় সে ব্যবস্থাই গ্রহণ করতে হবে। কারণ যেখানে মসজিদ থাকবে সেখানে মসজিদ উনার উসীলায় মানুষ ইহকালীন ফায়দা লাভ করার সাথে সাথে পরকালীন ফায়দাও লাভ করে থাকে। এজন্য দেখা যায়, অনেকে ইন্তিকাল করার সময় ওসীয়ত করে থাকে, তাকে যেন মসজিদের পাশে দাফন করা হয় বা কবর দেয়া হয়। এক্ষেত্রে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম উনার কবিতার ছন্দমালা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য-

“মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই,
যেনো গোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই।”
কাজেই, মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ঘর মসজিদ উনার পবিত্রতা রক্ষা করা মুসলমান মাত্রই প্রত্যেকের জন্য ফরয এবং ফযীলত, মর্তবা হাছিলের কারণ।

ফলে, মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ঘর মসজিদের হুরমত বা সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষা করতে গিয়ে প্রয়োজনে নদী হোক, রাস্তা হোক তা ঘুরিয়ে নিতে হবে। কারণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার হুরমত ও পবিত্রতা রক্ষা করার মধ্যে মুসলমানের নাজাত, ফযীলত ও কামিয়াবী হাছিলের বিষয় জড়িত।
পক্ষান্তরে নদী ও রাস্তার উন্নয়নের মধ্যে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা রয়েছে বটে। তবে নদী ও রাস্তার মাধ্যমে পরকালীন ফায়দা হতেও পারে আবার নাও হতে পারে।
কাজেই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার জন্য স্থায়ী আখিরাতের ফায়দাকে প্রাধান্য দেয়া মুসলমানদের কাজ নয়।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
بَلْ تُؤْثِرُوْنَ الْـحَيَاةَ الدُّنْيَا. وَالْاٰخِرَةُ خَيْرٌ وَاَبْقٰى.
অর্থ : “তোমরা দুনিয়াবী জিন্দেগীকে প্রাধান্য দিচ্ছ। অথচ আখিরাত হচ্ছে শ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী।” (পবিত্র সূরা আ’লা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬,১৭)
অতএব, নদী ও রাস্তার জন্য কখনই মসজিদ স্থানান্তর করা যাবে না। বরং মসজিদ রক্ষার জন্য নদী ও রাস্তা সরাতে হবে বা স্থানান্তর করতে হবে।

দলীলসমূহ: (১) তাফসীরে আহ্কামুল কুরআন- লিল জাস্সাস, (২) তাফসীরে কুরতুবী, (৩) তাফসীরে বায়যাবী, (৪) তাফসীরে রূহুল মায়ানী, (৫) তাফসীরে খাযিন, (৬) তাফসীরে ইবনে কাছীর, (৭) তাফসীরে বাগবী, (৮) তাফসীরে মাদারিক, (৯) তাফসীরে ফতহুল ক্বাদীর, (১০) তাফসীরে রুহুল বয়ান, (১১) তাফসীরে মাযহারী, (১২) তাফসীরে কবীর, (১৩) তাফসীরে দুররে মনছূর, (১৪) তাফসীরে তাবারী, (১৫) মায়ালিমুত তানযীল, (১৬) তাফসীরে আবিস সউদ (১৭) মাআরিফুল কুরআন ইত্যাদি।

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট