🕌🕌🕌
জাওয়াব: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার একমাত্র মালিক হচ্ছেন খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি।
যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَاَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلّٰهِ
অর্থ: আর নিশ্চয়ই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার । ( পবিত্র সূরা জ্বিন শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ- ১৮)
অর্থাৎ সমস্ত মসজিদের মালিক হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক তিনি। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اَلْـمَسْجِدُ بَيْتُ اللهِ
অর্থ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর। সুবহানাল্লাহ!
বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব “ফতহুল ক্বাদীর” এর ৫ম খ-ের ৪২১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَالْـخُرُوْجُ عَنْ مِلْكِهِ وَقَوْلُهٗ كَالْـمَسْجِدِ نَظِيْرٌ مَا خَرَجَ عَنِ الْـمِلْكِ بِالْاِجْمَاعِ
অর্থ: “ওয়াক্ফকৃত সম্পদ ওয়াক্ফকারীর মালিকানা থেকে বের হয়ে যাবে। যেমন মসজিদ ওয়াক্ফ করলে ওয়াক্ফকারীর মালিকানা বের হয়ে যাওয়ার নজীর রয়েছে। যা সকল উলামায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে।” অর্থাৎ মসজিদ ওয়াক্ফ করলে তা ওয়াক্ফকারীর মালিকানা থেকে বের হয়ে মহান আল্লাহ্ পাক উনার মালিকানায় চলে যাবে তথা উক্ত মসজিদ-এর মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজেই হয়ে যান।”
“হেদায়া মা’য়াদ দেরায়া” কিতাবের ২য় খ-ের ৬৩৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَعِنْدَهُمَا حَبْسُ الْعَيْنِ عَلٰى حُكْمِ مِلْكِ اللهِ تَعَالٰى فَيَزُوْلُ مِلْكُ الوَاقِفِ عَنْهٗ إِلَى اللهِ تَعَالٰى عَلٰى وَجْهٍ تَعُوْدُ مَـنْفَعَتُهٗ إِلَى الْعِبَادِ فَيَلْزَمُ وَلَايُبَاعُ وَلَايُوْهَبُ وَلَايُوْرَثُ ... لَـهُمَا قَوْلُ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ حِيْنَ اَرَادَ اَنْ يَّتَصَدَّقَ بِاَرْضٍ لَهُ تُدْعَى ثَـمغ تَصَدَّقْ بِاَصْلِهَا لَايُبَاعُ وَلَايُوْرَثُ وَلَايُوْهَبُ
وَلَاِنَّ الـحَاجَةَ مَاسَّةٌ اِلَى أَنْ يَلْزَمَ الْوَقْفُ مِنْهُ لِيَصِلَ ثَوَابُهٗ اِلَيْهِ عَلَى الدَّوَامِ وَقَدْ أَمْكَنَ دَفْعُ حَاجَتِهٖ بِاسْقَاطِ الـمِلْكِ وَجَعَلَهُ لِلّٰهِ تَعَالٰى اِذْ لَهُ نَظِيْرٌ فِى الشَّرْعِ وَهُوَ الْـمَسْجِدُ فَيُجْعَلْ كَذَلِكَ.
অর্থ: “সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার ইমাম, হযরত আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মতে কোন মাল-সম্পদ বা জায়গাকে খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার মালিকানার বিধানের ভিত্তিতে আবদ্ধ করার নামই ওয়াক্ফ। আর ওয়াক্্ফ হওয়া মাত্রই ওয়াক্ফকৃত স¤পদ থেকে ওয়াক্ফকারীর মালিকানা রহিত হয়ে মহান আল্লাহ্ পাক উনার মালিকানায় এমনভাবে চলে য়ায় যে, যা আর ক্বিয়ামত পর্যন্ত ফিরে আসবেনা। আর উক্ত ওয়াক্ফকৃত সম্পদের মুনাফা বান্দাদের দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়। সুতরাং তার মালিকানা মহান আল্লাহ পাক উনার হয়ে যায়। অতএব তা বিক্রি করা যাবে না, হিবা করা যাবে না এবং মীরাছ রূপে বণ্টন করাও যাবে না।... হযরত ছহেবাইন রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের দলীল হলো এই যে, একদা ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যখন উনার মালিকানাধীন খায়বরের ‘ছামাগ’ নামক জমিটি ছদকা করতে ইচ্ছাপোষণ করলেন, তখন নূরে মুজাস্্সাম হাবীবুল্লাহ্্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বলেছিলেন যে, “আপনি মূল জমিটিকে এমনভাবে ছদক্বা করুন, যা কখনোই বিক্রি করা যাবে না, মীরাছ রূপে বণ্টন করা যাবে না এবং হিবাও করা যাবে না। কেননা ওয়াক্্ফকারীর দিক থেকে ওয়াক্্ফ হাক্বীক্বীভাবে হওয়া উচিত। যাতে ওয়াক্ফ-এর ছওয়াব দায়েমীভাবে তার দিকে পৌঁছতে থাকে। আর ওয়াক্্ফকারীর মালিকানা রহিত করে মহান আল্লাহ্্ পাক উনার জন্য মালিকানা নির্দিষ্ট করে দেয়ার মাধ্যমে তার ওয়াক্্ফ পূর্ণ করা সম্ভব। কেননা সম্মানিত শরীয়তে এর নজীর রয়েছে। যেমন মসজিদ । সুতরাং এটাকেও সেরূপ করা হবে। অর্থাৎ খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য মসজিদ-এর মালিকানা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। যদিও তিনি সমস্ত কিছুর মালিক। সুতরাং মসজিদ-এর মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজেই।”
“আল লুবাব লিল মায়দানী” কিতাবে উল্লেখ আছে-
وَقَالَ اَبُوْ يُوْسُفَ رَحِمَهُ اللهُ تَعَالٰى يَزُوْلُ مِلْكُهٗ عَنْهٗ) اَىِ الـمَسْجِدِ (بِقَوْلِهِ جَعَلْتُهٗ مَسْجِدًا) لِاَنَّ التَّسْلِيْمَ عِنْدَهٗ لَيْسَ بِشَرْطٍ لِاَنَّهٗ اِسْقَاطُ لْـمِلْكِهِ فَيَصِيْرُ خَالِصًا لِلّٰهِ تَعَالٰى بِسُقُوْطِ حَقِّهٖ.
অর্থ: “ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আমি জায়গাটিকে মসজিদ বানালাম” ওয়াক্ফকারীর এমন কথার দ্বারাই মসজিদ থেকে তার মালিকানা দূরীভূত হয়ে যাবে।
কেননা ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট ওয়াক্্ফকারীর মালিকানা দূরীভূত হওয়ার জন্য সোপর্দ করা শর্ত নয়, মালিকানা সাকেত হওয়াই যথেষ্ট। অতঃপর ওয়াক্্ফকারীর হক্ব সাক্বেত হওয়ার দ্বারাই উক্ত মসজিদ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য খালেছভাবে হয়ে যাবে।” সুতরাং মসজিদ-এর মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজেই।”
“আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ” কিতাবের ১ম খ-ের ৪৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَقَالَ اَبُوْ يُوْسُفَ رَحِمَهُ اللهُ تَعَالٰى يَزُوْلُ مِلْكُهٗ بِقَوْلِهٖ جَعَلْتُهٗ مَسْجِدًا.
অর্থ: “হযরত ইমামআবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আমি জায়গাটিকে মসজিদ বানালাম” ওয়াক্ফকারীর এমন কথার দ্বারাই মসজিদ থেকে তার মালিকানা দূরীভূত হয়ে যাবে।” উক্ত মসজিদ-এর মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি।” (“আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ” কিতাবের ১ম খ-ের ৪৩৫ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় তা উল্লেখ আছে)
উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্য ভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মসজিদ উনার মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজেই অন্য কেহ নয়। আর মসজিদ উনার একচ্ছত্র মালিক যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি, তাই কোনো অবস্থাতেই অন্য কারো জন্য মসজিদ উনার জায়গা স্থানান্তরিত করা অর্থাৎ রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, নদী রক্ষণাবক্ষেণ বা সরকারী-বেসরকারী যে কোনো প্রয়োজনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা বা মসজিদ উনার জায়গা স্থানান্তরিত করা জায়িয নেই বরং তা সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।