সুওয়াল জাওয়াব : মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনাদের ছবি সম্বলিত জায়নামাজে নামাজ আদায় করার হুকুম আহকাম (১)

সুওয়াল: আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ২০তম সংখ্যার “সুওয়াল-জাওয়াব” বিভাগের একটি সুওয়ালের জাওয়াবে দেখতে পেলাম যে, মহাপবিত্র কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফ উনাদের ছবিযুক্ত জায়নামাজে নামায পড়া ও উক্ত ছবিকে পা দ্বারা দলিত করা মাকরূহ ও আদবের খেলাফ এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুফরী। আর এর স্বপক্ষে দলীলও পেশ করা হয়েছে। কিন্তু অনেকে বলে থাকে, এটা যদি নাজায়িয হতো, তবে সউদী আরবসহ বিশ্বের অগণিত মুসলমান তা করতো না, সুতরাং এটা জায়িয।
আর কিছু মাসিক পত্রিকায়ও এটাকে জায়িয বলে ফতওয়া দেয়া হয়েছে। যেমন- চট্টগ্রামস্থ পটিয়া মাদরাসার মুখপত্র মাসিক “আত-তাওহীদ” মে ’৯৭ইং সংখ্যায় নি¤েœাক্ত সমস্যা-সমাধান ছাপানো হয়-
(১) সমস্যা:- জায়নামাযে মক্কা শরীফ, মদীনা শরীফ সম্বলিত ফটো পা দ্বারা মাড়ানো হয়, তা কি বেয়াদবী নয়? জায়নামাযে এসব ছবি সংযোজনের পেছনে কি কোন চক্রান্ত আছে?
সমাধান:- কা’বা শরীফের ফটো সম্বলিত জায়নামায পদদলিত করতে কোন অসুবিধা নেই। যেহেতু তা ফটোই মাত্র। শরীয়তে ফটোকে সম্মান করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। (মজমুয়ায়ে ফতওয়া-২/৪৮৫)
(২) আর মওদুদী প্রবর্তিত তথাকথিত জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র “মাসিক পৃথিবী-মে/৯৭ সংখ্যার ৫, ৬নং প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, কা’বা ঘরের ছবি অঙ্কিত জায়নামাযে নামায পড়া জায়িয। এখন আমাদের জানা ও বুঝার বিষয় হলো, এ ব্যাপারে মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ফতওয়া সঠিক না মাসিক আত-তাওহীদ ও পৃথিবীর বক্তব্য সঠিক? আর আত-তাওহীদে মজমুয়ায়ে ফতওয়ার যে দলীল পেশ করা হয়েছে তাই বা কতটুকু সঠিক ও গ্রহণযোগ্য? কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ভিত্তিতে বিস্তারিত ফতওয়া দানে বিভ্রান্তি দূর করবেন বলে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী।

জাওয়াব: “পবিত্র কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফ উনাদের” ছবি সম্বলিত জায়নামাযে নামায পড়া সম্পর্কিত” মাসিক আত-তাওহীদ ও পৃথিবীর উক্ত বক্তব্য- দলীলবিহীন, বিভ্রান্তিকর, অসম্পূর্ণ ও জিহালতপূর্ণ হয়েছে; ভুল তো অবশ্যই।
বিশেষ করে, “মাসিক আত-তাওহীদ” পত্রিকায় “মজমূয়ায়ে ফতওয়ার” যে দলীল পেশ করা হয়েছে তা এক্ষেত্রে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় এবং মজমুয়ায়ে ফতওয়ার উক্ত বক্তব্য দ্বারা কা’বা শরীফ ও মদীনা শরীফের ছবি পা দ্বারা মাড়ানো কখনোই জায়িয প্রমাণিত হয় না। তাওহীদ কর্তৃপক্ষ উক্ত কিতাবের বক্তব্যের সঠিক মর্মার্থ অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েই বিভ্রান্তিতে নিপতিত হয়েছে। যেমন- মাওলানা আব্দুল হাই লাখনোবীর মজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে আব্দুল হাই-এর ৪৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
سوال(১৮৭) بیت اللہ اور روضہء رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم کا نقشہء مبارکہ و اجب التعظیم ھے یا نھین؟
جواب:- شریعت محمدیہ مین نقشہ کی تعظیم و اجب نھین- اگر کوئی اس کو چاک بھی کرئے توماخوذ نہ ھوگا- اور انحضرت صلی اللہ علیہ وسلم سے نقشئے روضئے اقدس کے بارہ مین کئی حکم ثابت نھین- یھان تک کہ اگر کوئی شخص حج کرے اور روضئے اقدس کی زیارت کرنے کے بجائے صرف نقشہ کی زیارت کرے تو بقول رسول پاک جفانی یہ زیارت بھی کافی نہ ھوگی اسی طرح نقشئے بیت اللہ پر بیت اللہ کا حکم نھی ھوگا اور نقشہ کی زیابت اجابت دعا کا وقت نھین اور اس نقشہ کے طواف کی بھی کوئی حقیقت نھین اور اگر کسی نے نقشہ کو قبلہ بنا کر اس کی طرف نماز پرہ لے تو درست نہ ھوگی دونون نقشہ بمنزلہ ائنہ کے ھین جس سے کعبہ مکرمہ اور روضئے اقدس کی ھیئت و صورت معلوم ھو جائے ھے اس سے زائد کچہ نھیی-

অর্থ: প্রশ্ন: (৭৮১) কা’বা শরীফ এবং রওজা শরীফ উনাদের নকশা (ছবি) মুবারকের তা’যীম করা ওয়াজিব কিনা?
উত্তর: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীয়তে নকশা বা ছবিকে তা’যীম করা ওয়াজিব নয়। যদি কেউ তা ছিড়েও ফেলে তবে শাস্তির উপযুক্ত হবে না। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে রওজা শরীফ সম্পর্কে কোন নির্দেশ প্রমাণিত নেই। তথাপিও কেউ যদি হজ্জ করে এবং রওজা শরীফ যিয়ারত করার পরিবর্তে নকশাকে যিয়ারত করে, তবে হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে উক্ত যিয়ারতের হক্ব আদায় হবে না। অনুরূপ কা’বা শরীফের নকশা বা ছবির হুকুম (মূল) কা’বা শরীফের মত নয় এবং নকশা বা ছবির যিয়ারত দোয়া কবুলের সময় নয়। আর কা’বা শরীফের নকশার তাওয়াফেরও কোন গুরুত্ব নেই। যদি কেউ কা’বা শরীফের নকশাকে কেবলা বানিয়ে নামায পড়ে, তবে জায়িয হবে না। উভয় নক্শা আয়নার ন্যায়, যা দ্বারা মক্কা শরীফ ও রওজা শরীফের অবস্থা ও আকৃতি বুঝা যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়;
উল্লেখ্য, প্রথমত: মজমুয়ায়ে ফতওয়ার উক্ত বক্তব্য দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যে, মূল কা’বা শরীফের ও রওজা শরীফের যেরূপ আহকাম ও তা’যীম-তাকরীম, সেরূপ তার নকশা বা ছবির নয় অর্থাৎ মূল কা’বা শরীফ ও রওজা শরীফের যিয়ারতের দ্বারা যেরূপ ফযীলত হাছিল হয় তদ্রুপ তার নকশা বা ছবির যিয়ারতের মাধ্যমে কস্মিনকালেও হাছিল হয় না। এর দ্বারা এটা বুঝা যায় না যে, কা’বা শরীফ ও রওজা শরীফের নকশা বা ছবি পা দ্বারা দলিত করা বা মাড়ানো জায়িয ও সেগুলো সম্মান বা তা’যীম- তাকরীমের উপযুক্ত

