সুওয়াল-১৯মসজিদ স্থানান্তর করার স্বপক্ষে কেউ কেউ বলে থাকে যে, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে কূফার দায়িত্বশীল ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু। একদা মসজিদ হতে বাইতুল মাল চুরি হয়ে গেলে সে ঘটনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে জানানো হয়। তিনি মসজিদ স্থানান্তর করার নির্দেশ দেন। ফলে মসজিদ স্থানান্তরিত করা হয় এবং পূর্বের স্থান খেজুর বিক্রির বাজারে পরিণত হয়। আর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, তোমাদের উপর অপরিহার্য হলো, আমার সুন্নত ও আমার খুলাফায়ে রাশিদীন উনাদের সুন্নতকে আকড়ে ধরা। অতএব, একান্ত প্রয়োজনে মসজিদ স্থানান্তর করা যায়। তারা দলীল হিসেবে যে কিতাব সমূহের নাম উল্লেখ করেছে তা হচ্ছে ১. ফতওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়াহ ৩১ খ-, ২১৭ পৃষ্ঠা, ইমাম তবারানী আল মু’জামুল কবীর, হা/৮৮৫৪, ২. আবূ দাউদ হা/৪৬০৭, তিরমিযী হা/২৬৭৬, মিশকাত হা/১৬৫।তাদের উক্ত বক্তব্য ও দলীল কতটুকু ঠিক? জাওয়াব দিয়ে বিভ্রান্তি দূর করার আরজি জানাচ্ছি।



জাওয়াব: মসজিদ স্থানান্তর করার বিষয়ে তাদের উক্ত বক্তব্য ও দলীল মোটেও সঠিক হয়নি। বরং তা সম্পূর্ণ মনগড়া, মিথ্যা, জালিয়াতিপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর, গোমরাহীমূলক, হারাম ও কুফরী হয়েছে।
তারা মসজিদ স্থানান্তর করার বিষয়ে ফতওয়ায়ে ইবনে তায়মিয়াহ ও আল মু’জামুল কাবীর লিত তবারানী কিতাব দু’টির দলীল দিয়েছে।
আর হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুন্নত আঁকড়ে ধরা অপরিহার্য সে বিষয়ে দলীল দিয়েছে আবূ দাউদ, তিরমিযী ও মিশকাত শরীফ কিতাব তিনটির। কিন্তু তারা দলীল হিসেবে ৫টি কিতাবের নাম একসাথে উল্লেখ করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। কারণ সাধারণ মানুষ মনে করবে, মসজিদ স্থানান্তর করার বিষয়ে হয়তো উক্ত ৫টি কিতাবেই উল্লেখ রয়েছে। অথচ শুধুমাত্র ইবনে তাইমিয়ার কিতাবটি ব্যতীত আর বাকী ৪টি কিতাবের কোন কিতাবেই মসজিদ স্থানান্তর করার বিষয়টি উল্লেখ নেই।
কিন্তু সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের অনুসারীদের নিকট এবং বিশেষ করে সম্মানিত হানাফী মাযহাবের অনুসারীদেরও নিকট ইবনে তাইমিয়ার ফতওয়া আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ইবনে তায়মিয়াহ বাতিল ৭২ ফিরক্বার অন্যতম মুশাব্বিহা ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত। তার বহু আক্বীদা ও আমলে কুফরী রয়েছে।

যেমন- সে তার সমসাময়িক আলিম-উলামাদেরকে গালি-গালাজ করতো। নাঊযুবিল্লাহ! ছোট-বড়, প্রবীন ও নবীন সকল আলিম-উলামাদের বিরোধিতা করতো। নাঊযুবিল্লাহ! এমনকি সে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সমালোচনাকালে উনাকে কোন এক বিষয়ে ভ্রান্ত বলে উল্লেখ করে। নাঊযুবিল্লাহ!
শুধু তাই নয়, সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কেও বলে যে, তিনি ১৭টি মাসয়ালায় ভুল করেছেন এবং পবিত্র কুরআন শরীফ উনার খিলাফ করেছেন। নাউযুবিল্লাহ!

সে একবার জুমুয়ার দিন বলে যে, আমি যেরূপ (মিম্বরের উপরিস্থ তাক থেকে নি¤œ তাকে) নামছি, সেরূপ মহান আল্লাহ পাক তিনিও (আরশ হতে) প্রথম আকাশে নেমে থাকেন। নাঊযুবিল্লাহ!
পূর্ববর্তী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম ও আলিমগণ এমনকি তার সমসাময়িক আলিমগণ সম্পর্কেও সে বদ ধারণা পোষণ করতো। নাঊযুবিল্লাহ!

তার আরো বক্তব্য হচ্ছে, রাত্রিতে অপবিত্র অর্থাৎ গোসল ফরজ হলে গোসল ব্যতীত তাহাজ্জুদ পড়ে নিবে, নাঊযুবিল্লাহ! কুরআন শরীফ মাখলুক্ব, নাঊযুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও আকৃতি আছে, নাঊযুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি আরশে থাকেন, নাঊযুবিল্লাহ! তিনি আরশের পরিমাণ আয়তন বিশিষ্ট, নাঊযুবিল্লাহ! তিনি আকাশ হতে নেমে আসেন, নাঊযুবিল্লাহ! নবীগণ নিষ্পাপ নন, নাঊযুবিল্লাহ! রওজা শরীফ যিয়ারতের নিয়তে সফর করা হারাম, নাঊযুবিল্লাহ! এবং তাওরাত শরীফ ও ইনজীল শরীফ-এর শব্দ পরিবর্তন হয় নাই।” নাঊযুবিল্লাহ! অনুরূপ আরো বহু শরীয়ত বিরোধী আক্বীদা-আমল রয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! (দলীলসমূহ: আদ্-দুরারুল কামিনাহ, রিহ্লাতু ইবনে বতুতা, লিসানুল মীযান, শরহে মাওয়াহিব লিয যারকানী, তুহফাতুন নাজার, ফতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ, আল-জাওহারুল মুনায্যাম, তবাকাতুল কুবরা ইত্যাদি)
উক্তসব কুফরী আক্বীদা ও আমলের কারণে তার সমসাময়িক অনুসরণীয় হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ ইবনে তাইমিয়াকে হত্যা অথবা কারারুদ্ধ করার জন্য বাদশাহকে বাধ্য করেন। বাদশাহ তাকে বন্দী করেন এবং সে কারারুদ্ধ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।
আর তারা যে ‘আল মু’জামুল কাবীর লিত তবারানী’ কিতাবের হাদীছ শরীফখানার কথা বলেছে তাতে তারা চরম মিথ্যা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! তাদের সেই চরম মিথ্যা, জালিয়াতি ও বিভ্রন্তি থেকে মুসলমানদের হিফাজতের লক্ষ্যে উল্লেখিত হাদীছ শরীফখানা মূল কিতাব হতে উল্লেখ করা হলো-
عَنْ حَضْرَتِ الْقَاسِمِ رَحـْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ قَدِمَ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ وَقَدْ بَنٰى حَضْرَتْ سَعْدٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ الْقَصْرَ وَاتَّـخَذَ مَسْجِدًا فِـيْ أَصْحَابِ التَّمْرِ فَكَانَ يَـخْرُجُ إِلَيْهِ فِـي الصَّلَوَاتِ فَلَمَّا وَلـِيَ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ بَيْتَ الْمَالِ نَقَبَ بَيْتَ الْمَالِ فَأَخَذَ الرَّجُلَ فَكَتَبَ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ إِلٰـى حَضْرَتْ عُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَكَتَبَ حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ أَنْ لَّا تَقْطَعْهُ وَانْقُلِ الْمَسْجِدَ وَاجْعَلْ بَيْتَ الْمَالِ مِـمَّا يَلِى الْقِبْلَةَ فَإِنَّهٗ لَا يَزَالُ فِـي الْمَسْجِدِ مَنْ يُّصَلِّيْ فَنَقَلَهٗ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ وَخَطَّ هَذِهِ الْخُطَّةَ وَكَانَ الْقَصْرُ الَّذِيْ بَنٰى حَضْرَتْ سَعْدٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ شَاذَرَ وَاِنْ كَانَ الْإِمَامُ يَقُوْمُ عَلَيْهِ فَأَمَرَ بِه حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ فَنُقِضَ حَتَّى اسْتَوٰى مَقَامُ الْإِمَامِ مَعَ النَّاسِ.
অর্থ: “হযরত ক্বাসিম ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি কূফায় আগমন করেন। সেখানে হযরত সা’দ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি একটি ভবন নির্মাণ করেছেন। আর (উক্ত ভবনের একটা অংশে) তিনি খেজুর মালিকদের জন্য নামাযের স্থান নির্ধারণ করেছেন। তিনি সেখানে নামায আদায়ের জন্য তাশরীফ নিতেন। অতঃপর যখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি ‘বাইতুল মালের’ দায়িত্বশীল হলেন, তখন কোনো এক লোক বাইতুল মালে সিঁধ কেটে প্রবেশ করলো। তিনি লোকটিকে ধরলেন।

অতঃপর এই বিষয়টি জানিয়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট চিঠি লিখলেন। উক্ত চিঠির জবাবে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি চিঠি লিখে পাঠালেন যে, আপনি তার হাত কাটবেন না। বরং আপনি নামাযের স্থানটি (একটু পেছনে) সরিয়ে নেন। আর ‘বাইতুল মাল’ সামনের দিকে ক্বিবলা বরাবর নির্ধারণ করুন। কেননা, নামায আদায়ের স্থানে (সাধারণতঃ) মুছল্লীগণ সবসময় অবস্থান করবেন (তখন বাইতুল মাল সামনে থাকায় কোনো ক্ষতি হবে না)। অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি উক্ত নামায আদায়ের স্থানটি সরিয়ে নিলেন (আর বাইতুল মালকে ক্বিবলার দিকে রাখলেন) এবং তিনি উক্ত স্থানটির সীমানা চিহ্নিত করার জন্য দাগ দিলেন। হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি যে ভবনটি নির্মাণ করেছেন তা প্রশস্ত ছিলো। অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার নির্দেশ মুবারকে ইমাম দাঁড়ানোর স্থানকে ভেঙ্গে ফেলা হয়, এমনকি ইমামের স্থান মুক্তাদির স্থানে স্থির করা হয়। (আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ৯/১৯২, মাজমাউয যাওয়াইদ লিল হাইছামী ৬/২৭৫)
উক্ত হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা দ্বারা প্রতিভাত যে,
(এক) হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র নামায ঘরের স্থানকে সরানোর জন্য বলেছেন, তাই উনার নির্দেশ অনুযায়ী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি শুধুমাত্র ইমামের দাঁড়ানোর স্থানটিকে ভেঙ্গে সেখানে বাইতুল মাল স্থাপন করেন। ফলে ইমামের দাঁড়ানোর স্থান মুক্তাদির কাতারে স্থিরকৃত হয়।

(দুই) বাইতুল মাল থেকে মাল চুরি হয়নি। বরং চুরির জন্য বাইতুল মালে কেবল প্রবেশ করেছিল। তাই ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত ব্যক্তির হাত কাটতে নিষেধ করেছিলেন।
(তিন) নামায ঘরে শুধুমাত্র ইমামের দাঁড়ানোর স্থানটি ভেঙ্গে সেখানে বাইতুল মাল নির্ধারণ করা হয়। ফলে সেখানে খেজুর বিক্রির বাজার হওয়ার কোনো সুযোগই নেই।

অতএব, ক্বিল্লতে ইলম-ক্বিল্লতে ফাহম তথা কম ইলম ও কম বুঝের কারণে কতক মূর্খ, গুমরাহ, লা-মাযহাবী, নীম মোল্লা শ্রেণীর লোক পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার সঠিক মর্মার্থ উদঘাটন করতে অক্ষম হয়ে মিথ্যা, মনগড়া ও ভুল অর্থ করে সাধারণ মুসলমান উনাদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। কেননা উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার মধ্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে-
وَقَدْ بَنٰى حَضْرَتْ سَعْدٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ الْقَصْرَ وَاتَّـخَذَ مَسْجِدًا فِـيْ أَصْحَابِ التَّمْرِ.
অর্থ: “হযরত সা’দ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি একটি ভবন নির্মাণ করেছেন। আর তিনি (উক্ত ভবনের একটা অংশে) খেজুর মালিকদের জন্য নামাযের স্থান নির্ধারণ করেছেন।”
কিন্তু এখানে বলা হয়নি যে, তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মাণ করেছেন।

প্রকৃতপক্ষে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফে مَسْجِدًا (মসজিদ) শব্দ মুবারক দ্বারা মূলতঃ নামায পড়ার ঘর বা স্থানকে বুঝানো হয়েছে। শরয়ী কোন মসজিদকে নয়।

স্মরণীয় যে, مَسْجِد (মসজিদ) শব্দ উল্লেখ থাকলেই যে, মসজিদ বা জামে মসজিদকে বুঝাবে, বিষয়টি এমন নয়। বরং مَسْجِد (মসজিদ) শব্দ মুবারক দ্বারা নামাযের সময়কেও বুঝানো হয়ে থাকে আবার নামাযের সাধারণ স্থানকেও বুঝানো হয়ে থাকে। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ উনার ২৯ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَأَقِيْمُوْا وُجُوْهَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ
অর্থ: আর তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় স্বীয় মুখমন্ডল সোজা রাখ অর্থাৎ সোজা ক্বিবলার দিকে রাখতে যতœবান হও।
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে ইবনে আব্বাস’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-
{عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ} عِنْدَ كُلِّ صَلَاةٍ
অর্থাৎ “...প্রত্যেক নামাযের সময়।”
অনুরূপ উক্ত পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ উনার ৩১ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
يَا بَنِـيْۤ اٰدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ
অর্থ: হে বনী আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় উত্তম পোশাক তথা তাক্বওয়ার পোশাক বা সুন্নতী পোশাক পরিধান করে নাও।
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে مَسْجِد (মসজিদ) শব্দ মুবারক দ্বারা নামাযের সময়কে বুঝানো হয়েছে।
একইভাবে مَسْجِد (মসজিদ) শব্দ মুবারক দ্বারা নামাযের সাধারণ স্থানকে বুঝানো হয়েছে। সে সম্পর্কে একাধিক বর্ণনা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
جُعِلَتْ لـِىَ الْاَرْضُ مَسْجِدًا وَّطَهُوْرًا
অর্থ: “আমার জন্য সমস্ত যমীনকে পবিত্র ও নামাযের স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
خَيْـرُ مَسَاجِدِ النِّسَآءِ قَعْرُ بُيُوْتِـهِنَّ
অর্থ: “মহিলাদের জন্য নামাযের শ্রেষ্ঠ স্থান হচ্ছে তাদের ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠ।” (মুসতাদরাকে হাকিম)
উক্ত হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ইমাম ত্ববারানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
خَيْـرُ صَلَاةِ النِّسَآءِ فـِيْ قَعْرِ بُيُوْتِـهِنَّ
অর্থ: “মহিলাদের ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠের নামাযই শ্রেষ্ঠ নামায।” (ত্ববারানী শরীফ)
উল্লেখিত হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে যথাক্রমে مَسْجِدًا ও مَسَاجِد শব্দ মুবারক দ্বারা আমভাবে মসজিদ বা জামে মসজিদ কোনটাই বুঝানো হয়নি। বরং নামাযের সাধারণ স্থানকে বুঝানো হয়েছে।
তাহলে কি মূর্খ, গুমরাহ, লা-মাযহাবী ও নীম মোল্লা শ্রেণীর লোকেরা মহিলাদের প্রত্যেকটি ঘরকে মসজিদ বা জামে মসজিদ বলবে? নাকি সমস্ত যমীনকে বলবে?
মূলতঃ উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে মহিলাদের প্রত্যেকটি ঘর এবং সমস্ত যমীনকে মসজিদ বা জামে মসজিদ কোনটিই বুঝানো হয়নি। এ বিষয়টিই মূর্খ, গুমরাহ, লা-মাযহাবী, নীম মোল্লাদের জানা নেই। তাই এদের ব্যাপারে কিতাবে লিখা হয়-
نیم حکیم خطر جان+ نیم ملا خطر ایمان
“নীম হেকীম খত্বরে জান, নীম মোল্লা খত্বরে ঈমান।”
অর্থ: “আধা ডাক্তাররা জীবন নাশের কারণ, আধা মোল্লারা ঈমান ধ্বংসের কারণ।”

অপরদিকে বলতে হয় যে, সুওয়ালে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখিত নামাযের স্থানকে যদি মসজিদ বা জামে মসজিদ-ই বুঝানো হতো তবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ইবারতে وَقَدْ بَنٰى... الْقَصْرَ (তিনি ভবন বানালেন) এর স্থলে وَقَدْ بَنٰى... مَسْجِدًا (তিনি মসজিদ বানালেন) উল্লেখ থাকতো। মূলতঃ হযরত সা’দ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি উনার প্রয়োজনে একটি ভবন নির্মাণ করেছিলেন এবং উক্ত ভবনের কোনো একটি কক্ষের একটি অংশকে সেখানে আগমনকারী লোকদের সুবিধার্থে নামাযের স্থান হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। পরবর্তীতে বাইতুল মাল চুরি হওয়ার আশংকায় ইমামের দাঁড়ানোর স্থানকে কিছুটা পেছনে নিয়ে বাইতুল মালকে ক্বিবলার দিকে মুছল্লীদের সামনে রাখা হয় যেন তা চুরি না হয়। যেহেতু নামাযের উক্ত স্থানটি কোনো মসজিদ ছিলো না সেহেতু তা আগে-পিছে করা বা পরিবর্তন করা স্বাভাবিকই ছিলো।
কিন্তু এই পবিত্র হাদীছ শরীফকে মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তর বৈধ হওয়ার দলীল হিসেবে ব্যবহার করা কোনোভাবেই জায়িয হবে না। বরং হারাম-নাজায়িয ও কাট্টা কুফরী হবে। কেননা নামায পড়ার সাধারণ স্থান ও শরয়ী মসজিদ একই বিষয় নয়। নামায পড়ার সাধারণ স্থানকে প্রয়োজনে সরানো বা স্থানান্তরিত করা যায়, কিন্তু মসজিদের জন্য বরাদ্দকৃত স্থানকে কোনোভাবেই ভাঙ্গা বা স্থানান্তরিত করা জায়িয নেই। এটাই হচ্ছে মহাসম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার সর্বস্বীকৃত মত বা ফতওয়া।

সুতরাং মেট্রো রেলের নামে হোক, নদী রক্ষার নামে হোক, রাস্তা সম্প্রসারণের নামে হোক, উন্নয়ন কর্মসূচীর নামে হোক বা যেকোনো অজুহাতেই হোক মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তর করা কস্মিনকালেও শরীয়তসম্মত নয়; বরং তা সুস্পষ্ট হারাম ও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত এবং জাহান্নামী হওয়ার কারণ। নাঊযুবিল্লাহ!

{দলীলসমূহঃ (১) তবারানী শরীফ (২) বায়হাক্বী শরীফ (৩) মাজমাউয যাওয়ায়িদ (৪) জামিউল কাবীর (৫) জামিউছ ছগীর (৬) ফতহুল বারী (৭) ইরশাদুল ক্বারী (৮) মুসতাদরাকে হাকিম (৯) ফতহুল কাবীর (১০) ইবনে খুযাইমাহ (১১) মাওসূআতুল ফিক¡িহয়্যাহ (১২) মুসনাদে আযহারী (১৩) মিরআতুল মাফাতীহ (১৪) মুসলিম শরীফ (১৫) মিশকাত শরীফ (১৬) মিরকাত শরীফ (১৭) ফতহুল মুলহিম (১৮) কান্যুল উম্মাল (১৯) আল্-ফিরদাউস (২০) জামিউল আহাদীছ (২১) নাইলুল আওতার (২২) তারগীব-তারহীব (২৩) মুসনাদে শিহাব (২৪) আবূ ইয়া’লা (২৫) তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিল্ জাসসাস (২৬) তাফসীরে কুরতুবী (২৭) তাফসীরে তাবারী (২৮) তাফসীরে বায়দ্ববী (২৯) তাফসীরে রুহুল মা‘য়ানী (৩০) তাফসীরে রুহুল বায়ান (৩১) তাফসীরে ইবনে কাছীর (৩২) তাফসীরে দুররে মানছূর (৩৩) তাফসীরে জালালাইন (৩৪) তাফসীরে কামালাইন (৩৫) তাফসীরে মাযহারী (৩৬) তাফসীরে কবীর (৩৭) ফতওয়ায়ে শামী (৩৮) দূরারুল হুক্কাম (৩৯) দূররুল মুখতার (৪০) বাহ্রুর রায়িক (৪১) ফতওয়ায়ে আলমগীরী (৪২) মাজমুয়ায়ে ফতওয়া-আব্দুল হাই লখনৌবী (৪৩) ফতওয়ায়ে দারুল ইফতাহ্্ মিছর, (৪৪) ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, (৪৫) ইমদাদুল ফতওয়া (৪৬) লুগাতুল কুরআন (৪৭) লুগাতুল আহাদীছ (৪৮) লিসানুল আরব (৪৯) মিছবাহুল লুগাত (৫০) আল-মুনজিদ ইত্যাদি}

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট