সুওয়াল-২: খাস জায়গায় লিজ নিয়ে ৪০-৫০ বছর আগে জনগণের সুবিধার্থে মসজিদ বানানো হয়েছে। এখন সেই মসজিদ কি সরকার ভেঙ্গে ফেলতে পারবে?



জাওয়াব: খাস বা সরকারী জমি বলে কোন জমি নেই, সব জমির হাক্বিক্বতে মালিক মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং দেশ হিসেবে জনগণ মালিক। সরকারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য, তাকে জমির মালিকানা দেয়া হয়নি। তাই সরকারী জমি বলে কোন জমি নেই। অতএব, দেশের খাস জমি থাকলে তার মালিক জনগণই হবেন। এখন জনগণ যদি জনগণের প্রয়োজনে তাদের মালিকানাভূক্ত জমিতে মসজিদ বানায়, তবে সেই মসজিদ উনার হুকুম অন্য মসজিদ উনার মতোই হবে। সরকার সেই মসজিদে হাত দিতে পারবে না। তবে ব্যক্তি মালিকানার কোন জমিতে অনুমতি ছাড়া মসজিদ বানানো যাবে না।
জনগণের সুবিধার্থে খাস জায়গায় যে মসজিদ তৈরি করা হয়েছে এবং তাতে আযান দিয়ে নামায পড়া হয়েছে উক্ত মসজিদও ওয়াক্ফকৃত মসজিদের ন্যায় হুকুম রাখে। কেননা জনগণই হচ্ছেন খাস জায়গার মালিক। এখন জনগণই যখন মসজিদের জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করে তাতে মসজিদের ঘর নির্মাণ করে সেখানে আযান দিয়ে নামায আদায় করেছেন তখন তা মসজিদ হিসেবে গণ্য হয়ে গেছে এবং উক্ত মসজিদ মহান আল্লাহ পাক উনার মালিকানাধীন হয়ে গেছে।
আর খাস জায়গার মালিক সরকার নয়। তাই সরকারের পক্ষে খাস জায়গায় নির্মিত মসজিদ ভাঙ্গাও জায়িয নেই।
 এখন আর কেউ উক্ত মসজিদ ভাংতে পারবে না। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর মসজিদ ভাঙ্গার অধিকার কারো নেই।
কাজেই, সরকার হোক, জনগণ হোক সকলের দায়িত্ব হচ্ছে খাস জায়গায় নির্মিত মসজিদের তত্ত্বাবধান করা। বিশেষ করে সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে খাস জায়গাগুলো সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান করা।
বলার অপেক্ষা রাখে না, যমীনের বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান হচ্ছে মসজিদ। 
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
هو الـمسجد وهو خير الاماكن وفى رواية خير الاماكن الا وهى الـمساجد
অর্থ : “সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান হচ্ছে মসজিদসমূহ।” (আরশীফু মুনতাদাল উলূকাহ, ইত্যাদি)
তাই যে সমস্ত খাস জায়গায় মসজিদ হয়েছে বা রয়েছে তা সর্বোত্তমভাবেই ব্যবহার হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে মুসলমান দেশের সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে মসজিদের রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ, পানির ব্যবস্থা ইত্যাদির সুবন্দোবস্ত করতঃ তত্ত্বাবধান করা।
কারণ এ দেশের সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত এবং জনগণের কল্যাণের জন্য গঠিত। জনগণের সুযোগ-সুবিধা দেয়া, জনগণের হক্ব বা অধিকার পূরণের জন্যেই সরকার ওয়াদাবদ্ধ।
কাজেই সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, জনগণের দ্বীনি অধিকার পূরণের স্বার্থেই খাস জায়গায় তৈরিকৃত মসজিদ বহাল রাখার পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষকতা করা।
আর সরকার জালিম কিংবা কাফির হলে তার মাসয়ালা আলাদা।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সম্মানিত কালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ مَنَعَ مَسَاجِدَ اللهِ اَنْ يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُه‘ وَسَعَى فِي خَرَابِهَا اُولٰئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ اَنْ يَدْخُلُوهَا اِلَّا خَائِفِينَ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ.
অর্থ: “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে? যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত মসজিদসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় বা বিরাণ করতে চেষ্টা করে। তাদের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় অর্থাৎ খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করা ব্যতীত মসজিদসমূহে প্রবেশ করা জায়িয নেই। তাদের জন্য রয়েছে ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১১৪)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ‘বড় যালিম’ উনার ব্যাখ্যায় বড় কাফির বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!
দলীলসমূহ: (১) তাফসীরে আহ্কামুল কুরআন- লিল জাস্সাস, (২) তাফসীরে কুরতুবী, (৩) তাফসীরে বায়যাবী, (৪) তাফসীরে রূহুল মায়ানী, (৫) তাফসীরে খাযিন, (৬) তাফসীরে ইবনে কাছীর, (৭) তাফসীরে বাগবী, (৮) তাফসীরে মাদারিক, (৯) তাফসীরে ফতহুল ক্বাদীর, (১০) তাফসীরে রুহুল বয়ান, (১১) তাফসীরে মাযহারী, (১২) তাফসীরে কবীর, (১৩) তাফসীরে দুররে মনছূর, (১৪) তাফসীরে তাবারী, (১৫) মায়ালিমুত তানযীল, (১৬) তাফসীরে আবিস সউদ (১৭) মাআরিফুল কুরআন (১৮) কুদুরী, (১৯) আলমগীরী, (২০) দুররুল মুখতার, (২১) রদ্দুল মুহতার, (২২) শামী, (২৩) তাহতাবী, (২৪) আইনুল হিদায়া, (২৫) বাহরুর রায়িক, (২৬) ক্বাযীখান, (২৭) কিফায়া, (২৮) ফতওহুল ক্বাদীর ইত্যাদি।

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট