🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌
🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌
জাওয়াব: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার জমি বা জায়গা যত বড় প্রয়োজনেই হোক না কেন কোনো অবস্থাতেই বিক্রয় করা জায়িয তো নয়ই বরং হারাম ও কবীরা গুনাহ আর বিক্রয় করাকে জায়িয বলা বা মনে করা কুফরী। কারণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার একমাত্র মালিক হচ্ছেন খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَاَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلّٰهِ
অর্থ: “আর নিশ্চয়ই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার।” (পবিত্র সূরা জ্বিন শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ- ১৮)
অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার এ কথার অর্থ হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সমূহ উনার মালিক হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক তিনি। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اَلْـمَسْجِدُ بَيْتُ اللهِ
অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর।” সুবহানাল্লাহ!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে অন্যের মালিকানাধীন জমি বা ঘর কারো জন্য বিক্রি করা, ভাঙ্গা বা স্থানান্তর করা জায়িয আছে কি? কস্মিনকালেও জায়িয নেই, তাহলে কারো জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার জমি বিক্রি করা কি করে জায়িয হতে পারে? সে তো এই জমির মালিক না।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ اللهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ اَنْفُسَهُمْ وَاَمْوَالَـهُمْ بِاَنَّ لَـهُمُ الْـجَنَّةَ ۚ
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি মু’মিনদের জান ও মাল খরীদ করে নিয়েছেন সম্মানিত জান্নাত উনার বিনিময়ে।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১১)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার উপর ভিত্তি করে ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কারো জন্য তার শরীরের রক্ত বা কোনো অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রি করা জায়িয নেই। কারণ এগুলোর মালিক সে নয় বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি এগুলোর মালিক। ঠিক একইভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার একচ্ছত্র মালিক হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক তিনি। তাই অন্য কারো জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার জমি বিক্রয় করা জায়িয নয়।
এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব কুদূরীর মধ্যে উল্লেখ আছে-
وَاِذَا بَنٰى مَسْجِدًا لَـمْ يَزَلْ مُلْكَهٗ عَنْهُ حَتّٰى يُفَرِّزَهٗ عَنْ مُلْكِهٖ بِطَرِيْقِهٖ وَيَاْذَنُ لِلنَّاسِ بِالصَّلٰوةِ فَاِذَا صَلّٰى فِيْهِ وَاحِدٌ زَالَ مُلْكُهٗ عِنْدَ اَبِـىْ حَنِيْفَةَ رَحْـمَةُ اللهِ تَعَالٰى وَقَالَ اَبِـىْ يُوْسُفَ رَحْـمَةُ اللهِ تَعَالٰى يَزُوْلُ مُلْكُهٗ عَنْهُ بِقَوْلِهٖ جَعَلْتُ مَسْجِدًا
অর্থ: যদি কেউ কোনো মসজিদ নির্মাণ করে, তবে ততক্ষণ পর্যন্ত উহার মালিকানা দূরীভূত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে লোকদেরকে উক্ত মসজিদের মধ্যে ছলাত বা নামায পড়ার অনুমতি না দিবে। অতঃপর যখন উক্ত মসজিদে একজন মুছল্লীও ছলাত বা নামায পড়বে তখন ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে মালিকানা দূর হয়ে যাবে। আর ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তার এ কথার দ্বারা মালিকানা দূর হয়ে যাবে যে, আমি উহাকে মসজিদ বানিয়েছি।
অর্থাৎ কোনো জমি বা স্থানে মসজিদ নির্মাণ করে ছলাত বা নামায আদায় করলে বা ইযনে আম থাকলেই সে স্থানে ওয়াকফ কার্যকর হয়ে যাবে। আর ওয়াকফকৃত স্থানের মালিক হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক তিনি। উক্ত স্থান বিক্রি করতে হলে মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে অনুমতি নিতে হবে, যা কস্মিনকালেও সম্ভব না। সুতরাং মসজিদের জায়গা বা জমি বিক্রি করাও যাবে না।
এ প্রসঙ্গে ফিক্বহের বিখ্যাত কিতাব ‘কুদূরীর’ মধ্যে উল্লেখ আছে-
لَـمْ يَـجُزْ بَيْعُهٗ
অর্থাৎ এ ব্যাপারে সকল ইমাম মুজতাহিদ একমত যে, ওয়াকফকৃত সম্পদ বিক্রি করা বা অন্যকে মালিক বানানো জায়িয নেই।
এ প্রসঙ্গে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
تَصَدَّقْ بِاَصْلِهَا لَا يُبَاعُ وَلَا يُوْرَثُ وَلَا يُوْهَبُ
অর্থ: “মূল যমীনটি এমনভাবে ছদক্বা বা ওয়াক্ফ কর যেন উহা বিক্রয় করা না যায়, মিরাছ সাব্যস্ত না হয় এবং উহা যেনো হিবা বা দান করা না যায়।” (কুদুরী)
অর্থাৎ ওয়াকফকৃত মসজিদের জমি বিক্রয় করা যাবে না। উক্ত জমির ওয়ারিছ সাব্যস্ত হবে না এবং উক্ত জমি হেবা বা দানও করা যাবে না, এটাই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার ফতওয়া।
উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার জমি রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, নদী সংরক্ষণ বা সরকারী-বেসরকারী যে কোন প্রয়োজনে বিক্রয় করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কবীরা গুনাহ। হালাল বা জায়িয বলা কুফরী।
দলীলসমূহ: ১. তাফসীরে ত্ববারী শরীফ, ২. তাফসীরে খাযিন শরীফ, ৩. তাফসীরে বাগবী শরীফ, ৪. তাফসীরে মাযহারী শরীফ, ৫. তাফসীরে আহমদী শরীফ, ৬. তাফসীরে সামারকন্দী শরীফ, ৭. তাফসীরে জালালাইন শরীফ, ৮. তাফসীরে দুররে মানছূর শরীফ, ৯. তাফসীরে নিশাপুরী, ১০. ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ১১. ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১২. ফতহুল ক্বাদীর, ১৩. জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ, ১৪. বাহরুর রায়িক, ১৫. আইনী, ১৬. ইনায়া, ১৭. আইনুল হিদায়া, ১৮. হিদায়া মায়াদ দিরায়াহ, ১৯. দুররুল মুখতার, ২০. কুদরী, ২১. ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ইত্যাদি।
বি: দ্র: এখানে সংক্ষিপ্তাকারে জাওয়াব দেয়া হলো। প্রয়োজনে আরো দলীলসহ বিস্তারিতভাবে ফতওয়া প্রদান করা হবে। ইনশাআল্লাহ!