সুওয়াল জাওয়াব : মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনাদের ছবি সম্বলিত জায়নামাজে নামাজ আদায় করার হুকুম আহকাম (২)

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
পবিত্র কা’বা শরীফ ও মহাসম্মানিত রওযা শরীফ উনাদের নকশা বা ছবিকে পা দিয়ে মাড়ানো বা পায়ের নীচে রাখার অর্থই হচ্ছে মূল অর্থাৎ আসল কা’বা শরীফ ও রওযা শরীফের সম্মান বিনষ্ট করা ও সেগুলোকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। অথচ তা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী। তাই কা’বা শরীফ ও রওযা শরীফের ছবি পায়ের নীচে রাখা অবশ্যই আদবের খিলাফ ও স্থান বিশেষে হারাম ও কুফরী।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, কদু খাওয়া সুন্নত, আর কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে স্পষ্ট উল্লেখ নেই যে, কদুকে তা’যীম করা ওয়াজিব। কিন্তু আক্বাইদের কিতাবে উল্লেখ আছে যে, কদুকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অবজ্ঞা করা কুফরী। তাই এক্ষেত্রে কদুকে তা’যীম করা ওয়াজিব। কাজেই মহাসম্মানিত কা’বা শরীফ ও মহাসম্মানিত রওযা শরীফ উনাদের নকশাকে অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যেহেতু কুফরী, সেহেতু মহাসম্মানিত নিদর্শন মুবারক উনাদের তা’যীম-তাকরীম করা ওয়াজিব।
আরো উল্লেখ্য যে, আমভাবে একথা বলা কখনো শুদ্ধ হবে না যে, ফটোকে তা’যীম করার বাধ্যবাধকতা নেই। কারণ এরূপ অনেক বস্তু বা বিষয়ের ছবি রয়েছে যেগুলোকে তা’যীম-তাকরীম করা ফরয-ওয়াজিব। যেমন-সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ও সংযুক্ত যে কোন ছবি যেমন: ব্যবহৃত মহাসম্মানিত সুন্নতি দ্রব্য-সামগ্রী যথা- পাগড়ী মুবারক, জুব্বা মুবারক, লাঠি মুবারক, না’লাইন শরীফ ইত্যাদি। মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছবিও হতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, তাওহীদ কর্তৃপক্ষ- “এগুলো ফটোই মাত্র” একথা বলে উল্লেখিত বস্তু সমূহের ছবি বা ফটো পা দ্বারা মাড়ানো জায়িয ফতওয়া দিবে কি? তাদের ফতওয়া মুতাবেক যদি কা’বা শরীফ ও রওযা শরীফের নকশা পা দ্বারা মাড়ানো জায়িয হয়, তবে কুরআন শরীফ এবং মহাসম্মানিত মহাপবিত্র রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যবহৃত মহাসম্মানিত সুন্নতি দ্রব্য-সামগ্রীর ছবি বা ফটোও পা দ্বারা মাড়ানো জায়িয হবে। (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক)। অথচ তা সম্পূর্ণই হারাম ও কাট্টা কুফরী।
মূলত: মজমুয়ায়ে ফতওয়ার উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা মূল মহাসম্মানিত কা’বা শরীফ ও মহাসম্মানিত রওযা শরীফ উনাদের সাথে তার নকশার কতটুকু পার্থক্য রয়েছে অর্থাৎ নকশা যে মূল কা’বা শরীফ নয় এবং এর তাওয়াফ বা যিয়ারতের দ্বারা যে হাক্বীক্বী ফযীলত হাছিল হয় না তা বর্ণনা করা হয়েছে। তাই বলে উক্ত নকশাকে তা’যীম করা যাবে না বা তা পা দ্বারা মাড়িয়ে অবমাননা করা জায়িয, তা বলা হয় নাই। কাজেই এ ব্যাপারে মজমুয়ায়ে ফতওয়ার দলীল পেশ করা তাওহীদ কর্তৃকপক্ষের জিহালত ও প্রতারণা বৈ কিছুই নয়।
তাছাড়া আত-তাওহীদ পত্রিকার জাওয়াব নাক্বেছ বা অসম্পূর্ণ হয়েছে কারণ তাদের প্রশ্ন করা হয়েছে কা’বা শরীফ ও মদীনা শরীফ উভয়টির সম্পর্কে, কিন্তু তারা জবাবে শুধুমাত্র কা’বা শরীফের কথা বলেছে। প্রশ্নকারীদের আরেকটি প্রশ্ন ছিল………এটা বিধর্মীদের ষড়যন্ত্র কিনা? এ প্রশ্ন তাওহীদ কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণই এড়িয়ে গেছে, যা স্পষ্ট প্রতারণা ও অজ্ঞতা।
মূলকথা হলো- মহাসম্মানিত কা’বা শরীফ ও মহাসম্মানিত রওযা শরীফ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার শেয়ার তথা নিদর্শন মুবারক উনাদের অন্তর্ভূক্ত, কাজেই উনাদের ছবি সম্বলিত জায়নামাযে নামায পড়া মাকরূহ, আদবের খেলাফ ও স্থান বিশেষে কাট্টা কুফরী। আর এ ব্যাপারে মাসিক আত-তাওহীদ ও পৃথিবীর বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল ও গুমরাহীমূলক।
এ ব্যাপারে মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা শরীফ ও ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার ফযীলত:
প্রথমত: উল্লেখ্য যে, মহাপবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থিত পবিত্র কা’বা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফে অবস্থিত মসজিদে নববী শরীফ মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে সম্মানিত ও মর্যাদা সম্পন্ন স্থান। মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার মর্যাদা ও ফযীলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
ان اول بيت وضع للناس للذى بيكة مباركة وهدى للعالمين وفيه ايات يينات مقام ابراهيم ومن دخلها كان امنا.
অর্থ: “নিশ্চয়ই (পবিত্র কা’বা শরীফ যমীনে অবস্থিত) প্রথম মহাসম্মানিত ঘর, যা বরকতময় মক্কা শরীফে মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে এবং সমস্ত আলমের জন্য হিদায়েত স্বরূপ। আর তন্মধ্যে মাক্বামে ইবরাহীম শরীফ স্পষ্ট নিদর্শন, যে ব্যক্তি পবিত্র কা’বা শরীফে (হেরেম শরীফে) প্রবেশ করলো, সে ব্যক্তি নিরাপত্তা লাভ করলো।”
আর পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ফযীলত ও মর্যাদা সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهقال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله فى كل يوم وليلة ينزل على هذا البيت مأة وعشرين رحمة ستون للطانفين واربعون للمصلين وعشرون للناظرين.
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রতিদিন ও প্রতিরাতে পবিত্র কা’বা শরীফ উনার উপর ১২০টি রহমত মুবারক নাযিল করেন। তন্মধ্যে তাওয়াফকারীদের জন্য ৬০টি, নামাযীদের জন্য ৪০টি ও দর্শনার্থীদের জন্য ২০টি রহমত নাযিল করেন।”
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র মক্কা শরীফ, কা’বা শরীফ, মদিনা শরীফ, রওযা শরীফ, বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ, মসজিদে কুবা শরীফ ও তৎসংলগ্ন স্থান ও বস্তুসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে বিশেষভাবে সম্মানিত ও মর্যাদাপ্রাপ্ত। শুধু তাই নয়, সেগুলো মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শন মুবারকের অন্তর্ভুক্ত।
মূলত: কা’বা শরীফ উনার এ ফযীলত ও মর্যাদার কারণেই আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া মুতাবিক পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ছাদে উঠা মাকরূহ তাহরীমী। শুধু তাই নয়, ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ আছে, বিনা জরুরতে সাধারণ মসজিদের ছাদে উঠাও মাকরূহ। তাই যে সকল জায়নামাযে পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ছবি রয়েছে, তাতে নামায পড়া আদব ও তাক্বওয়ার খেলাফ বা মাকরূহ। শুধু তাই নয় কাট্টা কুফরী চির জাহান্নামী হওয়ার কারণ। কেননা সেই মহাসম্মানিত জায়নামাজসমূহ মাটিতে বিছানোর কারণে পদদলিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর যদি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অবজ্ঞা করে কা’বা শরীফের নকশা পা দ্বারা মাড়ায় বা দলিত করে তবে স্পষ্ট কুফরী হবে।
এজন্য বেয়াদবদের প্রসঙ্গে মসনবী শরীফে উল্লেখ আছে যে-
بے ادب محروم گشت از لطف رب
“বেয়াদব মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুবারক থেকে বঞ্চিত।” নাঊযুবিল্লাহ! (ইনশাআল্লাহ চলবে)

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট