কদম শব্দের অর্থ হলো ‘পা’। আর ‘বুছী’ শব্দটি ফার্সী যার অর্থ হলো চুম্বন করা। সুতরাং কদমবুছীর অর্থ দাঁড়ায় পা চুম্বন বা পদ চুম্বন করা।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কদম মোবারকে বুছা (চুম্বন) দিতেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা একজন অপরজনের কদমবুছী করেছেন।
তবে অবশ্যই উক্ত কদমবুছী তা’যীম, মুহব্বত ও বরকত হাছীলের লক্ষ্যেই করেছেন, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়। তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দৃষ্টিতে ফক্বীহগণ ফতওয়া দেন যে, পীর-বুযুর্গ, পরহেযগার আলেম, ওস্তাদ, মুরুব্বী, পিতা-মাতা ও ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সন্মানের অধিকারী, এরূপ ব্যক্তিদের কদমবুছী করা সুন্নত, সুন্নতে ছাহাবা ও তাবেয়ীনদের অন্তর্ভূক্ত। কদমবুছীর ন্যায় উপরোক্ত ব্যক্তিদের দস্তবুছী অর্থাৎ হাত চুম্বন করাও সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণিত।
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ إِدْرِيسَ، ووَغُنْدَرٌ، وَأَبُو أُسَامَةَ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ عَمْررِو بْنِ مُرَّةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلَمَةَ، عَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَسَّالٍ، «أَنَّ قَوْمًا مِنَ الْيَهُودِ قَبَّلُوا يَدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْههِ وَسَلَّمَ وَرِجْلَيْهِ»
অর্থঃ- হযরত ছাফওয়ান ইবনে আস্যাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহুদীদের একদল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উভয় হাত ও পা মোবারক বুছা (চুম্বন) দিয়েছেন। তিরমিযী এ হাদীছ শরীফ উনাকে হাসান-সহীহ্ বলেছেন। (আবু দাউদ শরীফ, নাসাঈ শরীফ, মোস্তাদরেকে হাকিম, তিরমিযী শরীফ, হাদীছ-২৭৩৩, ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীছ-৩৭০৫, ফাতহুল বারী জিঃ ১১ পৃঃ ৫৭, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী জিঃ ৭ পৃঃ ৫২৫, মোছান্নেফ ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ-২৬২০, ইলাউস সুনান জিঃ ১৭ পৃঃ ৪২৬)
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عِيسَى بْنِ الطَّبَّاعِ، حَدَّثَنَا مَطَرُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الأَعْنَقُ، حَدَّثَتْنِي أُمُّ أَبَانَ بِنْتُ الْوَازِعِ بْنِ زَارِعٍ، عَنْ جَدِّهَا، زَارِعٍ وَكَانَ فِي وَفْدِ عَبْدِ الْقَيْسِ قَالَ لَمَّا قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ فَجَعَلْنَا نَتَبَادَرُ مِنْ رَوَاححِلِنَا فَنُقَبِّلُ يَدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَرِجْلَهُ
অর্থঃ- হযরত ওয়াযে ইবনে যারে উনার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা আব্দুল কায়স গোত্রে থাকা অবস্থায় যখন মদীনা শরীফ আসতাম, তখন আমরা সাওয়ারী হতে তাড়াতাড়ী অবতরন করে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত ও পা মোবারক বুছা (চুম্বন) দিতাম। (আবু দাউদ শরীফ, হাদীছ-৫২২৫, বযলুল মাজহুদ জিঃ ৬ পৃঃ ৩২৮, ফতহুল বারী জিঃ ১১ পৃঃ ৫৭, মিশকাত শরীফ, মিরকাত জিঃ ৭ পৃঃ ৮০, আশয়াতুল লোমাত, মুযাহিরে হক্ব, ইলাউস সুনান জিঃ ১৭ পৃঃ ৪২৬)
عن بريدة- قال- فائذن لى اقبل يديك ورجليك- فاذن له اى فى تقبيل يديه ورجليه- فقبلهما.(نسيم الريض شرح الشفاء لقاضى عياض ج ৩ صفه ৫০، الاذكار للنووى)
অর্থঃ- হযরত বোরাইদাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন (গাছের সিজদা দেয়ার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর) আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে আপনার উভয় হাত ও পা মুবারকে বুছা (চুম্বন) দেয়ার অনুমতি দিন। তখন উনাকে উভয় হাত ও পা মোবারকে বুছা (চুম্বন) দেয়ার অনুমতি দেয়া হলে- তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উভয় হাত ও পা মুবারকে বুছা (চুম্বন) দিলেন। (নাসীমুর রিয়াজ শরহে কাজ্বী আয়াজ জিঃ ৩ পৃঃ ৫০, কিতাবুল আযকার লিন্ নববী)
عن زيدبن ثابت انه قبل يد انس- واخرج ايضاان عليا قبل يد العباس ورجله- (فتح البارى شرح بخارى ج ১১ صفه৫৭، تحفة الاحوذى شرح ترمذى ج৭ صفه ৫২৮)
অর্থঃ- হযরত যায়দ ইবনে সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুা এর হাত মুবারকে বুছা (চুম্বন) দিয়েছেন। তিনি এটাও বর্ণনা করেন যে, হযরত আলী ইবনে আবী তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাত ও পা মোবারকে বুছা (চুম্বন) দিয়েছেন। (ফতহুল বারী জিঃ ১১ পৃঃ ৫৭, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী শরহে তিরমিযী জিঃ ৭ পৃঃ৫২৮)
ان رجلا اتى النبى صلى الله عليه وسلم فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم امرنى شيئا ازداد به يقينا- فقال اذهب الى تلك الشجرة فاد عها- فذثب اليها- فقال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم يدعوك- فجائت حتى سلمت على النبى صلى الله عليه وسلم- فقال لهاارجعى فرجعت- ثم اذن له فقبل رأسه ورجليه- اخرجه حاكم فى صيح الاسناد. (مستدرك حاكم، فتح البارى ج১১ صفه ৫৭، تحفة الاحوذى ج ৭ صفه ৫২৮ الكلام المبين صفه ১৪৬)
অর্থঃ- এক ব্যক্তি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বলল ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে এমন কোন বিষয়ে আদেশ করেন, যা আমার বিশ্বাসকে আরো বৃদ্ধি করবে। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে বললেন, “তুমি ঐ গাছটিকে ডেকে আনো।” অতঃপর সে গাছটির নিকটে গিয়ে বললো, নিশ্চয়ই রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাকে ডেকেছেন। সুতরাং গাছটি এসে আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সালাম করলো। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে চলে যেতে বললেন, গাছটি তখন চলে গেল। অতঃপর ঐ ব্যক্তি অনুমতি স্বাপেক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা মোবারক ও উভয় কদম (পা) মোবারক বুছা (চুম্বন) দিল। হাকিম এ হাদীছ শরীফখানা সহীহ্ সনদে বর্ণনা করেন। (মোস্তাদরেকে হাকিম, ফতহুল বারী জিঃ ১১ পৃঃ ৫৭, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী জিঃ ৭ পৃঃ ৫২৮, আল কালামুল মুবীন পৃঃ ১৪৬)
روى عن النبى صلى الله عليه وسلم كان يقبل فاطمة- ريقول اجدمنها ريح الجنة- وقبل ابوبكر رأس عائشه- وقال صلى الله عليه وسلم من قبل رجل امه فكاغما قبل عتبة الجنة. (مبسوط للسرخسى ج ১০ صفه ১৪৯)
অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হতে বর্ণিত, তিনি হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে বুছা (চুম্বন) দিতেন এবং বলতেন, “আমি তার থেকে বেহেস্তের সুঘ্রান পাই।” এবং হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আয়েশা সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার মাথায় বুছা (চুম্বন) দিতেন। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি তার মায়ের কদমবুছা দিল, (অর্থাৎ পা চুম্বন করল) সে ব্যক্তি মূলতঃ বেহেস্তের চৌকাঠের উপর চুম্বন করলো। (মাবছুত লিস্ সারাখ্সী জিঃ ১০ পৃঃ ১৪৯) (৬৭-৬৮)
عن طلحة- قال- قبل خيشمة يدى وقال الك قبل طلحة يدى- (مصنف ابن ابى شيتة ج ৮ صفه ৫৬২، طبقات ابن سعد ج ৬ صفه ২০১)
অর্থঃ- হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত খায়শামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার হাতে বুছা (চুম্বন) দেন এবং হযরত মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার হাতে বুছা (চুম্বন) দেন। (মোছান্নেফ ইবনে আবী শায়বা জিঃ ৮ পৃঃ ৫৬২, তাবাকাতে ইবনে সা’দ জিঃ ৬, পৃঃ ২০১)
حضرت ابو سفیان کے مناقب مین لکھا ھے حضرت عباس رضی اللہ عنہ نے فرمایا کہ مین نے اپکے قدم مبارک کو بوسہ دیا- (مستدرک حاکم ج3 صفہ254)
অর্থঃ- হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার “মানাক্বিবে” বর্ণিত রয়েছে যে, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি উনার কদম মোবারকে বুছা (চুম্বন) দিয়েছি। (মোস্তাদরেকে হাকিম জিঃ ৩ পৃঃ ২৫৪)
امام مسلم بن حجاج کا واقعہ جو امام بخاری کے ساتھ پیش ایا کہ امام مسلم رحمۃ اللہ علیہ نے امام بخاری رحمۃ اللہ علیہ کی پیشانی کو بوسہ دیا اور قدم بوسی کا ارادہ کیا- یہ کتب حدیث ورجال مین معروف و مشھور ھے- (الکرامۃ والتقبیل)
অর্থঃ- ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কিত ঘটনা। অর্থাৎ ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কপালে বুছা (চুম্বন) দিয়েছেন এবং কদমবুছী (পা চুম্বন) করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। এ ঘটনা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাব ও রিজাল শাস্ত্রে পরিচিত ও প্রসিদ্ধ। (আল কিরামাতু ওয়াত্ তাক্ববীল)
تمام روایات سے ثابت ھوا کہ علماء ومشائخ اور دینی شرف رکھنے و الے حضرات کی دست بوسی بلکہ قدم بوسی بھی نیز پیشانی و غیرہ- پر بوسہ دینا سنت اور تعامل صحابہ وتابعین سے بلا کسی نکیر کے ثابت ھے- (الکرامۃ و التقبیل للشیخ عابد سندھی)
অর্থঃ- পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সকল বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়ে যে, দ্বীনদার, আলেম, পীর ও বুযর্গদের দস্তবুছী (হাত চুম্বন), কদমবুছী (পা চুম্বন) এমন কি কপালে বুছা (চুম্বন) দেওয়াও সুন্নত এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও তাবিয়ীনদের আমল হিসাবে বিনা প্রশ্নে তা প্রমাণিত। (আল কিরামাতু ওয়াত্ তাক্ববীল লিশ্ শায়েখ আবেদ সিন্ধী)
و احدیث یدل علی جواز التبیل الید والرجل- و قال الا بھری: انما کرھھا مالک اذا کانت علی وجہ القربۃ الی اللہ لدینہ اولعلمہ اولشرفہ فان ذالک جائز- (فتح الباری شرح البخاری ج11 صفہ57، تحفۃ الاحوذی شرح ترمذی ج7 صفہ528)
অর্থঃ- দস্তবুছী (হাত চুম্বন), কদমবুছী (পা চুম্বন) জায়িয হওয়া হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। আবহুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এটাকে মাকরূহ বলেছেন, যদি নাকি বড়ত্ব ও তাকাব্বুরীর জন্য করা হয় আর যদি আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য অর্জনের লক্ষ্যে কোন দ্বীনদার, আলেম ও সন্মানিত ব্যক্তির দস্তবুছী ও কদমবুছী ইত্যাদি করা হয়, তবে তা নিশ্চয় জায়িয। (ফাতহুল বারী জিঃ ১১, পৃঃ ৫৭, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী জিঃ ৭ পৃঃ ৫২৮)
و بوسہ دادن دست عالم متورع راجائزاست- و بعضے گفتہ اند مستحب است- اگر بردست عالم یا سلطان بوسہ دھد ازجھت علم و عدالت واعزاز دین لا بأس بہ است اگر بجھت غرض دنیوی کند مکروہ است- ودر بعضے احادیث بوسیدن بعضے ازصحابہ پانے ان سرور صلی اللہ علیہ وسلم امدہ- ومختار ھمین است معانقہ و تقبیل در قدوم از سفر جائزاست بے کراھت- (اشعۃ للمعات شرح مشکوۃ ج4 صفہ23، مظاھ حق ج4 صفہ60)
অর্থঃ- পরহেযগার আলেম উনার দস্তবুছী (হাত চুম্বন) জায়েয এবং কেউ কেউ বলেন, মোস্তাহাব। যদি আলেম ও ইনসাফগার খলীফার হাত ইলম, ইনসাফ ও দ্বীনের সন্মানার্থে বুছা (চুম্বন) দেয়, তাতে কোন নিষেধ নেই। তবে দুনীয়াবী স্বার্থ সিদ্ধীর লক্ষ্যে হলে অবশ্যই মাকরূহ্ এবং হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কর্তৃক সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কদম মোবারক বুছা দেয়ার বর্ণনা এসেছে। সুতরাং গ্রহণযোগ্য মত এটাই যে, সফর থেকে ফিরে এসে সাক্ষাতের সময় মোয়ানেকা (কোলাকুলি) ও (তাক্ববীল) বুছা (অর্থাৎ কদমবুছী ইত্যাদি) দেয়া জায়েয, মাকরূহ্ নয়। (আশয়াতুল লোময়াত শরহে মিশকাত জিঃ ৪ পৃঃ ২৩, মোজাহেরে হক্ব জিঃ ৪ পৃঃ ৬০)
طلب من عالم اوز اهد ان يد فغ اليه قدمه ويمكنه من قدمه ليقبله اجابه- وقيل لا يرخص فيه- وفى ردالمحتار- قوله اجبه لما اخرده الحاكم- ثم اذن له فقبل راسه ورجليه- (شامى ج ৫ صفه ৩৭৮، درالمختار، ردالمحتار، شرتبلالى، غاية الاوطار، عالمكيرى ج ৫ صفه ৪০৪ اشعة للمعات، قنية)
অর্থঃ যদি কেউ কোন আলেম অথবা বুযর্গ উনার নিকট দরখাস্ত করে যে, আপনার পা আমাকে দিন আমি বুছা (চুম্বন) দেব, তখন উনার এ দরখাস্ত কবুল করা জায়েয। কেউ কেউ জায়েয নেই বলে মত প্রকাশ করেন। শামী কিতাবে জায়েযকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং দলীল হিসাবে মোস্তাদরেকে হাকিম এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেন যে, এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা ও কদম মোবারক বুছা (চুম্বন) দেয়ার অনুমতি চাইলে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে এ ব্যাপারে অনুমতি প্রদান করেন। (শামী জিঃ ৫ পৃঃ ৩৭৮, দুররুল মোখতার, রদ্দুল মোহতার, শরাম্বলালী, গায়াতুল আওতার, আলমগীরী জিঃ ৫ পৃঃ ৪০৪, আশয়্যাতুল লোময়াত, কুনিয়া)
وكره تحريما قهستانى تقبيل الرجل فمالرجل اويده- عند لقاء او وداع وهذا لو عن ضهوة واماعلى وجه البر فجائز عند الكل. لوالقبلة على وده المبرة دون الشهوة جاز بالا جماع ان التقبيل على سبيل البربلا شهوة جائز بالاجماع. (تاتارخانيه، المحيط، عينى، الحقائق، قهستانى، احسن الفتاوى ج১ صفه ৩৯৬)
অর্থঃ - কোহেস্তানী কিতাবে সাক্ষাৎ অথবা বিদায়ের সময় একজন অপরজনের (পুরুষ) মুখ, হাত ইত্যাদি বুছা (চুম্বন) দেওয়া মাকরূহ্ বলা হয়েছে, যদি নাকি খাহেশাতের সাথে হয়। আর যদি নেক দৃষ্টিতে (তা’যীমের জন্য হাত, মুখ, পা ইত্যাদি) বুছা (চুম্বন) দেওয়া হয়, তবে সকলের নিকটেই জায়েয। নিশ্চয় যদি (হাত, কদম, মুখ ইত্যাদি) খাহেশাতের সাথে বুছা (চুম্বন) না দেয় বরং নেকী হাসীলের লক্ষ্যে বুছা (চুম্বন) দেয়, তবে সর্বসম্মতীক্রমে জায়েয। (তাতারখানিয়া, মুহীত্ব, আইনী, আল্ হাকায়েক, কোহেস্তানী, আহ্সানুল ফতওয়া জিঃ ১ পৃঃ ৩৯৩)
ويكره ان يقبل الرجل فم الرجل اويده اوسيأ منه- فى قول ابى حيفة ومحمد وقال ابو يوسف لايأس بالتقبيل والمعانقه فان كانت المعانقة من فوق قميص اوجبة اوكائت القبلة على وجه المسرة دون الشهوةجاز عند الكل- (فتاوئ قاضى خن بر حاشيا، عالمبكرى ج ৩ صفه ৪৪৪،بدائع الصناشغ جه صفه ১২৪)
অর্থঃ- হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে একজন অপরজনের মুখ, হাত অথবা শরীরে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বুছা (চুম্বন) দেয়া মাকরূহ্ এবং ইমাম আবু ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে তাক্ববীল (অর্থাৎ কারো হাত, কদম, মুখ ইত্যাদি) বুছা (চুম্বন) দেওয়া ও মোয়ানেকা করা মাকরূহ্ নয় এবং তাক্ববীল (অর্থাৎ হাত, কদম, মুখ ইত্যাদি) খাহেশাতের জন্য বুছা না দেয় বরং সন্মানার্থে বুছা (চুম্বন) দেয়, তবে সকলের নিকটেই জায়েয। (কাজীখান, হাশিয়ায়ে আলমগীরী জিঃ৩ পৃঃ৪৪৪, বাদায়েউস সানায়ে জিঃ৫ পৃঃ১২৪)
فتاوی قاضی خان کی اخری عبارت سے معلوم ھوا کہ مسئلہء تقبیل و معانقہ مین جو اختلاف امام ابو حنیفۃ رحمۃ اللہ علیہ و محمد رحمۃ اللہ علیہ کا نقل کیا جاتا ھے وہ اس صورت مین ھے جس مین خطرہ شھوۃ کا یامشا بھت اسکی پانی ورنہ معانقہ اور تقبیل تینون ائمہ کے نزدیک جائز ھے- (جواھر الفقہ ج1 صفہ196)
অর্থঃ- ফতওয়ায়ে কাযীখান কিতাবের শেষোক্ত ইবারত দ্বারা এটাই বুঝা যায় যে, তাক্ববীল (অর্থাৎ কারো হাত, কদম, মুখ ইত্যাদি) বুছা দেয়া ও মোয়ানেকার যে ইখতিলাফ হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের হতে বর্ণিত হয়েছে, তা মূলতঃ খাহেশাত ও অনুরূপ কারণেই। যদি খাহেশাতের জন্য না হয়, তবে তিন ইমামের নিকটেই দস্তবুছী, কদমবুছী ইত্যাদি ও মোয়ানেকা জায়েয। (জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ জিঃ১ পৃঃ১৯৬)
پس صحیح جواز تقبیل قدم فی نفسہ ھے اور فقھاء کے منع کو عارض مفسدہ پر محمول کیا جائیگا- (امداد الفتاوی ج5 صفہ345، مواعظ اشرفیہ)
অর্থঃ- সুতরাং সহীহ্ মত হলো- মূল কদমবুছী জায়েয এবং ফক্বীহ্দের নিষেধাজ্ঞা শরীয়তের খেলাফ কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। (অর্থাৎ খাহেশাত, রুকু, সিজদার নিয়তে মাথা ঝুকানো ইত্যাদির কারণে) (ইমদাদুল ফতওয়া জিঃ ৫ পৃঃ ৩৪৫, মাওয়ায়েজ আশ্রাফিয়া)
সুতরাং উপরোক্ত ব্যাখ্যা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, তিরমিযী শরীফ উনার উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মূলতঃ আমলোক অর্থাৎ সাধারণ লোকদের দস্তবুছী, কদমবুছী ইত্যাদি করতে নিষেধ করা হয়েছে, আলেম, আদেল, বুযুর্গ ব্যক্তিদের দস্তবুছী, কদমবুছী ইত্যাদি করার আদেশ রয়েছে। অর্থাৎ উনাদের দস্তবুছী, কদমবুছী জায়েয ও সুন্নত। সুতরাং উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার শরাহ্, ফিক্বাহ ও ফতওয়াসহ নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের দলীল দ্বারা এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় যে, কদমবুছী, দস্তবুছী স্থান, কাল, পাত্র বিশেষে শুধু জায়েযই নয়, সুন্নতে ছাহাবা, সুন্নতে বুযুর্গানে দ্বীন। কাজেই কদমবুছীকে বেদয়াত, শেরেকী, কুফরী ইত্যাদি বলা প্রকৃতপক্ষে কোন হালালকে হারাম বলার ন্যায় কুফরী হবে, যা থেকে পরহেয করা আমাদের সকলের কর্তব্য ও ওয়াজিব এবং অবস্থা বিশেষে সকলেরই কদমবুছী করা বা নেয়া সুন্নতে ছাহাবা, সুন্নতে তাবেঈন ও সুন্নতে বুযুর্গানে দ্বীন।