যেই আওলাদ উনাকে তিনি বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছিলেন এবং শিশু অবস্থায় উনার সম্মনিতা মাতা এবং উনাকে জনমানবহীন মরুভুমিতে রেখে আসার আদেশ পেয়ে উনাদেরকে সেখানে রেখে আসলেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের জন্য অপ্রত্যাশিত উৎস থেকে রিযিক পাঠালেন। এত কিছুর পরেও উনার ঘরে প্রথম বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশকারী আওলাদ উনাকে কুরবানী করার জন্য যখন আদেশ মুবারক করা হলো, তখন তিনি তা করতে উদ্যত হলেন। তিনি উনার প্রিয় আওলাদ হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম যিনি একজন নবী আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন- ‘হে আমার আওলাদ! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি আপনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য কুরবানী করছি।
এতে আপনি কি মনে করেন!’ হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সাথে সাথেই জবাব দিলেন, ‘হে আমার সম্মানিত পিতা! আপনাকে যা আদেশ মুবারক করা হয়েছে, আপনি তা-ই করুন। ইনশাআল্লাহ অবশ্যই আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।’ সুবহানাল্লাহ!
হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সবচেয়ে উত্তম জবাব দিলেন, এটাই ছিল উনার সম্মানিত পিতা উনার প্রতি এবং উনার মহান রব তায়ালা উনার প্রতি আনুগত্যের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তারপর উনারা উভয়ে নিজেদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছার কাছে সমর্পণ করলেন, এবং হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার আওলাদ হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে কাত করে শোয়ালেন। অতঃপর بِسْمِ اللهِ اَللهُ اَكْبَرْ ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে ছুরি চালালেন।
হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যতই ছুরি চালাতে থাকেন; মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত! হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক কিন্তু কাটছে না। সুবহানাল্লাহ! হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ছুরির ধার পরীক্ষা করার জন্য ছুরিটি একটি পাথরে আঘাত করলেন। সাথে সাথে পাথরটি দ্বিখন্ডিত হয়ে গেলো। হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে ছুরি! তুমি পাথরকে দ্বিখন্ডিত করে দিলে অথচ হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক কাটতে পারছো না? মহান আল্লাহ পাক তিনি ছুরির যবান খুলে দেন। ছুরি বললো, ‘হে হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি একবার কাটার জন্য আদেশ করেন আর মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে ৭০ বার কাটতে নিষেধ করছেন। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূর মুবারক হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাঝে অবস্থান মুবারক করছেন। কোন কিছুর পক্ষে হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক কাটা সম্ভব নয়। তাই আমার পক্ষে হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক কাটা সম্ভব হয়নি। সুবহানাল্লাহ!
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক ও হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ছুুরি মুবারক উনার মাঝখানে একটি তামার পাত কুদরতীভাবে রেখে দিয়েছিলেন। যার ফলে গলা মুবারক কাটা যায়নি। হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে যবেহ করার চেষ্টায় নিয়োজিত ছিলেন ঠিক এমতাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে বেহেশত থেকে একটি দুম্বা এনে হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট দেয়ার নির্দেশ দিলেন।
হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি যখন দুম্বা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলেন দেখলেন, হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার প্রাণাধিক প্রিয় সন্তান হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক-এ ছুরি চালাচ্ছেন।
হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম আশ্চর্যান্বিত হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার বড়ত্ব, মহত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে বলে উঠলেন-
اَللهُ اَكْبَرُ اَللهُ اَكْبَرُ مِنْ كُلّ شَيْءٍ ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার মিং কুল্লি শাই’। একথা বলে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সরিয়ে ছুরির নিচে দুম্বাটি দিয়ে দিলেন। হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে তখন তিনিও মহান আল্লাহ পাক উনার একত্বতার ঘোষণা দিয়ে বললেন-
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ اللهُ اَكْبَرُ مِنْ كُلّ شَيْءٍ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আকবার মিং কুল্লি শাই’। এদিকে হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিও যখন বুঝতে পারলেন যে, তিনি যবেহ না হয়ে উনার পরিবর্তে একটি দুম্বা যবেহ হচ্ছে তিনিও তখন মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা করে বললেন-
اَكْبَرُ وَللهِ الْـحَمْدُ مِنْ كُلّ شَيْءٍ اَللهُ ‘আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ মিং কুল্লি শাই’। সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে এটিই তাকবীরে তাশরীক নামে মশহুর।