স্ত্রীর সম্পদ বা অলঙ্কারের যাকাত কে দিবে ?
স্বামী-স্ত্রীর সম্পদ একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হলেও মালিকানা যদি ভিন্ন হয় তাহলে অবশ্যই প্রত্যেককে তা পৃথকভাবে পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে। স্ত্রীর যদি অলঙ্কারও হয়। তা থেকেই তাকে পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاَقِمْنَ الصَّلٰوةَ وَاٰتِينَ الزَّكٰوةَ وَاَطِعْنَ اللهَ وَرَسُوْلَه ۚ
অর্থ: “আর তোমরা (মহিলারা) পবিত্র নামায কায়িম কর ও পবিত্র যাকাত প্রদান কর এবং মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য কর।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
তবে স্ত্রীর অলঙ্কার ব্যতীত অন্য কোন সম্পদ না থাকলে সেক্ষেত্রে স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে প্রদানকৃত হাত খরচের টাকা থেকে বাঁচিয়ে বা কিছু অলঙ্কার বিক্রি করে হলেও পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে। স্ত্রীর অলঙ্কারের যাকাত স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামী আদায় করলেও পবিত্র যাকাত আদায় হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضَرَتْ مُعَاذٌ رَضِيَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَصَدَّقْنَ وَلَوْ مِنْ حُلِيّكُنّ.
অর্থ: “হযরত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে নারী সম্প্রদায়! তোমরা ছদকাহ তথা পবিত্র যাকাত প্রদান করো যদিও তোমাদের অলঙ্কারও হয়।” (বুখারী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে,
عَنْ حَضَرَتْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدّهِ أَنَّ امْرَأَةً أَتَتْ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَهَا ابْنَةٌ لَـهَا وَفِى يَدِ ابْنَتِهَا مَسَكَتَانِ غَلِيظَتَانِ مِنْ ذَهَبٍ فَقَالَ لَـهَا أَتُعْطِينَ زَكوةَ هَذَا؟ قَالَتْ لَا قَالَ أَيَسُرُّكِ أَنْ يُسَوّرَكِ اللهُ بِـهِمَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ سِوَارَيْنِ مِنْ نَار. قَالَ فَخَلَعَتْهُمَا فَأَلْقَتْهُمَا إِلَى النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَتْ هُـمَا للهِ عَزَّ وَجَلَّ وَلِرَسُوْلِه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “হযরত আমর ইবনে শু’আইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার সম্মানিত পিতা থেকে তিনি উনার সম্মানিত দাদা থেকে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এক মহিলা ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি আগমন করেন, উনার সাথে উনার একজন কন্যা ছিলেন। উনার কন্যার হাত মুবারক-এ সোনার দুটি মোটা চুরি ছিল। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আপনি কি এর পবিত্র যাকাত প্রদান করেন? তিনি বলেন, না। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আপনি কি পছন্দ করেন যে, আপনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি কিয়ামতের দিন এই দুটির পরিবর্তে আগুনের দুটি চুড়ি পরাবেন? তখন তিনি চুড়ি দুটি খুলে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রদান করেন এবং বলেন, এগুলো মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্য।” (আবূ দাঊদ শরীফ)
পবিত্র যাকাত উনার হিসাব কখন থেকে করতে হবে ?
পবিত্র যাকাত বছরান্তে ফরয হয় এবং বছরান্তে পবিত্র যাকাত উনার হিসাব করা ওয়াজিব। চন্দ্র বছরের তথা আরবী বছরের যে কোন একটি মাস ও তারিখকে পবিত্র যাকাত হিসাবের জন্য নির্ধারণ করতে হবে। বাংলা বা ইংরেজী বছর হিসাব করলে তা শুদ্ধ হবে না। পবিত্র যাকাতযোগ্য সকল সম্পদ ও পণ্যের বেলায় এই শর্ত আরোপিত কিন্তু কৃষিজাত ফসল, মধু, খনিজ সম্পদ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বছরান্তের শর্ত নেই। প্রতিটি ফসল তোলার সাথে সাথেই পবিত্র যাকাত (উশর) আদায় করতে হবে কম বেশী যা-ই হোক। তবে ছদাকাতুল ফিতর-এর জন্য বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত নয়। পবিত্র ঈদের দিন ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই ছাহিবে নিছাব হলে ছদাকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। আর পবিত্র কুরবানী উনার হুকুমও অনুরূপ অর্থাৎ ১০, ১১, ১২ই যিলহজ্জ শরীফ উনার মধ্যে যে কোন দিন মালিকে নিছাব হলে পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব। তবে হিসাবের সুবিধার্থে পহেলা রমাদ্বান শরীফ; এ পবিত্র যাকাত হিসাব করা যেতে পারে। তবে এটাই উত্তম ও পবিত্র সুন্নত মুবারক।
পবিত্র যাকাত পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে দেয়াই উত্তম:
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ রহমত মুবারক উনার কারণে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে প্রতিটি নেক কাজের বিনিময়ে সত্তর গুণ বেশি নেকী দান করেন সুবহানাল্লাহ।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যেই পবিত্র যাকাত প্রদান করতেন। যেমন-
عن حضرت السائب بن يزيد رضى الله تعالى عنه ان حضرت عثمان بن عفان عليه السلام كان يقول هذا شهر زكاتكم (شهر رمضان) فمن كان عليه دين فليؤد دينه حتى تـحصل اموالكم فتؤدون منه الزكاة.
অর্থ: “হযরত সাইব ইবনে ইয়াযিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। হযরত উছমান ইবনে আফ্ফান আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে বলতেন, এ মাস তোমাদের পবিত্র যাকাত আদায়ের মাস। অতএব, কারো ঋণ থাকলে সে যেন তার ঋণ পরিশোধ করে, যেন তোমাদের সম্পদ সঠিকভাবে নির্ণীত হয় এবং তোমরা তা থেকে (সঠিকভাবে) পবিত্র যাকাত প্রদান করতে পার।” (মুয়াত্তা ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সহীহ সনদে বর্ণনা করেন।)
পাওনা ও আটকে পড়া সম্পদের পবিত্র যাকাত উনার বিধান:
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-
عن حضرت الـحسن البصرى رحمة الله عليه قال اذا حضر الوقت الذى يودى فيه الرجل زكاته ادى عن كل مال و عن كل دين الا ما كان ضمارا لا يرجوه.
অর্থ: “বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যখন পবিত্র যাকাত প্রদানের সময় উপস্থিত হবে, তখন পবিত্র যাকাত প্রদানকারী ব্যক্তি তার সকল সম্পদের উপর এবং সকল পাওনার উপর পবিত্র যাকাত দিবেন। তবে যে পাওনা সম্পদ আটকে রাখা হয়েছে এবং যা ফেরত পাওয়ার সে আশা করে না, সেই সম্পদের পবিত্র যাকাত দিতে হবে না। তবে যখন পাবে তখন (শুরু থেকে পাওয়া পর্যন্ত) তার পবিত্র যাকাত আদায় করবে।” (ইমাম হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ মতটি হযরত আবূ উবায়দ কাসিম ইবনে সাল্লাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সংকলন করেছেন)
বিগত বছরের কাযা বা অনাদায়ী পবিত্র যাকাত প্রসঙ্গে:
যদি কারো অতীত যাকাত অনাদায়ী বা অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তা ঋণের মধ্যে গণ্য হবে। চলতি বছরে যাকাত আদায়ের পূর্বেই অনাদায়ী কাযা যাকাত অবশ্যই আদায় করতে হবে। (ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহ)
পবিত্র যাকাত উনার টাকা দিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে নি¤œমানের শাড়ী-লুঙ্গি ক্রয় প্রসঙ্গে: বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, পবিত্র যাকাত উনার টাকা-পয়সা দিয়ে এমন নি¤œমানের শাড়ী-লুঙ্গি ক্রয় করে যা ব্যবহারের অযোগ্য। যা পবিত্র যাকাতদাতা ও তার পরিবার-পরিজন নিজেও সেটা পরিধান করবে না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا مِـمَّا تُـحِبُّونَ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র রাস্তায় তোমরা তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু খরচ না করা পর্যন্ত কস্মিনকালেও কোন নেকী হাছিল করতে পারবে না।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯২)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, “নিজের জন্যে তোমরা যা পছন্দ করবেনা অন্যের জন্যেও তা পছন্দ করবে না।” (মিশকাত শরীফ)
অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে “সবচেয়ে উত্তম ও প্রিয় বস্তু মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান না করলে তা কবুল হয় না।” (মিশকাত শরীফ)
পবিত্র যাকাত একটি শ্রেষ্ঠ মালি ইবাদত এবং পবিত্র ইসলাম উনার অন্যতম তৃতীয় রোকন। পবিত্র যাকাত উনার মাল তার হকদারকে দিয়ে দেয়াই হচ্ছে ধনীদের জন্য ফরয কাজ, তা যত্রতত্র তাদের খেয়াল-খুশি মুতাবিক খরচ করতে পারবে না। সে অধিকারও তাদের নেই। পবিত্র যাকাত ধনী-গরীবদের মাঝে পার্থক্য করার জন্য আসেনি। তাহলে যাকাত উনার কাপড় বলতে আলাদা নাম থাকবে কেন? অতএব, বুঝা যাচ্ছে পবিত্র যাকাত উনাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার জন্য ‘যাকাতের কাপড়’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই লোক প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নি¤œমানের অব্যবহার্য শাড়ী-লুঙ্গি পবিত্র যাকাত উনার টাকা দিয়ে ক্রয় করে পবিত্র যাকাত দিলে পবিত্র যাকাত উনাকে ইহানত বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার শামিল। নাউযুবিল্লাহ! এতে পবিত্র যাকাততো কবুল হবেই না বরং পবিত্র ঈমান, আমল, আক্বীদা সব বরবাদ হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ! মুসলমান উনাদেরকে বেঈমান করার জন্য ইহুদী-নাছারাদের এক সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। যা গাফিল মুসলমান উনাদের উপলব্ধিতেও নেই। এরূপ ইহানতপূর্ণ কাজ থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ ও মহিলাদের জন্য ফরয।
অবৈধ মালের পবিত্র যাকাত নেই:
হারাম কামাই দ্বারা অর্জিত মালের কোন পবিত্র যাকাত নেই। যদি কেউ পবিত্র যাকাত উনার নিয়ত করে পবিত্র যাকাত দেয় তাহলে তার কবীরা গুনাহ হবে। বৈধ মনে করলে কুফরী হবে। কাজেই অবৈধ মালের যেমন পবিত্র যাকাত নেই, তেমন তার মালিকের উপরও পবিত্র যাকাত নেই অর্থাৎ পবিত্র ইসলাম উনার পরিভাষায় সে ছাহিবে নিছাব হবে না। (ফিকাহর কিতাবসমূহ)
ঋণগ্রস্থদের ঋণের বদলা হিসেবে পবিত্র যাকাত উনার অর্থ কেটে নেয়ার বিধান:
কোন ঋণদাতা-মালদার ব্যক্তি যদি ঋণগ্রস্তদের ঋণের বদলা হিসেবে পবিত্র যাকাত উনার অর্থ কেটে নেয় তাহলে তার পবিত্র যাকাত আদায় হবে না। কেননা ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পবিত্র যাকাতদাতা পবিত্র যাকাত প্রদানের মাধ্যমে বাড়তি কোন ফায়দা লুটাতে পারবে না। এভাবে পবিত্র যাকাত উনার অর্থ কেটে নেয়া প্রকাশ্য ফায়দা হাছিলের শামিল। আর পবিত্র যাকাত উনার মাল বা অর্থ অবশ্যই পবিত্র যাকাত পাওয়ার হকদার ব্যক্তিদেরকে হস্তান্তর করতে হবে তথা তাদেরকে মালিক করে দিতে হবে। এরপর যদি তারা ঋণ প্রদানকারীকে হস্তান্তর করে তবে তাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে যে, যাকাত গ্রহণকারী তথা ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদায় আক্বীদাভুক্ত হতে হবে। অন্যথায় পবিত্র যাকাত এভাবে আদায়ে-আদায় হবে না। (ফিকাহ ও ফতোয়ার কিতাবসমূহ)