নয়। কাজেই এ ব্যাপারে মজমুয়ায়ে ফতওয়ার উক্ত বক্তব্যকে দলীল হিসেবে পেশ করা জিহালত বৈ কিছুই নয়।
দ্বিতীয়তঃ যদিও ধরে নেই যে, মজমুয়ায়ে ফতওয়ার বক্তব্য দ্বারা কা’বা শরীফ ও রওজা শরীফের নক্শা পা দ্বারা মাড়ানো জায়িয বলা হয়েছে। তবুও তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ মাওলানা আব্দুল হাই লাখনোবী উনার উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন দলীলই পেশ করেননি। কাজেই মাওলানা আব্দুল হাই লাখনোবী বা অন্য কেউ ফতওয়া দিলেই যে, তা জায়িয হবে শরীয়তের কোথাও তা উল্লেখ করা হয়নি। বরং হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে,
كلمة حكمة من سفيه فا قبلها وكلمة سفيهة من حكيم فا تركها
অর্থ: “হেকমত ও জ্ঞানমূলক কথা (যা শরীয়তসম্মত) তা যদি কোন মূর্খলোকও বলে, তবে তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। আর মূর্খসূচক কথা (যা শরীয়তবিরোধী) তা যদি জ্ঞানী নামধারী ব্যক্তিও বলে, তবে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।”
কাজেই মজমুয়ায়ে ফতওয়ার উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা যদিও কা’বা শরীফ ও রওজা শরীফের নকশা পা দ্বারা মাড়ানো জায়িয প্রমাণিত হয় না। তারপরও যদি জায়িয ধরে নেয়া হয় তথাপিও তা গ্রহণযোগ্য নয় যেহেতু উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে কোন দলীল নেই। মূলত: এটা মাওলানা আব্দুল হাই লাখনোবীর ব্যক্তিগত অভিমত, যা পবিত্র কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা শরীফ ও ক্বিয়াস শরীফ উনাদের খিলাফ।
তৃতীয়তঃ “মাসিক আত-তাওহীদ পত্রিকায় মজমুয়ায়ে ফতওয়ার বরাত দিয়ে লেখা হয়েছে যে, শরীয়তে নকশা বা ফটোকে তা’যীম করার কোন বাধ্যবাধ্যকতা নেই।”
একথার জবাবে বলতে হয় যে, হ্যাঁ এটা অবশ্যই সত্য যে, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে স্পষ্ট উল্লেখ নেই যে, কা’বা শরীফ ও রওযা শরীফের নকশা বা ছবিকে তা’যীম করা ওয়াজিব। তবে উছূলের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-
ما ادى الى الحرام فهو حرام.
অর্থাৎ যে আমল মানুষকে হারামের দিকে নিয়ে যায়, তাও হারাম।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, যেমন- হরতাল, লংমার্চ, গণতন্ত্র, ভোট ও নির্বাচন ইত্যাদি যা মানুষকে নানাবিধ হারাম কাজে মশগুল করে দেয়। যেমন হরতাল করলে মুসলমানের কষ্ট হয়, সম্পদের ক্ষতি হয়, লংমার্চ, গণতন্ত্র, ভোট ও নির্বাচনের দ্বারা বেদ্বীন-বদদ্বীনদের অনুসরণ করা হয়। অথচ মুসলমানদের ধন-সম্পদের ক্ষতি করা, তাদেরকে কষ্ট দেয়া ও বেদ্বীন-বদদ্বীনদের অনুসরণ করা হারাম, নাজায়িয ও কুফরী। তাই এগুলো আমল করা হারাম ও এর থেকে বেঁচে থাকা ফরয।
অনুরূপ মহাপবিত্র কুরআন শরীফ ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফে স্পষ্ট উল্লেখ নেই যে, দাঁড়ি কাটা হারাম। অথচ ফক্বীহগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, এক মুষ্টির কমে দাঁড়ি কাটা হারাম। কারণ দাঁড়ি কাটার কারণে শয়তানকে অনুসরণ করা হয়, মহিলাদের আকৃতি ধারণ করা হয় এবং মুশরিক-মজুসী ও ইহুদী-নাছারাদের অনুসরণ করা হয়। যা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণই হারাম। তাই দাঁড়ি কাটা হারাম, আর হারাম থেকে বেঁচে থাকা ফরয। অর্থাৎ কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয।
অতএব, উপরোক্ত উছূল ও আলোচনার ভিত্তিতে এটাই ছাবিত হয় যে, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে যদিও স্পষ্ট উল্লেখ নেই যে, কা’বা শরীফ ও রওযা শরীফের নকশা বা ছবিকে তা’যীম করা ওয়াজিব। কিন্তু কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে এটা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, কা’বা শরীফ ও রওযা শরীফ মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে বিশেষভাবে সম্মানিত বা তা’যীমপ্রাপ্ত ও মহান আল্লাহ পাক উনার অসংখ্য নির্দশন মুবারকসমূহের মধ্যে অন্যতম নিদর্শন। মহান আল্লাহ পাক উক্ত নিদর্শনসমূহকে তা’যীম করার নির্দেশ দিয়েছেন ও অবমাননা করতে নিষেধ করেছেন। (ইনশাআল্লাহ চলবে)

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট