পারিবারিক জীবন শান্তিময় করার জন্য আহাল আহলিয়া উভয়ের ভূমিকা অপরিসীম। আর শান্তিময় জীবন যাপন করা তখনই সম্ভব হবে যখন পবিত্র কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী পরিচালিত হবে। একজন আহাল তার সম্মান রক্ষা করতে পারে তার আহলিয়ার দ্বারা একজন আহলিয়াও তার সম্মান রক্ষা করতে পারে তার আহালের দ্বারা। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি উভয়কে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
هُنَّ لِبَاسً لَّكُمْ وَ اَنْتُمْ لِبَاسً لَّهُنَّ
অর্থ মুবারকঃ “তোমরা (পুরুষরা) তাদের (মহিলাদের) আবরন, আর তারাও তোমাদের আবরণ। ”
অর্থাৎ আহাল ব্যতীত আহলিয়া যেমন পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারেনা, ঠিক তেমনি আহলিয়া ব্যতীত আহালও পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারেনা।
আমরা যদি দ্বীন ইসলাম উনার সুচনা লগ্ন থেকে আজ অবধি লক্ষ্য করি, তাহলে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সহজেই খুঁজে পাই। যেমন -সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার যিনি ধারক বাহক উম্মুল মু’মীনিন সাইয়্যিদাতুনা আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে আসলেন, তখন থেকে সম্মানিত হায়াত মুবারকে থাকা পর্যন্ত এমন বেমেছাল খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম দিয়েছিলেন যার ফলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সন্তুষ্ট হয়ে সবসময় উম্মুল মু’মীনিন সাইয়্যিদাতুনা আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার ছানা ছিফত মুবারক করতেন এবং বলতেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে যত উম্মাহাতুল মু’মীনিন আলাইহিন্নাস সালাম হাদিয়া মুবারক করেছেন, উম্মুল মু’মীনিন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মত অন্য কোন উম্মুল মু’মীনিন আলাইহাস সালাম দেননি।”
নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নুরুস সালাম (জবান মুবারক) উনার এই ছানা ছিফত মুবারক দ্বারাই প্রমাণিত হয়, উম্মুল মু’মীনিন সাইয়্যিদাতুনা আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার শান মান ,ফযীলত কত ঊর্ধ্বে। ঠিক তেমনি অন্যান্য উম্মাহাতুল মু’মীনিন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অবদানও বেমেছাল। মূলত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হায়াত মুবারকে থাকা অবস্থায় হযরত উম্মাহাতুল মু’মীনিন আলাইহিন্নাস সালাম যেমন সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ব্যাপক আঞ্জাম মুবারক দিয়েছেন ঠিক তেমনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পরেও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ব্যাপক আঞ্জাম মুবারক দিয়েছেন। যার কারণে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগন উনারা হযরত উম্মাহাতুল মু’মীনিন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের থেকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সার্বিক বিষয়ের ফায়সালা মুবারক নিয়েছিলেন। (সুবহানা হযরত উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম) পরবর্তীতে হযরত মহিলা সাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগন উনাদের দিকেও লক্ষ্য করলেও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ব্যাপক আঞ্জামের বিষয়টি দেখতে পাই। হযরত পুরুষ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কামিয়াবীর পিছনে মহিলা ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগন উনাদের অবদানও ছিলো বেমেছাল। যেমন তাবুকের জিহাদের সময় যিনি খলীফাতুল্লাহ, খুলীফাতু রসুলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনার কাছে তেমন কোন অর্থ মুবারক ছিলনা। কারন, একদিকে ফসল কাটার সময় তখনও হয়নি অর্থাৎ ফসল উঠলে তা বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করার কথা ছিল। কিন্তু তখনও ফসল ও ফল উঠার সময় হয়নি। অপরদিকে উনারা যেহেতু সবকিছু মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করে দিতেন। কোনকিছু জমা করে রাখতেন না, যার কারণে তাবুকের জিহাদের ঘোষণা শুনে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়েন। তখন উনার এই চিন্তাগ্রস্থ অবস্থা দেখে উনার সম্মানিতা আহলিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি উনার কাছে চিন্তার কারণ জানতে চাইলেন। জবাবে তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাবুকের জিহাদের ঘোষণা দিয়েছেন এবং যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী শরীক থাকার জন্য। কিন্তু আমার হাতে তেমন কিছু নেই। এজন্য আমি ভীষণ চিন্তিত। তখন উনার আহলিয়া বললেন, সাধ্য সামর্থ্য অনুযায়ী শরীক থাকতে বলেছেন তাই আমাদের যা কিছু আছে আপনি তা নিয়ে যান। তখন উনার আহলিয়া ঘরের সবকিছু এমনকি ঝাড়ুটা পর্যন্ত একটা বস্তায় ঢুকিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে তুলে দিলেন।
এভাবেই উনার সম্মানিতা আহলিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনার চিন্তা মুবারক দূর করে দিলেন। তাবুকের জিহাদে হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সর্বস্ব গোলামীতে আঞ্জাম দেওয়ার ফলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি মুবারক প্রকাশ করেন। এখানে একটা সূক্ষ্ম ফিকিরের বিষয়- সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনি যে তাবুকের জিহাদে গোলামীতে আঞ্জাম দিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সর্বোচ্চ রেযামন্দি সন্তুষ্টি হাসিল করেছিলেন তার পিছনে কার অবদান ছিলো? কাজেই বিষয়টি সহজেই বুঝা যাচ্ছে, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনার আহলিয়া উনার অবদান ছিল। সুবহানাল্লাহ ! আসলেই আমরা যদি বিষয়টি আরো লক্ষ্য করি সেই মহাসম্মানিত আহ্লু বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের থকে শুরু করে আজ অবধি যারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আখাচ্ছুল খাছ লক্ষ্যস্থল বান্দা বান্দি, উম্মত ছিলেন এবং আছেন উনাদের প্রত্যেকেরই সাফল্যের চূড়ান্ত শীর্ষে পৌছানোর পিছনে অবদান রেখেছেন – কারো সম্মানিতা মাতা, কারো সম্মানিতা আহলিয়া এবং কারো সম্মানিতা বানাত। যার সর্বোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমাদের মহাসম্মানিতা, মাথার তাজ, নয়নের মনি, প্রাণপ্রিয়া শায়েখ সাইয়্যিদাতুনা উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম! (সুবহানা উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম) উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা নারী জাতির পথ প্রদর্শক, আমাদের মাঝে হিদায়াতের কান্দারী, নাজাতের দিশারী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। (সুবহানা উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম) মূলত একজন সন্তান তার মাতার মাধ্যমে সার্বিক পরিচয় লাভ করে থাকে। ঠিক তেমনি উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে আমরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার পরিচয় মুবারক লাভ করেছি, করছি এবং অনন্তকাল ধরে করতেই থাকব। অপরদিকে উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার হাক্বীক্বী পরিচয় মুবারক হচ্ছেন তিনি উম্মুল মু’মীনিন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার হাক্বীক্বী ক্বায়িম-মাক্বাম। সাইয়্যিদাতুনা উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি উম্মুল মু’মীনিন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার হাক্বীক্বী ক্বায়িম-মাক্বাম হিসেবে সাইয়্যিদুনা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার সার্বিক বিষয়ে ব্যাপক খিদমত মুবারক উনার বেমেছাল আঞ্জাম মুবারক দিয়ে যাচ্ছেন। (সুবহানা উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম) উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক থেকে আমরা এই কথাগুলোই বুঝতে পেরেছি যা আমরা লিপিবদ্ধ করেছি। কাজেই হাক্বীক্বী মুসলমান হিসেবে জীবন যাপন করতে হলে এবং পারিবারিক জীবনে শান্তি লাভ করার জন্য সাইয়্যিদাতুনা উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার আদর্শ মুবারক অনুসরণ অনুকরন করতে হবে।