পবিত্র যাকাত, ইনকাম ট্যাক্স, কর, খাজনা ও জিযিয়া করের মধ্যে পার্থক্য
পবিত্র যাকাত: ‘পবিত্র যাকাত’ হচ্ছেন পবিত্র ইসলাম উনার পঞ্চ স্তম্ভের একটি স্তম্ভ। ইতিপূর্বেই পবিত্র যাকাত উনার পরিচয়, কার উপর ফরয এবং উহার হুকুম-আহকাম সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে। এরপরেও এখানে সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো- পবিত্র শরীয়ত উনার পরিভাষায় الـحوائج الاصلية তথা মৌলিক চাহিদা মিটানোর পর অতিরিক্ত যদি কোন মাল বা অর্থ-সম্পদ নিছাব পরিমাণ তথা সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য অথবা এ সমপরিমাণ অর্থ-সম্পদ কারো অধীনে পূর্ণ এক বছর থাকে তাহলে তা থেকে চল্লিশ ভাগের একভাগ অর্থাৎ শতকরা ২.৫% মাল বা অর্থ-সম্পদ পবিত্র শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত খাতে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বিনা স্বার্থে ও শর্তে প্রদান করাকে পবিত্র যাকাত বলে। (কুদুরী, আল হিদায়া)
পবিত্র যাকাত মুসলমান উনাদের মালের ট্যাক্স বা খাজনা ও কর কোনটাই নয়; ইহা মুসলমান উনাদের এটা একটি পবিত্র মালি ইবাদত। ইহা শুধু মুসলমান উনাদের জন্য প্রযোজ্য। এ কারণেই ইহা খিলাফত উনার অধীনে অমুসলমান নাগরিকদের উপর পবিত্র যাকাত ফরয করা হয়নি।
ইনকামট্যাক্স বা আয় কর: গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক বা কুফরী মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠ সরকার তাদের সুবিধার জন্য তারা জোরপূর্বক জনগণের আয়ের উপর যে সুনির্দিষ্ট অর্থ ধার্য করে মূলতঃ সেটাই ইনকামটেক্স। এক কথায়- আয়ের উপর যে ট্যাক্স বা কর ধার্য করা হয় তাকে ইনকাম ট্যাক্স বা আয় কর বলে। আর সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার ফতওয়া মুতাবিক ইনকামট্যাক্স জায়েয নেই। যতটুকু সম্ভব এ থেকে বেঁচে থাকা উচিত। এর সাথে পবিত্র যাকাত উনার কোন প্রকার সম্পর্ক ও সংশ্লিষ্টতা নেই অর্থাৎ ইনকামট্যাক্স দিলেও যাদের উপর পবিত্র যাকাত ফরয তাকে অবশ্যই পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে।
কর ও খাজনা: সরকার জনগণকে যে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে এবং জনগণও সরকার কর্তৃক যে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে তার পরিবর্তে সরকার কর্তৃক ‘ধার্যকৃত অর্থ’ রাজস্ব খাতে প্রদান করাকেই ‘কর’ বলে। যেমন- বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, গ্যাস বিল, পৌরকরসহ সর্বপ্রকার লাইসেন্স ইত্যাদি। আর ভূমি সংরক্ষণ, জরিপ ইত্যাদি সংক্রান্ত বিষয়ে যে সুযোগ-সুবিধা জনগণ লাভ করে থাকে তার বিনিময় সরকার কর্তৃক ‘ধার্যকৃত অর্থ’ রাজস্ব খাতে প্রদান করাকেই ‘খাজনা’ বলে। এই সমস্ত খাজনাগুলি আদায় করা জনগণের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। এই সমস্ত খাজনার সাথে পবিত্র যাকাত উনার কোন প্রকার সম্পর্ক ও সংশ্লিষ্টতা নেই। সেইজন্য বৈধ কর ও খাজনা দেয়ার পর যাদের উপর পবিত্র যাকাত ফরয হবে তাদেরকে অবশ্যই পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে।
জিযিয়া কর: ‘জিযিয়া কর’ মুসলমানদের জন্য নয়; বরং জিযিয়া কর বিধর্মীদের জন্য প্রযোজ্য। মুসলমান উনাদের খিলাফতের অধীনে যে সমস্ত অমুসলিম বসবাস করে তাদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য সম্মানিত খলীফা কর্তৃক ‘ধার্যকৃত অর্থ’ ‘বায়তুল মালে’ প্রদান করাকেই ‘জিযিয়া কর’ বলে। তবে জিযিয়া করের সাথে পবিত্র যাকাত উনার কোন সম্পর্ক ও সংশ্লিষ্টতা নেই। কেননা- কাফেরদের উপর পবিত্র যাকাত দেয়া এবং নেয়া কোনটাই জায়িয নয়; বরং তারা জিযিয়া কর প্রদান করবে।