কাফির ও ফাসিকদের প্রশংসা করার বিষয়ে শরীয়ত কি বলে?

কাফির ও ফাসিকদের প্রশংসা করার বিষয়ে শরীয়ত কি বলে?
ফাসিকদের প্রশংসা প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যখন কোন ফাসিক লোকের প্রশংসা করা হয় তখন মহান আল্লাহ পাক এতোটা অসন্তুষ্ট হন যে, পবিত্র আরশে আযীম উনার খুঁটিগুলো (ভয়ে) প্রকম্পিত হতে থাকে।” 
ফাসিক কাকে বলে? ফাসিক হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরক করে বা অমান্য করে। অর্থাৎ সে মুসলমান বা ঈমানদার হলেও আমলে ত্রুটি আছে, ফরয-ওয়াজিব বা সুন্নতে মুয়াক্কাদা আমলসমূহ সে পালন করেনা কিংবা হারাম নাযায়েজ কাজে লিপ্ত রয়েছে। সে মুসলমান হওয়ার পরেও যদি তার প্রশংসা করলে মহান আল্লাহ পাক এতোটা অসন্তুষ্ট হন তাহলে যে লোক মহান আল্লাহ পাক উনাকেই মানেনা, উনার সাথে শিরক করে অন্য কোন কিছুর পূজা-উপাসনা করে তার প্রশংসা করলে কি হবে? এরাতো মহান আল্লাহ পাক উনার শত্রু। কাফির-মুশরিকদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক এতোটা অসুন্তুষ্ট যে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সাতশ’ পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন। যেমন- “নিশ্চয়ই সমস্ত প্রাণীর মাঝে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিকট কাফিরেরাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যারা ঈমান আনেনি।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৫)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” নাউযুবিল্লাহ! (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫১)
সূতরাং তাদের সাথে মুহব্বত পোষণ করা, তাদের প্রশংসা করা স্পষ্ট কুফরী। যে করবে সেও তাদের অন্তুর্ভূক্ত হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

পবিত্র ‘ঈমানী কুওওয়াত’ বৃদ্ধির জন্য দরকার নিয়মিত ক্বলবী জিকির করা

পবিত্র ‘ঈমানী কুওওয়াত’ বৃদ্ধির জন্য দরকার নিয়মিত ক্বলবী জিকির করা
বর্তমান সময়ে মুসলমানদের চেপে ধরেছে কাফির-মুশরিকরা। কিন্তু মুসলমানরা কাফির-মুশরিকদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে পারছে না, জবাব দিতে পারছে না। এর মূল কারণ হচ্ছে বর্তমানে মুসলমানদের ঈমানী শক্তি বা কুওওয়াত শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছে। মুসলমানগণ চাইলেও কাফিরদের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারছে না। 
আসলে একজন মুসলমান কখন গায়ের শক্তিতে চলতে পারে না, মুসলমানগণ হচ্ছে ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান। অতিতে এ বিষয়টি দেখা গিয়েছে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মধ্যে। উনারা ঈমানী কুওওয়াতে ছিলেন সুদৃঢ় । এ কারণেই উনারা অতি অল্প সংখ্যক হয়েও অধিক সংখ্যক কাফিরের উপর বিজয় লাভ করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
কিন্তু বর্তমানে মুসলমানদের অবস্থা হয়েছে ঠিক উল্টো। মুসলমানরা সংখ্যায় অনেক বেশি, কিন্তু এত অধিক সংখ্যক হয়েও তারা এখন স্বল্প সংখ্যক কাফিরদের সাথে পারছে না, নাজেহাল হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!
এর মূলকারণ বর্তমানে মুসলমানদের ঈমানী কুওওয়াত বা ঈমানী শক্তি নেই। আর সেই ঈমানী শক্তি বৃদ্ধির করার একমাত্র উপায় হচ্ছে কোনো হক্কানী ওলীআল্লাহ উনার নিকট বাইয়াত হয়ে ক্বলবী জিকির করা, এতেই ঈমানী কুওওয়াত অর্জন করা সম্ভব। আর ঈমানী কুওওয়াত অর্জন হলেই কেবল কাফিরদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া সম্ভব, অন্যথায় নয়।

নেক সঙ্গ মানুষকে আল্লাহওয়ালা করে দেয়

নেক সঙ্গ মানুষকে আল্লাহওয়ালা করে দেয়
মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে ঈমানদারগণ তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো, আর সত্যবাদী বা আল্লাহওয়ালা উনাদের ছোহ্বত  ইখতিয়ার কর।” (পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১১৯)
কারণ ছোহ্বত বা সঙ্গ বিষয়ে বলা হয়-
الصحبة متوثرة
অর্থ: “সঙ্গ ক্রিয়া করে।”
আর তাই কোনো কবি বলেন-
صحبت صالح ترا صالح کند
صحبت طالح ترا طالح کند
অর্থ: “সৎসঙ্গ তোমাকে আল্লাহওয়ালা করে দিবে, আর অসৎ সঙ্গ করে দিবে তোমাকে অসৎ।”
এ প্রসঙ্গে কবি হযরত শায়েখ সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গোলেস্তাঁ কিতাবে লিখেন-
“আমার এক বন্ধু হাম্মামখানায় আমাকে একটি সুঘ্রাণযুক্ত মাটির টুকরা দিলো, আমি সেই মাটির টুকরোকে জিজ্ঞাসা করলাম- তুমি কি মেশকে আম্বর, না আবেরী? কেননা তোমার সুঘ্রাণে আমি মাতওয়ারা হয়ে গিয়েছি। মাটি জবাব দেয়- আমি যে মাটি সেই মাটিই ছিলাম। কিন্তু আমি কিছু দিন গোলাপ ফুল গাছের সঙ্গে বা ছোহ্বতে ছিলাম, যখন গোলাপ ফুলের পাপড়ীগুলো আমার মধ্যে ঝরে পড়তো, আর তাই আমি মাটি উক্ত ফুলের ছোহ্বতে থাকার কারণে ফুলের ন্যায় সুঘ্রাণযুক্ত হয়ে যাই। নতুবা আমি মাটিই ছিলাম।” (সুবহানাল্লাহ্)
কাজেই একটি মাটির টুকরো যদি গোলাপ ফুলের ছোহ্বতে থেকে ফুলের ন্যায় সুঘ্রাণ হয়ে যেতে পারে, তবে আল্লাহওয়ালা উনাদের মুবারক ছোহ্বতে থাকলে কেন আল্লাহওয়ালা হওয়া যাবে না? অবশ্যই আল্লাহওয়ালা হওয়া যাবে।     
আর আল্লাহওয়ালা উনাদের মুবারক ছোহ্বত লাভের ফযীলত সম্পর্কে হযরত জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইরশাদ মুবারক  করেন
یک ز مانہ صحبت با اولیاء بہتر از صد سال طاعت بے ریا 
অর্থ: “কিছু সময় আল্লাহওয়ালা উনাদের মুবারক ছোহ্বতে থাকা, একশত বৎসরের রিয়াহীন পবিত্র নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম।”
আর আল্লাহওয়ালা হওয়া যাবে বলেই মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
ياايها الذين امنوا اتقو الله وكونوا مع الصادقين.
অর্থ হে ঈমানদারগণ তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো, আর সত্যবাদী বা আল্লাহওয়ালা উনাদের মুবারক ছোহ্বত লাভ করো। (পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১১৯)
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্য ছদিক্বীনগণের মুবারক ছোহ্বত অর্জন করতে বলার কারণ হলো- ছদিক্বীনগণ উনারা হলেন সর্বোচ্চ স্তরের আল্লাহওয়ালা। অর্থাৎ যিনি ছাদিক্ব, তিনি সর্বগুণে গুণান্বিত, তিনিই হাক্বীক্বী আলিম, ফক্বীহ্ ও আল্লাহওয়ালা উনাদের অন্তর্ভূক্ত। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি যেনো আমাদের সকলকে আল্লাহওয়ালা উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ারের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন করার তাওফীক্ব দান করেন। আমীন।

মাদরাসার সুপার উত্তম কুমার গোস্বামী!

মাদরাসার সুপার উত্তম কুমার গোস্বামী!
এবার মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার হলো বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য উত্তম কুমার গোস্বামী। রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের পাটকিয়াবাড়ি দাখিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব পেয়েছে এই হিন্দু সংগঠনের নেতা ও মাদরাসার সহকারী শিক্ষক উত্তম কুমার গোস্বামী। এছাড়া সে বাংলাদেশ ব্রাহ্মণ সংসদ রাজবাড়ী জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ গিতা শিক্ষা কমিটির রাজবাড়ী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।
গত ৩১ অক্টোবর পাকটিয়াবাড়ি দাখিল মাদরাসার সুপার অবসরে চলে যান। ফলে সুপার পদটি শূন্য হয়ে যায়। সহকারী সুপার হাসান আলিকে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব দেয় মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটি। এরই মধ্যে বিপত্তি ঘটে যে, মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সুপারের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তাতে সুপার পদের জন্য আবেদন করতেই সহকারী সুপার এ ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়।
পরে মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটি উত্তম কুমারকে মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব দেয়। উত্তম কুমার নতুন সুপার নিয়োগ হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।

যারা বলে ‘দুই ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নাই’ এই বক্তব্য হাদীস শরীফ বিরোধী

যারা বলে ‘দুই ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নাই’ এই বক্তব্য হাদীস শরীফ বিরোধী
ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অস্বীকার করতে গিয়ে কিছু গুমরাহ সম্প্রদায় বলে থাকে ‘দুই ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নাই”।  নাউযুবিল্লাহ !!
যারা বলে দুই ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নাই, তারা কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ অস্বীকারকারী। আর কুরআন শরীফ এবং হাদীস শরীফ অস্বীকারকারীরা কাফির। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, “যে আমার নামে মনগড়া মিথ্যা কথা বললো, সে দুনিয়া থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারন করে নিলো। (বুখারী শরীফ ১১০) 

শরীয়তে অসংখ্য ঈদ থাকার পরও যারা বলে দুই ঈদ ব্যাতীত ঈদ নাই তারা হাদীস শরীফ অস্বীকারকারী, নজীজীর প্রতি মিথ্যারোপ কারী। কারনহুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই দুই ছাড়া  আরো অনেক ঈদের কথা উল্লেখ করেছেন।

পবিত্র জুমুয়ার দিন মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন। পবিত্র সহীহ হাদীস শরীফের মধ্যে ইরশাদ হয়েছেঃ
عن حضرت عبيد بن السباق رضي الله عنه مرسلا قال قال رسول اللهصلي الله عليه و سلم في جمعة من الجمع يا معشر المسلمين ان هذا يومجعله الله عيدا
অর্থ : হযরত ওবায়িদ বিন সাব্বাক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মুরসাল সূত্রে বর্ননা করেন, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক জুমুয়ার দিন বলেন, হে মুসলমান সম্প্রদায় ! এটি এমন একটি দিন যাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈদ নির্ধারণ করেছেন !” (ইবনে মাজাহ : হাদীস নম্বর ১১৯৮, মুয়াত্তা মালিক- কিতাবুত ত্বহারাত: হাদীস নম্বর ১৪৪, বায়হাক্বী : হাদীস ১৩০৩, মা’য়ারিফুল সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী: হাদীস ১৮০২, মুসনাদে শাফেয়ী: হাদীস ২৬৮, মুজামুল আওসাত তাবরানী ৩৪৩৩, মিশকাত শরীফ)
عَنِابْنِعَبَّاسٍ،قَالَقَالَرَسُولُاللَّهِـصلىاللهعليهوسلمـ‏ “‏إِنَّهَذَايَوْمُعِيدٍجَعَلَهُاللَّهُلِلْمُسْلِمِينَفَمَنْجَاءَإِلَىالْجُمُعَةِفَلْيَغْتَسِلْوَإِنْكَانَطِيبٌفَلْيَمَسَّمِنْهُوَعَلَيْكُمْبِالسِّوَاكِ
অর্থ: হযরত উবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয় আল্লাহ এই দিনকে মুসলিমদের ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুমুআহর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (সুনানে ইবনে মাজাহ ১০৯৮, আল মুজামুলি আওসাত তাবরানী ৭৩৫৫)
কতবড় ঈদের দিন ও শ্রেষ্ঠ দিন জানেন কি ? দেখুন হাদীস শরীফে কি বলা হয়েছে-
قال النبى صلى الله عليه وسلم ان يوم الـجمعة سيد الايام واعظمها عندالله وهو اعظم عند الله من يوم الاضحى ويوم الفطر
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, জুমুআর দিন সকল দিনের সর্দার এবং সকল দিন অপেক্ষা আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এটি ঈদুল আযহার দিন ও ঈদুল ফিতরের দিন অপেক্ষাও আল্লাহ পাক-উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। (ইবনে মাজাহ : হাদীস নম্বর ১১৩৭,মুজামুল কবীর তাবরানী ৪৫১১, শুয়াইবুল ঈমান বায়হাকী : হাদীস ২৯৭৩, মিশকাত শরীফ)
এবার দেখূন কেন জুমুয়ার দিন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চাইতে বেশি শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত:
ان من افضل ايامكم يوم الـجمعة فيه خلق ادم وفيه قبض
অর্থ: ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। এ দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম পয়দা হয়েছেন এবং এ দিনেই তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন।’ (নাসায়ী শরীফ- কিতাবুল জুমুয়া: হাদীস ১৩৮৫, মুসলিম শরীফ- কিতাবুল জুমুয়া: হাদীস ৮৫৫, তিরমিযী :হাদীস ৪৯১, মুসনাদে আহমদ : ৮৯৫৪, হাদীস নম্বর ৮৯ ইবনে মাজাহ : হাদীস ১৭০৫, সুনানে আবু দাউদ –কিতাবুস সালাত: হাদীস ১০৪৭, ইবনে খুযায়মা: হাদীস ১৬৩২)

হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি, দুনিয়ায় আগমন, বিছাল শরীফ এর জন্য পবিত্র জুমুয়ার দিন এত শ্রেষ্ঠ। এতটাই শ্রেষ্ঠ যে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চাইতেও বেশি শ্রেষ্ঠ, এবং ঈদের দিন।

সহীহ হাদীস শরীফে আছে আরাফার দিন ঈদের দিনঃ

حَدَّثَنَاعَبْدُبْنُحُمَيْدٍ،أَخْبَرَنَايَزِيدُبْنُهَارُونَ،أَخْبَرَنَاحَمَّادُبْنُسَلَمَةَ،عَنْعَمَّارِبْنِأَبِيعَمَّارٍ،قَالَقَرَأَابْنُعَبَّاسٍ‏:‏‏(‏الْيَوْمَأَكْمَلْتُلَكُمْدِينَكُمْوَأَتْمَمْتُعَلَيْكُمْنِعْمَتِيوَرَضِيتُلَكُمُالإِسْلاَمَدِينًا‏)‏وَعِنْدَهُيَهُودِيٌّفَقَالَلَوْأُنْزِلَتْهَذِهِعَلَيْنَالاَتَّخَذْنَايَوْمَهَاعِيدًا‏.‏قَالَابْنُعَبَّاسٍفَإِنَّهَانَزَلَتْفِييَوْمِعِيدٍفِييَوْمِجُمُعَةٍوَيَوْمِعَرَفَةَ‏.‏قَالَأَبُوعِيسَىهَذَاحَدِيثٌحَسَنٌغَرِيبٌمِنْحَدِيثِابْنِعَبَّاسٍوَهُوَصَحِيحٌ

অর্থ : হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্নিত আছে যে, তিনি একদা –” আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ন করে দিলাম ” ( সূরা মায়েদা ৩) এ আয়াত শরীফ খানা শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন ! তখন উনার নিকট এক ইহুদী ছিল সে বলে উঠলো, যদি এমন আয়াত শরীফ আমাদের ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো, আমরা আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করতাম !’ এটা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এ আয়াত শরীফ সেই দিন নাযিল হয়েছে যেদিন একসাথে দুই ঈদ ছিলো – (১) জুমুয়ার দিন এবং (২) আরাফার দিন !” (দলীল: তিরমীযি শরীফ- কিতাবুত তাফসীর : হাদীস ৩৩১৮)

حَدَّثَنِيأَبُوخَيْثَمَةَ،زُهَيْرُبْنُحَرْبٍوَمُحَمَّدُبْنُالْمُثَنَّى- وَاللَّفْظُلاِبْنِالْمُثَنَّى- قَالاَحَدَّثَنَاعَبْدُالرَّحْمَنِ،- وَهُوَابْنُمَهْدِيٍّ- حَدَّثَنَاسُفْيَانُ،عَنْقَيْسِبْنِمُسْلِمٍ،عَنْطَارِقِ،بْنِشِهَابٍأَنَّالْيَهُودَ،قَالُوالِعُمَرَإِنَّكُمْتَقْرَءُونَآيَةًلَوْأُنْزِلَتْفِينَالاَتَّخَذْنَاذَلِكَالْيَوْمَعِيدًا‏.‏فَقَالَعُمَرُإِنِّيلأَعْلَمُحَيْثُأُنْزِلَتْوَأَىَّيَوْمٍأُنْزِلَتْوَأَيْنَرَسُولُاللَّهِصلىاللهعليهوسلمحَيْثُأُنْزِلَتْأُنْزِلَتْبِعَرَفَةَوَرَسُولُاللَّهِصلىاللهعليهوسلموَاقِفٌبِعَرَفَةَ
অর্থ : আবূ খায়সামা যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না রহমতুল্লাহি আলাইহি … তারিক ইবনু শিহাব (রহমতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহুদী লোকেরা হযরত উমার আলাইহিস সালাম উনাকে বললো, আপনারা এমন একটি আয়াত পাঠ করে থাকেন তা যদি আমাদের সম্পর্কে নাযিল হতো, তবে এ দিনটিকে আমরা উৎসবের দিন হিসাবে গ্রহণ করতাম। হযরত উমার আলাইহিস সালাম বললেন, আমি জানি, ঐ আয়াতটি কখন (কোথায়) ও কোন দিন নাযিল হয়েছিল। আর যখন তা নাযিল হয়েছিল তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় কোথায় অবস্থান করছিলেন (তাও জানি)। আয়াতটি আরাফার দিন নাযিল হয়েছিল; রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আরাফাতেই অবস্থান করছিলেন।” (মুসলিম শরীফ – কিতাবুত তাফসীর : হাদীস ৭২৪৪, নাসাঈ শরীফ শরীফ- কিতাবুল হজ্জ: হাদীস ৩০০২, মুসনাদে আহমদ ১৯০)
সহীহ হাদীস শরীফের মধ্যে আইয়ামে তাশরীকের দিন ঈদের দিনঃ
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ إِنَّ يَوْمَ عَرَفَةَوَيَوْمَ النَّحْرِ وَأَيَّامَ التَّشْرِيقِعِيدُنَا أَهْلَ الإِسْلاَمِ
অর্থ: হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, আরাফার দিন, নহর বা কুরবানীর দিন এবং আইয়্যামে তাশরীক (অর্থ্যাৎ ১১, ১২ ও ১৩ ই জিলহজ্জ) আমাদের মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন। (দলীল: নাসাঈ শরীফ কিতাবুল হজ্জ : হাদীস নম্বার ৩০০৪, আবু দাউদ – কিতাবুছ সিয়াম : হাদীস ২৪১৯, তিরমিযী শরীফ- কিতাবুছ ছিয়াম: হাদীস ৭৭৩)

উক্ত হাদীস শরীফে জুমুয়ার দিনের সাথে সাথে আরাফার দিনকেও ঈদের দিন হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
হাদীস শরীফে আছে মুসলমানদের জন্য প্রতি মাসে চারদিন বা পাঁচদিন ঈদের দিনঃ
لكل مؤمن في كل شهر اربعة اعياد اوخمسة اعياد
অর্থ : হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, মু’মিন মুসলমানদের প্রতি মাসে চারটি অথবা পাঁচটি ঈদ রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিমাসে চারটি অথবা পাঁচটি সোমবার শরীফ হয়ে থাকে।’ ( কিফায়া শরহে হিদায়া ২য় খন্ড – বাবু ছালাতিল ঈদাইন, হাশিয়ায়ে লখনবী আলাল হিদায়া )
রোজদারদের জন্য ইফতারের সময় ঈদের সময়ঃ
لِلصَّائِمِفَرْحَتَانِ: فَرْحَةٌعِنْدَفِطْرِهِ،وَفَرْحَةٌعِنْدَلِقَاءِرَبِّهِ
ٌঅর্থ : হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, রোযাদারের জন্য দুটি ঈদ বা খুশি । একটি হলো তার প্রতিদিন ইফতারের সময়। আর অন্যটি হলো মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাতের সময় ।’” (দলীল– বুখারী শরীফ – কিতাবুস সাওম, মুসলিম শরীফ কিতাবুস সাওম : হাদীস ১১৫৩,মিশকাত শরীফ ,সুনানে নাসাঈ : ২২১৫, রোজার অধ্যায়)
দেখুন, উক্ত হাদীস শরীফে রোজাদার দের জন্য দুটি ঈদ বা খুশির কথা বলা হইছে। একটা তার ইন্তেকালের পর আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাত। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে , ইফতার করার সময়।
ইফতিার দুই প্রকার –
(১) ইফতারে কুবরা।
(২) ইফতারে ছোগরা।
কুবরা হচ্ছে, ঈদুল ফিতর যা হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমানিত। আর ছুগরা হচ্ছে, রোজাদার প্রতিদিন মাগরিবের সময় করে থাকেন।
এটি প্রতিবছর ২৯ বা ৩০ দিন হয়ে থাকে। এছাড়া সুন্নত রোজা হিসাবে আরো রোজা রয়েছে, যেমন-
মুহররম শরীফ মাসে ৯,১০ বা ১০,১১ তারিখ দুইটি রোজা এবং এর সাথে আরো ১ টি রাখা হয়, মোটা ৩ টি।
শাওয়াল মাসে ৬ টি রোজা রোজা।
যিলহজ্জ শরীফ মাসে ১ হতে ৯ তারিখ পর্যন্ত ৯ টি রোজা।
এবং বাকি ১১ মাসে ৩ করে সুন্নত রোজা , মোট ৩৩ টি রোজা।
এই রোজাদারদের প্রতিটি ইফতার হলো ঈদ। সুবহানাল্লাহ্!

আসুন আমারা মোট ঈদ সংখ্যা হিসাব করি —
বছরে ৫২ টি শুক্রবার + ৫২ টি সোমবার শরীফ + আরফার দিন+ আইয়ামে তাশরীক ৩ দিন+ রমাদ্বান শরীফে ৩০ টি + বাকি ১২ মাসে ৩ করে ৩৪ টি + যিলহজ্জ মাসে ৯ টি + মুহররম মাসে ২ টি + পহেলা রজব ১ টি + ২৭ শে রজব ১টি + ১৫ শাবান ১ টি = (৫২+৫২+৩০+১+৩+৩৩+৯+২+১+১)
= ১৮৪ টি ঈদ ! সুবহানাল্লাহ্ !
সূতরাং হাদীস শরীফ থেকেই ১৮৪ টা ঈদ প্রমাণিত হলো।
বিশেষ কোন নিয়ামত নাযিলের দিন ঈদের দিন:
قَالَعِيسَىابْنُمَرْيَمَاللَّهُمَّرَبَّنَاأَنزِلْعَلَيْنَامَآئِدَةًمِّنَالسَّمَاءتَكُونُلَنَاعِيداًلِّأَوَّلِنَاوَآخِرِنَاوَآيَةًمِّنكَوَارْزُقْنَاوَأَنتَخَيْرُالرَّازِقِينَ
অর্থঃ ঈসা ইবন মারিয়ম আলাইহিস সালাম বললেন- হে আল্লাহ! আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা নাযিল করুন। এ দিন আমাদের জন্য ঈদ হবে। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার জন্যও তা হবে ঈদের দিন। (সূরা মায়িদা ১১৪)
শবে বরাত শরীফ হচ্ছে ফেরশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ঈদের দিন:
“লাইলাতুর বরাত ও লাইলাতুল কদর ফিরিশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ঈদের দিন” (গুনিয়াতুত ত্বলেবীন ৩৬৫ পৃষ্ঠা)
দুইয়ের অধিক ঈদের কথা একসাথে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে:
حَدَّثَنَاعَبْدُاللَّهِبْنُوُهَيْبٍالْغَزِّيُّ،حَدَّثَنَامُحَمَّدُبْنُأَحْمَدَبْنِأَبِيالسَّرِيِّالْعَسْقَلانِيُّ،حَدَّثَنَابَقِيَّةُبْنُالْوَلِيدِ،حَدَّثَنَاعُمَرُبْنُرَاشِدٍالْيَمَامِيُّ،حَدَّثَنَاأَبُوكَثِيرٍيَزِيدُبْنُعَبْدِالرَّحْمَنِ،عَنْأَبِيهُرَيْرَةَرَضِيَاللَّهُعَنْهُ،قَالَ: قَالَرَسُولُاللَّهِصَلَّىاللَّهُعَلَيْهِوَآلِهِوَسَلَّمَ: ” زَيِّنُوا أَعْيَادَكُمْ بِالتَّكْبِيرِ
অর্থ: তোমরা তোমাদের ঈদগুলোকে তাকবীর ধ্বণী দ্বারা সৌন্দর্য্যন্ডিত কর (দলীল: মুজামুল আওছাত তাবরানী ৪৫০৯)
হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলোচ্য হাদীসে اعياد (আইয়াদ) শব্দ ব্যবহার করেছেন। আর اعياد (আইয়াদ) শব্দ ঈদ عيد শব্দের বহুবচন। অর্থাৎ একটি ঈদকে আরবীতে বলা হয়عيد (ঈদ) দু’টি হলেعيدان (ঈদাইনে) আর দু’য়ের অধিক ঈদকে বলেاعياد (আইয়াদ) । সূতরাং হাদীস শরীফে আইয়াদ শব্দ দ্বারা প্রমানিত হলো দুই ঈদের বেশি ঈদ রয়েছে। অতএব হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ শব্দ চয়নই প্রমাণ করে ঈদ দু’য়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং অসংখ্য হতে পারে।
এই সহীহ হাদীস শরীফ থেকেই দেখা গেলো, এক হাদীস শরীফেই তিনটা ঈদের কথা বলা হয়েছে। এখন বলুন কিভাবে বলা যায় দুই ঈদের বেশি ঈদ নাই? একমাত্র চরম স্তরের মূর্খ ছাড়া কেউ বলতে পারে না দুই ঈদের বাইরে ঈদ নাই।

অতএব প্রমানিত হলো যে, শরীয়তে দুই ঈদ ব্যতীত আরো অনেক ঈদ আছে ! যা হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমানিত ! সুতরাং যারা বলে, দুই ঈদ ব্যতীত আর ঈদ নাই তাদের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং কুরআন শরীফ সুন্নাহ শরীফের খেলাফ ও কুফরীমূলক প্রমানিত হলো।

সৃষ্টির আদিকাল থেকে মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন

সৃষ্টির আদিকাল থেকে মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন
সৃষ্টির আদিকাল থেকে মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ 
তথা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের ধারাবাহিকতায় ভারত উপমহাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ১৫’শ খ্রিষ্টাব্দে কিভাবে পালিত হতো তার একটি বর্ণনা এখানে দেয়া হলো। বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত “বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস” বইয়ের ২য় খন্ডে উল্লেখ আছে। 
স্ক্রিণশট: সবাই অবশ্যই পড়বেন।

বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত “বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস” বইয়ের ২য় খন্ডে ১৯৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে,
“১) বাংলার মুসলমানগন অত্যান্ত আড়ম্বরপূর্ণভাবে ও ধুমধামের সাথে ঈদে মীলাদ পালন করতেন।
২) নবাব এ দিনকে বিশেষ উৎসবের দিনে হিসাবে পালনের ব্যবস্থা করেন।
৩) রবিউল আউয়াল মাসের প্রথম ১২ দিন পালনের ব্যবস্থা করেন।
৪) এ উপলক্ষে তিনি সম্পূর্ণ মুর্শিদাবাদ শহর ও পর্শ্ববর্তী এলাকা আলোকমালায় সজ্জিত করতেন।
৫) ১ লক্ষ সেনা শুধু আলোক সজ্জার কাজে নিয়োজিত থাকতেন।
৬) কামান গর্জনের মাধ্যমে সড়ক ও নদীপথ আলোকিত হয়ে উঠতো।
৭) মুসলমান শাষনকর্তাগন ও জনসাধারনগন এই উপমহাদেশব্যাপী ঈদে মীলাদ পালন করতো।
৮) আওলাদে রসূল ও আলেমদের উপহার দেয়া হতো।
৯) রাজ প্রসাদে রবিউল আউয়াল শরীফ মাসের ১ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত উলামায়ে কিরাম উনাদের মজলিস হতো।
১০) ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাদীছ শরীফ আলোচনা করতেন।”

উপরোক্ত ঘটনা থেকেই প্রমাণ হয়, ১) যুগে যুগে সারাবিশ্বে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ  শরীফ পালিত হয়ে আসছে। এটা নতুন কোন বিষয় নয়। 
স্বয়ং আল্লাহ পাক সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ  শরীফ পালন করেছেন। স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে নিজের সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ  শরীফ পালন করেছেন। হযরত ছাহাবাই ক্বিরাম, তাবেয়িন, তাবে তাবেইন, ইমাম, মুজতাহিদ আউলিয়ায়ে ক্বিরাম সকলেই সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ  শরীফ পালন করেছেন।
২) সেসময় এই্ উপমহাদেশে এত সমৃদ্ধশালী ছিলো তার মূল কারন ছিলো এত মর্যাদার সাথে ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সেসময় ১ টাকায় ৮ মন চাল পাওয়া যেত। মানুষের কোন অভাব ছিলো না। মানুষজন সুখী ও সমৃদ্ধ ছিলো। মানুষ যদি আবার সেই সমৃদ্ধি অর্জন করতে চায় তাহলে আবারো ঈদে মীলাদ পালন করতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ করে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করতে হবে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “বান্দা-বান্দী উনাদেরকে ‘আইয়ামুল্লাহ’ শরীফ অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ দিনগুলো স্মরণ করিয়ে দিন।” সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “বান্দা-বান্দী উনাদেরকে ‘আইয়ামুল্লাহ’ শরীফ অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ দিনগুলো স্মরণ করিয়ে দিন।” সুবহানাল্লাহ!
বাংলাদেশ পবিত্র রবীউছ ছানী শরীফ মাস উনার চাঁদ তালাশ করবে আগামী ২৯শে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহুরিল আ’যম শরীফ মহাপবিত্র রবীউল আউয়াল শরীফ ১৪৪১ হিজরী, ২৯শে সাদিস ১৩৮৭ শামসী, ২৭শে নভেম্বর ২০১৯ খৃঃ, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) দিবাগত সন্ধ্যায়। মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘আইয়ামুল্লাহ’ শরীফ অর্থাৎ সম্মানিত বিশেষ বিশেষ দিনসমূহের কথা উল্লেখ করেছেন। আর এই সম্মানিত দিনসমূহের নিয়ামতসমূহ কখনোই পাওয়া যাবে না যদি শরয়ী পদ্ধতিতে চাঁদ দেখে সঠিক তারিখে আরবী মাস শুরু করা না হয়। তাই মহাসম্মানিত শরীয়ত অনুযায়ী প্রতি মাসে চাঁদ তালাশ করা ওয়াজিবে কিফায়া আর চাঁদের হিসাব অনুযায়ী সঠিক তারিখে আরবী মাস শুরু করা ফরয। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র রবীউছ ছানী শরীফ মাস হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, আওলাদে রসূল ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের আলোচনার মাস। সুবহানাল্লাহ! তাই, সকল দেশের সরকারসহ সকলের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে- এ সম্মানিত মাস উনার চাঁদ গুরুত্ব সহকারে তালাশ করে সঠিক তারিখে মাস শুরু করা।
________________________________________

- ক্বওল শরীফ: সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম
________________________________________

যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইউস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, ক্বইয়ূমুয যামান, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যূল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আওলাদে রসূল, মাওলানা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘আইয়ামুল্লাহ’ অর্থাৎ সম্মানিত বিশেষ বিশেষ দিনসমূহের কথা উল্লেখ করেছেন। আর এই সম্মানিত দিনসমূহের নিয়ামতসমূহ কখনোই পাওয়া যাবে না যদি শরয়ী পদ্ধতিতে চাঁদ দেখে সঠিক তারিখে আরবী মাস শুরু করা না হয়। তাই সম্মানিত শরীয়ত অনুযায়ী প্রতি মাসে চাঁদ তালাশ করা ওয়াজিবে কিফায়া আর চাঁদের হিসাব অনুযায়ী সঠিক তারিখে আরবী মাস শুরু করা ফরয। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র রবীউছ ছানী শরীফ মাস উনার চাঁদ তালাশ করার গুরুত্ব আলোচনা কালে তিনি উপরোক্ত ক্বওল শরীফ পেশ করেন।

মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, পবিত্র রবীউছ ছানী শরীফ মাস হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, আওলাদে রসূল ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের আলোচনার মাস। কেননা এ মুবারক মাস উনার ৩ তারিখ পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন বিনতু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!

☑ ৫ তারিখ পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন সাইয়্যিদুনা ইমাম ইবনে যুন নূরাইন আলাইহস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
☑১১ তারিখ পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন ষষ্ঠ হিজরী শতাব্দীর মহান মুজাদ্দিদ, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। সুবহানাল্লাহ!
☑১২ তারিখ পবিত্র রবীউছ ছানী শরীফ উনার ১২ তারিখ পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ অর্থাৎ ১২ই শরীফ। এ দিন কোটি কোটি কণ্ঠে পবিত্র মীলাদ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়।
☑১৮ তারিখ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিসবতে আযীম শরীফ সম্পন্ন হওয়ার দিন। সুবহানাল্লাহ! 
☑১৯ তারিখ উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবিয়া আলাইহাস সালাম উনার এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত নিবরাসাতুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস। সুবহানাল্লাহ!

 মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, বাংলাদেশ পবিত্র রবীউছ ছানী শরীফ মাস উনার চাঁদ তালাশ করবে আগামী ২৯শে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহুরিল আয’ম শরীফ মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ ১৪৪১ হিজরী, ২৯শে সাদিস ১৩৮৭ শামসী, ২৭শে নভেম্বর ২০১৯ খৃঃ, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) দিবাগত সন্ধ্যায়। সেদিন চাঁদ দিগন্তরেখার ০৮ ডিগ্রী উপরে অবস্থান করবে এবং চাঁদের বয়স হবে ১৯ ঘণ্টার বেশী। সেদিন ঢাকায় সূর্যাস্ত ৫ টা ১১ মিনিটে এবং চন্দ্রাস্ত ৫ টা ৫৬ মিনিটে অর্থাৎ ৪৫ মিনিট চাঁদ আকাশে অবস্থান করে অস্ত যাবে। সেদিন চাঁদ  অবস্থান করবে ২৪২ ডিগ্রী আযিমাতে এবং সূর্যের অবস্থান থাকবে ২৪৭ ডিগ্রী  আযিমাতে। সূর্যাস্তের সময় চাঁদ ১০ ডিগ্রী কোণ করে সূর্য থেকে সরে থাকবে এবং চাঁদের ০.৭৮% আলোকিত থাকবে। যদি আকাশ যথেষ্ট পরিমাণ পরিষ্কার থাকে তবে বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রবীউছ ছানী শরীফ মাসের চাঁদ দেখা যেতেও পারে। তাই সকলকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে চাঁদ তালাশ করতে হবে।

ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার জন্য হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ওয়াদা মুবারক করেছেন

ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার জন্য হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ওয়াদা মুবারক করেছেন

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার জন্য হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পক্ষ থেকে ওয়াদা মুবারক নিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاِذْ اَخَذَ اللهُ مِيْثَاقَ النَّبِيّـِيْنَ لَمَا اٰتَيْتُكُم مّـِنْ كِتَابٍ وَّحِكْمَةٍ ثُـمَّ جَاءَكُمْ رَسُوْلٌ مُّصَدّقٌ لّـِمَا مَعَكُمْ لَـتُؤْمِنُنَّ بِهٖ وَلَتَنْصُرُنَّهٗ ۚ قَالَ اَاَقْرَرْتُـمْ وَاَخَذْتُـمْ عَلٰى ذٰلِكُمْ اِصْرِيْ ۖقَالُوْا اَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوْا وَاَنَا مَعَكُمْ مّـِنَ الشَّاهِدِيْنَ ◌
অর্থ : “(হে আমার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা) যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আলমে আরওয়াহতে সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েছিলেন যে, আপনাদেরকে আমি কিতাব ও হিকমত দান করবো। অতঃপর আপনাদেরকে সত্য প্রতিপাদনের জন্য আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করবো। আপনারা উনাকে নবী ও রসূল হিসেবে মেনে নিবেন এবং সর্ব বিষয়ে উনার খিদমত মুবারক করবেন। আপনারা কি এই ওয়াদার কথা মেনে নিলেন? উত্তরে সকলে বললেন, হ্যাঁ আমরা এই ওয়াদা স্বীকার করলাম। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনারা সাক্ষী থাকুন, আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী হয়ে গেলাম।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮১)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে প্রদত্ত ওয়াদা মুবারক অনুযায়ী প্রত্যেক যামানায় প্রত্যেক হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যমীনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমনের সুসংবাদ মুবারক প্রদান করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ক্বওল শরীফ উল্লেখ করে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمُبَشّـرً‌ا ۢبِرَ‌سُوْلٍ يَّأْتِـيْ مِنْ ۢبَعْدِي اسْـمُهٗ اَحْـمَدُ.
অর্থ : “আমি এমন একজন সম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমনের সুসংবাদদানকারী, যিনি আমার পরে পৃথিবীতে তাশরীফ মুবারক আনবেন, উনার সুমহান নাম মুবারক হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (পবিত্র সূরা ছফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমনের ভবিষ্যতদ্বাণী ছহিবে তাওরাত শরীফ, হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ইয়াহূদী সম্প্রদায়কে জানিয়েছেন। আর পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মাধ্যমে পরবর্তী ইয়াহূদী সম্প্রদায় এই ভবিষ্যতদ্বাণী জেনে বছরের পর বছর সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান করতে থাকে শুধুমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক হাছিল করার জন্য।
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কৃত ওয়াদা মুবারক পালনার্থে প্রত্যেক হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যমীনে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন এবং উম্মতদেরকেও পালন করতে বলেছেন।

পবিত্র যাকাত সম্পর্কিত কিছু মাসয়ালা-মাসায়িল

পবিত্র যাকাত সম্পর্কিত কিছু মাসয়ালা-মাসায়িল

স্ত্রীর সম্পদ বা অলঙ্কারের যাকাত কে দিবে ?
স্বামী-স্ত্রীর সম্পদ একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হলেও মালিকানা যদি ভিন্ন হয় তাহলে অবশ্যই প্রত্যেককে তা পৃথকভাবে পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে। স্ত্রীর যদি অলঙ্কারও হয়। তা থেকেই তাকে পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاَقِمْنَ الصَّلٰوةَ وَاٰتِينَ الزَّكٰوةَ وَاَطِعْنَ اللهَ وَرَ‌سُوْلَه ۚ
অর্থ: “আর তোমরা (মহিলারা) পবিত্র নামায কায়িম কর ও পবিত্র যাকাত প্রদান কর এবং মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য কর।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
তবে স্ত্রীর অলঙ্কার ব্যতীত অন্য কোন সম্পদ না থাকলে সেক্ষেত্রে স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে প্রদানকৃত হাত খরচের টাকা থেকে বাঁচিয়ে বা কিছু অলঙ্কার বিক্রি করে হলেও পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে। স্ত্রীর অলঙ্কারের যাকাত স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামী আদায় করলেও পবিত্র যাকাত আদায় হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, 
عَنْ حَضَرَتْ مُعَاذٌ رَضِيَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَصَدَّقْنَ وَلَوْ مِنْ حُلِيّكُنّ.
অর্থ: “হযরত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে নারী সম্প্রদায়! তোমরা ছদকাহ তথা পবিত্র যাকাত প্রদান করো যদিও তোমাদের অলঙ্কারও হয়।” (বুখারী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে,
عَنْ حَضَرَتْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدّهِ أَنَّ امْرَأَةً أَتَتْ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَهَا ابْنَةٌ لَـهَا وَفِى يَدِ ابْنَتِهَا مَسَكَتَانِ غَلِيظَتَانِ مِنْ ذَهَبٍ فَقَالَ لَـهَا أَتُعْطِينَ زَكوةَ هَذَا؟ قَالَتْ لَا قَالَ أَيَسُرُّكِ أَنْ يُسَوّرَكِ اللهُ بِـهِمَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ سِوَارَيْنِ مِنْ نَار. قَالَ فَخَلَعَتْهُمَا فَأَلْقَتْهُمَا إِلَى النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَتْ هُـمَا للهِ عَزَّ وَجَلَّ وَلِرَسُوْلِه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “হযরত আমর ইবনে শু’আইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার সম্মানিত পিতা থেকে তিনি উনার সম্মানিত দাদা থেকে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এক মহিলা ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি আগমন করেন, উনার সাথে উনার একজন কন্যা ছিলেন। উনার কন্যার হাত মুবারক-এ সোনার দুটি মোটা চুরি ছিল। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আপনি কি এর পবিত্র যাকাত প্রদান করেন? তিনি বলেন, না। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আপনি কি পছন্দ করেন যে, আপনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি কিয়ামতের দিন এই দুটির পরিবর্তে আগুনের দুটি চুড়ি পরাবেন? তখন তিনি চুড়ি দুটি খুলে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রদান করেন এবং বলেন, এগুলো মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্য।” (আবূ দাঊদ শরীফ)
পবিত্র যাকাত উনার হিসাব কখন থেকে করতে হবে ?
পবিত্র যাকাত বছরান্তে ফরয হয় এবং বছরান্তে পবিত্র যাকাত উনার হিসাব করা ওয়াজিব। চন্দ্র বছরের তথা আরবী বছরের যে কোন একটি মাস ও তারিখকে পবিত্র যাকাত হিসাবের জন্য নির্ধারণ করতে হবে। বাংলা বা ইংরেজী বছর হিসাব করলে তা শুদ্ধ হবে না। পবিত্র যাকাতযোগ্য সকল সম্পদ ও পণ্যের বেলায় এই শর্ত আরোপিত কিন্তু কৃষিজাত ফসল, মধু, খনিজ সম্পদ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বছরান্তের শর্ত নেই। প্রতিটি ফসল তোলার সাথে সাথেই পবিত্র যাকাত (উশর) আদায় করতে হবে কম বেশী যা-ই হোক। তবে ছদাকাতুল ফিতর-এর জন্য বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত নয়। পবিত্র ঈদের দিন ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই ছাহিবে নিছাব হলে ছদাকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। আর পবিত্র কুরবানী উনার হুকুমও অনুরূপ অর্থাৎ ১০, ১১, ১২ই যিলহজ্জ শরীফ উনার মধ্যে যে কোন দিন মালিকে নিছাব হলে পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব। তবে হিসাবের সুবিধার্থে পহেলা রমাদ্বান শরীফ; এ পবিত্র যাকাত হিসাব করা যেতে পারে। তবে এটাই উত্তম ও পবিত্র সুন্নত মুবারক।
পবিত্র যাকাত পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে দেয়াই উত্তম:
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ রহমত মুবারক উনার কারণে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে প্রতিটি নেক কাজের বিনিময়ে সত্তর গুণ বেশি নেকী দান করেন সুবহানাল্লাহ।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যেই পবিত্র যাকাত প্রদান করতেন। যেমন-
عن حضرت السائب بن يزيد رضى الله تعالى عنه ان حضرت عثمان بن عفان عليه السلام كان يقول هذا شهر زكاتكم (شهر رمضان) فمن كان عليه دين فليؤد دينه حتى تـحصل اموالكم فتؤدون منه الزكاة.
অর্থ: “হযরত সাইব ইবনে ইয়াযিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। হযরত উছমান ইবনে আফ্ফান আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে বলতেন, এ মাস তোমাদের পবিত্র যাকাত আদায়ের মাস। অতএব, কারো ঋণ থাকলে সে যেন তার ঋণ পরিশোধ করে, যেন তোমাদের সম্পদ সঠিকভাবে নির্ণীত হয় এবং তোমরা তা থেকে (সঠিকভাবে) পবিত্র যাকাত প্রদান করতে পার।” (মুয়াত্তা ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সহীহ সনদে বর্ণনা করেন।)

পাওনা ও আটকে পড়া সম্পদের পবিত্র যাকাত উনার বিধান:
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-
عن حضرت الـحسن البصرى رحمة الله عليه قال اذا حضر الوقت الذى يودى فيه الرجل زكاته ادى عن كل مال و عن كل دين الا ما كان ضمارا لا يرجوه.
অর্থ: “বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যখন পবিত্র যাকাত প্রদানের সময় উপস্থিত হবে, তখন পবিত্র যাকাত প্রদানকারী ব্যক্তি তার সকল সম্পদের উপর এবং সকল পাওনার উপর পবিত্র যাকাত দিবেন। তবে যে পাওনা সম্পদ আটকে রাখা হয়েছে এবং যা ফেরত পাওয়ার সে আশা করে না, সেই সম্পদের পবিত্র যাকাত দিতে হবে না। তবে যখন পাবে তখন (শুরু থেকে পাওয়া পর্যন্ত) তার পবিত্র যাকাত আদায় করবে।” (ইমাম হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ মতটি হযরত আবূ উবায়দ কাসিম ইবনে সাল্লাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সংকলন করেছেন)

বিগত বছরের কাযা বা অনাদায়ী পবিত্র যাকাত প্রসঙ্গে:
যদি কারো অতীত যাকাত অনাদায়ী বা অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তা ঋণের মধ্যে গণ্য হবে। চলতি বছরে যাকাত আদায়ের পূর্বেই অনাদায়ী কাযা যাকাত অবশ্যই আদায় করতে হবে। (ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহ)
পবিত্র যাকাত উনার টাকা দিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে নি¤œমানের শাড়ী-লুঙ্গি ক্রয় প্রসঙ্গে: বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, পবিত্র যাকাত উনার টাকা-পয়সা দিয়ে এমন নি¤œমানের শাড়ী-লুঙ্গি ক্রয় করে যা ব্যবহারের অযোগ্য। যা পবিত্র যাকাতদাতা ও তার পরিবার-পরিজন নিজেও সেটা পরিধান করবে না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا مِـمَّا تُـحِبُّونَ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র রাস্তায় তোমরা তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু খরচ না করা পর্যন্ত কস্মিনকালেও কোন নেকী হাছিল করতে পারবে না।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯২)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, “নিজের জন্যে তোমরা যা পছন্দ করবেনা অন্যের জন্যেও তা পছন্দ করবে না।” (মিশকাত শরীফ)
অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে “সবচেয়ে উত্তম ও প্রিয় বস্তু মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান না করলে তা কবুল হয় না।” (মিশকাত শরীফ)
পবিত্র যাকাত একটি শ্রেষ্ঠ মালি ইবাদত এবং পবিত্র ইসলাম উনার অন্যতম তৃতীয় রোকন। পবিত্র যাকাত উনার মাল তার হকদারকে দিয়ে দেয়াই হচ্ছে ধনীদের জন্য ফরয কাজ, তা যত্রতত্র তাদের খেয়াল-খুশি মুতাবিক খরচ করতে পারবে না। সে অধিকারও তাদের নেই। পবিত্র যাকাত ধনী-গরীবদের মাঝে পার্থক্য করার জন্য আসেনি। তাহলে যাকাত উনার কাপড় বলতে আলাদা নাম থাকবে কেন? অতএব, বুঝা যাচ্ছে পবিত্র যাকাত উনাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার জন্য ‘যাকাতের কাপড়’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই লোক প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নি¤œমানের অব্যবহার্য শাড়ী-লুঙ্গি পবিত্র যাকাত উনার টাকা দিয়ে ক্রয় করে পবিত্র যাকাত দিলে পবিত্র যাকাত উনাকে ইহানত বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার শামিল। নাউযুবিল্লাহ! এতে পবিত্র যাকাততো কবুল হবেই না বরং পবিত্র ঈমান, আমল, আক্বীদা সব বরবাদ হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ! মুসলমান উনাদেরকে বেঈমান করার জন্য ইহুদী-নাছারাদের এক সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। যা গাফিল মুসলমান উনাদের উপলব্ধিতেও নেই। এরূপ ইহানতপূর্ণ কাজ থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ ও মহিলাদের জন্য ফরয।
অবৈধ মালের পবিত্র যাকাত নেই:
হারাম কামাই দ্বারা অর্জিত মালের কোন পবিত্র যাকাত নেই। যদি কেউ পবিত্র যাকাত উনার নিয়ত করে পবিত্র যাকাত দেয় তাহলে তার কবীরা গুনাহ হবে। বৈধ মনে করলে কুফরী হবে। কাজেই অবৈধ মালের যেমন পবিত্র যাকাত নেই, তেমন তার মালিকের উপরও পবিত্র যাকাত নেই অর্থাৎ পবিত্র ইসলাম উনার পরিভাষায় সে ছাহিবে নিছাব হবে না। (ফিকাহর কিতাবসমূহ)
ঋণগ্রস্থদের ঋণের বদলা হিসেবে পবিত্র যাকাত উনার অর্থ কেটে নেয়ার বিধান:
কোন ঋণদাতা-মালদার ব্যক্তি যদি ঋণগ্রস্তদের ঋণের বদলা হিসেবে পবিত্র যাকাত উনার অর্থ কেটে নেয় তাহলে তার পবিত্র যাকাত আদায় হবে না। কেননা ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পবিত্র যাকাতদাতা পবিত্র যাকাত প্রদানের মাধ্যমে বাড়তি কোন ফায়দা লুটাতে পারবে না। এভাবে পবিত্র যাকাত উনার অর্থ কেটে নেয়া প্রকাশ্য ফায়দা হাছিলের শামিল। আর পবিত্র যাকাত উনার মাল বা অর্থ অবশ্যই পবিত্র যাকাত পাওয়ার হকদার ব্যক্তিদেরকে হস্তান্তর করতে হবে তথা তাদেরকে মালিক করে দিতে হবে। এরপর যদি তারা ঋণ প্রদানকারীকে হস্তান্তর করে তবে তাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে যে, যাকাত গ্রহণকারী তথা ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদায় আক্বীদাভুক্ত হতে হবে। অন্যথায় পবিত্র যাকাত এভাবে আদায়ে-আদায় হবে না। (ফিকাহ ও ফতোয়ার কিতাবসমূহ)


পবিত্র যাকাত, ইনকাম ট্যাক্স, কর, খাজনা ও জিযিয়া করের মধ্যে পার্থক্য

পবিত্র যাকাত: ‘পবিত্র যাকাত’ হচ্ছেন পবিত্র ইসলাম উনার পঞ্চ স্তম্ভের একটি স্তম্ভ। ইতিপূর্বেই পবিত্র যাকাত উনার পরিচয়, কার উপর ফরয এবং উহার হুকুম-আহকাম সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে। এরপরেও এখানে সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো- পবিত্র শরীয়ত উনার পরিভাষায় الـحوائج الاصلية তথা মৌলিক চাহিদা মিটানোর পর অতিরিক্ত যদি কোন মাল বা অর্থ-সম্পদ নিছাব পরিমাণ তথা সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য অথবা এ সমপরিমাণ অর্থ-সম্পদ কারো অধীনে পূর্ণ এক বছর থাকে তাহলে তা থেকে চল্লিশ ভাগের একভাগ অর্থাৎ শতকরা ২.৫% মাল বা অর্থ-সম্পদ পবিত্র শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত খাতে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বিনা স্বার্থে ও শর্তে প্রদান করাকে পবিত্র যাকাত বলে। (কুদুরী, আল হিদায়া)
পবিত্র যাকাত মুসলমান উনাদের মালের ট্যাক্স বা খাজনা ও কর কোনটাই নয়; ইহা মুসলমান উনাদের এটা একটি পবিত্র মালি ইবাদত। ইহা শুধু মুসলমান উনাদের জন্য প্রযোজ্য। এ কারণেই ইহা খিলাফত উনার অধীনে অমুসলমান নাগরিকদের উপর পবিত্র যাকাত ফরয করা হয়নি।
ইনকামট্যাক্স বা আয় কর: গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক বা কুফরী মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠ সরকার তাদের সুবিধার জন্য তারা জোরপূর্বক জনগণের আয়ের উপর যে সুনির্দিষ্ট অর্থ ধার্য করে মূলতঃ সেটাই ইনকামটেক্স। এক কথায়- আয়ের উপর যে ট্যাক্স বা কর ধার্য করা হয় তাকে ইনকাম ট্যাক্স বা আয় কর বলে। আর সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার ফতওয়া মুতাবিক ইনকামট্যাক্স জায়েয নেই। যতটুকু সম্ভব এ থেকে বেঁচে থাকা উচিত। এর সাথে পবিত্র যাকাত উনার কোন প্রকার সম্পর্ক ও সংশ্লিষ্টতা নেই অর্থাৎ ইনকামট্যাক্স দিলেও যাদের উপর পবিত্র যাকাত ফরয তাকে অবশ্যই পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে।
কর ও খাজনা: সরকার জনগণকে যে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে এবং জনগণও সরকার কর্তৃক যে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে তার পরিবর্তে সরকার কর্তৃক ‘ধার্যকৃত অর্থ’ রাজস্ব খাতে প্রদান করাকেই ‘কর’ বলে। যেমন- বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, গ্যাস বিল, পৌরকরসহ সর্বপ্রকার লাইসেন্স ইত্যাদি। আর ভূমি সংরক্ষণ, জরিপ ইত্যাদি সংক্রান্ত বিষয়ে যে সুযোগ-সুবিধা জনগণ লাভ করে থাকে তার বিনিময় সরকার কর্তৃক ‘ধার্যকৃত অর্থ’ রাজস্ব খাতে প্রদান করাকেই ‘খাজনা’ বলে। এই সমস্ত খাজনাগুলি আদায় করা জনগণের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। এই সমস্ত খাজনার সাথে পবিত্র যাকাত উনার কোন প্রকার সম্পর্ক ও সংশ্লিষ্টতা নেই। সেইজন্য বৈধ কর ও খাজনা দেয়ার পর যাদের উপর পবিত্র যাকাত ফরয হবে তাদেরকে অবশ্যই পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে।
জিযিয়া কর: ‘জিযিয়া কর’ মুসলমানদের জন্য নয়; বরং জিযিয়া কর বিধর্মীদের জন্য প্রযোজ্য। মুসলমান উনাদের খিলাফতের অধীনে যে সমস্ত অমুসলিম বসবাস করে তাদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য সম্মানিত খলীফা কর্তৃক ‘ধার্যকৃত অর্থ’ ‘বায়তুল মালে’ প্রদান করাকেই ‘জিযিয়া কর’ বলে। তবে জিযিয়া করের সাথে পবিত্র যাকাত উনার কোন সম্পর্ক ও সংশ্লিষ্টতা নেই। কেননা- কাফেরদের উপর পবিত্র যাকাত দেয়া এবং নেয়া কোনটাই জায়িয নয়; বরং তারা জিযিয়া কর প্রদান করবে।

পবিত্র যাকাত সংশ্লিষ্ট মাসয়ালা-মাসায়িল সমূহের বিবরণ

পবিত্র যাকাত সংশ্লিষ্ট মাসয়ালা-মাসায়িল সমূহের বিবরণ
পবিত্র যাকাত উনার নিছাব কাকে বলে:
যে পরিমাণ অর্থ-সম্পদ বা নগদ অর্থ কোন ব্যক্তির সাংসারিক সকল মৌলিক প্রয়োজন বা চাহিদা মিটানোর পর অতিরিক্ত সম্পদ যা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য অথবা ঐ সমপরিমাণ অর্থ-সম্পদ নির্দিষ্ট তারিখে পূর্ণ এক বছর ঐ ব্যক্তির মালিকানায় থাকলে তা থেকে পবিত্র যাকাত প্রদান করা ফরয হয়, নূন্যতমভাবে ঐ পরিমাণ অর্থ-সম্পদকে পবিত্র শরীয়ত উনার পরিভাষায় ‘নিছাব’ বলে। আর যিনি নিছাব পরিমাণ মাল-সম্পদের মালিক হন উনাকে ছাহিবে নিছাব বলে। মাল-সম্পদের প্রকৃতি বা ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন মালের নিছাব বিভিন্ন রকম। (ফিকাহর কিতাবসমূহ)
الاصلية الحوائج (আল হাওয়ায়িজুল আছলিয়্যাহ) বা মৌলিক প্রয়োজনীয় বস্তু বা সম্পদ:
কোন মু’মিন-মুসলমান উনার কার্পণ্য ও অপচয় ব্যতিরেকে মধ্যমপন্থায় নিজের ও পরিবারের চাহিদা মিটানোর বা পূরণের জন্য যা যা আবশ্যক মূলত সেটিই হচ্ছে মৌলিক প্রয়োজনীয় বস্তু। যেমন- খাদ্যদ্রব্য, পরিধেয় বস্ত্র, বসবাসের স্থান অর্থাৎ থাকার ঘর, ঘরের আসবাবপত্র, চিকিৎসার অর্থকড়ি তথা ঔষধপত্র, গৃহস্থলি সামগ্রী, পেশাসংক্রান্ত উপকরণ, কারখানাার যন্ত্রপাতি ও স্থান, যাতায়াত তথা যোগাযোগের বাহন খরচ এগুলোর উপর যাকাত নেই। (হিদায়া, কুদূরী)
নিছাবের মূল বিষয়বস্তু ও পরিমাণ প্রসঙ্গে:
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে- “আর তাদের তথা ধনীদের মালে রয়েছে নির্ধারিত হক অভাবী ও বঞ্চিতের।” (পবিত্র সূরা মাআরিজ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৪)
উক্ত আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে বুঝা গেল যে, পবিত্র যাকাত উনার সুনির্দিষ্ট হক্ব মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক নির্ধারিত। তা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে, যেমন-
“হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যদি তোমার ২০০ দিরহাম তথা সাড়ে ৫২ তোলা (বা প্রায় ৬০০ গ্রাম) রৌপ্যমুদ্রা থাকে এবং তোমার মালিকানায় এক বছর পূর্ণ হয়, তাহলে তাতে ৫ দিরহাম তথা ২.৫% বা ১৫ গ্রাম রূপা পবিত্র যাকাত ফরয হবে। স্বর্ণের ক্ষেত্রে তোমাকে কোন পবিত্র যাকাত দিতে হবে না, যতক্ষণ না তুমি ২০ দীনার বা মিছকাল তথা সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণের মালিক হও। যখন তোমার নিকট ২০ দীনার বা মিছকাল তথা সাড়ে ৭ তোলা বা প্রায় ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ হবে এবং তাতে এক বছর পূর্ণ হবে, তখন তা থেকে অর্ধ দীনার বা অর্ধ মিছকাল তথা চল্লিশ ভাগের এক ভাগ পবিত্র যাকাত প্রদান করতে হবে। এর বেশি যা হবে, তা থেকে এ হিসেবেই দিতে হবে। (আবূ দাউদ শরীফ)
শতকরা ২.৫% হারে পবিত্র যাকাত উনার দলীল:
উপরোল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে চল্লিশে এক টাকা, একশততে আড়াই টাকা, দুইশততে পাঁচ টাকা, হাজারে পঁচিশ টাকা পবিত্র যাকাত ধার্য করা হয়েছে। এভাবে যত উর্ধ্বে যাক না কেন সে অনুযায়ী পবিত্র যাকাত দিতে হবে। (আবূ দাউদ শরীফ)
পবিত্র যাকাত উনার নিয়ত থাকা আবশ্যক: 
পবিত্র যাকাত পরিশোধ বা আদায়ে অবশ্যই নিয়ত করতে হবে। এটা ফরয ইবাদত, এর নিয়ত করা ওয়াজিব। মুখে উচ্চারণ করা বা পবিত্র যাকাত গ্রহণকারীকে শুনিয়ে বলা প্রয়োজন নেই। তবে মনে মনে নিয়ত অবশ্যই করতে হবে যে ‘আমি পবিত্র যাকাত আদায় করছি’ অন্যথায় পবিত্র যাকাত আদায় হবে না। তা সাধারণ দান হিসেবে গণ্য হবে। তবে নিয়ত ছাড়াই সমস্ত সম্পদ ব্যয় করলে তার উপর আর কোন পবিত্র যাকাত উনার হুকুম বর্তাবে না। (কুদূরী, আল হিদায়া)
বর্তমানে সোনা ও রূপায় কোনটি নিছাব হিসেবে উত্তম:
পবিত্র যাকাত যে সময়ে ফরয হয় সে সময়ে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমান ছিল বিধায় সোনা ও রূপা উভয়টিই নিছাবের মূল সূত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাই এ সূত্রানুসারে উভয়ের যে কোন একটির মূল্য ধরলেই চলবে।
তবে বর্তমানে যেহেতু রূপার মূল্য সোনার মূল্য অপেক্ষা অনেক কম তাই সতর্কতা ও পরহেযগারী হলো অল্পটি নেয়া। অর্থাৎ সোনা ও রূপা উভয়টার মধ্যে যেটাকে নিছাব হিসেবে গ্রহণ করলে গরীবের উপকার হয় সেটাকেই নিছাব হিসেবে গ্রহণ করা উত্তম ও তাক্বওয়ার অন্তর্ভূক্ত। এতে একদিকে যেমন পবিত্র যাকাত দাতার (ইবাদাতকারীর) সংখ্যা বাড়বে অন্যদিকে গরীবের বেশি উপকার হবে; যা পবিত্র যাকাত, ছদাকাত ও ইনফাকের মৌলিক চাহিদা। এটাই ইমাম ও মুজতাহিদীনগণ উনাদের গ্রহণযোগ্য মত। (কুদূরী, হিদায়া)
উল্লেখ্য: ১ ভরি = ১ তোলা বা ১১.৩৩ গ্রাম। সুতরাং ৭.৫ ভরি = ৮৫ গ্রাম (প্রায়), ৫২.৫ ভরি = ৫৯৫ গ্রাম (প্রায়)।
পবিত্র যাকাত উনার প্রকারসহ নিছাবের দলীল:
স্বর্ণের পবিত্র যাকাত: এ প্রসঙ্গে ফিকাহর কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
“বিশ মিছকাল অর্থাৎ সাড়ে সাত তোলা কম পরিমাণ স্বর্ণের পবিত্র যাকাত ওয়াজিব হয় না। অতএব, কারো কাছে যদি বিশ মিছকাল অর্থাৎ সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ এক বছর অধিনে থাকে তাহলে অর্ধ মিছকাল অর্থাৎ চল্লিশ ভাগের এক ভাগ স্বর্ণ পবিত্র যাকাত দিতে হবে।” (কুদূরী, আল হিদায়া)
রৌপ্যের পবিত্র যাকাত: এ প্রসঙ্গে ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
“রৌপ্য (এর মূল্য) দুইশত দিরহামের কম অর্থাৎ সাড়ে বায়ান্ন তোলার কম হলে তার পবিত্র যাকাত দিতে হবে না। দুইশত দিরহাম অর্থাৎ সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য এক বছর মালিকের অধিনে থাকলে তখন এতে পাঁচ দিরহাম তথা চল্লিশ ভাগের এক ভাগ হিসেবে তথা শতকরা আড়াই ভাগ হিসেবে পবিত্র যাকাত দিতে হবে।” (কুদূরী, আল হিদায়া)
ব্যবসার পণ্য বা আসবাবপত্রের পবিত্র যাকাত (সোনা-রূপার নিছাবে রূপার মূল্য ধরে): 
“ব্যবসায়ের মাল যে প্রকারেরই হোক না কেন, তার দাম সোন-রূপার নিছাব পরিমাণ হলেই পবিত্র যাকাত ওয়াজিব হয় সোনা অথবা রূপার মধ্য থেকে যার দাম ধরলে গরীব-মিসকীনের বেশি উপকার হয় তার দাম বা মূল্যই ধরে পবিত্র যাকাত দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সোনার চেয়ে রূপার মূল্যকেই প্রাধান্য দিয়ে পবিত্র যাকাত আদায় করা উত্তম। কেননা সোনার দাম ধরে দিলে অনেকের পবিত্র যাকাত আসবে না।” (কুদূরী, আল হিদায়া)
গৃহপালিত বিচরণ ও বর্ধনশীল পশুর পবিত্র যাকাত: (এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পরে আসতেছে)
ফসলের পবিত্র যাকাত: (যাকে পরিভাষায় উশর বলা হয়) (এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পরে আসতেছে)
পবিত্র রোযা উনার পবিত্র যাকাত: (যাকে যাকাতুল ফিতর বা ছদকাতুল ফিতর বলে উল্লেখ করা হয়)। ততসঙ্গে পবিত্র কুরবানী, তবে ছদকাতুল ফিতর এবং পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হলেও হুকুমের কিছুটা তারতম্য রয়েছে। সেটা হচ্ছে এই যে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার দিন ছুবহে ছাদিকের পূর্বে ছাহিবে নিছাব তথা নিছাব পরিমাণ মালের মালিক হলে তার উপর ছদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। এ ক্ষেত্রে নিছাব বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত নয়। একইভাবে ১০, ১১, ১২ই যিলহজ্জ শরীফ কোন ব্যক্তি ছাহিবে নিছাব হলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। এ ক্ষেত্রেও নিছাব বছর পূর্ণ হওয়ার শর্ত নয়। (হিদায়া, কুদূরী)
যে যে সম্পদ বা মালের যাকাত ফরয:
পবিত্র যাকাত মুসলমান উনাদের প্রায় যাবতীয় মালেই ফরয, যদি তার নিছাব ও শর্ত পূরণ হয়। যেমন- সোনা-রূপা, নগদ অর্থ, যমীনে উৎপন্ন ফসল ও ফলফলাদি, যমীনে প্রাপ্ত গুপ্ত ধন, খণিতে প্রাপ্ত খণিজ দ্রব্য, ব্যবসায়ের পণ্যদ্রব্য, গৃহপালিত পশু, যেমন- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া এসকল প্রকার মালেই পবিত্র যাকাত ফরয। (আল হিদায়া)
পবিত্র যাকাত যাদের উপর ফরয হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে:
(১) পবিত্র যাকাতদাতাকে মুসলমান হতে হবে। (২) বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক। (৩) আক্বেল বা বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন। (৪) আযাদ বা স্বাধীন। (৫) নিছাব অর্থাৎ সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ তোলা রূপা অথবা তার সমপরিমাণ মূল্য বা টাকা অর্থাৎ নিছাব পূর্ণ হওয়া। (৬) যদি এককভাবে কোন পণ্য বা দ্রব্যের মূল্য নিছাব পরিমাণ না হয় কিন্তু ব্যক্তির সবগুলো সম্পদের মূল্য মিলিয়ে একত্রে সাড়ে ৫২ তোলা রৌপ্য মূল্যের সমান হয় তবে ওই ব্যক্তির নিছাব পূর্ণ হবে। অর্থাৎ নিছাবের একক মালিক হওয়া। (৭) সাংসারিক প্রয়োজনে গৃহীত ঋণ কর্তনের পর নিছাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে পবিত্র যাকাত দিতে হবে। (৮) হাওয়ায়েযে আছলিয়ার অতিরিক্ত। (৯) বর্ধনশীল মাল যেমন- স্বর্ণ, চান্দি, নগদ টাকা, মালে তিজারত বা ব্যবসায়িক মাল এবং সায়েমা বা চারণ ভূমিতে বিচরণকারী পশু। (১০) বর্ষ পূর্ণ হতে হবে অর্থাৎ নিছাব পরিমাণ সম্পদ তার অধীনে পূর্ণ ১ বছর থাকতে হবে। 
* স্বামী-স্ত্রীর সস্পদ একই পরিবারের গণ্য হলেও মালিকানা ভিন্নহেতু পৃথকভাবে নিজ নিজ সম্পদের পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে। 
* নির্ধারিত পবিত্র যাকাত পরিশোধের পূর্বেই সম্পদের মালিক মারা গেলে পবিত্র যাকাত পরিশোধের পর ওয়ারিশগণ মালিক বলে গণ্য হবে।
যাদের উপর পবিত্র যাকাত ফরয নয়:
ইয়াতীম ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক-বয়স্কা ছেলে হউক অথবা মেয়ে হউক তারা নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেও তাদের উপর পবিত্র যাকাত ফরয হবেনা। নি¤েœ এ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
নিছাব পরিমাণ মাল থাকার পর যদি ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে ঋণের পরিমাণ অধিক হওয়ার কারণে নিছাব না থাকে, তখন তার উপর পবিত্র যাকাত ফরয থাকে না বা হয় না।
হারাম পন্থায় উপার্জিত সম্পদ নিছাব পরিমাণ হলেও উক্ত সম্পদের উপর পবিত্র যাকাত ফরয হবে না। কারণ সম্মানিত ও মহাপবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ফতওয়া মুতাবিক সে নিছাবের মালিক নয়। উক্ত সম্পদ থেকে পবিত্র যাকাত ছাড়া ছদকায়ে ফিতর, আদায় করলে এবং উক্ত সম্পদ থেকে পবিত্র কুরবানী করলে তা কবুল হবে না। উপরন্তু কবীরাহ গুনাহ হবে। যেমন: চুরি-ডাকাতী, ছিনতাইয়ের টাকা বা সম্পদ, সুদ-ঘুষ ইত্যাদি পন্থায় অর্জিত সম্পদের ও তার মালিকের উপর কোন যাকাত নেই।
নিত্য প্রয়োজনীয় অর্থ বা স্থাবর সম্পদের উপর কোন পবিত্র যাকাত নেই। সেটা নিছাব পরিমাণ হলেও তার মালিকের উপর যাকাত নেই।
ইয়াতীম ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের পবিত্র যাকাত প্রদানের বিধান:
হানাফী মাযহাব উনার ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে, ইয়াতীম ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মাল নিছাব পরিমাণ হলেও তাদের উপর পবিত্র যাকাত উনার হুকুম বর্তাবে না। তবে উক্ত ইয়াতীম ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক-বয়স্কা ছেলে-মেয়ে যদি বালিগ-বালিগা হয় অতঃপর নেছাব পরিমাণ মালের মালিক হয় এবং তা পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হয়, এ অবস্থায় যদি ইন্তিকাল করে তখন ওয়ারিছগণ সর্ব প্রথম তাদের উক্ত পরিত্যাক্ত সম্পদ থেকে পবিত্র যাকাত আদায় করবে। অতঃপর ওয়ারিছগণ তাদের পরিত্যাক্ত সম্পদ বণ্টন করে নিবে। (হিদায়া)
মালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শর্তাবলী:
মাল নিছাব (শরীয়ত নির্ধারিত) পরিমাণ হওয়া।
উক্ত মাল নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য ও স্থাবর মালের অন্তর্ভুক্ত না হওয়া।
উক্ত মালের উপর পূর্ণ এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া।
মালের উপর ব্যক্তির পূর্ণ মালিকানা থাকা।
মুদ্রা, টাকা বা ব্যবসায়ের পণ্য হওয়া।
পশুর যাকাতের ক্ষেত্রে পশু সায়িমা তথা বিচরণশীল ও বর্ধনশীল হওয়া।
ফসলের পবিত্র যাকাত তথা ওশরের ক্ষেত্রে, যমীনে উৎপাদিত ফসল কম-বেশি যাই হোক; (বিনা শ্রম ও সেচে) তার দশ ভাগের এক ভাগ অথবা (শ্রম ও সেচে) বিশ ভাগের এক ভাগ পবিত্র যাকাত দেয়া, আমাদের সম্মানিত হানাফী মাযহাবে ফসলের কোন নিছাব নেই।
যে সব মাল অর্থ-সম্পদের উপর পবিত্র যাকাত ওয়াজিব নয়:
বসবাসের ঘর।
পরিধেয় বস্ত্র।
ঘরের আসবাব পত্র।
আরোহণের পশু বা যানবাহন।
কাজের জন্য ভাতা প্রদত্ত দাস-দাসি তথা খাদিম-খাদিমা।
ব্যবহারের হাতিয়ার বা যুদ্ধাস্ত্র।
হারানো বা লোকসান যাওয়া মাল।
সমুদ্রে ডুবে যাওয়া মাল।
ছিনতাই করে নিয়ে গেছে এমন মাল।
মাটিতে পুতে রাখা মাল-সম্পদ যার স্থান স্মরণে নেই।
ঋণ প্রদত্ত মাল যা গ্রহীতা বারবার অস্বীকার করেছে। 
লুণ্ঠিত মাল।
ব্যবসার অযোগ্য মাল।
স্থানান্তরের অযোগ্য ও স্থাবর ধন-সম্পদ।
এক বছর পূর্ণ হয়নি এমন মাল।
ইয়াতীম, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও দাস-দাসীর মাল।
পবিত্র যাকাত ফরয হওয়ার জন্য নিছাব বছর পূর্ণ হওয়া আবশ্যক:
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
“হযরত ইবনে উমর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি কোন মাল লাভ করেছে, তা এক বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তার ওই মালের পবিত্র যাকাত নেই।” (তিরমিযী শরীফ)
আরো বর্ণিত আছে- “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, কোন সম্পদের বছর পরিপূর্ণ হওয়ার পূর্বে পবিত্র যাকাত ফরয হবে না।” (আবূ দাউদ শরীফ ও বায়হাকী শরীফ)
বর্ষপূর্ণ হওয়ার পূর্বে পবিত্র যাকাত প্রদানের হুকুম:
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
“হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, একবার হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আপন যাকাত বর্ষ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই দেয়া সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে পবিত্র যাকাত প্রদানে অনুমতি দিলেন।” (আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ)
বছরের শুরুতে ও শেষে নিছাব ঠিক থাকলে এবং মাঝখানে কমলেও যাকাত দিতে হবে:
এ প্রসঙ্গে ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবে ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন, বছরের শুরু এবং শেষে তথা নির্ধারিত তারিখে নিছাব ঠিক থাকলে তাকে অবশ্যই পবিত্র যাকাত দিতে হবে, যদিও মাঝখানে কখনো নিছাব থেকে কিছু অংশ কমে যায়। এরপরও তাকে পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে। (কুদূরী, আল হিদায়া)
 مصرف الزكوةঅর্থাৎ পবিত্র যাকাত পাওয়ার যারা হক্বদার:
নিম্নলিখিত আট খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা ফরয হিসেবে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
“পবিত্র যাকাত কেবল ফক্বীর, মিসকীন ও পবিত্র যাকাত আদায়কারী কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা প্রয়োজন তাদের জন্য অর্থাৎ নও মুসলিমের জন্য, গোলাম বা বাঁদীদের মুক্তির জন্য, ঋণে জর্জরিত ব্যক্তিদের ঋণমুক্তির জন্য, মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদকারী এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্ধারিত বিধান এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬০)
যাকাত পাওয়ার যারা হক্বদার তাদের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা:
১. ফক্বীর: ফক্বীর ওই ব্যক্তি যার নিকট খুবই সামান্য সহায় সম্বল আছে।
২. মিসকীন: মিসকীন ওই ব্যক্তি যার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি এবং আত্মসম্মানের খাতিরে কারো কাছে হাত পাততে পারে না। আবার কেউ কেউ ফক্বীরকে মিসকীন এবং মিসকীনকে ফক্বীর অর্থে উল্লেখ করেছেন।
৩. আমিল বা পবিত্র যাকাত আদায় ও বিতরণের কর্মচারী। 
৪. মন জয় করার জন্য নও মুসলিম: অন্য ধর্ম ছাড়ার কারণে পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে বঞ্চিত হয়েছে। অভাবে তাদের সাহায্য করে পবিত্র ইসলামে সুদৃঢ় করা।
৫. ঋণমুক্তির জন্য: জীবনের মৌলিক বা প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য সঙ্গতকারণে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের ঋণ মুক্তির জন্য পবিত্র যাকাত প্রদান করা যাবে।
৬. গোলাম বা বাঁদী মুক্তি: কৃত গোলাম বা বাঁদী মুক্তির জন্য।
৭. ফী সাবীলিল্লাহ বা জিহাদ: অর্থাৎ পবিত্র ইসলাম উনাকে যমীনে কায়িম বা বিজয়ী করার লক্ষ্যে যারা কাফির বা বিধর্মীদের সাথে জিহাদে রত সে সকল মুজাহিদদের প্রয়োজনে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে এবং তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করার কাজেও ব্যয় করা যাবে।
৮. মুসাফির: মুসাফির অবস্থায় কোন ব্যক্তি বিশেষ কারণে অভাবগ্রস্থ হলে ওই ব্যক্তির বাড়িতে যতই ধন-সম্পদ থাকুক না কেন তাকে পবিত্র যাকাত প্রদান করা যাবে। তবে মহা সম্মানিত ও পবিত্রতম সাইয়্যিদ বংশ মুবারক উনারা পবিত্র যাকাতের মাল উপভোগ করেন না। তা পবিত্র হাদীছ শরীফ কর্তৃক নিষিদ্ধ। বরং উনারা ধনীদের নিকট থেকে পবিত্র যাকাতের মাল নিয়ে গরীবদের মাঝে সুসমভাবে বণ্টন করে থাকেন। যা খাছ সুন্নত এবং উনাদের কাছেও পবিত্র যাকাতের সম্পদ পৌঁছে দেয়াও ফরয-ওয়াজিব যদি উনারা মহান হাদী হন। তবে পবিত্রতম নবী পরিবার তথা পবিত্রতম আওলাদুর রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুবারক হাদিয়া প্রদান করা উনাদের পবিত্রতম খিদমতে জান-মাল কুরবান করাই হচ্ছে মু’মিনদের পবিত্র ঈমান উনার অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যেই রয়েছে সবচেয়ে বড় সন্তুষ্টি। সুবহানাল্লাহ!
খাতসমূহ থেকে যাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া অধিক উত্তম:
পবিত্র যাকাত প্রদানের আট প্রকার খাতের মধ্য থেকে তিন প্রকার খাতে পবিত্র যাকাত দেয়া যেতে পারে। যেমন,
১। নিকটতম গরীব আত্মীয়-স্বজন: নিকটতম গরীব আত্মীয়-স্বজন যদি তাদের আক্বীদা, আমল বিশুদ্ধ থাকে। তা খেয়ে যদি মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করে। এর ব্যতিক্রমধর্মী ব্যক্তিকে পবিত্র যাকাত দিলে তা আদায় হবে না। যদিও নিকটতম গরীব আত্মীয়-স্বজন ও গরীব প্রতিবেশী হোক না কেন।
২। গরীব প্রতিবেশী: এ ক্ষেত্রেও উক্ত ১নং শর্তের অনুরূপ।
৩। গরীব ত্বলিবুল ইলম: যারা দ্বীনি ইলম অন্বেষণ করে। তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া অতি উত্তম এবং লক্ষ-কোটি গুণ বেশী ফযীলতের কারণ। তবে এ ক্ষেত্রেও উক্ত ১নং শর্তের অনুরূপ শর্তের ভিত্তিতে তাদেরকেও যাকাত দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহ তিনি উনার মাকতুবাত শরীফ-এ উল্লেখ করেন। পবিত্র যাকাত আদায়ের খাতসমূহের মধ্যে গরীব ত্বলিবুল ইলমদের পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, মান্নত, কুরবানীর চামড়া বা চামড়ার টাকা দেয়া সর্বত্তোম এবং লক্ষ-কোটি গুণ ছওয়াব অর্জিত হবে। (মাকতুবাত শরীফ)
যাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না:
১। উলামায়ে সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মালানা দ্বারা পরিচালিত মাদরাসা অর্থাৎ যারা লংমার্চ, হরতাল, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ, কুশপুত্তলিকা দাহ ও অন্যান্য কুফরী মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত, সেই সব মাদরাসাগুলোতে পবিত্র যাকাত প্রদান করলে পবিত্র যাকাত আদায় হবে না। যেমন পত্রিকার রিপোর্টে পাওয়া যায়, জামাতী-খারিজীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদরাসায় সংগৃহীত যাকাত, ফিতরা, কুরবানীর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে। যা মূলতঃ তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমল, সন্ত্রাসী কর্মকা-ে তথা ধর্মব্যবসায় ও পবিত্র দ্বীন-ইসলাম বিরোধী কাজেই ব্যয়িত হয়। কাজেই এদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না, যে বা যারা তাদেরকে যাকাত দিবে কস্মিনকালেও তাদের যাকাত আদায় হবে না।
২। ঠিক একইভাবে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা- যেখানে আমভাবে ধনী-গরীব সকলের উপভোগের সুযোগ করে দেয়- এমন কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে বা সংগঠনে প্রদান করা হারাম ও নাজায়িয। যেমন ‘আনজুমানে মফিদুল ইসলাম’ এই সংগঠনটি বিশেষ ৩ পদ্ধতিতে মুসলমান উনাদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে-
ক) পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা হাতিয়ে নেয়ার মাধ্যমে গরীব-মিসকীনদের হক্ব বিনষ্ট করে তাদেরকে বঞ্চিত করে দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!
খ) অপরদিক থেকে জনকল্যাণমূলক সুবিধা প্রদান ও গ্রহণের মাধ্যমে ধনীদেরকেও পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা খাওয়ায়ে তথা হারাম উপভোগের মাধ্যমেও তাদের ইবাদত-বন্দেগী বিনষ্ট করে দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!
গ) আরেক দিক থেকে যাকাতদাতাদের পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা যথাস্থানে না যাওয়ায় এবং যথাযথ কাজে ব্যবহার না হওয়ায় যাকাতদাতাদেরকে ফরয ইবাদতের কবুলিয়াত থেকে বঞ্চিত করছে। নাউযুবিল্লাহ! অর্থাৎ যাকাতদাতাদের কোন যাকাতই আদায় হচ্ছে না। কাজেই এ সমস্ত সংগঠনে পবিত্র যাকাত উনার টাকা প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম।
৩। অনুরূপভাবে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা আত্মসাতের আরেকটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন’। এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত হিন্দু ও বৌদ্ধদের ‘যোগ সাধনা শিক্ষা’ প্রদানের একটি প্রতিষ্ঠান, যা মুসলমান উনাদের জন্য শিক্ষা করা সম্পূর্ণরূপে কুফরী। এই প্রতিষ্ঠানটি একদিকে এই কুফরী শিক্ষা বাস্তবায়ন করে মুসলমান উনাদের ক্ষতিগ্রস্থ করছে, অন্যদিকে মুসলমান উনাদের পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, দান-ছদকা, মান্নত বা কুরবানীর চামড়া বিক্রিকৃত টাকা হাতিয়ে নিয়ে তা তাদের কুফরী কর্মকা-ে ব্যবহারের মাধ্যমে গরীব-মিসকীনের হক্ব বিনষ্ট করছে। অপরদিকে যাকাত প্রদানকারীদেরকেও তাদের ফরয ইবাদত থেকে বঞ্চিত করে কবীরা গুনাহে গুনাহগার করছে। নাউযুবিল্লাহ! কাজেই মুসলমানদের জন্য কাফিরদের এই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয তো অবশ্যই, এমনকি সাধারণ দান করাও হারাম ও নাজায়িয।
৪। নিছাব পরিমাণ মালের অধিকারী বা ধনী ব্যক্তিকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। এদেরকে পবিত্র যাকাত দিলে আবার তা নতুন করে আদায় করতে হবে।
৫। মুতাক্বাদ্দিমীন অর্থাৎ পূর্ববর্তী আলিমগণ উনাদের মতে কুরাঈশ গোত্রের বনু হাশিম উনাদের অন্তর্ভুক্ত হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত জাফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আকীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের বংশধরের জন্য পবিত্র যাকাত গ্রহণ বৈধ নয়। তবে মুতাআখখিরীন অর্থাৎ পরবর্তী আলিমগণ উনাদের মতে বৈধ।
৬। অমুসলিম ব্যক্তিকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।
৭। যে সমস্ত মাদরাসায় ইয়াতীমখানা ও লিল্লাহ বোডিং আছে সেখানে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে এবং যে সমস্ত মাদরাসায় লিল্লাহ বোডিং নেই সেখানে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।
৮। দরিদ্র পিতামাতাকে এবং উর্ধ্বতন পুরুষ অর্থাৎ দাদা-দাদী, নানা-নানীকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।
৯। আপন সন্তানকে এবং অধঃস্তন পুরুষ অর্থাৎ নাতি-নাতনীদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।
১০। স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরকে পবিত্র যাকাত দিতে পারবে না।
১১। প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ইয়াতীমখানা লিল্লাহ বোডিংয়ের জন্য পবিত্র যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত হলে তাকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।
১২। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যদি উপার্জন ছেড়ে দিয়ে পবিত্র নামায-রোযা ইত্যাদি নফল ইবাদতে মশগুল হয়ে যায় তাকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। তবে সে যদি উপার্জন না থাকার কারণে পবিত্র যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত হয় তবে যাকাত দেয়া যাবে।
১৩। পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের অনুযায়ী যারা আমল করেনা অর্থাৎ যারা পবিত্র শরীয়ত উনার খিলাফ আমল ও আক্বীদায় অভ্যস্ত তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।
১৪। যারা পবিত্র যাকাত গ্রহণ করে উক্ত যাকাতের টাকা দিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নাফরমানীমূলক কাজে মশগুল হয় তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। যেমন এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মাঝে ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা নেকী ও পরহিযগারী কাজে পরস্পর পরস্পরকে সহযোগীতা কর এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘন কাজে পরস্পর পরস্পরকে সহযোগীতা করনা।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২)
১৫। বেতন বা ভাতা হিসেবে নিজ অধিনস্ত ব্যক্তি বা কর্মচারীকে পবিত্র যাকাত উনার টাকা দেয়া যাবে না।
১৬। যাদের আক্বীদা ও আমল আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত বহির্ভুত তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। যারা হারাম কাজে অভ্যস্ত তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।
১৭। জনকল্যাণমূলক কাজে ও প্রতিষ্ঠানে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। যেমন: আমভাবে লাশ বহন ও দাফন, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, সেতু নির্মাণ, হাসপাতাল নির্মান, বৃক্ষরোপন, পানির ব্যবস্থাকরণ ইত্যাদি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।
স্ত্রীর সম্পদ বা অলঙ্কারের যাকাত কে দিবে ?
স্বামী-স্ত্রীর সম্পদ একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হলেও মালিকানা যদি ভিন্ন হয় তাহলে অবশ্যই প্রত্যেককে তা পৃথকভাবে পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে। স্ত্রীর যদি অলঙ্কারও হয়। তা থেকেই তাকে পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاَقِمْنَ الصَّلٰوةَ وَاٰتِينَ الزَّكٰوةَ وَاَطِعْنَ اللهَ وَرَ‌سُوْلَه ۚ
অর্থ: “আর তোমরা (মহিলারা) পবিত্র নামায কায়িম কর ও পবিত্র যাকাত প্রদান কর এবং মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য কর।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
তবে স্ত্রীর অলঙ্কার ব্যতীত অন্য কোন সম্পদ না থাকলে সেক্ষেত্রে স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে প্রদানকৃত হাত খরচের টাকা থেকে বাঁচিয়ে বা কিছু অলঙ্কার বিক্রি করে হলেও পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে। স্ত্রীর অলঙ্কারের যাকাত স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামী আদায় করলেও পবিত্র যাকাত আদায় হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে নারী সম্প্রদায়! তোমরা ছদকাহ তথা পবিত্র যাকাত প্রদান করো যদিও তোমাদের অলঙ্কারও হয়।” (বুখারী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে, “হযরত আমর ইবনে শু’আইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার সম্মানিত পিতা থেকে তিনি উনার সম্মানিত দাদা থেকে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এক মহিলা ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি আগমন করেন, উনার সাথে উনার একজন কন্যা ছিলেন। উনার কন্যার হাত মুবারক-এ সোনার দুটি মোটা চুরি ছিল। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আপনি কি এর পবিত্র যাকাত প্রদান করেন? তিনি বলেন, না। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আপনি কি পছন্দ করেন যে, আপনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি কিয়ামতের দিন এই দুটির পরিবর্তে আগুনের দুটি চুড়ি পরাবেন? তখন তিনি চুড়ি দুটি খুলে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রদান করেন এবং বলেন, এগুলো মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্য।” (আবূ দাঊদ শরীফ)
পবিত্র যাকাত উনার হিসাব কখন থেকে করতে হবে ?
পবিত্র যাকাত বছরান্তে ফরয হয় এবং বছরান্তে পবিত্র যাকাত উনার হিসাব করা ওয়াজিব। চন্দ্র বছরের তথা আরবী বছরের যে কোন একটি মাস ও তারিখকে পবিত্র যাকাত হিসাবের জন্য নির্ধারণ করতে হবে। বাংলা বা ইংরেজী বছর হিসাব করলে তা শুদ্ধ হবে না। পবিত্র যাকাতযোগ্য সকল সম্পদ ও পণ্যের বেলায় এই শর্ত আরোপিত কিন্তু কৃষিজাত ফসল, মধু, খনিজ সম্পদ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বছরান্তের শর্ত নেই। প্রতিটি ফসল তোলার সাথে সাথেই পবিত্র যাকাত (উশর) আদায় করতে হবে কম বেশী যা-ই হোক। তবে ছদাকাতুল ফিতর-এর জন্য বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত নয়। পবিত্র ঈদের দিন ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই ছাহিবে নিছাব হলে ছদাকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। আর পবিত্র কুরবানী উনার হুকুমও অনুরূপ অর্থাৎ ১০, ১১, ১২ই যিলহজ্জ শরীফ উনার মধ্যে যে কোন দিন মালিকে নিছাব হলে পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব। তবে হিসাবের সুবিধার্থে পহেলা রমাদ্বান শরীফ; এ পবিত্র যাকাত হিসাব করা যেতে পারে। তবে এটাই উত্তম ও পবিত্র সুন্নত মুবারক।
পাওনা ও আটকে পড়া সম্পদের পবিত্র যাকাত উনার বিধান:
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-
“বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যখন পবিত্র যাকাত প্রদানের সময় উপস্থিত হবে, তখন পবিত্র যাকাত প্রদানকারী ব্যক্তি তার সকল সম্পদের উপর এবং সকল পাওনার উপর পবিত্র যাকাত দিবেন। তবে যে পাওনা সম্পদ আটকে রাখা হয়েছে এবং যা ফেরত পাওয়ার সে আশা করে না, সেই সম্পদের পবিত্র যাকাত দিতে হবে না। তবে যখন পাবে তখন (শুরু থেকে পাওয়া পর্যন্ত) তার পবিত্র যাকাত আদায় করবে।” (ইমাম হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ মতটি হযরত আবূ উবায়দ কাসিম ইবনে সাল্লাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সংকলন করেছেন)
বিগত বছরের কাযা বা অনাদায়ী পবিত্র যাকাত প্রসঙ্গে:
যদি কারো অতীত যাকাত অনাদায়ী বা অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তা ঋণের মধ্যে গণ্য হবে। চলতি বছরে যাকাত আদায়ের পূর্বেই অনাদায়ী কাযা যাকাত অবশ্যই আদায় করতে হবে। (ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহ)
পবিত্র যাকাত উনার টাকা দিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে নি¤œমানের শাড়ী-লুঙ্গি ক্রয় প্রসঙ্গে: বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, পবিত্র যাকাত উনার টাকা-পয়সা দিয়ে এমন নি¤œমানের শাড়ী-লুঙ্গি ক্রয় করে যা ব্যবহারের অযোগ্য। যা পবিত্র যাকাতদাতা ও তার পরিবার-পরিজন নিজেও সেটা পরিধান করবে না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا مِـمَّا تُـحِبُّونَ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র রাস্তায় তোমরা তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু খরচ না করা পর্যন্ত কস্মিনকালেও কোন নেকী হাছিল করতে পারবে না।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯২)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, “নিজের জন্যে তোমরা যা পছন্দ করবেনা অন্যের জন্যেও তা পছন্দ করবে না।” (মিশকাত শরীফ)
অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে “সবচেয়ে উত্তম ও প্রিয় বস্তু মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান না করলে তা কবুল হয় না।” (মিশকাত শরীফ)
পবিত্র যাকাত একটি শ্রেষ্ঠ মালি ইবাদত এবং পবিত্র ইসলাম উনার অন্যতম তৃতীয় রোকন। পবিত্র যাকাত উনার মাল তার হকদারকে দিয়ে দেয়াই হচ্ছে ধনীদের জন্য ফরয কাজ, তা যত্রতত্র তাদের খেয়াল-খুশি মুতাবিক খরচ করতে পারবে না। সে অধিকারও তাদের নেই। পবিত্র যাকাত ধনী-গরীবদের মাঝে পার্থক্য করার জন্য আসেনি। তাহলে যাকাত উনার কাপড় বলতে আলাদা নাম থাকবে কেন? অতএব, বুঝা যাচ্ছে পবিত্র যাকাত উনাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার জন্য ‘যাকাতের কাপড়’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই লোক প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নি¤œমানের অব্যবহার্য শাড়ী-লুঙ্গি পবিত্র যাকাত উনার টাকা দিয়ে ক্রয় করে পবিত্র যাকাত দিলে পবিত্র যাকাত উনাকে ইহানত বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার শামিল। নাউযুবিল্লাহ! এতে পবিত্র যাকাততো কবুল হবেই না বরং পবিত্র ঈমান, আমল, আক্বীদা সব বরবাদ হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ! মুসলমান উনাদেরকে বেঈমান করার জন্য ইহুদী-নাছারাদের এক সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। যা গাফিল মুসলমান উনাদের উপলব্ধিতেও নেই। এরূপ ইহানতপূর্ণ কাজ থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ ও মহিলাদের জন্য ফরয।
অবৈধ মালের পবিত্র যাকাত নেই:
হারাম কামাই দ্বারা অর্জিত মালের কোন পবিত্র যাকাত নেই। যদি কেউ পবিত্র যাকাত উনার নিয়ত করে পবিত্র যাকাত দেয় তাহলে তার কবীরা গুনাহ হবে। বৈধ মনে করলে কুফরী হবে। কাজেই অবৈধ মালের যেমন পবিত্র যাকাত নেই, তেমন তার মালিকের উপরও পবিত্র যাকাত নেই অর্থাৎ পবিত্র ইসলাম উনার পরিভাষায় সে ছাহিবে নিছাব হবে না। (ফিকাহর কিতাবসমূহ)
ঋণগ্রস্থদের ঋণের বদলা হিসেবে পবিত্র যাকাত উনার অর্থ কেটে নেয়ার বিধান:
কোন ঋণদাতা-মালদার ব্যক্তি যদি ঋণগ্রস্তদের ঋণের বদলা হিসেবে পবিত্র যাকাত উনার অর্থ কেটে নেয় তাহলে তার পবিত্র যাকাত আদায় হবে না। কেননা ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পবিত্র যাকাতদাতা পবিত্র যাকাত প্রদানের মাধ্যমে বাড়তি কোন ফায়দা লুটাতে পারবে না। এভাবে পবিত্র যাকাত উনার অর্থ কেটে নেয়া প্রকাশ্য ফায়দা হাছিলের শামিল। আর পবিত্র যাকাত উনার মাল বা অর্থ অবশ্যই পবিত্র যাকাত পাওয়ার হকদার ব্যক্তিদেরকে হস্তান্তর করতে হবে তথা তাদেরকে মালিক করে দিতে হবে। এরপর যদি তারা ঋণ প্রদানকারীকে হস্তান্তর করে তবে তাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে যে, যাকাত গ্রহণকারী তথা ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদায় আক্বীদাভুক্ত হতে হবে। অন্যথায় পবিত্র যাকাত এভাবে আদায়ে-আদায় হবে না। (ফিকাহ ও ফতোয়ার কিতাবসমূহ)


এক নজরে পবিত্র যাকাত হিসাবের বিভিন্ন বিষয়ের বিস্তারিত ছক 
পবিত্র যাকাত হিসাবের ছক: (চন্দ্র বৎসর হিসাবে)
মালদার ব্যক্তি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল সম্পদ হিসাবের জন্য নিম্নের ছকটি ব্যবহার করতে পারেন। নমুনা ছকে উল্লেখ নাই এমন সম্পদ মালদারের থাকলে তা অবশ্যই হিসাবে আনতে হবে।
(ক) পবিত্র যাকাত যোগ্য সম্পদের বর্ণনা ঃ
নং সম্পদের নাম সম্পদের মূল্য নির্ধারণ টাকা
১.ক সোনা, রূপার গহনা, বার বা গিনি কয়েন বর্তমান বাজার মূল্য
১.খ সোনা/রূপা/মূল্যবান পাথর/হিরক বা মণিমুক্তা মিশ্রিত অলঙ্কার শুধুমাত্র সোনা বা রূপার মূল্য
২.ক ব্যবসার জন্য ক্রয়কৃত খালি প্লট ক্রয় মূল্য
২.খ নিজ ব্যবহার্যের অতিরিক্ত বাড়ি/ফ্ল্যাট  রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাদে বাৎসরিক আয় (যদি সঞ্চিত থাকে)
৩ যানবাহন: ব্যবসায় ব্যবহৃত রিক্সা, ট্যাক্সি, লরি, সিএনজি, গাড়ি, বাস-ট্রাক, ট্রলার, লঞ্চ, নৌকা ইত্যাদি। রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাদে বাৎসরিক আয় (যদি সঞ্চিত থাকে)
৪ সাবালকের বিভিন্ন সঞ্চয় বা যাকাতযোগ্য সম্পদ  সব সম্পদের সর্বমোট মূল্য
৫.ক প্রাইজবন্ড সবগুলোর ক্রয় মূল্য
৫.খ ব্যক্তিগত বা পোষ্যের নামের বীমা বীমায় জমাকৃত মোট প্রিমিয়াম
৫.গ নিজ বা পোষ্যের ডিপিএস বা এ ধরনের যে কোন সঞ্চয় জমাকৃত মোট অর্থ
৫.ঘ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র সবগুলো সঞ্চয় পত্রের ক্রয় মূল্য
৫.ঙ বন্ড (ব্যাংক বা অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন নামের যে কোন বন্ড) সবগুলো বন্ডের ক্রয়কৃত মূল্য
৫.চ বিভিন্ন মেয়াদী আমানত জমাকৃত মোট অর্থ
৫.ছ প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমাকৃত মূল টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমাকৃত মূল টাকা যখন থেকে নিছাব পরিমান হবে তখন থেকে যাকাত গণনা করতে হবে। এরপর পূর্ণ ১ বৎসর হলে নিছাব যদি থাকে তাহলে তার যাকাত দিতে হবে।
৬.ক সিডিবিএল বা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত শেয়ার হোক অথবা সিডিবিএল বা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভূক্ত না হোক যাকাত দেয়ার নিয়ম হচ্ছে-  শেয়ার ক্রয় করা হয়েছে কম মূল্যে, যাকাত প্রদানের সময় শেয়ারের মূল্য বেশি, এক্ষেত্রে ক্রয় মূল্যে যাকাত দিতে হবে। আবার শেয়ার ক্রয় করা হয়েছে বেশি মূল্যে যাকাত প্রদানের সময় শেয়ারের মূল্য কম, এক্ষেত্রে যাকাত প্রদানের সময়কার মূল্য ধরতে হবে।
৬.খ অংশিদারী বা যৌথ মালিকানার যাকাতযোগ্য সম্পদ যৌথভাবে যাকাত আদায় না হলে নিজ অংশের ক্রয় মূল্য
৭ বিদেশের সকল যাকাতযোগ্য সম্পদ (যদি থাকে) সম্পদের ক্রয় মূল্য
৮.ক ক্যাশের/হাতের বা সঞ্চিত নগদ অর্থ মোট অর্থের পরিমাণ
৮.খ সেভিংস (সঞ্চয়ী) একাউন্ট নির্দিষ্ট তারিখের ব্যালেন্স
৮.গ কারেন্ট (চলতি) একাউন্ট নির্দিষ্ট তারিখের ব্যালেন্স
৯.ক কারখানায় ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য ক্রয়কৃত কাঁচামালের মজুদ ক্রয়কৃত মালের মূল্য
৯.খ কারখানায় ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে প্রস্তুতকৃত তৈরি মালের মজুদ প্রস্তুতসহ মওজুদ করণে মোট খরচ বা ব্যায়ের পরিমাণ
৯.গ ব্যবসার জন্য ক্রয়কৃত মালের মজুদ মজুদ মালের ক্রয় মূল্য 
৯.ঘ পোল্ট্রি ফার্মের ব্রয়লার বড় করে বিক্রির জন্য পালিত হলে ফার্মের হাঁস-মুরগির ক্রয় মূল্য
৯.ঙ ব্যবসার জন্য পালিত গরু/ মহিষ/ ছাগল/ ভেড়া/ ঘোড়া/ উট দুম্বা থাকলে সব পশুর ক্রয় মূল্য
৯.চ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে চাষকৃত মাছ ক্রয় মূল্য
১০ চন্দ্র বৎসরের অগ্রিম যাকাত প্রদান করলে অগ্রিম যাকাতের পরিমাণ
১১ প্রদানকৃত ঋণের অর্থ বা ধার দেয়া টাকা প্রদানকৃত ঋণ বা ধার দেয়া টাকা ফেরত পাওয়া সুনিশ্চিত হলে তার মোট পরিমাণ
মোট পবিত্র যাকাত প্রদান যোগ্য সম্পদের মূল্য = ককক
 মিল-কারখানা বা ইন্ডাস্ট্রিজ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য লোন থাকলেও তার অন্যান্য সম্পদের পবিত্র যাকাত দিতে হবে। কেননা তার উক্ত লোনের বিপরীতে তার মিল-কারখানা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কাজেই উক্ত লোন পবিত্র যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হবে না।
পবিত্র যাকাত বিষয়ক যে কোন প্রশ্নোত্তর পেতে ভিজিট করুন: িি.িধযশধসুুঁধশধঃ.পড়স

(খ) পবিত্র যাকাত থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত সম্পদের বর্ণনা: 
নং পবিত্র যাকাত থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সম্পদের নাম সম্পদের দেনার পরিমাণ টাকা
১২.ক সাংসারিক প্রয়োজনে ব্যাংক বা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণ ঋণের বর্তমান দায়দেনার পরিমাণ
১২.খ বাকিতে বা কিস্তিতে পরিশোধের জন্য দেনা পরিশোধিত কিস্তি কর্তনের পর বর্তমান দেনার পরিমাণ
১২.গ সাংসারিক প্রয়োজনে ব্যক্তিগত ধার/দেনা/করজে হাসানা ধার-দেনার পরিমাণ
১৩ স্ত্রীর অপরিশোধিত মোহরানার দেনা, (যদি স্ত্রীর পাবার তাগাদা থাকে) দেনা/বকেয়ার পরিমাণ
১৪ সরকার ও প্রতিষ্ঠানের পাওনা: জমির খাজনা, ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স, অধীনস্থের বেতন, ছেলেমেয়ের স্কুল কলেজের বকেয়া বেতন (যদি থাকে) ইত্যাদি নির্ধারিতে তারিখের মোট দেনা/বকেয়ার পরিমাণ
 যাকাত থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত মোট দায় দেনা = খখখ

(গ) পবিত্র উশর ও পশু সম্পদের নির্ধারিত যাকাত ঃ
ফসল ও পশুর বর্ণনা পবিত্র যাকাত নির্ধারণ টাকা
১৫.ক প্রাকৃতিক উপায়ে চাষাবাদকৃত ফল বা ফসল প্রাপ্ত ফসলের ১০ ভাগের ১ ভাগ ফসল বা তার মূল্য
১৫.খ আধুনিক উপায়ে চাষাবাদকৃত ফল বা ফসল প্রাপ্ত ফসলের ২০ ভাগের ১ ভাগ ফসল বা তার মূল্য
১৬.ক সায়েমা (স্বেচ্ছায় মাঠে বিচরণকারী পশু) ৩০টি গরু/মহিষ হলে ১ বছর বয়সের ১টি, ৪০টি হলে ২ বছর বয়সের ১টি গরু/মহিষ বা তার সমমূল্য
১৬.খ সায়েমা (স্বেচ্ছায় মাঠে বিচরণকারী পশু) ৪০টি ভেড়া/ছাগল হলে   ১ বছর বয়সের ১টি, ১২১টি হলে ২টি, ২০১টি হলে ৩টি, ৪০০টি হলে ৪টি এরপর প্রতি শতকে একটি ছাগল/ভেড়া বা তার সমমূল্য
 উশর ও পশু সম্পদের নির্ধারিত যাকাত = গগগ

পবিত্র যাকাত নিরূপণ ঃ 
ক) নিরীক্ষিত যাকাত যোগ্য সম্পদের মোট পরিমাণ/মূল্য   :  ককক
খ) যাকাত থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত মোট দায় দেনার পরিমাণ/মূল্য (বিয়োগ করুন) ঃ  খখখ
মোট যাকাত প্রদান যোগ্য সম্পদের পরিমাণ/মূল্য (ককক - খখখ) টাকা ঃ ঘঘঘ
যদি ঘঘঘ এর সম্পদ/মূল্য সাড়ে ৫২ তোলা রৌপ্যের মূল্যের সমান বা তার বেশি হয় তবে শতকরা আড়াই (২.৫০%) ভাগ হারে যাকাত দিতে হবে।
সম্পদের শতকরা আড়াই (২.৫০%) হারে মোট যাকাত     :  হহহ
উশর ও পশু সম্পদের নির্ধারিত যাকাত = (যদি থাকে যোগ করুন)   : গগগ
হিসাবকৃত চন্দ্র বৎসরের মোট যাকাতের পরিমাণ টাকা:...................

পবিত্র কুরবানী উনার সংশ্লিষ্ট মাসয়ালা-মাসায়িল

পবিত্র কুরবানী উনার সংশ্লিষ্ট মাসয়ালা-মাসায়িল
পবিত্র কুরবানী উনার পশুর বৈশিষ্ট্য
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- فَصَلّ لِرَ‌بّكَ وَانْـحَرْ‌ ◌
অর্থ : “আপনার মহান রব তায়ালা উনার উদ্দেশ্যে নামায পড়–ন এবং কুরবানী করুন।” (পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২) 
এখন কুরবানী করতে হলে কুরবানী উনার পশুর কতগুলো বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য রাখতে হয়। নি¤েœ সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো-
ক) কুরবানী যোগ্য পশু গৃহপালিত হতে হবে বন্য পশু দ্বারা কুরবানী দেয়া নাজায়িয : ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে পবিত্র কুরবানী উনার জন্য পশুকে গৃহপালিত হওয়ার শর্ত বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لِكُلّ اُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا لِّيَذْكُرُ‌وا اسْمَ اللهِ عَلٰى مَا رَ‌زَقَهُمْ مِّنْ بَـهِيْمَةِ الْاَنْعَامِ ۗ
অর্থ : “আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য পবিত্র কুরবানী এই উদ্দেশ্যে নির্ধারিত করেছি, যেনো তারা ওই নির্দিষ্ট গৃহপালিত পশুগুলির উপর (যবেহ করার সময়) মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উচ্চারণ করে যা তিনি তাদেরকে রিযিক হিসেবে দান করেছেন। (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৪)
অর্থাৎ পবিত্র কুরবানী উনার পশু গৃহপালিত হতে হবে। আর এ ব্যাপারে ফিক্বহের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
وَلَا يَـجُوْزُ فِى الْاَضَاحَىِّ شَيْئٌ مِنَ الْوَحْشِىِّ لِاَنَّ وُجُوْبَـهَا عُرِفَ بِاشَّرْعِ وَالشَّرْعُ لَـمْ يَرُدُّ بِالْاِيْـجَابِ اِلَّا فِى الْـمُسْتَأْنِسِ.
অর্থ : “কুরবানীর প্রাণীর বিধান হলো, পশু গৃহপালিত হতে হবে। বন্য বা জংলী প্রাণী গ্রহণযোগ্য নয়।” (বাদায়েউস সানায়ে ৪র্থ খ- ২০৫ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৫ম খ- ৩৪৩ পৃষ্ঠা)
এমনকি বন্য পশু যদি পোষও মানে তারপরও উক্ত বন্য পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়িয হবে না। এ ব্যাপারে বর্ণিত রয়েছে-
وَاِنْ ضُحِىَ بِظَبْيَةٍ وَحْشِيَةٍ اَنَسَتْ اَوْ بِبَقَرَةٍ وَحْشِيَةٍ اَنَسَتْ لَـمْ تَـجُزْ.
অর্থ : “বন্য হরিণ বা গয়াল যদি কারো পোষ মানে তারপরও এরূপ পশু দ্বারা কুরবানী জায়িয হবে না।” (ফতওয়ায়ে শামী ৫ম খ- ৩৪৩ পৃষ্ঠা)
কিন্তু গৃহপালিত পশু যদি বন্য আচরণ করে তারপরও উক্ত গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানী জায়িয। যেমন এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-
نَدَّتِ الْاَهْلِيَةُ تَوَحَشَّتْ فَرَمَاهَا عَنِ الْاَضْحِيَّةِ جَازَ.
অর্থ : “যদি গৃহপালিত পশু পালায়ন করে এবং তার মধ্যে বন্য আচরণ প্রকাশ পায়, তারপরও উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৫ম খ- ৩৪৩ পৃষ্ঠা)
পশুটি গৃহপালিত বা জংলী তা চেনার জন্য সহজ পন্থা সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে-
فَاِنْ كَانَ مُتَوَلِدًا مِّنَ الْوَحْشِىِّ وَالْاِنْسِىِّ فَالْعِبْرَةُ لِلْاُمِّ
অর্থ : “আর যদি গৃহপালিত ও বন্য পশুর সংমিশ্রণে বাচ্চার জন্ম হয় তাহলে মায়ের দিক প্রাধান্য পাবে। কারণ পশুর নছব বা বংশ পরিচিতি হলো মায়ের দ্বারা।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৫ম খ- ৩৪৩ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে শামী ৯ম খ- ৫৩৪ পৃষ্ঠা, বাদায়েউস সানায়ে ৪র্থ খ- ২০৫ পৃষ্ঠা)
অন্যত্র বর্ণিত রয়েছে-
فَاِنْ كَانَتْ اَهْلِيَةٌ تَـجُوْزُ وَاِلَّا فَلَا حَتّٰى لَوْ كَانَتِ الْبَقَرَةُ وَحْشِيَةٌ وَالثَّوْرُ اَهْلِيَةٌ لَـمْ تَـجُزْ.
অর্থ : “গৃহপালিত হলে কুরবানী শুদ্ধ বা জায়িয হবে। আর যদি গৃহপালিত না হয় তা দ্বারা কুরবানী করা জায়িয হবে না। তা বন্য গরু, মহিষ, ছাগল, বকরী, ভেড়া ইত্যাদি যাই হোক না কেন।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৫ম খ- ৩৪৩ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে শামী ৯ম খ- ৫৩৪ পৃষ্ঠা, বাদায়েউস সানায়ে ৪র্থ খ- ২০৫ পৃষ্ঠা)
খ) গৃহপালিত পশু মধ্যে শুধুমাত্র দুম্বা, ভেড়া, ছাগল, উট, গরু ও মহিষ দ্বারা কুরবানী দেয়া জায়িয: গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানী করার বিধান থাকলেও যে কোন গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানী করলে শুদ্ধ হবে না। বরং ৬ প্রকার গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানী করতে হবে। এই ৬ প্রকার পশু হচ্ছে দুম্বা, ভেড়া বা মেষ, খাসী বা বকরী, উট, গরু ও মহিষ। এই ছয় প্রকার পশুর নর-মাদী উভয়ই কুরবানী যোগ্য পশু।
দুম্বা কুরবানী: দুম্বা কুরবানীর ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
 عَنْ حَضْرَتْ اَنَسَ بْنَ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُضَحِّيْ بِكَبْشَيْنِ وَاَنَا اُضَحِّيْ بِكَبْشَيْنِ.
অর্থ : “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্র্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দু’টি দুম্বা কুরবানী করতেন। হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও কুরবানী আদায় করতেন দু’টি দুম্বা দিয়ে।” (বুখারী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৫৫৫৩)
মেষ কুরবানী : মেষ কুরবানীর ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ الْـجُهَنِيِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَسَمَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيْنَا ضَحَايَا فَاَصَابَنِيْ جَذَعٌ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّهُ اَصَابَنِيْ جَذَعٌ ‏فَقَالَ ‏ضَحِّ بِهٖ.
অর্থ : “হযরত উক্ববা বিন আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা পবিত্র কুরবানী উনার পশু বিতরণ করলেন। হযরত উক্ববা বিন আমের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ভাগে পড়ল ছয় মাসের এক মেষ। তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার ভাগে ছয় মাসের মেষ পড়েছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যুত্তরে বললেন, এটা দিয়েই আপনি কুরবানী করুন।” (মুসলিম শরীফ, নাসায়ী শরীফ)
উট কুরবানী : উট কুরবানীর ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন-
ثُـمَّ انْصَرَفَ إِلَى الْمَنْحَرِ فَنَحَرَ ثَلاَثًا وَسِتِّينَ بِيَدِهِ ثُـمَّ أَعْطَى عَلِيًّا فَنَحَرَ مَا غَبَرَ وَأَشْرَكَهُ فِى هَدْيِهِ ثُـمَّ أَمَرَ مِنْ كُلِّ بَدَنَةٍ بِبَضْعَةٍ فَجُعِلَتْ فِى قِدْرٍ فَطُبِخَتْ فَأَكَلاَ مِنْ لَـحْمِهَا وَشَرِبَا مِنْ مَرَقِهَا
অর্থ : ‘অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুরবানী উনার স্থানে এসে নিজ হাতে ৬৩টি উট নহর করেন আর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে বাকী উটগুলো নহর করার দায়িত্ব দেন এবং উনাকে উনার কুরবানীর মধ্যে শরীক করে নেন। অতঃপর প্রত্যেকটি উট থেকে এক টুকরা করে গোশত পাতিলে একত্রিত করে রান্না করতে বলেন। অতঃপর উনারা উভয়েই উক্ত গোশত থেকে আহার করেন এবং সুরুয়া পান করেন।” (মুসলিম শরীফ)
গরু কুরবানী : গরু কুরবানীর ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ ذَبَحَ رَسُوْلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ عَائِشَةَ بَقَرَةً يَوْمَ النَّحْرِ.
অর্থ : “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র কুরবানী উনার দিন উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার পক্ষ হতে গরু কুরবানী করেছেন।” (মুসলিম শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৩০৮২)
অর্থাৎ কুরবানী যোগ্য পশু হচ্ছে দুম্বা, মেষ, ভেড়া, ছাগল, খাসী, উট, গরু, মহিষ। 
গ) জাল্লালা প্রাণী দ্বারা কুরবানী করা নাজায়িয : জাল্লালা প্রাণী দিয়ে কুরবানী করা জায়িয নেই। জাল্লালা প্রাণী বলে ওই প্রাণীকে, যে প্রাণী সদা-সর্বদা মল খেয়ে জীবন ধারণ করে, যার কারণে ঐ সমস্ত পশুর গোশতে দুর্গন্ধ পয়দা হয়। আর যে সমস্ত পশু প্রায় প্রায় মল বা নাজাসাত খেয়ে থাকে, সে সমস্ত পশু দিয়ে কুরবানী করা সম্পর্কে ইখতিয়ার রয়েছে। তবে যারা জায়িয বলেছেন, উনারা বলেছেন- উট হলে ৪০ দিন, গরু হলে ২০ দিন, ছাগল হলে ১০ দিন, মোরগ হলে ৩ দিন, চড়ুই পাখি হলে ১ দিন বেঁেধ রেখে ভাল খাদ্য দিয়ে তার গোশতের দুর্গন্ধ দূরীভূত করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার পর যবেহ করা জায়িয ও তা দ্বারা কুরবানী করাও জায়িয। (সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব)
ঘ) পবিত্র কুরবানী উনার পশুর শরয়ী ত্রুটি : পবিত্র কুরবানীর জন্য পশু দোষ-ত্রুটি মুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। পশুর ত্রুটিগুলি দু’ভাগে বিভক্ত। (এক) আয়িবে ফাহিশ অর্থাৎ বড় ধরনের দোষ বা ত্রুটি। যার কোন একটি পশুর মধ্যে থাকলে উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে না। যেমন- এমন দূর্বল পশু, যার হাড়ের মজ্জা বা মগজ শুকিয়ে গেছে। অথবা যে সকল পশু কুরবানীর জায়গা পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারেনা। যেসব পশুর একটি পা এরূপ নষ্ট হয়ে গেছে যে, উক্ত পা দ্বারা চলার সময় কোন সাহায্য নিতে পারে না। যে পশুর কান অথবা লেজের তিনভাগের একভাগ কাটা গেছে, যে পশুর শিং-এর গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে পশুর কান একেবারে গজায়নি, যে পশুর অর্ধেক দাঁত পড়ে গেছে ইত্যাদি পশু দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে না।
(দুই) আয়িবে ইয়াসির অর্থাৎ সাধারণ দোষ বা ত্রুটি। যে দোষ-ত্রুটি থাকলে কুরবানী শুদ্ধ হবে। যেমন যে পশুর কোন এক অঙ্গের এক তৃতীয়াংশের কম নষ্ট হলে উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে। অথবা যে পশুর অর্ধেকের বেশী যদি দাঁত থাকে, উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী জায়িয রয়েছে। অথবা যে পশুর শিং একেবারে উঠেনি, উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে।
হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত-
“সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাত মুবারক দিয়ে ইশারা মুবারক করেন, আমার হাত মুবারক তো উনার হাত মুবারক থেকে ছোট এবং বলেন, ‘চার ধরণের পশু দ্বারা কুরবানী করা যায় না- ১) যে পশুর চোখের দৃষ্টিহীনতা সুস্পষ্ট, ২) যে পশু অতি রুগ্ন, ৩) যে পশু সম্পূর্ণ খোড়া এবং ৪) যে পশু এত জীর্র্ণ-শীর্র্ণ যে তার হাড়ে মগজ নেই।’ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, আমরা তো দাঁত, কান ও লেজে ত্রুটিযুক্ত প্রাণী দ্বারাও কুরবানী করা অপছন্দ করি। তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, যা ইচ্ছা অপছন্দ করতে পারেন তবে তা অন্যের জন্য হারাম করবেন না।” (আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, তিরমিযী শরীফ)

হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত-
اَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْ نَسْتَشْرِفَ الْعَّيْنَ وَالْاُذْنَ وَاَنْ لَّانُضَحِّي بِـمُقَابَلَةِ وَلَا مُدَابَرَةِ وَلَا شَرْقَاءِ وَلَا خَرْقَاءِ.
অর্থ : “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে আদেশ মুবারক করেন, আমরা যেন পবিত্র কুরবানী উনার পশুর চোখ ও কান ভালোভাবে লক্ষ্য করি এবং ওই পশু দ্বারা কুরবানী না করি, যার কানের অগ্রভাগ বা পশ্চাদভাগ কর্তিত। তদ্রুপ যে পশুর কান লম্বায় ফাঁড়া বা কান গোলাকার ছিদ্রযুক্ত।” (আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)
হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে আরো বর্ণিত রয়েছে-
نَـهٰى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْ نُضَحِّى بِاَعْضَبِ الْقَرْنِ وَالْاُذْنِ.
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে শিং ভাঙ্গা বা কান কাটা পশু দ্বারা পবিত্র কুরবানী করতে নিষেধ করেছেন।” (ইবনে মাজাহ শরীফ)
অন্যত্র বর্ণিত রয়েছে-
وَلَاتَذْبَـحُوْا عَجْفَاءَ وَلَا عَرْجَاءَ وَلَا عَوْرَاءَ وَلَامَقْطُوْعَةَ الْاُذْنِ وَلَوْ وَاحِدَةً
অর্থ : “তোমরা ক্ষীণ-দুর্বল, পঙ্গু, চক্ষুহীণ ও কান কাটা পশু যদিও একটি কান হয়; এমন পশু কুরবানী করবে না।
অর্থাৎ নি¤েœাক্ত দোষ-ত্রুটিযুক্ত পশু কুরবানী করলে কুরবানী ছহীহ হবে না-
১. শিং ভাঙ্গা,   ২. কান কর্তিত বা গোলাকার ছিদ্রযুক্ত,
৩. চক্ষুহীন বা দৃষ্টিহীনতা সুস্পষ্ট,  ৪. নাক কাটা,
৫. ঠোঁট কাটা বা দাঁত ভাঙ্গা,   ৬. পা খোড়া বা পঙ্গু,
৭. লেজ কর্তিত,   ৮. খুজলী-পাচড়াযুক্ত
৯. অতি রুগ্ন বা এমন জীর্ণ শীর্ণ যার হাড়ে মগজ নেই,
১০. ত্রুটিযুক্ত বাঁট,  ১১. পিছন দিক ত্রুটিযুক্ত।
ঙ) খাসী, বলদ ইত্যাদি দ্বারা পবিত্র কুরবানী করা জায়িয তো অবশ্যই বরং খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত : পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ও ফিক্বাহ্র কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কোন প্রাণীর কোন এক অঙ্গ যেমন- কান, লেজ ইত্যাদির এক তৃতীয়াংশের বেশী নষ্ট হয়ে গেলে তা দ্বারা কুরবানী করা জায়িয নেই। কোন কোন ক্ষেত্রে যেমন দাঁত অর্ধেকের বেশী যদি থাকে, তাহলে তা দিয়ে কুরবানী করা জায়িয রয়েছে।
এ উছূলের উপর ক্বিয়াস করে কোন কোন আলিম নামধারী মূর্খ ও গুমরাহ লোকেরা বলে থাকে যে, খাসী ও বলদ ইত্যাদি প্রাণী দ্বারা কুরবানী করলে কুরবানী দুরুস্ত হবে না। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ এ ধরণের ক্বিয়াস অশুদ্ধ, নাজায়িয এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিরোধী। কেননা স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে খাসী কুরবানী করেছেন। যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ ذَبَحَ الِنَّبُّى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الذَّبْحِ كَبْشَيْنِ أَقْرَنَيْنِ اَمْلَحَيْنِ مَوْجَوْئَيْنِ.
অর্থ : “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক কুরবানী উনার দিন সাদা-কালো মিশ্রিত রঙ্গের শিং বিশিষ্ট খাসীকৃত দু’টি তরুতাজা দুম্বা কুরবানী করলেন।” (আবূ দাঊদ শরীফ)
কাজেই, এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়, খাসী এবং খাসীকৃত প্রাণী কুরবানী করা জায়িয তো বটেই বরং খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। খাসী করার কারণে প্রাণীর মধ্যে ছূরতান (প্রকাশ্য) যে ত্রুটি বা খুঁত হয়, সেটা শরয়ী ত্রুটি বা খুঁতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
আর এ জন্য ফিক্বহের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
الـخصي افضل من الفحل لانه  اطيب لـحما.
অর্থ : “পাঠা ছাগলের তুলনায় খাসী ছাগল কুরবানী করা উত্তম। কেননা, খাসির গোশত তুলনামূলকভাবে উৎকৃষ্ট।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৫ম খ- ৩৪৫ পৃষ্ঠা)
চ) পবিত্র কুরবানী উনার পশুর বয়স : সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে পবিত্র কুরবানী উনার জন্য শুধু পশুই নির্দিষ্ট করে দেয়নি সাথে সাথে তার বয়সও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।
ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে কুরবানী উনার পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরী। পশুর বয়সের বিষয়টি শুধুমাত্র পবিত্র কুরবানী উনার ক্ষেত্রেই নয় বরং মান্নত, দান, জানের বদলে জানের ছদক্বা, আক্বীক্বা উনাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَذْبَـحُوْا اِلَّا مُسِنَّةً اِلَّا اَنْ يَعْسُرَ عَلَيْكُمْ فَتَذْبَـحُوْا جَذَعَةً مِنَ الضَّأْنِ.
অর্থ : “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, আপনারা মুছিন্না ব্যতীত কুরবানী (যবেহ) করবেন না, তবে সংকটের অবস্থায় ছয় মাস বয়সী দুম্বা যবেহ করতে পারেন।” (মুসলিম শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, নাসায়ী শরীফ)
মুছিন্না (مُسِنَّة) শব্দের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, উট ৫ বছর হলে, গরু, মহিষ ২ বছর হলে আর খাসী-বকরী, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি ১ বছর হলে মুছিন্নার হুকুম বর্তায় অর্থাৎ পবিত্র কুরবানী উনার উপযুক্ত হয়। এর কম বয়সের পশুকে কুরবানী করলে কুরবানী হবে না। তবে শুধুমাত্র দুম্বার বেলায় বলা হয়েছে, যদি ৬ মাসের দুম্বাকে দেখতে ১ বছরের মত মনে হয় তবে সেই দুম্বা দিয়ে কুরবানী করলে কুরবানী শুদ্ধ হবে। (কুদূরী, হিদায়া)
 শরীকে পবিত্র কুরবানী করার বিধান
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ نَـحَرْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامْ الْـحُدَيْبِيَّةِ اَلْبُدْنَةُ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ وَفِى رِوَاَيِةٍ اَلشَّأةُ عَنْ وَاحِدٍ.
অর্থ : “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হুদায়বিয়ার বছরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কুরবানী করলাম উট এবং গরু সাত নামে।” (মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ) অপর এক বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে যে, বকরীতে এক নামে।
হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত এক হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-
خَرَجْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَهَلّيْنَ بِالْـحَجّ فَاَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْ نَشْتَرِكَ فِي الْاِبْلِ وَالْبَقَرِ كُلّ سَبْعَةٍ مِنَّا فِيْ بُدْنَةٍ.
অর্থ : “আমরা পবিত্র হজ্জ উনার ইহরাম বেঁধে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে বের হলাম। তিনি আমাদেরকে আদেশ মুবারক করলেন, যেন প্রতিটি উট ও গরুতে সাতজন করে শরীক হয়ে কুরবানী করি।” (মুসলিম শরীফ)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- 
اَلْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْـجَزُوْرُ عَنْ سَبْعَةٍ.
অর্থ : “একটি গরু সাতজনের পক্ষ হতে এবং একটি উট সাত জনের পক্ষ হতে।” (আবূ দাঊদ শরীফ, মুসলিম শরীফ)
অর্থাৎ পবিত্র কুরবানী উনার পশু উট, গরু ও মহিষে সাত নাম এবং দুম্বা, মেষ বা ভেড়া, বকরী, খাসীতে এক নাম দেয়ার হুকুম মুবারক রয়েছে। গরু, মহিষ, উটে সাত নামের বেশী দিলে কুরবানী জায়িয হবে না। আর সাত নামের কমে কুরবানী করলে জায়িয হবে। আর ছাগল, দুম্বা, ভেড়া এক নামের বেশী নামে কুরবানী করলে কারো কুরবানী জায়িয হবে না। (হিদায়া, কুদূরী)


পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী

পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে- (১) মুসলমান হওয়া, (২) স্বাধীন হওয়া, (৩) মুক্বীম হওয়া, (৪) বালেগ হওয়া, (৫) মালিকে নিছাব হওয়া, (৬) পাগল না হওয়া অর্থাৎ আক্বলমন্দ হওয়া।
পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ১০ তারিখের ছুবহে ছাদিক হতে ১২ তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কেউ মালিকে নিসাব হয় অর্থাৎ হাওয়ায়িজে আছলিয়াহ (নিত্য প্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ) বাদ দিয়ে সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ ভরি রূপা বা তার সমপরিমাণ মূল্যের মালিক হয়, তাহলে তার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব।
উল্লেখ্য যে, যদি কারো নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকে এবং তা যদি নিসাব পরিমাণ হয়, যেমন- কারো পাঁচটি ঘর আছে, একটির মধ্যে সে থাকে আর তিনটির ভাড়া দিয়ে সে সংসার চালায় আর একটি অতিরিক্ত, যার মূল্য নিসাব পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে তার উপরে পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হবে। (আলমগীরী, শামী, আইনুল হিদায়া, ফতহুল কাদীর, গায়াতুল আওতার, শরহে বিকায়া, বাহর, দুররুল মুখতার, কাজীখান, ইনায়া)

সামর্থ থাকার পর পবিত্র কুরবানী না করা অসন্তুষ্টির কারণ
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- 
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করবেনা সে যেনো আমাদের ঈদগাহের নিকটে না আসে।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ)


পবিত্র কুরবানী করার সুন্নতী পদ্ধতি:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- “হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি সমস্ত কিছুর উপর অনুগ্রহকে অপরিহার্য করেছেন। অতএব যখন আপনারা কতল করবেন তখন উত্তম পদ্ধতিতে কতল করবেন, যখন যবেহ করবেন তখন উত্তম পদ্ধতিতে যবেহ করবেন। প্রত্যেকে ছুরিতে শান দিবেন এবং পশুকে শান্তি দিবেন।” (মুসলিম শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)
পবিত্র কুরবানী উনার পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে অর্থাৎ ক্বিবলামুখী করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরতে হবে, তারপর পবিত্র কুরবানী করতে হবে। আর পবিত্র কুরবানী করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরিভাগের নরম অংশ এবং কণ্ঠনালীর উঁচু অংশ এ দুয়ের মাঝামাঝি স্থানে যেন যবেহ করা হয়। চামড়া বাড়ানোর উদ্দেশ্যে থুতনীর নিচে যবেহ করা যাবে না।
আরো উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি রগ রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মুখভাগে দুটি- খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দু’পার্শ্বে দুটি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং যে কোন একটি  রক্তনালী অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে, অন্যথায় কুরবানী হবে না। ৪টিই কাটা উত্তম। যদি সম্ভব হয়, তবে ছুরি চালানোর সময় বেজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
যবেহ করার পর তাড়াতাড়ি জান বের হয়ে যাওয়ার জন্য পশুর সিনাতে খোঁচা মারা কিংবা পায়ের রগ কেটে দেয়া কুরবানী মাকরূহ হওয়ার কারণ। এছাড়াও যারা কুরবানী উনার পশু যবেহকালীন সময় ছবি তোলে বা ভিডিও করে তাদের কুরবানী মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কবুল হবে না। তাই কুরবানী করার সময় এ বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
কুরবানী উনার নিয়ত (যবেহ করার পূর্বে) :
اِنِّـىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِى فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَآ اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْن اِنَّ صَلَاتِـىْ وَنُسُكِىْ وَمَـحْيَاىَ وَمَـمَاتِـىْ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْن لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ. اَللّٰهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ.
উচ্চারণ : ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাত্বারস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা হানিফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না ছলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া ইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রব্বিল আলামীন। লা শারীকালাহু ওয়া বি যালিকা উর্মিতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।
এ দোয়া পড়ে بِسْمِ اللهِ اللهُ اَكْبَرْ ‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে যবেহ করতে হবে।
যবেহ করার পর পঠিতব্য দোয়া-
اَللّٰهُمَّ تَقَبَّلْهُ مِنِّىْ كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ سَيّدِنَا نَبِيّنَا شٰفِعِنَا رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخَلِيْلِكَ سَيّدِنَا حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَ ذَبِيْحُكَ سَيّدِنَا حَضْرَتْ اِسْـمَاعِيْلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ. 
উচ্চারণ : “আল্লাহুম্মা তাক্বব্বালহু মিন্নী কামা তাক্বব্বালতা মিন হাবীবিকা সাইয়্যিদিনা নাবিয়্যিনা শাফিয়ি’না রাসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খ¦লীলিকা সাইয়্যিদিনা হযরত ইবরাহীমা আলাইহিস সালাম ওয়া যাবীহিকা সাইয়্যিদিনা হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম।”
যদি নিজের কুরবানী হয় তবে مِنِّىِ (মিন্নী) বলতে হবে। আর যদি অন্যের কুরবানী হয় তবে مِنِّىِ (মিন্নী) শব্দের পরিবর্তে مِنْ (মিন) বলে যার বা যাদের কুরবানী, তার বা তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে। আর যদি যবেহকারী অন্যের সাথে শরীক হয় তাহলে مِنِّىِ (মিন্নী)ও বলবে, অতঃপর وَمِنْ (ওয়া মিন) বলে অন্যদের নাম বলতে হবে। কেউ যদি উপরোক্ত নিয়ত না জানে, তাহলে যবেহ করার সময় শুধু بِسْمِ اللهِ اللهُ اَكْبَرْ ‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে কুরবানী করলেও শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ নিয়ত অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে অবশ্যই প্রত্যেক যবেহকারীর উচিত উপরোক্ত নিয়ত শিক্ষা করা। কেননা উপরোক্ত নিয়ত পাঠ করে পবিত্র কুরবানী করা সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। (আলমগীরী, শামী, দুররুল মুখতার, আইনুল হিদায়া ও বাহরুর রায়িক ইত্যাদি)
পবিত্র কুরবানী উনার পশু যবেহকারীর আক্বীদা বিশুদ্ধ হতে হবে :
সাধারণত নিজ কুরবানী নিজের হাতেই করা উত্তম। যদি একান্তই নিজে যবেহ করতে না পারে, অন্য কাউকে দিয়ে কুরবানী উনার পশু যবেহ করাতে হয় তবে প্রথম শর্ত হচ্ছে উক্ত যবেহকারীর আক্বীদা শুদ্ধ হতে হবে, নতুবা কুরবানী শুদ্ধ হবে না, এমনকি উক্ত পশুর গোশত খাওয়াও নাজায়িয হয়ে যেতে পারে।
যেহেতু বর্তমানে নামধারী অনেক আলিমের আক্বীদাই শুদ্ধ নয় তাই তাদের দ্বারা যবেহ করাও জায়িয নয় আর যবেহকৃত গোশত খাওয়াও জায়িয নয়। 

ওয়াজিব ও নফল কুরবানী, ওলীমা ও আক্বীক্বা একসাথে দেয়া জায়িয
ওয়াজিব ও নফল কুরবানী, ওলীমা ও আক্বীক্বা একসাথে দেয়া জায়িয হবে। (শামী, আলমগীরী)
পবিত্র আক্বীক্বা উনার পশুর গোশতের বিধান 

অনেকে বলে থাকে, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীক্বা দেয়া হয়, তার গোশত পিতা-মাতা খেতে পারবে না। মূলত তাদের একথা শরীয়ত সম্মত নয়। সম্মানিত শরীয়ত উনার মাসয়ালা হলো, পবিত্র আক্বীক্বা উনার পশুর গোশতের হুকুম পবিত্র কুরবানী উনার পশুর গোশতের হুকুমের মতো। কাজেই, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীক্বা দেয়া হবে তার গোশত পিতা-মাতাসহ সকলেই খেতে পারবে। এটাই শরীয়তসম্মত মাসয়ালা বা ফতওয়া। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)
বিগত বছরের অনাদায়ী পবিত্র কুরবানী আদায় ও তার গোশতের বিধান

কোন ব্যক্তি যদি গাফলতির কারণে কিংবা অন্য কোন কারণে তার ওয়াজিব কুরবানী যে বছর ওয়াজিব হয়েছে সে বছরে না করে তার পরবর্তী বছর করে তাহলে কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে উক্ত কুরবানী উনার গোশত কুরবানীদাতা ও তার পরিবারবর্গ খেতে পারবে না। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)
পবিত্র কুরবানী উনার গোশত মওজুদ বা সঞ্চয় করার বিধান
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
“উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ বেদুঈনদের একটি দল পবিত্র কুরবানী উনার সময়ে উপস্থিত হলে, তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা খান এবং তিন দিন পর্যন্ত জমা করে রাখতে পারেন। পরের বছর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মানুষ উনাদের পবিত্র কুরবানী দ্বারা উপকৃত হয়। তার চর্বি গলাতেন এবং তা দ্বারা মশক তৈরি করতেন। নূরে মুজাসসম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তা কী হলো?
হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আপনি তো কুরবানীর গোশত জমা রাখতে নিষেধ করেছেন। নূরে মুজাসসম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি তো নিষেধ করেছিলাম ওই লোকদের জন্য, যারা আগমন করেছিলেন। এখন আপনারা খান, জমা করে রাখেন এবং ছদক্বা করেন।” (নাসায়ী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৪৪৩১)

কুরবানীকৃত পশুর গোশত বণ্টনের বিধান
কুরবানীকৃত পশুর গোশত বণ্টন প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-  “পবিত্র কুরবানী উনার গোশত বণ্টন করার মুস্তাহাব নিয়ম হচ্ছে- এক তৃতীয়াংশ নিজের জন্য রাখবে, এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীর জন্য হাদিয়া স্বরূপ দিবে আর এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনের জন্য দান স্বরূপ দিবে। আর যদি কুরবানীকৃত পশুটি ওছিয়তকৃত হয়ে থাকে তাহলে সম্পূর্ণটাই গরীব-মিসকীনকে দান করে দিতে হবে।” (ফিক্বাহর কিতাবসমূহ)
অর্থাৎ কুরবানীদাতার জন্য কুরবানীকৃত পশুর গোশ্ত কাউকে দেয়া বা না দেয়া তার ইখতিয়ারের অন্তর্ভুক্ত। সে ইচ্ছা করলে সম্পূর্ণটাই দান করে দিতে পারে, আবার ইচ্ছা করলে সম্পূর্ণটাই রেখে খেতে পারে। এতে কুরবানী উনার কোন ত্রুটি হবে না। তবে একটা বিষয় অবশ্যই লক্ষ্যণীয় তা হলো- কুরবানীদাতা যদি এমন কোন পশু কুরবানী করে থাকে যার গোশত- ১০/১২ কেজি বা তার চেয়ে কম হয় অথবা শরীকে কুরবানী দিয়েছে, সেখান থেকে সে ১০/১২ কেজি গোশত বা তার চেয়ে কম পেয়েছে। অথচ তার বাড়ীতে স্ত্রী-পুত্র, সন্তান-সন্ততি ইত্যাদি মিলে তার অধীনে প্রায় ২০/২৫ জন রয়েছে। যাদের ভরণ-পোষণ করার দায়িত্ব তার।
কুরবানীদাতার জন্য আত্মীয় স্বজনকে পবিত্র কুরবানীর গোশত হাদিয়া স্বরূপ দেয়া বা গরীব মিসকীনকে দান করা ফরয, ওয়াজিব বা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কোনটাই নয় বরং এমতবস্থায় উক্ত কুরবানীদাতার জন্য ফরয হবে তার অধীনস্থ লোকদেরকে পবিত্র ঈদ উনার দিনে খাওয়ার ব্যবস্থা করা। তাই কুরবানীদাতা যদি যে গোশত পেয়েছে তার এক তৃতীয়াংশ রেখে বাকী সব বণ্টন করে দেয় তাহলে দেখা যাবে তার ঘরে মাত্র প্রায় ৪ কেজি বা তার চেয়ে কম গোশত থাকবে। যা দিয়ে সে তার অধীনস্থ লোকদেরকে পবিত্র ঈদ উনার তিন দিনের প্রথম দিনই তৃপ্তিসহকারে খাওয়াতে পারবেনা। এখন তার জন্য উত্তম হবে এবং ফযীলতের কারণ হবে গোশত বণ্টন করে না দিয়ে সবটাই রেখে অধীনস্থ লোকদের তৃপ্তিসহকারে খাওয়ানো।
হ্যাঁ, এরপরও কথা থেকে যায় সেটা হলো- যদি কুরবানীদাতা ও তার অধীনস্থ সকলেই মহান আল্লাহ্ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্যে এক তৃতীয়াংশ রেখে বাকী গোশত অথবা সম্পূর্ণ গোশত মহান আল্লাহ্ পাক উনার রাস্তায় দান করে দেয় তাহলে অবশ্যই সেটা আরো উত্তম, আরো ফযীলতের কারণ।
উল্লেখ্য, ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্ ও মুস্তাহাব সুন্নত, তরতীব মত আমল করাই সবচাইতে ফযীলতপূর্ণ ও মর্যাদার কারণ।
পবিত্র কুরবানী উনার পশুর যে সমস্ত অংশ খাওয়া নিষিদ্ধ
পবিত্র কুরবানী বা হালাল পশুর ৮টি অংশ খাওয়া যাবে না। (১) দমে মাছফূহা বা প্রবাহিত রক্ত যা হারাম, (২) গুটলী বা গোদুদ সারা দেহে হয়ে থাকে। লাল, কালো, খয়েরী রংয়ের, ভিতরে চাট্টা নামক পোকা থাকে। এই গুটলী বা গোদুদ খাওয়াও হারাম, (৩) অ-কোষ, (৪) মূত্রথলী, (৫) পিত্ত, (৬) ছোট ইস্তিঞ্জার রাস্তা বা লিঙ্গ, (৭) বড় ইস্তিঞ্জার রাস্তা বা গুহ্যদ্বার, এ ৫টি অংশ খাওয়া মাকরূহ তাহরীমী এবং (৮) শিরদাড়ার ভিতরের মগজ, এটা কেউ মাকরূহ তাহরীমী, আবার কেউ মাকরূহ তানযীহী বলেছেন। (শামী, মাতালিবুল মু’মিনীন, উমদাতুল কালাম, কিতাব- শাইখুল ইসলাম)
কুরবানী করার পূর্বে কুরবানী উনার
পশুর দ্বারা ফায়দা লাভ করা জায়িয নেই

সাধারণত কুরবানী করার পূর্বে কুরবানী উনার পশুর দ্বারা কোন প্রকারের ফায়দা লাভ করা জায়িয নেই। যেমন- (১) কুরবানী উনার পশুর উপর আরোহণ করে চলাচল করা, (২) কুরবানী উনার পশুর পশম কেটে বিক্রয় করা, (৩) কুরবানী উনার পশু হাল চাষের কাজে ব্যবহার করা, (৪) কুরবানী উনার পশু দ্বারা বোঝা বহন করানো, (৫) কুরবানী উনার পশুর দুধ পান করা, (৬) কুরবানী উনার পশুর গোবর দ্বারা ফায়দা লাভ করা, (৭) কুরবানী উনার পশুর রশি, নাক বন্ধ, পায়ের খুরাবৃত, গলার ঘন্টা, জিনপোষ, লাগাম ইত্যাদি দ্বারা ফায়দা লাভ করা।
উল্লেখ্য, (১) কুরবানী উনার পশুর উপর আরোহণ করে চলাচল করা জায়িয নেই, তবে যদি কুরবানী উনার পশুর পানীয় ও ঘাসের বন্দোবস্ত করানোর জন্য আরোহণ করে কোথাও যায়, তাতে কোন ক্ষতি নেই। অথবা পালিত পশু যদি হয়, যার উপর মালিক পূর্ব থেকেই আরোহণ করতো এখন মালিক তা কুরবানী দেয়ার নিয়ত করেছে, তাতে আরোহণ করলেও ক্ষতি হবে না। তবে কুরবানী উনার দিন উপস্থিত হলে কুরবানী করে দিতে হবে, আরোহণ করার জন্য রাখা যাবে না।
(২) কুরবানী উনার পশুর পশম কেটে বিক্রয় করা জায়িয নেই। যদি কেউ বিক্রি করে, তবে তার মূল্য ছদ্কা করে দিতে হবে। তা কুরবানী উনার পূর্বে হোক বা কুরবানী উনার পরে হোক। আর কুরবানী উনার পর কুরবানী উনার পশুর পশম থেকে ফায়দা হাছিল করতে পারবে অর্থাৎ নিজ কাজে ব্যবহার করতে পারবে অথবা কাউকে হাদিয়াও দিতে পারবে। যেমন পশমী কম্বল ও চাদর ইত্যাদি।
(৩) কুরবানী উনার পশুকে হালের কাজে ব্যবহার করা জায়িয নেই। হ্যাঁ, যদি কেউ হালের গরুকে কুরবানী দেয়ার নিয়ত করে যে, আমি হালের এই গরুটি আগামী ঈদের দিনে কুরবানী করবো, তাহলে কুরবানী উনার দিনের পূর্ব পর্যন্ত হালের কাজে ব্যবহার করতে পারবে। কুরবানী উনার দিন উপস্থিত হলে, হালের কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে আর রাখা যাবেনা।
(৪) কুরবানী উনার পশুর দ্বারা বোঝা বহন করা জায়িয নেই। তবে উক্ত পশু পালিত হলে বোঝা বহন করাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে কুরবানী উনার দিন উপস্থিত হলে তখন আর বোঝা বহনের জন্য রাখা যাবেনা। কুরবানী করে দিতে হবে।
(৫) কুরবানী উনার পশুর দুধ পান করা বা বিক্রি করা জায়িয নেই। যদি কেউ পান করে বা বিক্রয় করে তবে তার মূল্য ছদকা করে দিতে হবে। কিন্তু যদি উক্ত প্রাণীর দুধ মালিক পূর্ব থেকেই পান করে বা বিক্রয় করে আসছে অর্থাৎ পালিত পশু যদি হয়, তাহলে দুধ পান করতে বা বিক্রয় করতে কোন অসুবিধা নেই। তবে কুরবানী উনার দিন উপস্থিত হলে তা কুরবানী করে দিতে হবে।
(৬) কুরবানী উনার পশুর গোবরের হুকুমও দুধের অনুরূপ।
স্মরণীয় যে, কুরবানী উনার পশু যদি আইইয়ামে নহরের মধ্যে কিনে এনে সাথে সাথে কুরবানী করে, তাহলে তা থেকে কোন প্রকার ফায়দা হাছিল করা জায়িয নেই। যদি কুরবানী পশুর দুধ, পশম ইত্যাদি দ্বারা ফায়দা হাছিল করে, তাহলে তার মূল্য ছদ্কা করে দিতে হবে। তবে যদি আইইয়ামে নহরের দু’চারদিন আগে কিনে এনে পশুকে খাওয়ায় বা পান করায়, তাহলে উক্ত পশু দুধ দিলে তাও পান করতে পারবে খাদ্যের বিনিময়ে।
(৭) পবিত্র কুরবানী উনার পশুর রশি, নাক বন্ধ, পায়ের খুরাবৃত, গলার ঘন্টা, জিনপোষ, লাগাম ইত্যাদি দ্বারা কোন প্রকার ফায়দা হাছিল করা জায়িয নেই। যদি এ সমস্ত দ্রব্য দ্বারা কোন প্রকার ফায়দা হাছিল করে, তবে তার মূল্য ছদকা করে দিতে হবে। (শামী, আলমগীরী, বাহ্রুর রায়িক, কাজীখান)

কুরবানীকৃত পশুর চর্বি, গোশত, ভুঁড়ি, হাড্ডি ও খুরা বিক্রিত অর্থের বিধান
পবিত্র কুরবানী উনার পশুর চর্বি যদি কুরবানীদাতা বিক্রি করে, তবে উক্ত মূল্য বা টাকা কুরবানীদাতা ভোগ করতে তথা খেতে পারবে না বরং উক্ত টাকা সম্পূর্ণটাই গরীব মিসকীনকে ছদক্বা করে দেয়া ওয়াজিব। এমনকি কুরবানীদাতা যদি পবিত্র কুরবানী উনার গোশত, হাড্ডি, ভুঁড়ি ও খুরা ইত্যাদি বিক্রি করে, তবে তার মূল্য ছদক্বা করে দেয়াও ওয়াজিব। যদি কেউ কাউকে কাজের পারিশ্রমিক বাবদ গোশত, হাড্ডি, ভুঁড়ি, খুরা ইত্যাদি দিয়ে দেয়, তবে তার সঠিক মূল্য ছদকা করে দেয়াও ওয়াজিব। অন্যথায় তার কুরবানী শুদ্ধ হবে না। (ফতওয়ায়ে শামী ও অন্যান্য ফিক্বাহ্্র কিতাব)

পবিত্র কুরবানী উনার গোশত দিয়ে কর্মচারীকে খাদ্য খাওয়ানোর বিধান
যে কোন কর্মচারীকে কুরবানী উনার গোশত দিয়ে খাদ্য খাওয়ানো জায়িয আছে। তবে শর্ত হচ্ছে পারিশ্রমিক বা মজুরি বাবদ কুরবানী উনার গোশত দেয়া বা খাওয়ানো জায়িয নেই। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি কোন শ্রমিককে কোন কাজে এই শর্তে নিয়োগ করে যে, তাকে কিছু টাকা-পয়সা দেয়া হবে সাথে সাথে খাওয়ানো হবে। তখন এই শ্রমিককে যদি কেউ তার পরিশ্রমের বিনিময় স্বরূপ খাদ্য হিসেবে কুরবানী উনার গোশত খাওয়ায় তবে মালিকের উচিত হবে, উল্লিখিত শ্রমিককে ওই পরিমাণ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে দেয়া যে পরিমাণ টাকার খাদ্য খাওয়ানো তাকে শর্ত ছিল তা ভাত হোক, রুটি হোক অথবা তরি-তরকারী হোক না কেন। (ফতওয়ায়ে শামী)
গোশত অথবা চামড়া দিয়ে যবেহ করানো বা 
গোশত বানানোর উজরত দেয়া জায়িয হবে না
গোশত বা চামড়া অথবা চামড়া বিক্রয়ের পয়সা দিয়ে যবেহ করানো, চামড়া ছিলানো অথবা গোশত বানানোর উজরত (পারিশ্রমিক) দেয়া জায়িয হবে না। দিলে কুরবানী বাতিল হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, নিজের কুরবানীকৃত পশুর চামড়া নিজে ব্যবহার করতে পারবে অথবা হাদিয়াও দিতে পারবে কিন্তু বিক্রি করলে তার মূল্য সম্পূর্ণটাই ছদক্বা করে দেয়া ওয়াজিব। (সমূহ ফিক্বাহের কিতাব)
পবিত্র কুরবানী উনার পশু যবেহ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়িয নেই

কুরবানী উনার পশু অথবা অন্য যে কোন হালাল পশুই হোক না কেন, তা যবেহ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়িয নেই। এমনিভাবে বাঁটে দুধ থাকতে, ঝিনুকে মুক্তা থাকতে, মেষের পিঠে লোম থাকতে, সেই দুধ, মুক্তা, লোম বিক্রি করা নাজায়িয। (ফতওয়ায়ে শামী)

কুরবানীকৃত পশুর চামড়া দান করা মুস্তাহাব এবং তার বিক্রিত মূল্য দান করা ওয়াজিব

সাধারণভাবে কুরবানীকৃত পশুর চামড়া দান করা মুস্তাহাব তবে কুরবানীদাতা যদি খেতে চায় তবে তা খাওয়া জায়িয রয়েছে। কিন্তু পশু কুরবানী দিয়ে কুরবানীদাতা নিজেই তার চামড়া বিক্রি করে, তবে উক্ত চামড়ার মূল্য ছদকা করে দেয়া তার জন্য ওয়াজিব।
পবিত্র কুরবানী উনার পশুর চামড়া বিক্রয় করে নিজের বা পরিজনের জন্য খরচ করা যাবে না : যেহেতু কুরবানীদাতার জন্য বিক্রিত চামড়ার মূল্য ছদকা করে দেয়া ওয়াজিব, তাই কুরবানীকৃত চামড়ার টাকা নিজের বা পরিবারের কাজে ব্যয় করা নাজায়িয। কেউ যদি চামড়া বিক্রি করে তার মূল্য নিজের কাজে বা পরিবারের কাজে ব্যয় করে তবে তার কুরবানী শুদ্ধ হবে না এবং মকবুলও হবে না। (হিদায়া, তাবঈন, আলমগীরী, মাজালিসুল আবরার)
কুরবানীকৃত পশুর বিক্রিত চামড়ার টাকা মসজিদ কিংবা ঈদগাহের ইমামকে দেয়া জায়িয নয় : মসজিদ ও ঈদগাহে ইমামতি করা বাবদ কুরবানীকৃত পশুর বিক্রিত চামড়ার টাকা মসজিদের ইমাম ছাহিবকে দেয়া জায়িয হবে না। অবশ্য ইমাম ছাহিব যদি ফিতরা ও কুরবানী উনার ছাহিবে নিসাব না হন, তাহলে দান হিসেবে উক্ত টাকা নিতে পারেন। কিন্তু পারিশ্রমিক হিসেবে নয়। কিন্তু ছাহিবে নিসাব হলে, তা নিতে পারবেন না। আর চামড়া বিক্রয় না করে পুরো চামড়াটিই যদি ইমামকে হাদিয়া হিসেবে দেয়া হয়, তবে ইমাম ধনী হলেও তা নিতে পারবেন। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)

যে সমস্ত ব্যক্তিকে বা প্রতিষ্ঠানে কুরবানীকৃত পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থ প্রদান করা জায়িয নেই

পবিত্র কুরবানী করার জন্য কুরবানী উনার পশু যেমন বিভিন্ন শরয়ী খুঁতমুক্ত হতে হয় তেমনি কুরবানীকৃত পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থও শরয়ী খুঁতমুক্ত ব্যক্তিকে বা প্রতিষ্ঠানে প্রদান করতে হয়, নতুবা কুরবানী কবুল হবে না। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্দেশ মুবারক প্রদান করেন-
“তোমরা পরস্পর পরস্পরকে নেকী ও পরহেযগারীতে সাহায্য সহযোগিতা করো; আর পাপ ও নাফরমানীতে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য সহযোগিতা করো না। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)
সুতরাং কুরবানীকৃত পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থ কোন ব্যক্তিকে বা প্রতিষ্ঠানে প্রদানের পূর্বে নি¤œলিখিত ৪টি বিষয় অবশ্যই যাচাই করতে হবে।
১. তাদের ঈমান-আক্বীদা বিশুদ্ধ কিনা, ২. সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার নামে দ্বীন উনাকে ক্ষতি করার কাজে লিপ্ত কিনা, ৩. নেককার-পরহেজগার কিনা, ৪. রিয়া বা ইহানত করে কিনা।
মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্দেশ মুবারক প্রদান করেন-
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করো অর্থাৎ আক্বীদা বিশুদ্ধ করো এবং আক্বীদা বিশুদ্ধ করো উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ও উনার প্রতি নাযিলকৃত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার প্রতি এবং মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে নাযিলকৃত পূর্ববর্তী পবিত্র আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের প্রতি।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩৬)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছে যে, যারা ঈমান এনেছে তাদের আক্বীদা বিশুদ্ধ হতে হবে অর্থাৎ তাদের ঈমান খুঁতমুক্ত হতে হবে। নতুবা তারা ঈমান আনার পরও মুসলমান উনাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না। তাই যারা ঈমান আনার পরও আক্বীদা বিশুদ্ধ করতে পারেনি অর্থাৎ যাদের ঈমান খুঁতমুক্ত নয় এমন ব্যক্তি বা এমন ব্যক্তি কর্তৃক পরিচালিত কোন প্রতিষ্ঠানে কুরবানী পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থ প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। আমাদের সমাজে এমন সম্প্রদায়ের সংখ্যা এখন অনেক বেশি। যেমন- কাদিয়ানী সম্প্রদায়, খারিজী সম্প্রদায়, ওহাবী সম্প্রদায়, দেওবন্দী সম্প্রদায়, দেওবন্দী সিলসিলাভুক্ত সমস্ত ক্বওমী মাদরাসা ইত্যাদি।
সুতরাং যাদের ঈমানে খুঁত বা ত্রুটি রয়েছে তাদেরকে কুরবানীকৃত পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থ প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। তাদেরকে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা করার অর্থই হলো গরীব মুসলমান উনাদের হক্ব নষ্ট করে মুসলমান উনাদের শত্রু কাফিরদের সাহায্য-সহযোগিতা করা। নাঊযুবিল্লাহ!
ঈমানী খুঁতযুক্ত ব্যক্তিকে বা প্রতিষ্ঠানে যেমন কুরবানীকৃত পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থ প্রদান করা হারাম তেমনি যারা গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকে তাদেরকেও কুরবানীকৃত পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থ প্রদান করা হারাম। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- “হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে কেউ একটা বদ কাজের সূচনা করলো যতজন তাতে শরীক হলো তাদের সবার গুনাহই যে বদকাজের সূচনা করেছে তার উপর গিয়ে পড়বে।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
বর্তমান সমাজে প্রচলিত মাদরাসাগুলো একদিকে যেমন ঈমানী খুঁতযুক্ত তথাকথিত আলিম তৈরী করছে অন্যদিকে তাদের আমলেও রয়েছে অনেক গলদ। ইসলামী শরীয়ত উনার দ্বারা নিষিদ্ধ বা হারামকৃত বিষয়গুলো যেমন প্রাণীর ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, খেলাধুলা করা ও দেখা, গান-বাজনা করা, শোনা ও দেখা, গণতন্ত্রের চর্চা করা, মৌলবাদের চর্চা করা, সন্ত্রাসবাদের চর্চা করা ইত্যাদিকে তারা হালাল জেনে ও মেনে নিজেরা যেমন সে অনুযায়ী আমল করছে তেমনি মুসলমান উনাদেরকেও সে হারাম আমলগুলো করতে উদ্ধুদ্ধ করছে। নাঊযুবিল্লাহ! তাই ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে অর্থাৎ সন্ত্রাসী তৈরিকারী মাদরাসাগুলোতে কুরবানীকৃত পশুর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না।
পত্রিকার প্রতিবেদনে পাওয়া যায়, জামাতী-খারিজীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদরাসায় সংগৃহীত যাকাত, ফিতরা, কুরবানী পশুর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে, যা মূলত তাদের বাতিল আক্বীদা ও বদ আমল তথা ধর্মব্যবসার কাজেই ব্যয়িত হয়।
এছাড়াও নিকটাত্মীয়দের মধ্যে যাদের আক্বীদা ত্রুটিযুক্ত ও হারাম কাজে লিপ্ত থাকে তাদেরকে কুরবানীকৃত পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থ প্রদান করার মাধ্যমে আর্থিকভাবে সাহায্য সহযোগিতা করা যাবে না। কেননা যার ঈমান-আক্বীদা-আমল ত্রুটিযুক্ত সে যত নিকটাত্মীয়ই হোক না কেন তার কোন হক্ব নেই। এই ব্যাপারে প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ কিনান। কিনানের শরীরে নুবুওওয়াতি খান্দানের রক্ত প্রবাহিত হওয়ার পরও তার আমলের ত্রুটির কারণে তাকে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত নয় বলে ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- “মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম! নিশ্চয় সে আপনার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চয়ই তার আমল আমলে ছলিহ বা নেক আমলের পরিপন্থি।” (পবিত্র সূরা হুদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৬)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-  “হযরত উরস্ বিন উমাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন পৃথিবীতে কোথাও কোন পাপ কাজ সংঘটিত হয়, তখন যে ব্যক্তি উক্ত স্থানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও উহাকে ঘৃণা করে, সে ব্যক্তি এরূপ যেন উহা হতে দূরে ছিল। আর যে ব্যক্তি দূরে থেকেও উক্ত পাপের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, সে এরূপ যেন তথায় উপস্থিত ছিল।” (আবূ দাঊদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
 অর্থাৎ গুণাহের কাজ যে স্থানেই সংঘটিত হোক না কেন, তাতে যে ব্যক্তি সম্মতি পেশ করবে অথবা সমর্থন করবে, সে ব্যক্তিই সেই গুণাহে গুণাহ্গার হবে। সেখানে তার উপস্থিত থাকা বা না থাকা উভয়টাই সমান। তাই বাতিল আক্বীদা বা বদ আমলসম্পন্ন নিকটাত্মীয়ের বা নিকটবর্তী এলাকার মাদরাসার হক্ব বেশি- এ ধরনের কথা বলে বাতিল আক্বীদা বা বদ আমলসম্পন্ন নিকটাত্মীয়ের বা নিকটবর্তী এলাকার মাদরাসায় কুরবানীকৃত পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থ প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম।
অনুরূপভাবে কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকেও যাকাত, ফিতরা ও কুরবানীকৃত পশুর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না। কারণ- (১) তারা তা ধনী-গরীব, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে খরচ করে থাকে। যেমন রাস্তা-ঘাট, পানির ব্যবস্থা, বেওয়ারিশ লাশ দাফন করার কাজে। অথচ কুরবানীকৃত পশুর চামড়া মুসলমান গরীব-মিসকীন উনাদের হক্ব। (২) মুসলমান গরীব-মিসকীন উনাদের হক্ব ধনীদেরকে প্রদানের মাধ্যমে মুসলমান ধনীদেরকে হারাম খাওয়ানোর মাধ্যমে তাদের ইবাদত-বন্দেগী বিনষ্ট করছে। নাঊযুবিল্লাহ! (৩) মুসলমান গরীব-মিসকীন উনাদের হক্ব মুসলমান উনাদের শত্রু কাফির-মুশরিকদের উপকারার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ! (৪) এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান ইসলামী শরীয়ত নির্ধারিত যাকাত, ফিতরা, মানত, কুরবানী পশুর চামড়া বা বিক্রিত অর্থ প্রদানের কোন খাতের আওতাভুক্তই নয়।
যেমন: (১) আনজুমানে মফিদুল ইসলাম,  (২) কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, (৩) জাকির নায়েক ওরফে কাফির নায়েক ও পিস টিভি ইত্যাদি।

কুরবানীকৃত পশুর চামড়ার বিক্রিত টাকা
মাদরাসার খরচের খাতে ব্যবহারের বিধান
পবিত্র কুরবানীর পশুর চামড়া বা তার মূল্য, যাকাত, ফিতরা ইত্যাদি গরীব, মিসকীন ও ইয়াতীমদের হক্ব অর্থাৎ ওয়াজিব ছদকা (আদায় হওয়ার জন্য) গরীব, মিসকীন ও ইয়াতীমদের জন্য দিয়ে দেয়া শর্ত। তাই যে সকল মাদরাসায় লিল্লাহ বোডিং অর্থাৎ গরীব, মিসকীন ও ইয়াতীম ছাত্র রয়েছে, সে সকল মাদরাসায় যাকাত, ফিতরা ও কুরবানীর পশুর চামড়া বা তার মূল্য দেয়া যেরূপ জায়িয, তদ্রুপ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের জন্য তা লিল্লাহ বোডিংয়ে গ্রহণ করাও জায়িয।
উল্লেখ্য, উক্ত ছদকার টাকা দিয়ে শুধুমাত্র ছাত্রদেরকে খাওয়ালেই চলবেনা বরং ছাত্রদেরকে তা’লীম দেয়ার জন্য উস্তাদ বা শিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে এবং ছাত্রদের থাকার জন্য ঘরের দরকার রয়েছে, আর তার জন্যে টাকা-পয়সারও জরুরত রয়েছে। তাই সম্মানিত ফুক্বাহ্ েকিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এরূপ ছদকার ব্যাপারে একটি সুন্দর সমাধান বা ফায়ছালা দান করেছেন। অর্থাৎ উনারা বলেছেন, “ছদকার টাকা হিলা করা হলে, তা দ্বারা উস্তাদদের বেতন দেয়া, খাওয়ার ব্যবস্থা করা ও মাদরাসার জন্য ঘর তৈরী করা সবই জায়িয।”
আর হিলার পদ্ধতি হলো- মাদরাসা কর্তৃপক্ষ কোন গরীব, মিস্কীন বা ফকীরকে উক্ত ছদ্কার টাকাগুলোর মালিক করে দিবে। অতঃপর উক্ত গরীব, মিসকীন ও ফকীর সে টাকাগুলো মাদরাসায় দান করে দিবে।
অতএব, শুধুমাত্র উক্ত ছূরতেই ছদকার টাকা দিয়ে উস্তাদদের বেতন দেয়া, খাওয়ার ব্যবস্থা করা ও মাদরাসার জন্য ঘর তৈরী করা জায়িয ও শরীয়তসম্মত। (শামী, দুররুল মুখতার, আলমগীরী, আইনুল হিদায়া, নাওয়াদিরুল ফতওয়া)