পবিত্র কুরবানী উনার পশুর বৈশিষ্ট্য

পবিত্র কুরবানী উনার পশুর বৈশিষ্ট্য

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

 فَصَلّ لِرَ‌بّكَ وَانْـحَرْ‌ ◌

অর্থ : “আপনার মহান রব তায়ালা উনার উদ্দেশ্যে নামায পড়–ন এবং কুরবানী করুন।” (পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২) 
এখন কুরবানী করতে হলে কুরবানী উনার পশুর কতগুলো বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য রাখতে হয়। নিম্নে সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো-

কুরবানী যোগ্য পশু গৃহপালিত হতে হবে বন্য পশু দ্বারা কুরবানী দেয়া নাজায়িয : ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে পবিত্র কুরবানী উনার জন্য পশুকে গৃহপালিত হওয়ার শর্ত বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لِكُلّ اُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا لِّيَذْكُرُ‌وا اسْمَ اللهِ عَلٰى مَا رَ‌زَقَهُمْ مِّنْ بَـهِيْمَةِ الْاَنْعَامِ ۗ

অর্থ : “আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য পবিত্র কুরবানী এই উদ্দেশ্যে নির্ধারিত করেছি, যেনো তারা ওই নির্দিষ্ট গৃহপালিত পশুগুলির উপর (যবেহ করার সময়) মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উচ্চারণ করে যা তিনি তাদেরকে রিযিক হিসেবে দান করেছেন। (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৪)

অর্থাৎ পবিত্র কুরবানী উনার পশু গৃহপালিত হতে হবে। আর এ ব্যাপারে ফিক্বহের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

وَلَا يَـجُوْزُ فِى الْاَضَاحَىِّ شَيْئٌ مِنَ الْوَحْشِىِّ لِاَنَّ وُجُوْبَـهَا عُرِفَ بِاشَّرْعِ وَالشَّرْعُ لَـمْ يَرُدُّ بِالْاِيْـجَابِ اِلَّا فِى الْـمُسْتَأْنِسِ.

অর্থ : “কুরবানীর প্রাণীর বিধান হলো, পশু গৃহপালিত হতে হবে। বন্য বা জংলী প্রাণী গ্রহণযোগ্য নয়।” (বাদায়েউস সানায়ে ৪র্থ খ- ২০৫ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৫ম খ- ৩৪৩ পৃষ্ঠা)
এমনকি বন্য পশু যদি পোষও মানে তারপরও উক্ত বন্য পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়িয হবে না। এ ব্যাপারে বর্ণিত রয়েছে-

وَاِنْ ضُحِىَ بِظَبْيَةٍ وَحْشِيَةٍ اَنَسَتْ اَوْ بِبَقَرَةٍ وَحْشِيَةٍ اَنَسَتْ لَـمْ تَـجُزْ.

অর্থ : “বন্য হরিণ বা গয়াল যদি কারো পোষ মানে তারপরও এরূপ পশু দ্বারা কুরবানী জায়িয হবে না।” (ফতওয়ায়ে শামী ৫ম খ- ৩৪৩ পৃষ্ঠা)

কিন্তু গৃহপালিত পশু যদি বন্য আচরণ করে তারপরও উক্ত গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানী জায়িয। যেমন এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-

نَدَّتِ الْاَهْلِيَةُ تَوَحَشَّتْ فَرَمَاهَا عَنِ الْاَضْحِيَّةِ جَازَ.

অর্থ : “যদি গৃহপালিত পশু পালায়ন করে এবং তার মধ্যে বন্য আচরণ প্রকাশ পায়, তারপরও উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৫ম খ- ৩৪৩ পৃষ্ঠা)

পশুটি গৃহপালিত বা জংলী তা চেনার জন্য সহজ পন্থা সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে-

فَاِنْ كَانَ مُتَوَلِدًا مِّنَ الْوَحْشِىِّ وَالْاِنْسِىِّ فَالْعِبْرَةُ لِلْاُمِّ

অর্থ : “আর যদি গৃহপালিত ও বন্য পশুর সংমিশ্রণে বাচ্চার জন্ম হয় তাহলে মায়ের দিক প্রাধান্য পাবে। কারণ পশুর নছব বা বংশ পরিচিতি হলো মায়ের দ্বারা।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৫ম খ- ৩৪৩ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে শামী ৯ম খ- ৫৩৪ পৃষ্ঠা, বাদায়েউস সানায়ে ৪র্থ খ- ২০৫ পৃষ্ঠা)

অন্যত্র বর্ণিত রয়েছে-

فَاِنْ كَانَتْ اَهْلِيَةٌ تَـجُوْزُ وَاِلَّا فَلَا حَتّٰى لَوْ كَانَتِ الْبَقَرَةُ وَحْشِيَةٌ وَالثَّوْرُ اَهْلِيَةٌ لَـمْ تَـجُزْ.

অর্থ : “গৃহপালিত হলে কুরবানী শুদ্ধ বা জায়িয হবে। আর যদি গৃহপালিত না হয় তা দ্বারা কুরবানী করা জায়িয হবে না। তা বন্য গরু, মহিষ, ছাগল, বকরী, ভেড়া ইত্যাদি যাই হোক না কেন।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৫ম খ- ৩৪৩ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে শামী ৯ম খ- ৫৩৪ পৃষ্ঠা, বাদায়েউস সানায়ে ৪র্থ খ- ২০৫ পৃষ্ঠা)

হাদীছ শরীফ উনার বিরুদ্ধাচারন করে মসজিদে সিসি ক্যামেরা স্থাপন!

হাদীছ শরীফ উনার বিরুদ্ধাচারন করে মসজিদে সিসি ক্যামেরা স্থাপন!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদিন পবিত্র খুতবা মুবারক দেয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়ালেন এবং ইরশাদ মুবারক করলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি গদীতে হেলান দিয়ে বসে এই ধারণা করে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে যা কিছু হারাম করেছেন তা ব্যতীত অন্য কিছু হারাম নয়?  তোমরা সকলেই সাবধান হয়ে যাও। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে অনেক আদেশ-নিষেধ মুবারক করেছি, আমার সেই আদেশ-নিষেধ মুবারকগুলি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অনুরূপ বরং ক্ষেত্র বিশেষে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা এবং রাখাকে হারাম, নাজায়িয এবং জাহান্নামী হওয়ার কারণ বলা হয়েছে।

পবিত্র মসজিদে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে মুছল্লিদের অসংখ্য ছবি তোলা হচ্ছে। যেটা সম্পূর্ণ হারাম, নজায়িয কঠিন কবীরা গুনাহের কারণ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিরুদ্ধাচারন আর হারামকে হালাল জানা কাট্টা কুফরী হচ্ছে।

নিকাহ বা বিবাহ করা খাছ সুন্নত ।--------------------------------------

নিকাহ বা বিবাহ করা খাছ সুন্নত ।--------------------------------------

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা করেছেন তাকেই খাছ সুন্নত মুবারক বলা হয়। নিকাহ বা বিবাহ হচ্ছে এমন একটি খাছ সুন্নত মুবরক। বিবাহ না করে জীবন-যাপন করা উত্তম নয়। উপরন্তু বিবাহের মধ্যে রয়েছে অফুরন্ত কল্যাণ ও বরকত । নিকাহের দ্বারা এমন অনেক খাছ সুন্নত মুবারক পালন করা সহজ ও সম্ভব হয় যা অবিবাহিত লোকেরা জীবনে কখনাে পালন করতে পারেন না। যার ফলে তারা সে সকল সুন্নত মুবারক পালন করা থেকে মাহরুম বা বঞ্চিত থাকেন। 
আর সকলেই অবগত যে, সুন্নত মুবারক পালনের মধ্যেই রয়েছে রহমত, বরকত, সাকীনা। তাতে রয়েছে উন্নতির চাবিকাঠি। কেননা প্রতিটি সুন্নত মুবারকের মর্যাদা ফযীলত হচ্ছে একশ জন শহীদ উনাদের সম মর্যাদা। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

من تمسك بسنتي عند فساد امتي فله اجر مائة شهيد

অর্থ: যে ব্যক্তি ফিতনা-ফাসাদের যুগে আমার একটি সুন্নতকে দৃঢ়তার সাথে পালন করবে সে একশত শহীদ উনাদের মর্যাদা পাবে। সুবহানাল্লাহ।

তিনি আরাে ইরশাদ মুবারক করেন-

من احي سنتي فقد احيني ومن احيني كان معي في الجنة

অর্থ: যে ব্যক্তি আমার বিলুপ্ত সুন্নতকে জিন্দা করলাে সে যেন আমাকেই জিন্দা করলাে। আর যে আমাকে জিন্দা করবে সে ব্যক্তি আমার সাথে সম্মানিত জান্নাতে অবস্থান করবে। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, যিনি যতবেশি সুন্নত পালন করবেন তিনি ততবেশি তায়াল্লুক মুবারক প্রাপ্ত, নৈকট্য মুবারক প্রাপ্ত হবেন । তিনি ততবেশি নিছবত প্রাপ্ত হবেন ‌ । 
(চলবে)-----

আজকের কথিত সভ্য দাবিদার পশ্চিমারা মুসলমানদের সংস্পর্শে না আসলে জানতোই না বাগান কি জিনিস ।

আজকের কথিত সভ্য দাবিদার পশ্চিমারা মুসলমানদের সংস্পর্শে না আসলে জানতোই না বাগান কি জিনিস ।


 ইউরোপীয়রা বাগান করার ধারণা পেয়েছে মুসলমানদের কাছ থেকে। সৌখিন ও পিপাসী জাতি হিসাবে আরবরা বাগান করতো। এছাড়া বাগান করার পেছনে একদিকে ছিল তাদের ধর্মীয় আবেগ এবং অন্যদিকে ছিল ভূ-প্রকৃতি। পবিত্র কোরআনে বাগানের বহু বর্ণনা দেয়া হয়েছে এবং পবিত্র হাদিসে ঈমানদার মুসলিম নর-নারীকে আখেরাতে জান্নাতের বাগানে ঠাই দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। তাই মুসলমানদের মনে বাগান একটি বিরাট স্থান দখল করে থাকতাে। 

আরব দেশের ভূ-প্রকৃতি রুক্ষ ও মরুময় হওয়ায় আরবরা সুশীতল ছায়া লাভের আশায় বাগান করতাে। বাগান তৈরিতে আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশীদ ও তার পুত্র আল-মামুনের বিশ্বজোড়া খ্যাতি ছিল । বাগদাদে খলিফা আল-মামুনের প্রাসাদের মনােরম বাগানে দুর্লভ ফুল ছাড়াও যন্ত্রচালিত দুটি পাখি ছিল। একটি ছিল রূপার এবং আরেকটি ছিল সােনালী রংয়ের। সুগন্ধিতে চারদিক আমােদিত হতাে।
 
একাদশ শতাব্দীতে মুসলিম শাসিত স্পেনে প্রথম রাজকীয় বাগান তৈরি করা হয়। আব্বাসীয়দের কাছে পরাজিত উমাইয়াদের একটি অংশ স্পেনের আন্দালুসিয়ায় গিয়ে বসবাস করতে শুরু করে। আন্দালুসিয়ার ভূমি ছিল বাগান করার জন্য আরব দেশের চেয়ে উৎকৃষ্ট। সেখানকার বাগানে পারস্যের লাল গােলাপ ও টিউলিপসহ অসংখ্য ফুল ফুটতাে। ক্রমে ক্রমে স্পেন থেকে গােটা ইউরােপে বাগান ও ফুলের প্রতি আগ্রহ ছড়িয়ে পড়ে।

#IGSRC

সূত্র: 
বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান : এম. আকবর আলী
‘Islamic Gardens and Landscapes’ book by D. Fairchild Ruggles

চন্দ্র জয়ের নেপথ্যে ছিলেন যে মুসলিম বিজ্ঞানী ।

চন্দ্র জয়ের নেপথ্যে ছিলেন যে মুসলিম বিজ্ঞানী ।


মিশরের নীল নদের তীরে জন্মানো এক কিশোর কখনও ভাবেনি বিংশ শতাব্দীর আশ্চর্য্যতম বৈজ্ঞানিক কার্যকলাপের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব তার হাতে এসে পরবে। আজ থেকে ৫১ বছর আগে ২০, জুলাই ১৯৬৯ সালে চাঁদের মাটিতে পা পড়েছিল মানুষের।
সেই অ্যাপোলো ১১ মিশনে যখন নীল আর্মষ্ট্রংরা মাত্র ষাট সেকেন্ডের জ্বালানী নিয়ে চাঁদে নামলেন তখন পৃথিবীর মাটি চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করছিলেন নাসার লুনার ল্যান্ডিং সিলেকশন কমিটির প্রধান ফারুক এল–বাজ। 
প্রফেসর এল–বাজ এবং তাঁর সহকারীদের প্রধান দায়িত্ব ছিল উপগ্রহচিত্রকে বিশ্লেষণ করে চাঁদের বুকে অবতরণ করার সঠিক জায়গাটি চিহ্নিত করা। যেকোনো মহাকাশ অভিযানেই এটি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেদিন তিনি সফল হয়েছিলেন, অ্যাপোলো ১১ চাঁদের মাটি নেমে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল।
সত্তরের দশকে যখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুই প্রতিদ্বন্ধী পুঁজিবাদি আমেরিকা ও সাম্যবাদী রাশিয়ার মধ্যে ঠান্ডা যুদ্ধ চলছে তখন মিশরের মতো সোভিয়েত সমর্থনকারী একটি দেশের বিজ্ঞানী এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেল কীভাবে? এই প্রশ্ন সত্যিই বেশ জটিল।
ফারুক এল–বাজ জন্মেছিলেন ১৯৩৮ খ্রীষ্টাব্দের ২রা জানুয়ারী মিশরের জাগাজিগ প্রদেশে। ছোটো থেকেই মেধাবী এল–বাজ ২০ বছর বয়সে রসায়ন ও ভূতত্বে স্নাতক হয়ে আমেরিকায় পড়তে যান। সেখানকার মিস্যুরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূতত্বে মাস্টার্স করেন এবং পরে সেখান থেকে পিএইচডি লাভ করেন। 
এই সময় তিনি মিশরে ফিরে এলেও পছন্দমতো শিক্ষকতার কাজ না পেয়ে ফিরে যান আমেরিকায়। সেখানে যে কাজ পান তার সুবাদেই অ্যাপোলো মিশনে আমন্ত্রণ পান। সেই সময়ের টালমাটাল রাজনৈতিক অবস্থায় তাঁর ওই পদ পাওয়া নিয়ে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, “সেই সময় একটাই রাস্তা ছিল, আমি যেটাই করি সেটাকে নিখুঁত ভাবে করতে হবে।“
অ্যাপোলো অভিযান শেষ হলে ডঃ এল–বাজের খ্যাতি ছড়িয়ে পরে অ্যামেরিকা জুড়ে। তাঁকে একাধিক পদে কাজ করার আমন্ত্রণ জানানো হয়। ১৯৭২ সালে তিনি অ্যামেরিকার জাতীয় মহাকাশ মিউজিয়ামের ডিরেক্টর হিসেবে কাজ শুরু করেন। তখন নাসার চন্দ্রসংক্রান্ত বিষয়ের নামকরণ শাখারও সদস্য নির্বাচিত হন।
তারপরের বছরই ডঃ এল–বাজকে নাসার তরফ থেকে অ্যাপোলো–সয়ূজ প্রজেক্টের পৃথিবী নিরীক্ষণ এবং উপগ্রহচিত্র বিভাগের প্রধান করা হয়। আমেরিকা–রাশিয়ার যুগলবন্দি এই প্রজেক্ট ডঃ এল–বাজের বৈজ্ঞানিক কর্মজীবনকে আরও পটু করে তোলে। 
মহাকাশ গবেষণার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত থাকলেও ফারুক এল–বাজ বরাবরেরই ভূতাত্ত্বিক। জীবনের প্রথমদিকে বিষয়টি নিয়ে কাজ করার বিশেষ সুযোগ না পেলেও গত তিরিশ বছর সমান তালে কাজ করে চলেছেন। প্রৌঢ়তা বার্ধক্যে পরিণত হলেও তাঁর কাজের প্রতি উৎসাহ এবং কৌতুহল কোনোটাই কমেনি। 
বর্তমানে বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উপগ্রহচিত্র থেকে ভূমিরূপ এবং তার গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁর কাজের বেশীরভাগটাই মরূভূমি কেন্দ্রিক ফলে প্রায়শই মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ করেন গবেষণার কাজে।
প্রফেসর এল–বাজের আবিষ্কারের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তত্ব হলো কুয়েত অ্যাটলাস এবং গিজা তত্ব। তাঁর ধারণা মেসোপটেমিয়া সভ্যতার সময় এমন কোনো নদী ছিল যা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যকে একটি রেখায় জুড়ত, তিনি সেই নদীর নাম দেন কুয়েত। 
গিজার পিরামিড সম্পর্কে প্রফেসর বাজের ধারণা, পিরামিডের ওই গঠনের পিছনের মূল কারণ হলো, তখনকার মিশরীয়রা জানত যে ওই আকৃতির ভূমিরূপে কখনও ভূমিক্ষয় হয়না, শতাব্দীর পর শতাব্দী একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। 
এই প্রতিভাবান বিজ্ঞানী তাঁর কাজের মধ্যে দিয়ে সারা বিশ্বের প্রশংসা পেয়েছেন এবং মুসলমান সমাজকেও এক নতুন আলো দেখিয়েছেন।

#IGSRC

সূত্র: ইন্টারনেট

পবিত্র কুরবানী না দিয়ে কুরবানীর টাকা বন্যার্তদের দেয়া যাবে কি?

পবিত্র কুরবানী না দিয়ে কুরবানীর টাকা বন্যার্তদের দেয়া যাবে কি?

এক শ্রেণীর গণ্ডমূর্খ মিডিয়াতে প্রচার করছে আগত কুরবানী উনার জন্য নির্ধারিত টাকা ত্রাণ হিসাবে দান করে দেয়ার জন্য। নাউযুবিল্লাহ! এর মাধ্যমেই নাকি কুরবানী উনার ফযীলত লাভ করা যাবে। নাউযুবিল্লাহ! অথচ পবিত্র কুরবানী হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার বিধান। মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন,
لِكُلّ اُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا لّيَذْكُرُ‌وا اسْمَ اللهِ عَلـٰى مَا رَ‌زَقَهُم مّن بَـهِيْمَةِ الاَنْعَامِ ۗ
অর্থ: “আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য পবিত্র কুরবানী উনার বিধান দিয়েছি, যাতে তারা গৃহপালিত পশুর উপরে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নাম মুবারক স্মরণ করে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সন্তুষ্টি ও নির্দেশ মুতাবিক উনার নাম মুবারকে পশু কুরবানী করে।” (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ : ৩৪)
পবিত্র আয়াত শরীফ উনার থেকে প্রমাণ হলো, পবিত্র কুরবানী করা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে প্রত্যেক উম্মতের জন্য বিধান। আর আল্লাহ পাক উনার বিধান পালন করা বান্দার আবশ্যিক দায়িত্ব।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করবে না সে যেন পবিত্র ঈদগাহের নিকটে না আসে।” (মুসনাদে আহমদ ২/ ৩২১: হাদীছ শরীফ ৮২৫৬, ফতহুল বারী ১০/৩, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৫/৪৩২, শরহে যারকানী ৩/১০৪)
পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে যা বোঝা গেলো, সামর্থ্যবান ব্যক্তিকে অবশ্যই কুরবানী করতে হবে। কুরবানী না করলে সে মুসলমান উনাদের সাথে নামাযেও আসতে পারবে না। অর্থাৎ মুসলামান জামায়াত থেকে সে বিতাড়িত হবে। তারমানে তার ঈমান থাকবে না।
“পবিত্র কুরবানী করা হচ্ছে ঈদের দিনের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে,
افضل العبادات يوم العيد عراقة دم القربان
অর্থ: “ঈদের দিন রক্ত প্রবাহিত করা সর্বশ্রেষ্ঠ আমল।” (তুহফাতুল আহওয়াযী শরহে জামিউত তিরমিযী ৪/১৪৫)
সুতরাং যার প্রতি কুরবানী ওয়াজিব হয়েছে এমন লোকের জন্য কুরবানী না করে এ টাকা ত্রাণহিসাবে দেয়া হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ আমল ত্যাগ করার নামান্তর। নাউযুবিল্লাহ! কোনোভাবেই পবিত্র কুরবানী বাদ দিয়ে এর টাকা কোথাও দান করা যাবে না। যেটা মহান আল্লাহ পাক উনার বিধান সেভাবেই করতে হবে। কেউ যদি দান করতে চায়, তবে পবিত্র কুরবানী উনার টাকা রেখে অন্য যে ফান্ড আছে সেখান থেকে দিতে হবে। এর অন্যথা করলে ঈমান থাকবে না। চরম কুফরী হবে। নাউযুবিল্লাহ!

করোনা ভাইরাস ~ কত গভীর ষড়যন্ত্র একবার ভেবে দেখেছেন কী ?

করোনা ভাইরাস ~ কত গভীর ষড়যন্ত্র একবার ভেবে দেখেছেন কী ?

করোনা ভাইরাসকে মুসলিমদের জান মাল ও ঈমান নষ্ট করার একটি মোক্ষম হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে বিধর্মীরা। মুসলিমদের উদাসীনতা ও অজ্ঞতার কারণে তারা তাদের ষড়যন্ত্রে যে পুরোপুরি সফল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। 

তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে একটি ওভারঅল আইডিয়া দেওয়ার চেষ্টা করছি : 

১. কুফরী ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস করাচ্ছে মুসলিমদের - 
হাদীস শরীফ অনুযায়ী ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছুই নেই। কিন্তু বিধর্মীরা তাদের ভুয়ো ছোঁয়াচে রোগের থিওরী বিশ্বাস করিয়ে কুফরী করাতে পেরেছে দুনিয়ার মুসলিমদের। 

২. গরীব ও মধ্যবিত্তের স্বার্থ বিরোধী লকডাউন, কাল্পনিক ও ভুয়ো রেড-ইয়োলো-গ্রিন জোন - 

তথাকথিত লকডাউন একটা ভাঁওতাবাজি ছাড়া যে কিছুই নয় সেটা বেশিরভাগ মানুষ এখন বুঝতে পেরেছে। লকডাউনের ফায়দা লুটছে কেবলমাত্র এক শ্রেণীর অসৎ ব্যবসায়ী ও নেতারা। কিন্তু এর ফলে কত মানুষ যে বেকার হয়ে গেল, তাদের ফ্যামিলি পথে বসে গেলো, কত মানুষ না খেয়ে মরলো, কত মানুষ যে বিনা চিকিৎসাতে মরলো - তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে ? 

এর ক্ষতিপূরণ কখনোই আর দেওয়া সম্ভব হবে না। 

৩. সুন্নাতী মুসাফাহা ও মুয়ানাকা করতে চায় না মুসলিমরা - 

বিধর্মীদের বিভ্রান্তিকর অপপ্রচারের ফলে মুসলিমরাও তথাকথিত ৩ ফুট বা ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখার কাল্পনিক ও ভুয়ো থিওরীতে বিশ্বাস করছে। যার ফলে তারা সুন্নাতী মুসাফাহা ও মুয়ানাকা করার প্রতি অবজ্ঞা দেখাচ্ছে যা ক্ষেত্রবিশেষে কুফরী। বিধর্মীরা তাদের ধর্মীয় সমস্ত বিষয় আগের মতোই বজায় রেখেছে। তাদের পা ফাঁদে পা দিয়েছে কেবলমাত্র মুসলিমরা। 

৪. নামাজে ৩ ফুট বা ৬ ফুট দূরত্বে দাড়ানো -

নামাজের কাতারে যে ফাঁক রাখা শরীয়তসম্মত নয় তা প্রত্যেক সচেতন মুসলিম মাত্রই জানেন। কিন্তু আমরা কি দেখতে পেলাম ? দেখলাম যে মুসলিমরা নামাজের কাতারে বিরাট বিরাট ফাঁক রেখে দাঁড়াচ্ছে। 

মুসলিমদের ঈমান কোথায় গেলো ?  

৫. মসজিদ ও ঈদগাহ বন্ধ করেছে মুসলিমরা - 

গজবের সময় আরো বেশী বেশী মহান আল্লাহ পাকের স্মরণ করা উচিত ছিলো মুসলিমদের, বেশী বেশী মসজিদে সময় কাটানো উচিত ছিলো। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেলো যে মুসলিমরা মসজিদই বন্ধ করে বসে আছে। এমনকি ঈদগাহ অবধি বন্ধ করে দিয়েছে। 

এর ফল কি ভালো হবে ? কোন মুসলিম কি মসজিদ ও ঈদগাহ বন্ধ করে দিতে পারে ? 

৬. টিভিতে খতম তারাবীহ পড়ানো যা শুনে ঘোড়াও হাসবে -  

টিভিতে তারাবীহ খতম পড়ানো নামক একটা পাগলের প্রলাপ শোনা গেছে যা শুনে হয়ত জন্তুরাও হাসবে কিন্তু এই থিওরীও সমর্থন করতে দেখা গেছে প্রচুর মানুষকে যা দেখে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করা মুশকিল। 

৭. স্যানিটাইজার অর্থাৎ অ্যালকোহল দিয়ে হাত ধোয়া শিখিয়েছে মুসলিমদের - 

মার্কেটে যেসমস্ত স্যানিটাইজার পাওয়া যায় তাতে আছে অ্যালকোহল, সেটি হাতে লাগালে ও জামা কাপড়ে লাগলে তা নাপাক হয়ে যাবে। মুসলিমরা কিভাবে তা ব্যবহার করতে পারে ? 

৮. রোগীকে দেখার সুন্নত আদায়ে বাধা দিচ্ছে - 

হাদীস শরীফে আছে যে রোগীকে দেখতে যাওয়া সুন্নাত, প্রত্যেক সচেতন মুসলিম মাত্রই জানেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে দেখা গেলো কারো সামান্য জ্বর সর্দি কাশি হলে তাকে অস্পৃশ্য হিসাবে ট্রিট করছে মানুষ, একঘরে করে দিচ্ছে। নিজেদের মুসলিম দাবী করে এটা কিভাবে করতে পারে মানুষ? 

৯. করোনাকে উপলক্ষ্য করে তৈরী করা হয়েছে অযথা আতঙ্ক - 

আতঙ্ক একটি ব্যবসা যার দ্বারা লাভবান হয় বিশেষ বিশেষ ইন্ডাস্ট্রি। করোনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি করা হয়েছে একটা অদ্ভুত আতঙ্ক, যার কোন ভিত্তি নেই। মানুষ একে অপরকে অচ্ছুৎ ভাবতে শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে ফিকির করতে হবে মুসলিমদের। 

১০. মাস্ক পরা স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর, কিন্তু তারপরও মাস্ক না পরলে জেল- জরিমানা আইন করা হয়েছে - 

মাস্ক পরা নিয়ে নিউজে অনেক সংবাদ দেখেছি যে মানুষ শ্বাসকষ্ট সহ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। এছাড়া WHO এর প্রেস রিলিজ ও অন্যান্য চিকিৎসকরা রায় দিয়েছেন যে যারা রোগে আক্রান্ত তারাই কেবলমাত্র মাস্ক পরবে, বাকিদের দরকার নেই। তা সত্বেও এমন আইন কিভাবে তৈরী করে ! ভয় ভেঙে আমাদের প্রতিবাদ করা উচিত ছিল না ? 

১১. লকডাউনের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি ও বেকারত্ব বৃদ্ধি হয়েছে - 

লকডাউনের ফলে প্রচুর মানুষের চাকরী চলে গেছে, ব্যবসা নষ্ট হয়েছে। অনেক মানুষ অভুক্ত থাকছেন, ভিখারীদের ভিক্ষা দেওয়ার মতোও কেউ নেই এমন অবস্থা। এর জন্য পাবলিক নিজেরাই দায়ী। তারা যদি ছোঁয়াচে রোগের গল্প ও লকডাউনের ভুয়ো থিওরীতে বিশ্বাস না করতো তাহলে এটা হতো না। 

১২. মানুষ স্বাভাবিক ভাবে মারা যাচ্ছে, কিন্তু প্রচার করা হচ্ছে করোনার নামে - 

আগেই বলেছি যে আতঙ্ক একটি ব্যবসা এবং সেই আতঙ্ক ব্যবসায়ীরা আতঙ্ক জিইয়ে রেখে ব্যবসা করতে চায়। যার ফলে দেখা গেছে স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও করোনাতে মরেছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। গুজবপ্রিয় মানুষ সহজেই এইগুলি লুফে নেয়, তারাই ছড়িয়ে দেয় এই গুজব; চলতে থাকে আতঙ্ক ব্যবসা। 

এছাড়া টাকার বিনিময়ে করোনা পজিটিভ - নেগেটিভ 
ও হয়ে যাচ্ছে। 

১৩. করোনা নিয়ে আতঙ্ক তৈরীর কারনে মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না - 

করোনার আতঙ্কে অনেক ডাক্তাররাই আন্ডারগ্রাউন্ড হয়ে গেছে, তাদের পাওয়া মুশকিল , তারা রোগী দেখে না। এছাড়া লক ডাউনের ফলে যানবাহনের অপ্রতুলতা তো আছেই। 

কত মানুষের যে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। 

১৪. ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাসের কারণে মানুষের মনুষত্ব লোপ পেয়েছে - 

করোনা পরিস্থিতিতে দেখা যায় মানুষ আরেকটা মানুষকে অচ্ছুৎ এর মতো ট্রিট করছে, বাড়িতে যেতে আসতে দিচ্ছে না, দেখা সাক্ষাৎ করছে না, কোন সহমর্মিতা নেই। মুসলিমদের তো এমন হওয়ার কথা ছিল না ! ভেবে দেখতে হবে মুসলিমদের অবশ্যই। 

১৫. অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণে মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে।

লক ডাউনের ফলে অনেক মানুষের চাকরী চলে গেছে, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা নষ্ট হয়ে গেছে। যার ফলে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। শহর ছেড়ে তারা গ্রামে যেতে বাধ্য হচ্ছে রুজি রোজগারের কোন ব্যবস্থা না থাকায়। 

এখনো কি ভেবে দেখার সময় আসে নি যে করোনা নয়, আতঙ্ক ব্যবসায়ীদের তৈরী আতঙ্ক দিয়ে মুসলিমদের জান মাল ও ঈমানের ক্ষতি হয়েছে ও হচ্ছে ?

হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার কুরবানী ( পর্ব-২ )

হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার কুরবানী ( পর্ব-২ )

যেই আওলাদ উনাকে তিনি বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছিলেন এবং শিশু অবস্থায় উনার সম্মনিতা মাতা এবং উনাকে জনমানবহীন মরুভুমিতে রেখে আসার আদেশ পেয়ে উনাদেরকে সেখানে রেখে আসলেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের জন্য অপ্রত্যাশিত উৎস থেকে রিযিক পাঠালেন। এত কিছুর পরেও উনার ঘরে প্রথম বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশকারী আওলাদ উনাকে কুরবানী করার জন্য যখন আদেশ মুবারক করা হলো, তখন তিনি তা করতে উদ্যত হলেন। তিনি উনার প্রিয় আওলাদ হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম যিনি একজন নবী আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন- ‘হে আমার আওলাদ! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি আপনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য কুরবানী করছি। 

এতে আপনি কি মনে করেন!’ হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সাথে সাথেই জবাব দিলেন, ‘হে আমার সম্মানিত পিতা! আপনাকে যা আদেশ মুবারক করা হয়েছে, আপনি তা-ই করুন। ইনশাআল্লাহ অবশ্যই আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।’ সুবহানাল্লাহ!

হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সবচেয়ে উত্তম জবাব দিলেন, এটাই ছিল উনার সম্মানিত পিতা উনার প্রতি এবং উনার মহান রব তায়ালা উনার প্রতি আনুগত্যের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তারপর উনারা উভয়ে নিজেদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছার কাছে সমর্পণ করলেন, এবং হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার আওলাদ হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে কাত করে শোয়ালেন। অতঃপর بِسْمِ اللهِ اَللهُ اَكْبَرْ ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে ছুরি চালালেন।

হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যতই ছুরি চালাতে থাকেন; মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত! হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক কিন্তু কাটছে না। সুবহানাল্লাহ! হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ছুরির ধার পরীক্ষা করার জন্য ছুরিটি একটি পাথরে আঘাত করলেন। সাথে সাথে পাথরটি দ্বিখন্ডিত হয়ে গেলো। হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে ছুরি! তুমি পাথরকে দ্বিখন্ডিত করে দিলে অথচ হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক কাটতে পারছো না? মহান আল্লাহ পাক তিনি ছুরির যবান খুলে দেন। ছুরি বললো, ‘হে হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি একবার কাটার জন্য আদেশ করেন আর মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে ৭০ বার কাটতে নিষেধ করছেন। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূর মুবারক হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাঝে অবস্থান মুবারক করছেন। কোন কিছুর পক্ষে হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক কাটা সম্ভব নয়। তাই আমার পক্ষে হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক কাটা সম্ভব হয়নি। সুবহানাল্লাহ!

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক ও হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ছুুরি মুবারক উনার মাঝখানে একটি তামার পাত কুদরতীভাবে রেখে দিয়েছিলেন। যার ফলে গলা মুবারক কাটা যায়নি। হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে যবেহ করার চেষ্টায় নিয়োজিত ছিলেন ঠিক এমতাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে বেহেশত থেকে একটি দুম্বা এনে হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট দেয়ার নির্দেশ দিলেন।

হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি যখন দুম্বা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলেন দেখলেন, হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার প্রাণাধিক প্রিয় সন্তান হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক-এ ছুরি চালাচ্ছেন।

হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম আশ্চর্যান্বিত হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার বড়ত্ব, মহত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে বলে উঠলেন-

 اَللهُ اَكْبَرُ اَللهُ اَكْبَرُ مِنْ كُلّ شَيْءٍ ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার মিং কুল্লি শাই’। একথা বলে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সরিয়ে ছুরির নিচে দুম্বাটি দিয়ে দিলেন। হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে তখন তিনিও মহান আল্লাহ পাক উনার একত্বতার ঘোষণা দিয়ে বললেন-

لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ اللهُ اَكْبَرُ مِنْ كُلّ شَيْءٍ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আকবার মিং কুল্লি শাই’। এদিকে হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিও যখন বুঝতে পারলেন যে, তিনি যবেহ না হয়ে উনার পরিবর্তে একটি দুম্বা যবেহ হচ্ছে তিনিও তখন মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা করে বললেন-

اَكْبَرُ وَللهِ الْـحَمْدُ مِنْ كُلّ شَيْءٍ اَللهُ ‘আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ মিং কুল্লি শাই’। সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে এটিই তাকবীরে তাশরীক নামে মশহুর।

হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার কুরবানী ( পর্ব-১ )

হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার কুরবানী ( পর্ব-১ )

হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে উনার আওলাদ হযরত হাবীল আলাইহিস সালাম উনার ও কাবীলের কুরবানীর পর থেকে আবুল মুসলিমীন হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পর্যন্ত কুরবানী চলতে থাকে। হযরত আবুল মুসলিমীন হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ৮৬ বছর বয়স মুবারক-এ মহান রব তায়ালা উনার নিকট সৎকর্মশীল আওলাদের জন্য দুআ করেন। ফলে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে একজন ধৈর্যশীল আওলাদের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

رَ‌بِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِـحِينَ ◌ فَبَشَّرْ‌نَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيمٍ ◌

অর্থ : “(হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যখন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দু‘আ করলেন) হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে একজন সৎকর্মশীল আওলাদ দান করুন। অতঃপর আমি উনাকে একজন অতি ধৈর্যশীল আওলাদের সুসংবাদ দিলাম।” (পবিত্র সূরা আছ-ছফফাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০-১০১)

সুসংবাদটি ছিল হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে, কেননা তিনি ছিলেন হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার প্রথম আওলাদ। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১/১৫৭-১৫৮)

অতঃপর যখন হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত পিতা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে হাঁটার মত বয়স মুবারকে উপনীত হলেন অর্থাৎ নিজেই নিজের দেখাশোনা করতে পারতেন। 

এ রকম একটা অবস্থা যখন আসল, তখন হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র ৭-৯ যিলহজ্জ শরীফ পর পর ৩ দিন স্বপ্ন মুবারক দেখলেন যে, উনাকে উনার প্রিয় বিষয় কুরবানী করার আদেশ মুবারক দেয়া হচ্ছে।

মুখতালিফ রেওয়ায়েত, এক বর্ণনায় রয়েছে, স্বপ্ন মুবারক দেখার পর তিনি প্রত্যেক দিনই ১০০টি করে উট কুরবানী মুবারক করেন। আরেক বর্ণনায় রয়েছে, প্রথম দিন অর্থাৎ ৭ তারিখে ১০০টি মেষ বা দুম্বা, ৮ তারিখে অর্থাৎ ইয়াওমুত তারবিয়া বা চিন্তার দিবসে ১০০টি গরু ও ৯ তারিখে অর্থাৎ ইয়াওমুল আরাফাহ ১০০টি উট কুরবানী মুবারক করেন। কিন্তু ১০ তারিখে অর্থাৎ ইয়াওমুন নহর হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার প্রাণপ্রিয় আওলাদ হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে কুরবানী করার জন্য স্বপ্নযোগে স্পষ্টরূপে আদিষ্ট হলেন।

মূলত হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের স্বপ্ন মুবারক হচ্ছে ওহী মুবারক। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার প্রিয় আওলাদ হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে কুরবানী করার আদেশের মাধ্যমে মূলত সকল উম্মতের জন্য পরীক্ষার মানদ- স্থাপন করলেন।

কদমবুছী করা সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। বিরোধিতা করা কাট্টা কুফরী ও বেঈমান হবার কারন।

কদমবুছী করা সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। বিরোধিতা করা কাট্টা কুফরী ও বেঈমান হবার কারন।
কদম শব্দের অর্থ হলো ‘পা’। আর ‘বুছী’ শব্দটি ফার্সী যার অর্থ হলো চুম্বন করা। সুতরাং কদমবুছীর অর্থ দাঁড়ায় পা চুম্বন বা পদ চুম্বন করা। 
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কদম মোবারকে বুছা (চুম্বন) দিতেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা একজন অপরজনের কদমবুছী করেছেন। 
তবে অবশ্যই উক্ত কদমবুছী তা’যীম, মুহব্বত ও বরকত হাছীলের লক্ষ্যেই করেছেন, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়। তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দৃষ্টিতে ফক্বীহগণ ফতওয়া দেন যে, পীর-বুযুর্গ, পরহেযগার আলেম, ওস্তাদ, মুরুব্বী, পিতা-মাতা ও ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সন্মানের অধিকারী, এরূপ ব্যক্তিদের কদমবুছী করা সুন্নত, সুন্নতে ছাহাবা ও তাবেয়ীনদের অন্তর্ভূক্ত। কদমবুছীর ন্যায় উপরোক্ত ব্যক্তিদের দস্তবুছী অর্থাৎ হাত চুম্বন করাও সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণিত।
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ إِدْرِيسَ، ووَغُنْدَرٌ، وَأَبُو أُسَامَةَ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ عَمْررِو بْنِ مُرَّةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلَمَةَ، عَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَسَّالٍ، «أَنَّ قَوْمًا مِنَ الْيَهُودِ قَبَّلُوا يَدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْههِ وَسَلَّمَ وَرِجْلَيْهِ»
অর্থঃ- হযরত ছাফওয়ান ইবনে আস্যাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহুদীদের একদল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উভয় হাত ও পা মোবারক বুছা (চুম্বন) দিয়েছেন। তিরমিযী এ হাদীছ শরীফ উনাকে হাসান-সহীহ্ বলেছেন। (আবু দাউদ শরীফ, নাসাঈ শরীফ, মোস্তাদরেকে হাকিম, তিরমিযী শরীফ, হাদীছ-২৭৩৩, ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীছ-৩৭০৫, ফাতহুল বারী জিঃ ১১ পৃঃ ৫৭, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী জিঃ ৭ পৃঃ ৫২৫, মোছান্নেফ ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ-২৬২০, ইলাউস সুনান জিঃ ১৭ পৃঃ ৪২৬)  
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عِيسَى بْنِ الطَّبَّاعِ، حَدَّثَنَا مَطَرُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الأَعْنَقُ، حَدَّثَتْنِي أُمُّ أَبَانَ بِنْتُ الْوَازِعِ بْنِ زَارِعٍ، عَنْ جَدِّهَا، زَارِعٍ وَكَانَ فِي وَفْدِ عَبْدِ الْقَيْسِ قَالَ لَمَّا قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ فَجَعَلْنَا نَتَبَادَرُ مِنْ رَوَاححِلِنَا فَنُقَبِّلُ يَدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَرِجْلَهُ
অর্থঃ- হযরত ওয়াযে ইবনে যারে উনার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা আব্দুল কায়স গোত্রে থাকা অবস্থায় যখন মদীনা শরীফ আসতাম, তখন আমরা সাওয়ারী হতে তাড়াতাড়ী অবতরন করে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত ও পা মোবারক বুছা (চুম্বন) দিতাম। (আবু দাউদ শরীফ, হাদীছ-৫২২৫, বযলুল মাজহুদ জিঃ ৬ পৃঃ ৩২৮, ফতহুল বারী জিঃ ১১ পৃঃ ৫৭, মিশকাত শরীফ, মিরকাত জিঃ ৭ পৃঃ ৮০, আশয়াতুল লোমাত, মুযাহিরে হক্ব, ইলাউস সুনান জিঃ ১৭ পৃঃ ৪২৬) 
عن بريدة- قال- فائذن لى اقبل يديك ورجليك- فاذن له اى فى تقبيل يديه ورجليه- فقبلهما.(نسيم الريض شرح الشفاء لقاضى عياض ج ৩ صفه ৫০، الاذكار للنووى)
অর্থঃ- হযরত বোরাইদাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন (গাছের সিজদা দেয়ার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর) আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে আপনার উভয় হাত ও পা মুবারকে বুছা (চুম্বন) দেয়ার অনুমতি দিন। তখন উনাকে উভয় হাত ও পা মোবারকে বুছা (চুম্বন) দেয়ার অনুমতি দেয়া হলে- তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উভয় হাত ও পা মুবারকে বুছা (চুম্বন) দিলেন। (নাসীমুর রিয়াজ শরহে কাজ্বী আয়াজ জিঃ ৩ পৃঃ ৫০, কিতাবুল আযকার লিন্ নববী)
عن زيدبن ثابت انه قبل يد انس- واخرج ايضاان عليا قبل يد العباس ورجله- (فتح البارى شرح بخارى ج ১১ صفه৫৭، تحفة الاحوذى شرح ترمذى ج৭ صفه ৫২৮)  
অর্থঃ- হযরত যায়দ ইবনে সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুা এর হাত মুবারকে বুছা (চুম্বন) দিয়েছেন। তিনি এটাও বর্ণনা করেন যে, হযরত আলী ইবনে আবী তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাত ও পা মোবারকে বুছা (চুম্বন) দিয়েছেন। (ফতহুল বারী জিঃ ১১ পৃঃ ৫৭, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী শরহে তিরমিযী জিঃ ৭ পৃঃ৫২৮)
ان رجلا اتى النبى صلى الله عليه وسلم فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم امرنى شيئا ازداد به يقينا- فقال اذهب الى تلك الشجرة فاد عها- فذثب اليها- فقال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم يدعوك- فجائت حتى سلمت على النبى صلى الله عليه وسلم- فقال لهاارجعى فرجعت- ثم اذن له فقبل رأسه ورجليه- اخرجه حاكم فى صيح الاسناد. (مستدرك حاكم، فتح البارى ج১১ صفه ৫৭، تحفة الاحوذى ج ৭ صفه ৫২৮ الكلام المبين صفه ১৪৬)
অর্থঃ- এক ব্যক্তি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বলল ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে এমন কোন বিষয়ে আদেশ করেন, যা আমার বিশ্বাসকে আরো বৃদ্ধি করবে। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে বললেন, “তুমি ঐ গাছটিকে ডেকে আনো।” অতঃপর সে গাছটির নিকটে গিয়ে বললো, নিশ্চয়ই রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাকে ডেকেছেন। সুতরাং গাছটি এসে আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সালাম করলো। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে চলে যেতে বললেন, গাছটি তখন চলে গেল। অতঃপর ঐ ব্যক্তি অনুমতি স্বাপেক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা মোবারক ও উভয় কদম (পা) মোবারক বুছা (চুম্বন) দিল। হাকিম এ হাদীছ শরীফখানা সহীহ্ সনদে বর্ণনা করেন। (মোস্তাদরেকে হাকিম, ফতহুল বারী জিঃ ১১ পৃঃ ৫৭, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী জিঃ ৭ পৃঃ ৫২৮, আল কালামুল মুবীন পৃঃ ১৪৬)

روى عن النبى صلى الله عليه وسلم كان يقبل فاطمة- ريقول اجدمنها ريح الجنة- وقبل ابوبكر رأس عائشه- وقال صلى الله عليه وسلم من قبل رجل امه فكاغما قبل عتبة الجنة. (مبسوط للسرخسى ج ১০ صفه ১৪৯)
অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হতে বর্ণিত, তিনি হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে বুছা (চুম্বন) দিতেন এবং বলতেন, “আমি তার থেকে বেহেস্তের সুঘ্রান পাই।” এবং হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আয়েশা সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার মাথায় বুছা (চুম্বন) দিতেন। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি তার মায়ের কদমবুছা দিল, (অর্থাৎ পা চুম্বন করল) সে ব্যক্তি মূলতঃ বেহেস্তের চৌকাঠের উপর চুম্বন করলো। (মাবছুত লিস্ সারাখ্সী জিঃ ১০ পৃঃ ১৪৯) (৬৭-৬৮) 
عن طلحة- قال- قبل خيشمة يدى وقال الك قبل طلحة يدى- (مصنف ابن ابى شيتة ج ৮ صفه ৫৬২، طبقات ابن سعد ج ৬ صفه ২০১)
অর্থঃ- হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত খায়শামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার হাতে বুছা (চুম্বন) দেন এবং হযরত মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার হাতে বুছা (চুম্বন) দেন। (মোছান্নেফ ইবনে আবী শায়বা জিঃ ৮ পৃঃ ৫৬২, তাবাকাতে ইবনে সা’দ জিঃ ৬, পৃঃ ২০১)
حضرت ابو سفیان کے مناقب مین لکھا ھے حضرت عباس رضی اللہ عنہ نے فرمایا کہ مین نے اپکے قدم مبارک کو بوسہ دیا- (مستدرک حاکم ج3 صفہ254)
অর্থঃ- হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার “মানাক্বিবে” বর্ণিত রয়েছে যে, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি উনার কদম মোবারকে বুছা (চুম্বন) দিয়েছি। (মোস্তাদরেকে হাকিম জিঃ ৩ পৃঃ ২৫৪) 
امام مسلم بن حجاج کا واقعہ جو امام بخاری کے ساتھ پیش ایا کہ امام مسلم رحمۃ اللہ علیہ نے امام بخاری رحمۃ اللہ علیہ کی پیشانی کو بوسہ دیا اور قدم بوسی کا ارادہ کیا- یہ کتب حدیث ورجال مین معروف و مشھور ھے- (الکرامۃ والتقبیل)
  অর্থঃ- ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কিত ঘটনা। অর্থাৎ ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কপালে বুছা (চুম্বন) দিয়েছেন এবং কদমবুছী (পা চুম্বন) করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। এ ঘটনা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাব ও রিজাল শাস্ত্রে পরিচিত ও প্রসিদ্ধ। (আল কিরামাতু ওয়াত্ তাক্ববীল)
تمام روایات سے ثابت ھوا کہ علماء ومشائخ اور دینی شرف رکھنے و الے حضرات کی دست بوسی بلکہ قدم بوسی بھی نیز پیشانی و غیرہ- پر بوسہ دینا سنت اور تعامل صحابہ وتابعین سے بلا کسی نکیر کے ثابت ھے- (الکرامۃ و التقبیل للشیخ عابد سندھی) 
 অর্থঃ- পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সকল বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়ে যে, দ্বীনদার, আলেম, পীর ও বুযর্গদের দস্তবুছী (হাত চুম্বন), কদমবুছী (পা চুম্বন) এমন কি কপালে বুছা (চুম্বন) দেওয়াও সুন্নত এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও তাবিয়ীনদের আমল হিসাবে বিনা প্রশ্নে তা প্রমাণিত। (আল কিরামাতু ওয়াত্ তাক্ববীল লিশ্ শায়েখ আবেদ সিন্ধী)
و احدیث یدل علی جواز التبیل الید والرجل- و قال الا بھری: انما کرھھا مالک اذا کانت علی وجہ القربۃ الی اللہ لدینہ اولعلمہ اولشرفہ فان ذالک جائز- (فتح الباری شرح البخاری ج11 صفہ57، تحفۃ الاحوذی شرح ترمذی ج7 صفہ528)
 অর্থঃ- দস্তবুছী (হাত চুম্বন), কদমবুছী (পা চুম্বন) জায়িয হওয়া হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। আবহুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এটাকে মাকরূহ বলেছেন, যদি নাকি বড়ত্ব ও তাকাব্বুরীর জন্য করা হয় আর যদি আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য অর্জনের লক্ষ্যে কোন দ্বীনদার, আলেম ও সন্মানিত ব্যক্তির দস্তবুছী ও কদমবুছী ইত্যাদি করা হয়, তবে তা নিশ্চয় জায়িয। (ফাতহুল বারী জিঃ ১১, পৃঃ ৫৭, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী জিঃ ৭ পৃঃ ৫২৮)
و بوسہ دادن دست عالم متورع راجائزاست- و بعضے گفتہ اند مستحب است- اگر بردست عالم یا سلطان بوسہ دھد ازجھت علم و عدالت واعزاز دین لا بأس بہ است اگر بجھت غرض دنیوی کند مکروہ است- ودر بعضے احادیث بوسیدن بعضے ازصحابہ پانے ان سرور صلی اللہ علیہ وسلم امدہ- ومختار ھمین است معانقہ و تقبیل در قدوم از سفر جائزاست بے کراھت- (اشعۃ للمعات شرح مشکوۃ ج4 صفہ23، مظاھ حق ج4 صفہ60)
 অর্থঃ- পরহেযগার আলেম উনার দস্তবুছী (হাত চুম্বন) জায়েয এবং কেউ কেউ বলেন, মোস্তাহাব। যদি আলেম ও ইনসাফগার খলীফার হাত ইলম, ইনসাফ ও দ্বীনের সন্মানার্থে বুছা (চুম্বন) দেয়, তাতে কোন নিষেধ নেই। তবে দুনীয়াবী স্বার্থ সিদ্ধীর লক্ষ্যে হলে অবশ্যই মাকরূহ্ এবং হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কর্তৃক সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কদম মোবারক বুছা দেয়ার বর্ণনা এসেছে। সুতরাং গ্রহণযোগ্য মত এটাই যে, সফর থেকে ফিরে এসে সাক্ষাতের সময় মোয়ানেকা (কোলাকুলি) ও (তাক্ববীল) বুছা (অর্থাৎ কদমবুছী ইত্যাদি) দেয়া জায়েয, মাকরূহ্ নয়। (আশয়াতুল লোময়াত শরহে মিশকাত জিঃ ৪ পৃঃ ২৩, মোজাহেরে হক্ব জিঃ ৪ পৃঃ ৬০)
طلب من عالم اوز اهد ان يد فغ اليه قدمه ويمكنه من قدمه ليقبله اجابه- وقيل لا يرخص فيه- وفى ردالمحتار- قوله اجبه لما اخرده الحاكم- ثم اذن له فقبل راسه ورجليه- (شامى ج ৫ صفه ৩৭৮، درالمختار، ردالمحتار، شرتبلالى، غاية الاوطار، عالمكيرى ج ৫ صفه ৪০৪ اشعة للمعات، قنية)
অর্থঃ যদি কেউ কোন আলেম অথবা বুযর্গ উনার নিকট দরখাস্ত করে যে, আপনার পা আমাকে দিন আমি বুছা (চুম্বন) দেব, তখন উনার এ দরখাস্ত কবুল করা জায়েয। কেউ কেউ জায়েয নেই বলে মত প্রকাশ করেন। শামী কিতাবে জায়েযকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং দলীল হিসাবে মোস্তাদরেকে হাকিম এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেন যে, এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা ও কদম মোবারক বুছা (চুম্বন) দেয়ার অনুমতি চাইলে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে এ ব্যাপারে অনুমতি প্রদান করেন। (শামী জিঃ ৫ পৃঃ ৩৭৮, দুররুল মোখতার, রদ্দুল মোহতার, শরাম্বলালী, গায়াতুল আওতার, আলমগীরী জিঃ ৫ পৃঃ ৪০৪, আশয়্যাতুল লোময়াত, কুনিয়া) 
وكره تحريما قهستانى تقبيل الرجل فمالرجل اويده- عند لقاء او وداع وهذا لو عن ضهوة واماعلى وجه البر فجائز عند الكل. لوالقبلة على وده المبرة دون الشهوة جاز بالا جماع ان التقبيل على سبيل البربلا شهوة جائز بالاجماع. (تاتارخانيه، المحيط، عينى، الحقائق، قهستانى، احسن الفتاوى ج১ صفه ৩৯৬)
অর্থঃ - কোহেস্তানী কিতাবে সাক্ষাৎ অথবা বিদায়ের সময় একজন অপরজনের (পুরুষ) মুখ, হাত ইত্যাদি বুছা (চুম্বন) দেওয়া মাকরূহ্ বলা হয়েছে, যদি নাকি খাহেশাতের সাথে হয়। আর যদি নেক দৃষ্টিতে (তা’যীমের জন্য হাত, মুখ, পা ইত্যাদি) বুছা (চুম্বন) দেওয়া হয়, তবে সকলের নিকটেই জায়েয। নিশ্চয় যদি (হাত, কদম, মুখ ইত্যাদি) খাহেশাতের সাথে বুছা (চুম্বন) না দেয় বরং নেকী হাসীলের লক্ষ্যে বুছা (চুম্বন) দেয়, তবে সর্বসম্মতীক্রমে জায়েয। (তাতারখানিয়া, মুহীত্ব, আইনী, আল্ হাকায়েক, কোহেস্তানী, আহ্সানুল ফতওয়া জিঃ ১ পৃঃ ৩৯৩)
ويكره ان يقبل الرجل فم الرجل اويده اوسيأ منه- فى قول ابى حيفة ومحمد وقال ابو يوسف لايأس بالتقبيل والمعانقه فان كانت المعانقة من فوق قميص اوجبة اوكائت القبلة على وجه المسرة دون الشهوةجاز عند الكل- (فتاوئ قاضى خن بر حاشيا، عالمبكرى ج ৩ صفه ৪৪৪،بدائع الصناشغ جه صفه ১২৪) 
অর্থঃ- হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে একজন অপরজনের মুখ, হাত অথবা শরীরে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বুছা (চুম্বন) দেয়া মাকরূহ্ এবং ইমাম আবু ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে তাক্ববীল (অর্থাৎ কারো হাত, কদম, মুখ ইত্যাদি) বুছা (চুম্বন) দেওয়া ও মোয়ানেকা করা মাকরূহ্ নয় এবং তাক্ববীল (অর্থাৎ হাত, কদম, মুখ ইত্যাদি) খাহেশাতের জন্য বুছা না দেয় বরং সন্মানার্থে বুছা (চুম্বন) দেয়, তবে সকলের নিকটেই জায়েয। (কাজীখান, হাশিয়ায়ে আলমগীরী জিঃ৩ পৃঃ৪৪৪, বাদায়েউস সানায়ে জিঃ৫ পৃঃ১২৪)
فتاوی قاضی خان کی اخری عبارت سے معلوم ھوا کہ مسئلہء تقبیل و معانقہ مین جو اختلاف امام ابو حنیفۃ رحمۃ اللہ علیہ و محمد رحمۃ اللہ علیہ کا نقل کیا جاتا ھے وہ اس صورت مین ھے جس مین خطرہ شھوۃ کا یامشا بھت اسکی پانی ورنہ معانقہ اور تقبیل تینون ائمہ کے نزدیک جائز ھے- (جواھر الفقہ ج1 صفہ196)
 অর্থঃ- ফতওয়ায়ে কাযীখান কিতাবের শেষোক্ত ইবারত দ্বারা এটাই বুঝা যায় যে, তাক্ববীল (অর্থাৎ কারো হাত, কদম, মুখ ইত্যাদি) বুছা দেয়া ও মোয়ানেকার যে ইখতিলাফ হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের হতে বর্ণিত হয়েছে, তা মূলতঃ খাহেশাত ও অনুরূপ কারণেই। যদি খাহেশাতের জন্য না হয়, তবে তিন ইমামের নিকটেই দস্তবুছী, কদমবুছী ইত্যাদি ও মোয়ানেকা জায়েয। (জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ জিঃ১ পৃঃ১৯৬) 
پس صحیح جواز تقبیل قدم فی نفسہ ھے اور فقھاء کے منع کو عارض مفسدہ پر محمول کیا جائیگا- (امداد الفتاوی ج5 صفہ345، مواعظ اشرفیہ) 
অর্থঃ- সুতরাং সহীহ্ মত হলো- মূল কদমবুছী জায়েয এবং ফক্বীহ্দের নিষেধাজ্ঞা শরীয়তের খেলাফ কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। (অর্থাৎ খাহেশাত, রুকু, সিজদার নিয়তে মাথা ঝুকানো ইত্যাদির কারণে) (ইমদাদুল ফতওয়া জিঃ ৫ পৃঃ ৩৪৫, মাওয়ায়েজ আশ্রাফিয়া)
সুতরাং উপরোক্ত ব্যাখ্যা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, তিরমিযী শরীফ উনার উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মূলতঃ আমলোক অর্থাৎ সাধারণ লোকদের দস্তবুছী, কদমবুছী ইত্যাদি করতে নিষেধ করা হয়েছে, আলেম, আদেল, বুযুর্গ ব্যক্তিদের দস্তবুছী, কদমবুছী ইত্যাদি করার আদেশ রয়েছে। অর্থাৎ উনাদের দস্তবুছী, কদমবুছী জায়েয ও সুন্নত। সুতরাং উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার শরাহ্, ফিক্বাহ ও ফতওয়াসহ নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের দলীল দ্বারা এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় যে, কদমবুছী, দস্তবুছী স্থান, কাল, পাত্র বিশেষে শুধু জায়েযই নয়, সুন্নতে ছাহাবা, সুন্নতে বুযুর্গানে দ্বীন। কাজেই কদমবুছীকে বেদয়াত, শেরেকী, কুফরী ইত্যাদি বলা প্রকৃতপক্ষে কোন হালালকে হারাম বলার ন্যায় কুফরী হবে, যা থেকে পরহেয করা আমাদের সকলের কর্তব্য ও ওয়াজিব এবং অবস্থা বিশেষে সকলেরই কদমবুছী করা বা নেয়া সুন্নতে ছাহাবা, সুন্নতে তাবেঈন ও সুন্নতে বুযুর্গানে দ্বীন।

কুরবানি’ই ইসলামবিদ্বেষী মহলের মূল সমস্যা; তাদের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখের কারণে বা পূজার কারণে এমনকি সারাবছর লেগে থাকা যানজটও কোনো সমস্যা নয়!

কুরবানি’ই ইসলামবিদ্বেষী মহলের মূল সমস্যা; তাদের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখের কারণে বা পূজার কারণে এমনকি সারাবছর লেগে থাকা যানজটও কোনো সমস্যা নয়!
যানজট ও মানুষের চলাচলে সমস্যার বিভ্রান্তিকর অজুহাত দেখিয়ে রাজধানিতে পবিত্র কুরবানির পশুর হাট কমানোর পক্ষে জোর প্রচারণা চালাচ্ছে কিছু ইসলামবিদ্বেষী মহল ও মিডিয়া। যদিও পশুর হাট ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনে। বরং পর্যাপ্ত বা নিকটস্থ এলাকায় পশুর হাট না থাকলে এই জনগণেরই ভোগান্তি পোহাতে হয়। এই অতিব প্রয়োজনিয় হাটকে বাঁকা চোখের লোকগুলো ‘সমস্যা’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রচার করছে। আসলে এটি সমস্যা হতে পারে কেবল কুরবানিবিদ্বেষী মহলের জন্যই। যেহেতু এটা ‘কুরবানি’। 

বলাবাহুল্য, যখন পহেলা বৈশাখের কারণে ঢাকার বড় বড় হাসপাতালগুলোর (ঢামেক, পিজি, বারডেম) গেট বন্ধ হয়ে যায় তখন এসব যানজট সচেতন(!) মহলগুলোর কোথায় থাকে। যখন হিন্দুদের দুর্গাপূজা-জন্মাষ্টমী-রথযাত্রার হিন্দুরা ঢাকা শহরে যানজট বাঁধিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য মিছিল করে তার আগে এসব মহলের যানজট অনুভূতি কোথায় থাকে? রাজনৈতিক দলগুলো যখন সারা বছর তাদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে রাস্তা আটকে মিটিং-মিছিল করে, তখন তাদের জনদুর্ভোগের কথা কোথায় থাকে? শাহবাগ আন্দোলনের নামে যখন ৩-৪ মাসব্যাপী লাখ লাখ মানুষের ভোগান্তি হয়েছিলো, হাসপাতালের রাস্তা বন্ধ হয়ে থাকায় হাজার হাজার রোগীর কষ্ট-যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিলো, তখন এরা কোথায় ছিলো? মূল বিষয়টা হচ্ছে, হাট নিয়ে এসব চুলকানির উৎস যানজট নয়, বরং যবন, ম্লেচ্ছ, অস্পৃশ্যদের দেয়া খুদ-কুড়া খেয়ে দালালি করাই হচ্ছে মূল কারণ। 

সুতরাং বামপন্থী নাস্তিকদের কুরবানির হাট বিরোধী অপপ্রচারের বিপরীতে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রয়োজন উপলব্ধি করে মুসলমানদের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের উচিত হচ্ছে প্রত্যেক এলাকায় এলাকায় মহল্লায় মহল্লায় পশুর হাটের লাইসেন্স দেয়া। যেন মানুষ নিজ এলাকা থেকেই কুরবানির পশু কিনতে পারে। বরং এতে যানজট না হওয়ার নিশ্চয়তা আছে। আর যদি সরকার আবেদনকারীদের হাট বসানোর লাইসেন্স না দেয়, তবে আবেদনকারীদের উচিত এলাকাবাসীদের সাথে নিয়ে মিলে মিশে কাজটি সেরে ফেলা।

আসুন জেনে নেই ভারতের কোন কোন অঙ্গরাজ্যে গরু জবাই করলে কিংবা কুরবানি করলে কি কি শাস্তি।

আসুন জেনে নেই ভারতের কোন কোন অঙ্গরাজ্যে গরু জবাই করলে কিংবা কুরবানি করলে কি কি শাস্তি।
আমাদের পার্শ্ববর্তী হিন্দু নিয়ন্ত্রিত দেশ ভারতের বহু প্রদেশে গরু জবাই নিষিদ্ধ। যদিও সেখানে মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই হচ্ছে মুসলমান। তবে ৮টি প্রদেশ ব্যাতীত অন্যান্য প্রদেশগুলোতে গরু জবাইয়ে রয়েছে কঠোর শাস্তির বিধান। আসুন জেনে নেই কোন কোন প্রদেশে জবাইয়ের জন্য মুসলমানদের কেমন শাস্তি দেয়া হয়- (১) অন্ধ্রপ্রদেশ : ৬ মাসের জেল ও ১ হাজার রুপি জরিমানা। (২) আসাম : ৬ মাসের জেল ও ১ হাজার রুপি জরিমানা। (৩) বিহার : ৬ মাসের জেল ও ১ হাজার রুপি জরিমানা। (৪) দামান ও দিউ : ২ বছরের জেল ও ১ হাজার রুপি জরিমানা। (৫) দিল্লি : ৫ বছরের জেল ও ১০ হাজার রুপি জরিমানা। (৬) গোয়া : ২ বছরের জেল ও ১ হাজার রুপি জরিমানা। (৭) গুজরাট : ৭ বছরের জেল ও ৫০ হাজার রুপি জরিমানা। (৮) হরিয়ানা : গরু ও মহিষ কোনোটাই জবাই করা যাবে না, করলে ৫ বছর জেল ও ৫ হাজার রুপি জরিমানা। (৯) হিমাচল : গরু ও মহিষ কোনোটাই করা যাবে না, করলে ২ বছর জেল ও ১ হাজার রুপি জরিমানা। (১০) জম্মু কাশ্মীর : গরু ও মহিষ কোনোটাই করা যাবে না, করলে ১০ বছর জেল ও এবং জবাইকৃত পশুর মূল্যের ৫গুন জরিমানা। (১১) কর্নাটক : ৬ মাসের জেল ও ১ হাজার রুপি জরিমানা। (১২) মধ্য প্রদেশ : ৩ বছরের জেল ও ৫ হাজার রুপি জরিমানা। (১৩) উড়িষ্যা : ২ বছর জেল ও ১ হাজার রুপি জরিমানা। (১৪) পুদুচেরি : ২ বছরের জেল ও১ হাজার রুপি জরিমানা। (১৫) পাঞ্জাব : গরু ও মহিষ কোনোটাই জবাই করা যাবে না, করলে ২ বছরের জেল ও ১ হাজার রুপি জরিমানা। (১৬) রাজস্থান : গরু ও মহিষ কোনোটাই জবাই করা যাবে না, করলে ২ বছরের জেল ও ১০ হাজার রুপি জরিমানা। (১৭) তামিলনাড়ু : ৩ বছরের জেল ও ১ হাজার রুপি জরিমানা। (১৮) তেলেঙ্গানা: ৬ মাসের জেল ও ১ হাজার রুপি জরিমানা। (১৯) উত্তরপ্রদেশ: ২ বছর জেল ও ১ হাজার রুপি জরিমানা। (২০) পশ্চিমবঙ্গ: বৃদ্ধ ও প্রজননে অক্ষম গরু জবাই করা যাবে। তবে এর বাইরে করলে ৬ মাসের জেল ও ১ হাজার রুপি জরিমানা। (২১) মহারাষ্ট্র: ৫ বছরের জেল ও জরিমানা। 

উল্লেখ্য, বর্তমানে ভারতের মোট ২৯টি প্রদেশ। এরমধ্যে ২১টি প্রদেশেই গরু কুরবানি ও সারা বছর গরু-মহিষ জবাই নিষিদ্ধ।

পবিত্র কুরবানির পশু নিয়ে ব্যঙ্গ করা, কার্টুন প্রকাশ করা, সেলফী তোলা প্রসঙ্গে।

পবিত্র কুরবানির পশু নিয়ে ব্যঙ্গ করা, কার্টুন প্রকাশ করা, সেলফী তোলা প্রসঙ্গে।
কুরবানি যেমন পবিত্র তেমনি কুরবানির পশুও পবিত্র এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহ, সম্মানিত হারাম মাস উনাদের, কুরবানির জন্য ওই সমস্ত পশু যাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ওই সমস্ত ব্যক্তি যারা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য হজ্জ পালন করতে যান উনাদেরকে ইহানত (অবমাননা) করো না।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

উপরের পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা স্পষ্টরূপে প্রমাণ হয় পবিত্র কুরবানি উনার পশুসমূহ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নিদর্শন, যা তা’যীম-তাকরীম করা মুসলমান উনাদের জন্য কল্যাণের কারণ। পাশাপাশি এই পবিত্র নিদর্শনসমূহ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা কুফরী এবং কবীরা গুনাহ। নাউযুবিল্লাহ! 

প্রসঙ্গত, অনেকেই এই বিষয়টা না জানার কারণে পবিত্র কুরবানির জন্য নির্ধারিত পশুর ছবি তুলে থাকে, পশুর সাথে সেলফী তুলে, জবাই করার সময় ভিডিও করে থাকে। যার ফলে তার নিজের অজান্তেই কবীরা গুনাহ করে। অর্থাৎ যেহেতু প্রাণীর ছবি তোলা হারাম সেহেতু কুরবানির পশুর ছবি তুললে বা ভিডিও করলে মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টির ফলে কবীরা গুনাহ হয়। নাউযুবিল্লাহ!

এত কম সংখ্যক হাট থেকে পবিত্র কুরবানির পশু কেনা সম্ভব নয়।

এত কম সংখ্যক হাট থেকে পবিত্র কুরবানির পশু কেনা সম্ভব নয়।
এবার পবিত্র কুরবানিতে সরকারিভাবে রাজধানিতে পশুর হাট কমানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা, যানজট ইত্যাদির অজুহাতে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ও বড় বড় হাটগুলো ঢাকার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা চলছে। এসব পরিকল্পনা মূলত ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়। 

স্মরণ রাখতে হবে, পশুর হাট অন্যত্র সরিয়ে নিলে বা হাটের সংখ্যা কমিয়ে দিলে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে, যানজট আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে, নিরাপত্তা জনিত হুমকি আরো বাড়বে বৈ কমবে না। এটা একটা সাধারণ সমঝদার মানুষের পক্ষেও উপলব্ধি করা কঠিন নয়। 

এসব ছাড়াও কুরবানির হাটের সংখ্যা কমে গেলে সেখানে চাহিদার তুলনায় পশু সঙ্কট দেখা দিবে। ফলে ছোট পশুও অনেক দাম দিয়ে কিনতে হবে, পছন্দমতো সুন্দর পশু পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। সুতরাং কুরবানির হাট না কমিয়ে, বরং প্রতিটি ওয়ার্ডে পশুর হাট করতে হবে। রাজধানির প্রতিটি মাঠে হাট স্থাপন করতে হবে। তাহলে মানুষের চলাচলের পথ কমে আসবে, যানজট কমবে, পশুর দাম সহনিয় পর্যায়ে থাকবে সর্বোপরি কুরবানির পশু কিনতে গিয়ে মানুষের ভোগান্তি কমে আসবে।

পবিত্র কুরবানি নিয়ে ষড়যন্ত্র কঠোর হস্তে বন্ধ না করলে সরকারের সহযোগিতা প্রমাণিত হবে।

পবিত্র কুরবানি নিয়ে ষড়যন্ত্র কঠোর হস্তে বন্ধ না করলে সরকারের সহযোগিতা প্রমাণিত হবে।

পবিত্র কুরবানি মুসলমানদের ঈমানের সাথে অর্থাৎ মুসলমানিত্বের সাথে সম্পৃক্ত, যা গোটা দেশের জন্য শুধু বরকতের কারণই নয়; বরং অর্থনৈতিকভাবেও ব্যাপক সমৃদ্ধির কারণ। এই বরকতময় কুরবানিতে যেন মুসলমানগণ বাধাগ্রস্ত হয়, কুরবানির সংখ্যা যেন ধীরে ধীরে কমে আসে, কুরবানিতে যেন বিশৃংঙ্খল সৃষ্টি হয় এবং এ অজুহাতে কুরবানি যাতে বন্ধ করে দেয়া যায় এজন্য বছরের পর বছর কুরবানি নিয়ে ষড়যন্ত্র করে আসছে কিছু ইসলামবিদ্বেষী মহল। 

এবছর দেখা যাচ্ছে, নানা অজুহাতে রাজধানিতে কুরবানির পশুর হাট কমিয়ে দিতে চাচ্ছে। পশু জবাইয়ের জন্য স্পট নির্ধারিত করে দিচ্ছে। অ্যানথ্রাক্স, মোটাতাজাকরণ ইনজেকশন ইত্যাদি অপপ্রচার করে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্র বন্ধ না করতে পারলে তা শুধু সরকারের ব্যর্থতাই প্রমাণিত হবে না; বরং এটাও স্পষ্ট হবে যে এসব ষড়যন্ত্রে সরকারও সহযোগী।

পবিত্র কুরবানির জন্য স্পট নির্ধারণ কেন? সরকার কি মুসলমানদের কুরবানিতে বাধা সৃষ্টি করতে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে?

পবিত্র কুরবানির জন্য স্পট নির্ধারণ কেন? সরকার কি মুসলমানদের কুরবানিতে বাধা সৃষ্টি করতে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে?
প্রতি বছরই পবিত্র কুরবানির সময় নানা অযুহাতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চেষ্টা করে কিছু ইসলাম বিদ্বেষী মহল। বিশেষ করে সরকার ও প্রশাসনের মধ্যে অবাধ বিচরণকারী রাঘব বোয়ালদের কুপ্ররোচণায় সরকার এসব ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু এদেশে ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান এবং তাদের সমর্থন নিয়েই শাসকগোষ্ঠীদের টিকে থাকতে হয়, একথাটি হয়তো তারা ভুলে যায়। তাই প্রতি বছরের মতো এবারে পবিত্র কুরবানিতে বাধা সৃষ্টি করতে কিছু ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে পড়েছে প্রশাসন। সরকারিভাবে এবার পশু কুরবানির জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ আমার বাড়িতে আমি কুরবানি দিতে পারবোনা, দিতে হবে সরকারের নির্ধারিত জায়গায়। এটা সবাই জানে যে, উগ্র সাম্প্রদায়িক ভারতের হিন্দুরা সেখানে মুসলমানদের কুরবানি করতে দেয়না। কিন্তু বাংলাদেশেতো ৯৮ ভাগ মুসলমান, এদেশে কেন মুসলমানদের পশু কুরবানিতে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে? 

অনেক অথর্ব মুসলমান কোনো ফিকির না করেই এটাকে সমর্থন জানাচ্ছে। অথচ এই ব্যবস্থায় কুরবানি দিলে প্রতিটি স্পটে একটি-দুটি নয়, বরং বহু ধরনের ফিতনা-ফাসাদ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যেমন- সরকারি ক্যাডারদের দৌরাত্ম্য, মারামারি, পরস্পর দ্বন্দ্ব-সংঘাত, যার যার পশুর গোশত নিয়ে কোন্দল, অব্যবস্থাপনা, কসাই নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি, পশু নিয়ম মাফিক জবাই হবে না। ফলে ফিতনা সৃষ্টি হবে, যেহেতু একেকটি স্পটে হাজার হাজার পশু কুরবানি হবে সেহেতু সেখানে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। 
সুতরাং পরিবেশ রক্ষার নামে ভারতীয় ষড়যন্ত্র এদেশে চলবে না। সিটি কর্পোরেশনের এসব ষড়যন্ত্রমূলক ঘোষণা তুলে নিতে হবে। প্রত্যেক মুসলমান যার যার বাড়ির আঙ্গিনায় কুরবানি করবে।

পবিত্র কুরবানির পশুর উচ্ছিষ্ট রপ্তানি করেও দেশ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে।

পবিত্র কুরবানির পশুর উচ্ছিষ্ট রপ্তানি করেও দেশ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে।
আমরা অনেকেই জানি না পশুর উচ্ছিষ্ট কী এবং এসব উচ্ছিষ্ট কী কী কাজে লাগে। মূলত, পশুর উচ্ছিষ্ট হলো গরুর চামড়া, হাড়, শিং, নাড়িভুঁড়ি, মূত্রথলি, রক্ত, চর্বি, পিত্ত ইত্যাদি। জবাইয়ের পর একটি মাঝারি আকারের গরু থেকে ১৫ থেকে ২০ কেজি হাড় ফেলে দেয়া হয়। আর এই হাড় সংগ্রহ করে প্রতিদিন ব্যবসা হয় অন্ততঃ ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। নাড়িভুঁড়ি বিক্রি হয় আরো অন্ততঃ ১২ লাখ টাকার। এসব তথ্য উচ্ছিষ্ট ব্যবসায়ীদের। 

আর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য হচ্ছে, রাজধানিতে প্রতিদিন জবাইকৃত পশুর এসব উচ্ছিষ্ট বিক্রি হয় অন্ততঃ ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকায়। আর এক কুরবানির ঈদে যে পরিমাণ পশু কুরবানি হয় তার উচ্ছিষ্ট বিক্রি করে হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।” 

বাংলাদেশ গোশত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মর্তুজা বলেন, ‘এসব উচ্ছিষ্টের শতভাগ রপ্তানিযোগ্য। সাধারণ মানুষ এসব উচ্ছিষ্ট সম্পর্কে সচেতন না থাকার কারণে শত শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশ হারাচ্ছে রপ্তানি বাজার।’

উল্লেখ্য, গরুর হাঁড় দিয়ে তৈরি হয় জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ক্যাপসুলের কাভার, গরুর নাড়ি দিয়ে অপারেশনের সুতা, রক্ত দিয়ে পাখির খাদ্য, চর্বি দিয়ে সাবান, পায়ের খুর দিয়ে অডিও ভিডিওর ক্লিপ, ইত্যাদি। এভাবে পশুর সব অংশই মানুষের কোনো না কোনো কাজে ব্যবহৃত হয়। (তথ্যসূত্র: অর্থসূচক, ৭/১০/১৪ঈ)
বলার অপেক্ষা রাখে না, কুরবানির পশুর উচ্ছিষ্টও যদি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে তাহলে বুঝতে হবে পবিত্র কুরবানি শুধু মুসলমানদের ঈদ উৎসবই নয়, বরং গোটা দেশ ও জাতির জন্য রহমতস্বরূপ। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র কুরবানির উসীলায় চাঙ্গা হয়ে উঠে গোটা দেশের অর্থনিতি।========

পবিত্র কুরবানির উসীলায় চাঙ্গা হয়ে উঠে গোটা দেশের অর্থনিতি।========


এক কুরবানির ঈদের বরকতে চাঙ্গা হয়ে উঠে গোটা দেশের অর্থনিতি। হবে না কেন? এর সাথে জড়িত রয়েছে হাজার হাজার ব্যবসা আর হাজার হাজার টাকার লেনদেন। যেমন- ২০১৩ সালের একটি সমীক্ষা নিয়ে পর্যালোচনা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ওই বছর ১ কোটি পশু কুরবানি হয়েছে যা টাকার অঙ্কে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর থেকে কুরবানির ঈদ আসার পূর্ব পর্যন্ত বিদেশ থেকে পাঠানো টাকার রেমিটেন্স এসেছে ১৫২ কোটি ডলার। দেশের চামড়া শিল্প টিকে থাকে এই কুরবানির উপর। ২০১৩ সালে চামড়া ব্যবসায়ীদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২ হাজার কোটি টাকার চামড়া রপ্তানি করার। এ সম্পর্কে যুগান্তর পত্রিকায় (২০ অক্টোবর ২০১৩) সংবাদ এসেছিলো যে, চামড়া রফতানির আয় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এসব ছাড়াও কুরবানিকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার ব্যবসা চাঙ্গা হয়ে উঠে। যেমন- গোশত সংরক্ষণের জন্য ফ্রীজের প্রচুর চাহিদা সৃষ্টি হয়; ছুড়ি, দা, চাপাতিসহ লৌজাত দ্রব্যের কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হয়; মশলাজাত দ্রব্য ও লবণের ব্যবসা চাঙ্গা হয়, ভোগ্যপণ্য সামগ্রীর ব্যবসাও জমজমাট হয়ে উঠে। 
অর্থনিতিবিদরা বলছেন, গত পাঁচ বছরে গড়ে ৬ শতাংশের উপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং ক্রয় ক্ষমতা বাড়ার পেছনে রেমিটেন্স, রফতানি আয় ও রিজার্ভ বিশেষ অবদান রেখেছে। আর রেমিটেন্স সবচেয়ে বেশি আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর ও কুরবানির ঈদে। এছাড়া রফতানিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চামড়া শিল্প। কুরবানির উপর ভর করে টিকে আছে দেশের সম্ভাবনাময় এ রফতানি খাতটি। (তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ, ১৫ অক্টোবর ২০১৩ ঈসায়ী) 

মোদ্দাকথা, কুরবানি অত্যন্ত বরকতময় এবং পবিত্র, যার সাথে সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার সস্তুষ্টি জড়িত। সেই কুরবানি যথাযথভাবে পালন করলে যেমন লাভ, তদ্রƒপ ষড়যন্ত্র করলে ক্ষতির অঙ্কটাও তার চেয়ে বেশি হবে। সুতরাং পবিত্র কুরবানি নিয়ে যেসব মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তারা শুধু দেশের ৯৮ ভাগ মুসলমানের শত্রু নয়, বরং তারা দেশ ও জাতির শত্রু। সরকারের উচিত এসব কুচক্রীদের দেশ থেকে বিতাড়িত করে দেয়া।

সাবধান! গরুর গোশত খাওয়া নিয়ে ভীতি ছড়াচ্ছে ভারত নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াগুলো।==

সাবধান! গরুর গোশত খাওয়া নিয়ে ভীতি ছড়াচ্ছে ভারত নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াগুলো।==

মুসলমানদের গরুর গোশত খাওয়ার প্রতি হিন্দুদের যারপরনাই বিদ্বেষ। গরু জবাই, গরুর গোশত রাখা ও খাওয়া এসবের প্রতি ভীতি ছড়ানো হিন্দুদের জাতিগত এজেন্ডা। এসব এজেন্ডা জোরপূর্বক বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তারা ভারতে অনেক দাঙ্গা-হাঙ্গামা, যুলুম নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সর্বশেষ গরুর গোশত রাখার অপবাদ দিয়ে আসামে আখলাক নামক এক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এ সবই সম্ভব হচ্ছে দেশটি হিন্দু নিয়ন্ত্রিত ও অতিসাম্প্রদায়িক ভারত বলে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত মুসলিম দেশে কী প্রকাশ্যে গরু জবাই করা কিংবা মুসলমানদের গরুর গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ করানো সম্ভব? চিন্তাই করা যায় না। তারপরেও গো-চনাভোজী যবন হিন্দুরা কিন্তু হাল ছাড়েনি। তারা দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের কার্যক্রমের ফলাফল এখন না হলেও আগামী দশ বছর পর দেখা যাবে। এই সময়ে মধ্যে তারা গরুর গোশতের প্রতি ভীতি ছড়ানোর নিয়মিত প্রচারণা কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।

অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে টাকা-পয়শা, মুসলিম নামধারী চিকিৎসক, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ভারত নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০১৬ ঈসায়ী সালে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজ২৪ডটকমে স্বাস্থ্য বিষয়ক পেইজে একটি প্রচারণা চালাচ্ছে এই শিরোনামে ‘সাবধান! জলদি ছাড়–ন মাংশপ্রীতি’। ধারাবাহিক ৩টি পর্বে এই শিরোনামে গোশত নিয়ে ভীতিকর আর্টিকেল প্রকাশ করেছে সংবাদসংস্থাটি। 

উল্লেখ্য, প্রতি বছর পবিত্র কুরবানীর আগে এ্যানথ্রাক্স ভীতি, ইনজেকশন দিয়ে গরু মোটাতাজাকরণের খবর ভয়ঙ্কর রূপ দিয়ে তৈরি করে গরুর গোশত ভীতি ছড়ানোর কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে এসব ভারত নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াগুলো।

পবিত্র কুরবানি ‘ব্যবস্থাপনা’র নামে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চেষ্টা করলে দেশে গণবিস্ফোরণ ঘটতে পারে।=======

পবিত্র কুরবানি ‘ব্যবস্থাপনা’র নামে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চেষ্টা করলে দেশে গণবিস্ফোরণ ঘটতে পারে।=======


বাংলাদেশে গরু জবাই নিয়ে বিশেষ করে পবিত্র কুরবানি ঈদের সময় ষড়যন্ত্র নতুন কোনো বিষয় না। ষড়যন্ত্র বিগত বছরগুলোতে পবিত্র কুরবানি নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করতে কুচক্রী মহলের অপতৎপরতায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলো সাধারণ মুসলমানগণ। এবছরও নিরাপত্তা, যানজট, চলাচলে বিঘœসৃষ্টি, পরিবেশ ইত্যাদি অজুহাতে পশুর হাট বন্ধের/স্থানান্তরের এবং যত্রতত্র(!) পশু জবাইয়ের বিরুদ্ধে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত থেকে লেলিয়ে দেয়া সেই একই কুচক্রী মহল। এবার তারা দাবি করছে- যত্রতত্র(!) পশু জবাই করা যাবে না, রাজধানি থেকে পশুর হাট সরিয়ে ঢাকার পাশ্ববর্তী এলাকায় স্থানান্তর করতে হবে। তারা রাজধানিতে সারাবছর লেগে থাকা চিরাচরিত যানজটকেই তারা খোঁড়া যুক্তি হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে। একজন স্বাভাবিক বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিও বুঝে যে, পার্শ্ববর্তী এলাকায় পশুর হাট না থাকলে দূরে গিয়ে কুরবানির পশু কিনতে হলে বরং যানজট আরো বাড়বে। কুরবানির পশুকে হাটিয়ে নিয়ে আসতে গেলে পশু অসুস্থ হয়ে পড়বে। রোগা হলে পথেই মারা যেতে পারে। পশু যারা নিয়ে আসবে তাদেরও ঈদের দিন বিছানায় কাটাতে হতে পারে। কয়জন লোকের তিন-চার হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে কুরবানির পশু আনার সামর্থ্য আছে? এছাড়া লম্বা রাস্তা পাড়ি দিয়ে পশু আনতে গিয়ে ছিনতাইকারীসহ নানা ঝাক্কি-ঝামেলাতো আসতেই পারে। বিষয়টা উপলব্ধি করতে হলে, ঈদের আগে শপিং সেন্টারের কারণে মানুষের ভীড়, ছিনতাই, স্মরণকালের ভয়াবহ যানজটগুলোর চিত্র স্মরণ করলেও হয়। বাড়ির পাশে মার্কেট রেখে শখের বসে দূরবর্তী শপিংমলে কেনাকাটা করতে গিয়ে সৃষ্টি হয় এসব সমস্যা। সুতরাং আমাদের দাবি: প্রতিটি মহল্লায়-মহল্লায় কুরবানির হাট গড়ে তুলতে হবে। নাগরিকদের যেখানে সুবিধা সেখানেই পশু জবাই করবে -এ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবে না। বর্জ্য পরিষ্কার করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। নিরাপত্তা, যানজট নিরসনের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা করবে প্রশাসন। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্যই এ দেশের গণমানুষ এ সরকারকে ভোট দিয়েছে। সরকারের ছত্রছায়ায় থাকা ইসলামীবিদ্বেষী কুচক্রী মহলের কোনো প্রকার ষড়যন্ত্র জনগণ মেনে নিবে না। বরং এর জন্য সরকারকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভবনা রয়ে যায়। দেশের ৯৮ ভাগ মুসলমানদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে সরকারকে সচেতন থাকার পরামর্শ রইলো।

পবিত্র কুরবানি নিয়ে কোন প্রকার ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবেনা।=======

পবিত্র কুরবানি নিয়ে কোন প্রকার ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবেনা।=======


প্রতি বছর পবিত্র কুরবানির সময় শুরু হয় নানা ধরণের ষড়যন্ত্র। ইতিপূর্বে পবিত্র কুরবানির আগে গরুর মধ্যে ‘এ্যানথ্রাক্স’ ভাইরাসের নামে এক ধরণের ফোবিয়া (কুরবানির পশু ভীতি) ছড়ানো হয়েছিলো। সেই এ্যানথ্রাক্সের এখন কোন নামগন্ধও পাওয়া যায়না। এরপর শুরু হয়েছে, গরু মোটা তাজাকরণের ইনজেকশন ভীতি। এসব খবর গত বছরও মিডিয়া ব্যপক প্রচার করেছে। এই ট্রিক্সের দ্বারা ষড়যন্ত্রকারীরা তারা দু’ধরণের ফায়দা লুটেছিলো। মানুষের মনে বড় গরুর প্রতি ভীতি ছড়ানো এবং দেশী গরুর খামারগুলোর ব্যবসায় ধস নামানো। এসব ছাড়াও গত বছর কুরবানির পশু বহনকারী গাড়িগুলো ঢাকায় আসতে খুব সমস্যা সৃষ্টি করেছিলো। আবার যেসব গাড়ি ঢাকায় এসে পৌঁছেছে সেসব গাড়ি থেকে গরু নামাতে দেয়া হয়নি অনেক হাটে। অনেক হাটে ঈদের দুইদিন আগে হাটে গরু উঠানোর নোটিশ এসেছিলো। এসব ছাড়াও পরিবেশ রক্ষার নামে গৃহিত হয়েছিলো নির্দিষ্ট একটি জায়গায় সব গরু কুরবানি করার পরিকল্পনা। কয়েক বছর আগে কুরবানি না করে সে টাকা গবিবদের দান করে দেয়ার জোর প্রচারণাও চালানো হয়েছিলো অনলাইনে। 
বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় এবছরও পবিত্র কুরবানি নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এবার কথিত জনদুর্ভোগের কথা বলে রাজধানির ব্যস্ত স্থানে পবিত্র কুরবানির পশুর হাট না বসানোর জন্য গত ২৫ জুলাই (২০১৫) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রদের চিঠি দিয়েছে পুলিশ। (খবর: প্রথম আলো, ২৯ জুলাই, ২০১৫) 

প্রকৃতপক্ষে পশুর হাট সরানো হলে কিংবা কোন হাট বন্ধ করে দিলে জনদুর্ভোগ আরো বহুগুণে বাড়বে। মানুষকে দুর দূরান্ত থেকে পশু কিনে আনতে হলে পশু ক্রেতাদের, পথচারীদের ও গাড়ি চলাচলে আরো বেশি বিঘ্ন ঘটবে। মানুষ দুরদুরান্ত থেকে পশু কিনতে টাকা বেশি খরচ হবে। 
বলার অপেক্ষা রাখেনা, এই পশুর হাট সরানোর উদ্যোগটি প্রশাসনের বিষফোঁড়া ইসলাম বিদ্বেষী হিন্দুদের একটি ষড়যন্ত্র, যা সরকারকেও বেকায়দা ফেলানোর ফন্দি। আর সরকার যদি এসব হিন্দু মালউন, নাস্তিকদের ইসলাম বিরোধী উদ্দ্যেগকে সমর্থন দেয় তবে এর জন্য কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।

কুরবানীর পশুর হাট কমানো হলে নিঃস্ব হবেন খামারীরা=============

কুরবানীর পশুর হাট কমানো হলে নিঃস্ব হবেন খামারীরা=============


সরকারের অপরিকল্পিত লকডাউন পরিস্থিতির কারণে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বেহাল অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সামনে পবিত্র কুরবানির ঈদ। এই ঈদে গরুর হাট ঠিকমতো বসতে পারবে কি-না, হাট বসলেও ক্রেতা পাওয়া যাবে কি-না, আর ক্রেতা পাওয়া গেলেও কাঙ্খিত দাম পাওয়া যাবে কি-না এ রকম নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে খামারিদের মনে।
জামালপুরের মাদারগঞ্জের চরভাটিয়ানি পশ্চিম পাড়ার মেসার্স জাকারিয়া গাভির খামারের মালিক আনিছ বলেন, এবার তিনি ৮৩টি ষাঁড় ও বলদ (বৈল) লালন-পালন করছেন। তার এই গরুগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন একটি গরুর ওজন ১৫ মণ, যার দাম চাওয়া হচ্ছে তিন লাখ টাকা। আর ২২ থেকে ২৫ মণ ওজনের বলদ (বৈল) ও ষাঁড়ের যার দাম পাঁচ লাখ টাকা ধরে রেখেছেন তিনি। আনিছুর রহমান বলেন, কুরবানির ঈদে গরু বিক্রি করতে না পারলে খামারিদের সর্বনাশ হবে।
আনিছুর রহমান আগে ধান, পাট চাষ করতেন। ২০-২৫ বিঘা জমি চাষ করেও তার অভাব ফুরাত না। ২০০৯ সালে পাঁচটি ষাঁড় ও পাঁচটি গাভি নিয়ে তিনি গরু পালন শুরু করেন। পরের বছর তিনি ১০টি ষাঁড় পালন ও বিক্রি করে হিসাব-নিকাশ করে দেখেন ২০-২৫ বিঘা জমির আবাদের চেয়ে অনেক বেশি লাভ হয়েছে। তখন থেকে তিনি চাষাবাদ ছেড়ে দেন। শুধু পাঁচ বিঘা জমি গরুর ঘাস চাষ বাবদ রেখে বাকি সব বর্গা দিয়ে দেন। এখন তার খামারে ৮৩টি ষাঁড় ও বলদসহ মোট ১৫০টি গরু আছে।
তিনি বলেন, এবার কুরবানির জন্য যেসব খামারিরা পশুগুলো মোটাতাজা করেছেন, এগুলো এবার বিক্রি করতে না পারলে তাদের সর্বনাশ হবে। কারণ এই গরু বিক্রি করতে না পারলে আগামী একবছর অপেক্ষা করতে হবে। এই এক বছরে ওই গরুর পেছনে খাওয়া ও শ্রম বাবদ যে খরচ হবে তাতে পোষাবে না। তাছাড়া গরু বেশিদিন রাখলে চর্বি ধরে যায়, সেই গরু নিয়ে অনেক রিস্ক থাকে। অনেক সময় চর্বি আটকে গরু মারাও যায়। একটা গরু মারা গেলে ১০টি গরুর লাভের টাকায়ও পোষায় না। তিনি বলেন, এবার লকডাউনের কারণে কী পরিস্থিতি হবে তা বুঝতে পারছি না। এই চিন্তা করতে গেলে রাতে ঘুম হয় না।
তিনি বলেন, প্রতিবার কুরবানির দেড় দুই মাস আগে থেকেই ঢাকার পার্টিসহ চট্টগ্রাম, সিলেটের পার্টি আসে। কিন্তু এবার এখনো পর্যন্ত কোনো পার্টি গরু নেয়ার জন্য আসেনি। ঈদের আর মাত্র অল্পদিন বাকি আছে। এখন তাদের আর আসার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। তিনি বলেন, এত বড় গরু এলাকায় কেনার মতো কোনো গ্রাহক নেই। ওজনের ভিত্তিতে গরুর কেমন দাম চাচ্ছেন’-এমন প্রশ্নে খামারি আনিছুর রহমান বলেন, ‘টা তো এখন বলা কঠিন। কুরবানির গরু বাজারদর এবং সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করে। তবে যে গরুগুলোর ওজন সর্বনিম্ন ১৫ মণ ওজন সেগুলো তিন লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা গেছে ইতোপূর্বে। আর ২২ থেকে ২৫ মণ ওজনের গরুগুলো পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করেছি। তিনি বলেন, নিজের খামারের যেটা সেরা বাছুর হয় সেটা মোটাতাজাকরণের জন্য রেখে দিই। আর তা নাহলে ছোট থাকতেই বিক্রি করে দিই। এছাড়া আমি সারাবছর প্রতিটি দিন কোনো না কোনো হাটে যাই। কোনো গরু পছন্দ হলেই কিনে নিয়ে আসি।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তোমরা ইহুদী-নাছারা তথা কাফির-মুশরিকদের লিবাস বা পোশাক থেকে বেঁচে থাকো।’

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তোমরা ইহুদী-নাছারা তথা কাফির-মুশরিকদের লিবাস বা পোশাক থেকে বেঁচে থাকো।’

যারা বলে ‘সুন্নতী লেবাস বলতে কোনো লেবাস নেই’ তারা আশাদ্দুদ দরজার জাহিল। পুরুষদের জন্য গুটলীযুক্ত, গোল, কোণাবন্ধ ও নিসফুস সাক্ব ক্বমীছ, ইযার বা লুঙ্গি, ইমামাহ বা পাগড়ী, টুপি, রুমাল। আর মহিলাদের জন্য সেলোয়ার ক্বামীছ, ওড়না, বোরকা ইত্যাদি খাছ ইসলামী ও সুন্নতী পোশাক। এর খেলাফ সমস্ত পোশাকই বিধর্মীদের পোশাক। যা পরিধান করা হারাম।
তাই সম্মানিত ইসলামী ও সুন্নতী পোশাক পরিধান করা ও বিধর্মীদের পোশাক থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয।

কিছু লোক ‘কিল্লতে ইলম ও কিল্লতে ফাহাম’ অর্থাৎ ‘কম জ্ঞান ও কম বুঝের’ কারণে বলে থাকে যে, “সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে লিবাস বা পোশাকের নির্দিষ্ট কোন বর্ণনা নেই। নাউযুবিল্লাহ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মৌসুমের চাহিদা মোতাবেক যখন যে ধরনের পোশাক পেতেন তাই পরিধান করতেন।” নাঊযুবিল্লাহ! যদি তাই হয়ে থাকে, তবে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে- তবে কি নিসাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ওহী মুবারক উনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিলেন না? নাঊযুবিল্লাহ! তবে কি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ সত্য নয়? নাঊযুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি তো ‘পবিত্র সূরা নজম শরীফ’ উনার ৩-৪ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টই বলে দিয়েছেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ওহী মুবারক ব্যতীত নিজ থেকে কোন কথা মুবারক বলেন না ও কোন কাজ করেন না।”
কাজেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি “মৌসুমের চাহিদা মোতাবেক সব ধরনের লিবাস বা পোশাক পরিধান করতেন” নাঊযুবিল্লাহ! এ কথা বলার অর্থই হলো উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাকে অস্বীকার করা; যা সকলের মতেই কাট্টা কুফরী।
“সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে লিবাস বা পোশাকের নির্দিষ্ট কোন বর্ণনা নেই বা সুন্নতী পোষাক বলতে কোন পোষাক নেই।” নাঊযুবিল্লাহ! তাদের এ বক্তব্য একথাই প্রমাণ করে যে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম নাক্বিছ বা অপূর্ণ। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘পবিত্র সূরা মায়েদা শরীফ’ উনার ৩ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের উপর আমার নিয়ামত পূর্ণ করলাম এবং সম্মানিত ইসলাম উনাকেই তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।” অতএব, প্রমাণিত হলো যে, “সম্মানিত দ্বীন ইসলাম” পরিপূর্ণ অর্থাৎ দ্বীনী ও দুনিয়াবী সকল বিষয়ের ফায়ছালা বা সব সমস্যার সমাধান সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে রয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি এ প্রসঙ্গে ‘পবিত্র সূরা আনয়াম শরীফ’ উনার ৫৯ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “শুকনা এবং ভিজা এমন কিছুই নেই; যা এ স্পষ্ট কিতাবে অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়নি।” সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে লিবাস বা পোশাকের বর্ণনাও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। যেমন লিবাস বা পোশাক সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি তোমাদের জন্য লিবাস বা পোশাক নাযিল করেছি।” আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা ইহুদী-নাছারা তথা কাফির-মুশরিকদের লিবাস বা পোশাক থেকে বেঁচে থাকো।” এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মুসলমানদের জন্য আলাদা বা নির্দিষ্ট পোষাক রয়েছে।
মূলত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে লিবাস বা পোশাক মুবারক পরিধান করেছেন তা মুসলমান পুরুষদের জন্য এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যে পোশাক মুবারক পরিধান করেছেন তা মহিলাদের জন্য। আর সেগুলোই হচ্ছে ইসলামী বা সুন্নতী পোশাক মুবারক। আর সেই সুন্নতী পোশাক মুবারক উনার মধ্যে ক্বমীছ হচ্ছে অন্যতম। অর্থাৎ গুটলীযুক্ত, গোল, কোণাবন্ধ, নিসফুস সাক্ব ক্বমীছ বা কোর্তাই খাছ ইসলামী ও সুন্নতী পোশাক মুবারক। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় পোশাক মুবারক হচ্ছে ক্বমীছ। ক্বমীছ বা কোর্তার ন্যায় মুসলমান পুরুষ ও মহিলাদের অন্যান্য পোশাক যেমন, ইযার বা লুঙ্গি, ইমামাহ বা পাগড়ী, টুপি, রুমাল, সেলোয়ার, ক্বামিছ, ওড়না, বোরকা ইত্যাদির বর্ণনাও কিতাবে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। তাই প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ ও মহিলাদেরকে কিতাবে বর্ণিত সেই ইসলামী ও সুন্নতী পোশাকই পরিধান করতে হবে। বিধর্মীদের পোশাক- শার্ট, প্যান্ট, টাই, কোট ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকতে হবে। কারণ বিধর্মীদের অনুসরনে পোষাক পরিধান করা হারাম।

পবিত্র কুরবানী কি?

পবিত্র কুরবানী কি?

‘কুরবানী’ শব্দটি আরবী قُرْبَانٌ ‘কুরবান’ শব্দ হতে উদ্ভূত যার শাব্দিক অর্থ নৈকট্য, যা শব্দমূল قُرْب ‘কুর্ব’ শব্দ থেকে উদগত। নিকটবর্তী হওয়া বা নৈকট্য লাভ করা, বিলীন হওয়া, উৎসর্গ করা অর্থে قُرْبَانٌ ‘কুরবান’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। হয়। শরীয়ত উনার পরিভাষায় খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নামে নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট নিয়মে নির্দিষ্ট প্রাণী যবেহ করার নাম পবিত্র কুরবানী। অর্থাৎ পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোন দিনে দুম্বা, মেষ, ভেড়া, খাসী, ছাগল, উট, গরু, মহিষ প্রভৃতি গৃহপালিত হালাল চতুষ্পদ প্রাণীসমূহকে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র নাম মুবারক উচ্চারণ করে উনার সন্তুষ্টি মুবারক লাভের উদ্দেশ্যে যবেহ করাকে পবিত্র কুরবানী বলে। পবিত্র কুরবানী হচ্ছে আবুল মুসলিমীন হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সুন্নত।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মাঝে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
অতএব, আপনার রব তা’য়ালা উনার জন্য পবিত্র নামায পড়ুন ও কুরবানী করুন। (পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ زَيِدِ بْنِ اَرْقَمَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ اَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ! مَا هذِهِ الْاَضَاحِىْ؟ قَالَ سُنَّةُ اَبِيْكُمْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ الـسَّلاَمُ
অর্থ: “হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই কুরবানী কি? তিনি জাওয়াবে বললেন, আপনাদের পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার সুন্নত।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

পবিত্র কুরবানী উনার বিধান শুধু উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্যেই দেয়া হয়েছে তা নয় বরং পূর্ববর্তী প্রত্যেক উম্মতের প্রতিও পবিত্র কুরবানী উনার বিধান প্রবর্তিত ছিল।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لِكُلّ اُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا لّيَذْكُرُ‌وا اسْمَ اللهِ عَلـٰى مَا رَ‌زَقَهُم مّن بَـهِيْمَةِ الاَنْعَامِ ۗ
অর্থ : “আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য পবিত্র কুরবানী উনার বিধান দিয়েছি, যাতে তারা গৃহপালিত পশুর উপরে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নাম মুবারক স্মরণ করে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সন্তুষ্টি ও নির্দেশ মুতাবিক উনার নামে পশু কুরবানী করে।” (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৪)

কুরবানী সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرٰ‌ى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَـحُكَ فَانظُرْ‌ مَاذَا تَرٰىۚ قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُۖ سَتَجِدُنِي إِن شَاءَ اللهُ مِنَ الصَّابِرِ‌ينَ◌ فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ◌ وَنَادَيْنَاهُ أَن يَا إِبْرَ‌اهِيمُ◌ قَدْ صَدَّقْتَ الرُّ‌ؤْيَاۚ إِنَّا كَذٰلِكَ نَـجْزِي الْمُحْسِنِينَ◌ إِنَّ هـٰذَا لَـهُوَ الْبَلَاءُ الْمُبِينُ◌ وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ◌ وَتَرَ‌كْنَا عَلَيْهِ فِي الْاٰخِرِ‌ينَ◌ سَلَامٌ عَلٰى اِبْرَ‌اهِيمَ◌ كَذٰلِكَ نَـجْزِي الْمُحْسِنِينَ◌ اِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُؤْمِنِيْنَ◌
অর্থ: “অতঃপর তিনি (হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি) যখন উনার সম্মানিত পিতা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে চলাফিরা করার বয়স মুবারক-এ পৌঁছালেন, তখন হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে আমার সম্মানিত আওলাদ! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি আপনাকে যবেহ করছি, এখন বলুন, আপনার অভিমত কী? হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ‘হে আমার সম্মানিত পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন, মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলই পাবেন। দু‘জনেই যখন আনুগত্যে মাথা নুইয়ে দিলেন আর হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে কাত করে শুইয়ে দিলেন। তখন আমি উনাকে জানিয়ে দিলাম, ‘হে খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম! স্বপ্নে দেয়া আদেশ মুবারক আপনি সত্যে পরিণত করেছেন। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। অবশ্যই এটা ছিল একটি সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি এক মহান কুরবানী উনার বিনিময়ে আপনার আওলাদ উনাকে ছাড়িয়ে নিলাম। আর আমি উনাকে পরবর্তীদের মাঝে স্মরণীয় করে রাখলাম। হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক! সৎকর্মশীলদেরকে আমি এভাবেই প্রতিদান দিয়ে থাকি। তিনি ছিলেন আমার মু’মিন বান্দা উনাদের অন্তর্ভুক্ত।” (পবিত্র সূরা আছ-ছফফাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০-১১১)