পবিত্র কুরবানী উনার পশুর বৈশিষ্ট্য
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- فَصَلّ لِرَبّكَ وَانْـحَرْ ◌
অর্থ : “আপনার মহান রব তায়ালা উনার উদ্দেশ্যে নামায পড়–ন এবং কুরবানী করুন।” (পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)
এখন কুরবানী করতে হলে কুরবানী উনার পশুর কতগুলো বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য রাখতে হয়। নি¤েœ সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো-
ক) কুরবানী যোগ্য পশু গৃহপালিত হতে হবে বন্য পশু দ্বারা কুরবানী দেয়া নাজায়িয : ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে পবিত্র কুরবানী উনার জন্য পশুকে গৃহপালিত হওয়ার শর্ত বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لِكُلّ اُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا لِّيَذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلٰى مَا رَزَقَهُمْ مِّنْ بَـهِيْمَةِ الْاَنْعَامِ ۗ
অর্থ : “আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য পবিত্র কুরবানী এই উদ্দেশ্যে নির্ধারিত করেছি, যেনো তারা ওই নির্দিষ্ট গৃহপালিত পশুগুলির উপর (যবেহ করার সময়) মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উচ্চারণ করে যা তিনি তাদেরকে রিযিক হিসেবে দান করেছেন। (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৪)
অর্থাৎ পবিত্র কুরবানী উনার পশু গৃহপালিত হতে হবে। আর এ ব্যাপারে ফিক্বহের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
وَلَا يَـجُوْزُ فِى الْاَضَاحَىِّ شَيْئٌ مِنَ الْوَحْشِىِّ لِاَنَّ وُجُوْبَـهَا عُرِفَ بِاشَّرْعِ وَالشَّرْعُ لَـمْ يَرُدُّ بِالْاِيْـجَابِ اِلَّا فِى الْـمُسْتَأْنِسِ.
অর্থ : “কুরবানীর প্রাণীর বিধান হলো, পশু গৃহপালিত হতে হবে। বন্য বা জংলী প্রাণী গ্রহণযোগ্য নয়।” (বাদায়েউস সানায়ে ৪র্থ খ- ২০৫ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৫ম খ- ৩৪৩ পৃষ্ঠা)
এমনকি বন্য পশু যদি পোষও মানে তারপরও উক্ত বন্য পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়িয হবে না। এ ব্যাপারে বর্ণিত রয়েছে-
وَاِنْ ضُحِىَ بِظَبْيَةٍ وَحْشِيَةٍ اَنَسَتْ اَوْ بِبَقَرَةٍ وَحْشِيَةٍ اَنَسَتْ لَـمْ تَـجُزْ.
অর্থ : “বন্য হরিণ বা গয়াল যদি কারো পোষ মানে তারপরও এরূপ পশু দ্বারা কুরবানী জায়িয হবে না।” (ফতওয়ায়ে শামী ৫ম খ- ৩৪৩ পৃষ্ঠা)
কিন্তু গৃহপালিত পশু যদি বন্য আচরণ করে তারপরও উক্ত গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানী জায়িয। যেমন এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-
نَدَّتِ الْاَهْلِيَةُ تَوَحَشَّتْ فَرَمَاهَا عَنِ الْاَضْحِيَّةِ جَازَ.
অর্থ : “যদি গৃহপালিত পশু পালায়ন করে এবং তার মধ্যে বন্য আচরণ প্রকাশ পায়, তারপরও উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৫ম খ- ৩৪৩ পৃষ্ঠা)
পশুটি গৃহপালিত বা জংলী তা চেনার জন্য সহজ পন্থা সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে-
فَاِنْ كَانَ مُتَوَلِدًا مِّنَ الْوَحْشِىِّ وَالْاِنْسِىِّ فَالْعِبْرَةُ لِلْاُمِّ
অর্থ : “আর যদি গৃহপালিত ও বন্য পশুর সংমিশ্রণে বাচ্চার জন্ম হয় তাহলে মায়ের দিক প্রাধান্য পাবে। কারণ পশুর নছব বা বংশ পরিচিতি হলো মায়ের দ্বারা।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৫ম খ- ৩৪৩ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে শামী ৯ম খ- ৫৩৪ পৃষ্ঠা, বাদায়েউস সানায়ে ৪র্থ খ- ২০৫ পৃষ্ঠা)
অন্যত্র বর্ণিত রয়েছে-
فَاِنْ كَانَتْ اَهْلِيَةٌ تَـجُوْزُ وَاِلَّا فَلَا حَتّٰى لَوْ كَانَتِ الْبَقَرَةُ وَحْشِيَةٌ وَالثَّوْرُ اَهْلِيَةٌ لَـمْ تَـجُزْ.
অর্থ : “গৃহপালিত হলে কুরবানী শুদ্ধ বা জায়িয হবে। আর যদি গৃহপালিত না হয় তা দ্বারা কুরবানী করা জায়িয হবে না। তা বন্য গরু, মহিষ, ছাগল, বকরী, ভেড়া ইত্যাদি যাই হোক না কেন।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৫ম খ- ৩৪৩ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে শামী ৯ম খ- ৫৩৪ পৃষ্ঠা, বাদায়েউস সানায়ে ৪র্থ খ- ২০৫ পৃষ্ঠা)
খ) গৃহপালিত পশু মধ্যে শুধুমাত্র দুম্বা, ভেড়া, ছাগল, উট, গরু ও মহিষ দ্বারা কুরবানী দেয়া জায়িয: গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানী করার বিধান থাকলেও যে কোন গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানী করলে শুদ্ধ হবে না। বরং ৬ প্রকার গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানী করতে হবে। এই ৬ প্রকার পশু হচ্ছে দুম্বা, ভেড়া বা মেষ, খাসী বা বকরী, উট, গরু ও মহিষ। এই ছয় প্রকার পশুর নর-মাদী উভয়ই কুরবানী যোগ্য পশু।
দুম্বা কুরবানী: দুম্বা কুরবানীর ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسَ بْنَ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُضَحِّيْ بِكَبْشَيْنِ وَاَنَا اُضَحِّيْ بِكَبْشَيْنِ.
অর্থ : “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্র্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দু’টি দুম্বা কুরবানী করতেন। হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও কুরবানী আদায় করতেন দু’টি দুম্বা দিয়ে।” (বুখারী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৫৫৫৩)
মেষ কুরবানী : মেষ কুরবানীর ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ الْـجُهَنِيِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَسَمَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيْنَا ضَحَايَا فَاَصَابَنِيْ جَذَعٌ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّهُ اَصَابَنِيْ جَذَعٌ فَقَالَ ضَحِّ بِهٖ.
অর্থ : “হযরত উক্ববা বিন আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা পবিত্র কুরবানী উনার পশু বিতরণ করলেন। হযরত উক্ববা বিন আমের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ভাগে পড়ল ছয় মাসের এক মেষ। তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার ভাগে ছয় মাসের মেষ পড়েছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যুত্তরে বললেন, এটা দিয়েই আপনি কুরবানী করুন।” (মুসলিম শরীফ, নাসায়ী শরীফ)
উট কুরবানী : উট কুরবানীর ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন-
ثُـمَّ انْصَرَفَ إِلَى الْمَنْحَرِ فَنَحَرَ ثَلاَثًا وَسِتِّينَ بِيَدِهِ ثُـمَّ أَعْطَى عَلِيًّا فَنَحَرَ مَا غَبَرَ وَأَشْرَكَهُ فِى هَدْيِهِ ثُـمَّ أَمَرَ مِنْ كُلِّ بَدَنَةٍ بِبَضْعَةٍ فَجُعِلَتْ فِى قِدْرٍ فَطُبِخَتْ فَأَكَلاَ مِنْ لَـحْمِهَا وَشَرِبَا مِنْ مَرَقِهَا
অর্থ : ‘অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুরবানী উনার স্থানে এসে নিজ হাতে ৬৩টি উট নহর করেন আর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে বাকী উটগুলো নহর করার দায়িত্ব দেন এবং উনাকে উনার কুরবানীর মধ্যে শরীক করে নেন। অতঃপর প্রত্যেকটি উট থেকে এক টুকরা করে গোশত পাতিলে একত্রিত করে রান্না করতে বলেন। অতঃপর উনারা উভয়েই উক্ত গোশত থেকে আহার করেন এবং সুরুয়া পান করেন।” (মুসলিম শরীফ)
গরু কুরবানী : গরু কুরবানীর ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ ذَبَحَ رَسُوْلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ عَائِشَةَ بَقَرَةً يَوْمَ النَّحْرِ.
অর্থ : “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র কুরবানী উনার দিন উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার পক্ষ হতে গরু কুরবানী করেছেন।” (মুসলিম শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৩০৮২)
অর্থাৎ কুরবানী যোগ্য পশু হচ্ছে দুম্বা, মেষ, ভেড়া, ছাগল, খাসী, উট, গরু, মহিষ।
গ) জাল্লালা প্রাণী দ্বারা কুরবানী করা নাজায়িয : জাল্লালা প্রাণী দিয়ে কুরবানী করা জায়িয নেই। জাল্লালা প্রাণী বলে ওই প্রাণীকে, যে প্রাণী সদা-সর্বদা মল খেয়ে জীবন ধারণ করে, যার কারণে ঐ সমস্ত পশুর গোশতে দুর্গন্ধ পয়দা হয়। আর যে সমস্ত পশু প্রায় প্রায় মল বা নাজাসাত খেয়ে থাকে, সে সমস্ত পশু দিয়ে কুরবানী করা সম্পর্কে ইখতিয়ার রয়েছে। তবে যারা জায়িয বলেছেন, উনারা বলেছেন- উট হলে ৪০ দিন, গরু হলে ২০ দিন, ছাগল হলে ১০ দিন, মোরগ হলে ৩ দিন, চড়ুই পাখি হলে ১ দিন বেঁেধ রেখে ভাল খাদ্য দিয়ে তার গোশতের দুর্গন্ধ দূরীভূত করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার পর যবেহ করা জায়িয ও তা দ্বারা কুরবানী করাও জায়িয। (সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব)
ঘ) পবিত্র কুরবানী উনার পশুর শরয়ী ত্রুটি : পবিত্র কুরবানীর জন্য পশু দোষ-ত্রুটি মুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। পশুর ত্রুটিগুলি দু’ভাগে বিভক্ত। (এক) আয়িবে ফাহিশ অর্থাৎ বড় ধরনের দোষ বা ত্রুটি। যার কোন একটি পশুর মধ্যে থাকলে উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে না। যেমন- এমন দূর্বল পশু, যার হাড়ের মজ্জা বা মগজ শুকিয়ে গেছে। অথবা যে সকল পশু কুরবানীর জায়গা পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারেনা। যেসব পশুর একটি পা এরূপ নষ্ট হয়ে গেছে যে, উক্ত পা দ্বারা চলার সময় কোন সাহায্য নিতে পারে না। যে পশুর কান অথবা লেজের তিনভাগের একভাগ কাটা গেছে, যে পশুর শিং-এর গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে পশুর কান একেবারে গজায়নি, যে পশুর অর্ধেক দাঁত পড়ে গেছে ইত্যাদি পশু দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে না।
(দুই) আয়িবে ইয়াসির অর্থাৎ সাধারণ দোষ বা ত্রুটি। যে দোষ-ত্রুটি থাকলে কুরবানী শুদ্ধ হবে। যেমন যে পশুর কোন এক অঙ্গের এক তৃতীয়াংশের কম নষ্ট হলে উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে। অথবা যে পশুর অর্ধেকের বেশী যদি দাঁত থাকে, উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী জায়িয রয়েছে। অথবা যে পশুর শিং একেবারে উঠেনি, উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে।
হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত-
“সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাত মুবারক দিয়ে ইশারা মুবারক করেন, আমার হাত মুবারক তো উনার হাত মুবারক থেকে ছোট এবং বলেন, ‘চার ধরণের পশু দ্বারা কুরবানী করা যায় না- ১) যে পশুর চোখের দৃষ্টিহীনতা সুস্পষ্ট, ২) যে পশু অতি রুগ্ন, ৩) যে পশু সম্পূর্ণ খোড়া এবং ৪) যে পশু এত জীর্র্ণ-শীর্র্ণ যে তার হাড়ে মগজ নেই।’ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, আমরা তো দাঁত, কান ও লেজে ত্রুটিযুক্ত প্রাণী দ্বারাও কুরবানী করা অপছন্দ করি। তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, যা ইচ্ছা অপছন্দ করতে পারেন তবে তা অন্যের জন্য হারাম করবেন না।” (আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, তিরমিযী শরীফ)
হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত-
اَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْ نَسْتَشْرِفَ الْعَّيْنَ وَالْاُذْنَ وَاَنْ لَّانُضَحِّي بِـمُقَابَلَةِ وَلَا مُدَابَرَةِ وَلَا شَرْقَاءِ وَلَا خَرْقَاءِ.
অর্থ : “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে আদেশ মুবারক করেন, আমরা যেন পবিত্র কুরবানী উনার পশুর চোখ ও কান ভালোভাবে লক্ষ্য করি এবং ওই পশু দ্বারা কুরবানী না করি, যার কানের অগ্রভাগ বা পশ্চাদভাগ কর্তিত। তদ্রুপ যে পশুর কান লম্বায় ফাঁড়া বা কান গোলাকার ছিদ্রযুক্ত।” (আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)
হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে আরো বর্ণিত রয়েছে-
نَـهٰى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْ نُضَحِّى بِاَعْضَبِ الْقَرْنِ وَالْاُذْنِ.
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে শিং ভাঙ্গা বা কান কাটা পশু দ্বারা পবিত্র কুরবানী করতে নিষেধ করেছেন।” (ইবনে মাজাহ শরীফ)
অন্যত্র বর্ণিত রয়েছে-
وَلَاتَذْبَـحُوْا عَجْفَاءَ وَلَا عَرْجَاءَ وَلَا عَوْرَاءَ وَلَامَقْطُوْعَةَ الْاُذْنِ وَلَوْ وَاحِدَةً
অর্থ : “তোমরা ক্ষীণ-দুর্বল, পঙ্গু, চক্ষুহীণ ও কান কাটা পশু যদিও একটি কান হয়; এমন পশু কুরবানী করবে না।
অর্থাৎ নি¤েœাক্ত দোষ-ত্রুটিযুক্ত পশু কুরবানী করলে কুরবানী ছহীহ হবে না-
১. শিং ভাঙ্গা, ২. কান কর্তিত বা গোলাকার ছিদ্রযুক্ত,
৩. চক্ষুহীন বা দৃষ্টিহীনতা সুস্পষ্ট, ৪. নাক কাটা,
৫. ঠোঁট কাটা বা দাঁত ভাঙ্গা, ৬. পা খোড়া বা পঙ্গু,
৭. লেজ কর্তিত, ৮. খুজলী-পাচড়াযুক্ত
৯. অতি রুগ্ন বা এমন জীর্ণ শীর্ণ যার হাড়ে মগজ নেই,
১০. ত্রুটিযুক্ত বাঁট, ১১. পিছন দিক ত্রুটিযুক্ত।
ঙ) খাসী, বলদ ইত্যাদি দ্বারা পবিত্র কুরবানী করা জায়িয তো অবশ্যই বরং খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত : পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ও ফিক্বাহ্র কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কোন প্রাণীর কোন এক অঙ্গ যেমন- কান, লেজ ইত্যাদির এক তৃতীয়াংশের বেশী নষ্ট হয়ে গেলে তা দ্বারা কুরবানী করা জায়িয নেই। কোন কোন ক্ষেত্রে যেমন দাঁত অর্ধেকের বেশী যদি থাকে, তাহলে তা দিয়ে কুরবানী করা জায়িয রয়েছে।
এ উছূলের উপর ক্বিয়াস করে কোন কোন আলিম নামধারী মূর্খ ও গুমরাহ লোকেরা বলে থাকে যে, খাসী ও বলদ ইত্যাদি প্রাণী দ্বারা কুরবানী করলে কুরবানী দুরুস্ত হবে না। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ এ ধরণের ক্বিয়াস অশুদ্ধ, নাজায়িয এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিরোধী। কেননা স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে খাসী কুরবানী করেছেন। যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ ذَبَحَ الِنَّبُّى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الذَّبْحِ كَبْشَيْنِ أَقْرَنَيْنِ اَمْلَحَيْنِ مَوْجَوْئَيْنِ.
অর্থ : “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক কুরবানী উনার দিন সাদা-কালো মিশ্রিত রঙ্গের শিং বিশিষ্ট খাসীকৃত দু’টি তরুতাজা দুম্বা কুরবানী করলেন।” (আবূ দাঊদ শরীফ)
কাজেই, এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়, খাসী এবং খাসীকৃত প্রাণী কুরবানী করা জায়িয তো বটেই বরং খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। খাসী করার কারণে প্রাণীর মধ্যে ছূরতান (প্রকাশ্য) যে ত্রুটি বা খুঁত হয়, সেটা শরয়ী ত্রুটি বা খুঁতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
আর এ জন্য ফিক্বহের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
الـخصي افضل من الفحل لانه اطيب لـحما.
অর্থ : “পাঠা ছাগলের তুলনায় খাসী ছাগল কুরবানী করা উত্তম। কেননা, খাসির গোশত তুলনামূলকভাবে উৎকৃষ্ট।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৫ম খ- ৩৪৫ পৃষ্ঠা)
চ) পবিত্র কুরবানী উনার পশুর বয়স : সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে পবিত্র কুরবানী উনার জন্য শুধু পশুই নির্দিষ্ট করে দেয়নি সাথে সাথে তার বয়সও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।
ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে কুরবানী উনার পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরী। পশুর বয়সের বিষয়টি শুধুমাত্র পবিত্র কুরবানী উনার ক্ষেত্রেই নয় বরং মান্নত, দান, জানের বদলে জানের ছদক্বা, আক্বীক্বা উনাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَذْبَـحُوْا اِلَّا مُسِنَّةً اِلَّا اَنْ يَعْسُرَ عَلَيْكُمْ فَتَذْبَـحُوْا جَذَعَةً مِنَ الضَّأْنِ.
অর্থ : “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, আপনারা মুছিন্না ব্যতীত কুরবানী (যবেহ) করবেন না, তবে সংকটের অবস্থায় ছয় মাস বয়সী দুম্বা যবেহ করতে পারেন।” (মুসলিম শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, নাসায়ী শরীফ)
মুছিন্না (مُسِنَّة) শব্দের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, উট ৫ বছর হলে, গরু, মহিষ ২ বছর হলে আর খাসী-বকরী, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি ১ বছর হলে মুছিন্নার হুকুম বর্তায় অর্থাৎ পবিত্র কুরবানী উনার উপযুক্ত হয়। এর কম বয়সের পশুকে কুরবানী করলে কুরবানী হবে না। তবে শুধুমাত্র দুম্বার বেলায় বলা হয়েছে, যদি ৬ মাসের দুম্বাকে দেখতে ১ বছরের মত মনে হয় তবে সেই দুম্বা দিয়ে কুরবানী করলে কুরবানী শুদ্ধ হবে। (কুদূরী, হিদায়া)
শরীকে পবিত্র কুরবানী করার বিধান
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ نَـحَرْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامْ الْـحُدَيْبِيَّةِ اَلْبُدْنَةُ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ وَفِى رِوَاَيِةٍ اَلشَّأةُ عَنْ وَاحِدٍ.
অর্থ : “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হুদায়বিয়ার বছরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কুরবানী করলাম উট এবং গরু সাত নামে।” (মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ) অপর এক বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে যে, বকরীতে এক নামে।
হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত এক হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-
خَرَجْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَهَلّيْنَ بِالْـحَجّ فَاَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْ نَشْتَرِكَ فِي الْاِبْلِ وَالْبَقَرِ كُلّ سَبْعَةٍ مِنَّا فِيْ بُدْنَةٍ.
অর্থ : “আমরা পবিত্র হজ্জ উনার ইহরাম বেঁধে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে বের হলাম। তিনি আমাদেরকে আদেশ মুবারক করলেন, যেন প্রতিটি উট ও গরুতে সাতজন করে শরীক হয়ে কুরবানী করি।” (মুসলিম শরীফ)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَلْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْـجَزُوْرُ عَنْ سَبْعَةٍ.
অর্থ : “একটি গরু সাতজনের পক্ষ হতে এবং একটি উট সাত জনের পক্ষ হতে।” (আবূ দাঊদ শরীফ, মুসলিম শরীফ)
অর্থাৎ পবিত্র কুরবানী উনার পশু উট, গরু ও মহিষে সাত নাম এবং দুম্বা, মেষ বা ভেড়া, বকরী, খাসীতে এক নাম দেয়ার হুকুম মুবারক রয়েছে। গরু, মহিষ, উটে সাত নামের বেশী দিলে কুরবানী জায়িয হবে না। আর সাত নামের কমে কুরবানী করলে জায়িয হবে। আর ছাগল, দুম্বা, ভেড়া এক নামের বেশী নামে কুরবানী করলে কারো কুরবানী জায়িয হবে না। (হিদায়া, কুদূরী)
পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী
পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে- (১) মুসলমান হওয়া, (২) স্বাধীন হওয়া, (৩) মুক্বীম হওয়া, (৪) বালেগ হওয়া, (৫) মালিকে নিছাব হওয়া, (৬) পাগল না হওয়া অর্থাৎ আক্বলমন্দ হওয়া।
পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ১০ তারিখের ছুবহে ছাদিক হতে ১২ তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কেউ মালিকে নিসাব হয় অর্থাৎ হাওয়ায়িজে আছলিয়াহ (নিত্য প্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ) বাদ দিয়ে সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ ভরি রূপা বা তার সমপরিমাণ মূল্যের মালিক হয়, তাহলে তার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব।
উল্লেখ্য যে, যদি কারো নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকে এবং তা যদি নিসাব পরিমাণ হয়, যেমন- কারো পাঁচটি ঘর আছে, একটির মধ্যে সে থাকে আর তিনটির ভাড়া দিয়ে সে সংসার চালায় আর একটি অতিরিক্ত, যার মূল্য নিসাব পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে তার উপরে পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হবে। (আলমগীরী, শামী, আইনুল হিদায়া, ফতহুল কাদীর, গায়াতুল আওতার, শরহে বিকায়া, বাহর, দুররুল মুখতার, কাজীখান, ইনায়া)
সামর্থ থাকার পর পবিত্র কুরবানী না করা অসন্তুষ্টির কারণ
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করবেনা সে যেনো আমাদের ঈদগাহের নিকটে না আসে।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ)
পবিত্র কুরবানী করার সুন্নতী পদ্ধতি:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- “হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি সমস্ত কিছুর উপর অনুগ্রহকে অপরিহার্য করেছেন। অতএব যখন আপনারা কতল করবেন তখন উত্তম পদ্ধতিতে কতল করবেন, যখন যবেহ করবেন তখন উত্তম পদ্ধতিতে যবেহ করবেন। প্রত্যেকে ছুরিতে শান দিবেন এবং পশুকে শান্তি দিবেন।” (মুসলিম শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)
পবিত্র কুরবানী উনার পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে অর্থাৎ ক্বিবলামুখী করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরতে হবে, তারপর পবিত্র কুরবানী করতে হবে। আর পবিত্র কুরবানী করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরিভাগের নরম অংশ এবং কণ্ঠনালীর উঁচু অংশ এ দুয়ের মাঝামাঝি স্থানে যেন যবেহ করা হয়। চামড়া বাড়ানোর উদ্দেশ্যে থুতনীর নিচে যবেহ করা যাবে না।
আরো উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি রগ রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মুখভাগে দুটি- খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দু’পার্শ্বে দুটি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং যে কোন একটি রক্তনালী অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে, অন্যথায় কুরবানী হবে না। ৪টিই কাটা উত্তম। যদি সম্ভব হয়, তবে ছুরি চালানোর সময় বেজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
যবেহ করার পর তাড়াতাড়ি জান বের হয়ে যাওয়ার জন্য পশুর সিনাতে খোঁচা মারা কিংবা পায়ের রগ কেটে দেয়া কুরবানী মাকরূহ হওয়ার কারণ। এছাড়াও যারা কুরবানী উনার পশু যবেহকালীন সময় ছবি তোলে বা ভিডিও করে তাদের কুরবানী মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কবুল হবে না। তাই কুরবানী করার সময় এ বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
কুরবানী উনার নিয়ত (যবেহ করার পূর্বে) :
اِنِّـىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِى فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَآ اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْن اِنَّ صَلَاتِـىْ وَنُسُكِىْ وَمَـحْيَاىَ وَمَـمَاتِـىْ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْن لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ. اَللّٰهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ.
উচ্চারণ : ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাত্বারস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা হানিফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না ছলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া ইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রব্বিল আলামীন। লা শারীকালাহু ওয়া বি যালিকা উর্মিতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।
এ দোয়া পড়ে بِسْمِ اللهِ اللهُ اَكْبَرْ ‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে যবেহ করতে হবে।
যবেহ করার পর পঠিতব্য দোয়া-
اَللّٰهُمَّ تَقَبَّلْهُ مِنِّىْ كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ سَيّدِنَا نَبِيّنَا شٰفِعِنَا رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخَلِيْلِكَ سَيّدِنَا حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَ ذَبِيْحُكَ سَيّدِنَا حَضْرَتْ اِسْـمَاعِيْلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ.
উচ্চারণ : “আল্লাহুম্মা তাক্বব্বালহু মিন্নী কামা তাক্বব্বালতা মিন হাবীবিকা সাইয়্যিদিনা নাবিয়্যিনা শাফিয়ি’না রাসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খ¦লীলিকা সাইয়্যিদিনা হযরত ইবরাহীমা আলাইহিস সালাম ওয়া যাবীহিকা সাইয়্যিদিনা হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম।”
যদি নিজের কুরবানী হয় তবে مِنِّىِ (মিন্নী) বলতে হবে। আর যদি অন্যের কুরবানী হয় তবে مِنِّىِ (মিন্নী) শব্দের পরিবর্তে مِنْ (মিন) বলে যার বা যাদের কুরবানী, তার বা তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে। আর যদি যবেহকারী অন্যের সাথে শরীক হয় তাহলে مِنِّىِ (মিন্নী)ও বলবে, অতঃপর وَمِنْ (ওয়া মিন) বলে অন্যদের নাম বলতে হবে। কেউ যদি উপরোক্ত নিয়ত না জানে, তাহলে যবেহ করার সময় শুধু بِسْمِ اللهِ اللهُ اَكْبَرْ ‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে কুরবানী করলেও শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ নিয়ত অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে অবশ্যই প্রত্যেক যবেহকারীর উচিত উপরোক্ত নিয়ত শিক্ষা করা। কেননা উপরোক্ত নিয়ত পাঠ করে পবিত্র কুরবানী করা সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। (আলমগীরী, শামী, দুররুল মুখতার, আইনুল হিদায়া ও বাহরুর রায়িক ইত্যাদি)
পবিত্র কুরবানী উনার পশু যবেহকারীর আক্বীদা বিশুদ্ধ হতে হবে :
সাধারণত নিজ কুরবানী নিজের হাতেই করা উত্তম। যদি একান্তই নিজে যবেহ করতে না পারে, অন্য কাউকে দিয়ে কুরবানী উনার পশু যবেহ করাতে হয় তবে প্রথম শর্ত হচ্ছে উক্ত যবেহকারীর আক্বীদা শুদ্ধ হতে হবে, নতুবা কুরবানী শুদ্ধ হবে না, এমনকি উক্ত পশুর গোশত খাওয়াও নাজায়িয হয়ে যেতে পারে।
যেহেতু বর্তমানে নামধারী অনেক আলিমের আক্বীদাই শুদ্ধ নয় তাই তাদের দ্বারা যবেহ করাও জায়িয নয় আর যবেহকৃত গোশত খাওয়াও জায়িয নয়।
ওয়াজিব ও নফল কুরবানী, ওলীমা ও আক্বীক্বা একসাথে দেয়া জায়িয
ওয়াজিব ও নফল কুরবানী, ওলীমা ও আক্বীক্বা একসাথে দেয়া জায়িয হবে। (শামী, আলমগীরী)
পবিত্র আক্বীক্বা উনার পশুর গোশতের বিধান
অনেকে বলে থাকে, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীক্বা দেয়া হয়, তার গোশত পিতা-মাতা খেতে পারবে না। মূলত তাদের একথা শরীয়ত সম্মত নয়। সম্মানিত শরীয়ত উনার মাসয়ালা হলো, পবিত্র আক্বীক্বা উনার পশুর গোশতের হুকুম পবিত্র কুরবানী উনার পশুর গোশতের হুকুমের মতো। কাজেই, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীক্বা দেয়া হবে তার গোশত পিতা-মাতাসহ সকলেই খেতে পারবে। এটাই শরীয়তসম্মত মাসয়ালা বা ফতওয়া। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)
বিগত বছরের অনাদায়ী পবিত্র কুরবানী আদায় ও তার গোশতের বিধান
কোন ব্যক্তি যদি গাফলতির কারণে কিংবা অন্য কোন কারণে তার ওয়াজিব কুরবানী যে বছর ওয়াজিব হয়েছে সে বছরে না করে তার পরবর্তী বছর করে তাহলে কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে উক্ত কুরবানী উনার গোশত কুরবানীদাতা ও তার পরিবারবর্গ খেতে পারবে না। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)
পবিত্র কুরবানী উনার গোশত মওজুদ বা সঞ্চয় করার বিধান
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
“উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ বেদুঈনদের একটি দল পবিত্র কুরবানী উনার সময়ে উপস্থিত হলে, তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা খান এবং তিন দিন পর্যন্ত জমা করে রাখতে পারেন। পরের বছর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মানুষ উনাদের পবিত্র কুরবানী দ্বারা উপকৃত হয়। তার চর্বি গলাতেন এবং তা দ্বারা মশক তৈরি করতেন। নূরে মুজাসসম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তা কী হলো?
হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আপনি তো কুরবানীর গোশত জমা রাখতে নিষেধ করেছেন। নূরে মুজাসসম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি তো নিষেধ করেছিলাম ওই লোকদের জন্য, যারা আগমন করেছিলেন। এখন আপনারা খান, জমা করে রাখেন এবং ছদক্বা করেন।” (নাসায়ী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৪৪৩১)
কুরবানীকৃত পশুর গোশত বণ্টনের বিধান
কুরবানীকৃত পশুর গোশত বণ্টন প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে- “পবিত্র কুরবানী উনার গোশত বণ্টন করার মুস্তাহাব নিয়ম হচ্ছে- এক তৃতীয়াংশ নিজের জন্য রাখবে, এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীর জন্য হাদিয়া স্বরূপ দিবে আর এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনের জন্য দান স্বরূপ দিবে। আর যদি কুরবানীকৃত পশুটি ওছিয়তকৃত হয়ে থাকে তাহলে সম্পূর্ণটাই গরীব-মিসকীনকে দান করে দিতে হবে।” (ফিক্বাহর কিতাবসমূহ)
অর্থাৎ কুরবানীদাতার জন্য কুরবানীকৃত পশুর গোশ্ত কাউকে দেয়া বা না দেয়া তার ইখতিয়ারের অন্তর্ভুক্ত। সে ইচ্ছা করলে সম্পূর্ণটাই দান করে দিতে পারে, আবার ইচ্ছা করলে সম্পূর্ণটাই রেখে খেতে পারে। এতে কুরবানী উনার কোন ত্রুটি হবে না। তবে একটা বিষয় অবশ্যই লক্ষ্যণীয় তা হলো- কুরবানীদাতা যদি এমন কোন পশু কুরবানী করে থাকে যার গোশত- ১০/১২ কেজি বা তার চেয়ে কম হয় অথবা শরীকে কুরবানী দিয়েছে, সেখান থেকে সে ১০/১২ কেজি গোশত বা তার চেয়ে কম পেয়েছে। অথচ তার বাড়ীতে স্ত্রী-পুত্র, সন্তান-সন্ততি ইত্যাদি মিলে তার অধীনে প্রায় ২০/২৫ জন রয়েছে। যাদের ভরণ-পোষণ করার দায়িত্ব তার।
কুরবানীদাতার জন্য আত্মীয় স্বজনকে পবিত্র কুরবানীর গোশত হাদিয়া স্বরূপ দেয়া বা গরীব মিসকীনকে দান করা ফরয, ওয়াজিব বা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কোনটাই নয় বরং এমতবস্থায় উক্ত কুরবানীদাতার জন্য ফরয হবে তার অধীনস্থ লোকদেরকে পবিত্র ঈদ উনার দিনে খাওয়ার ব্যবস্থা করা। তাই কুরবানীদাতা যদি যে গোশত পেয়েছে তার এক তৃতীয়াংশ রেখে বাকী সব বণ্টন করে দেয় তাহলে দেখা যাবে তার ঘরে মাত্র প্রায় ৪ কেজি বা তার চেয়ে কম গোশত থাকবে। যা দিয়ে সে তার অধীনস্থ লোকদেরকে পবিত্র ঈদ উনার তিন দিনের প্রথম দিনই তৃপ্তিসহকারে খাওয়াতে পারবেনা। এখন তার জন্য উত্তম হবে এবং ফযীলতের কারণ হবে গোশত বণ্টন করে না দিয়ে সবটাই রেখে অধীনস্থ লোকদের তৃপ্তিসহকারে খাওয়ানো।
হ্যাঁ, এরপরও কথা থেকে যায় সেটা হলো- যদি কুরবানীদাতা ও তার অধীনস্থ সকলেই মহান আল্লাহ্ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্যে এক তৃতীয়াংশ রেখে বাকী গোশত অথবা সম্পূর্ণ গোশত মহান আল্লাহ্ পাক উনার রাস্তায় দান করে দেয় তাহলে অবশ্যই সেটা আরো উত্তম, আরো ফযীলতের কারণ।
উল্লেখ্য, ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্ ও মুস্তাহাব সুন্নত, তরতীব মত আমল করাই সবচাইতে ফযীলতপূর্ণ ও মর্যাদার কারণ।
পবিত্র কুরবানী উনার পশুর যে সমস্ত অংশ খাওয়া নিষিদ্ধ
পবিত্র কুরবানী বা হালাল পশুর ৮টি অংশ খাওয়া যাবে না। (১) দমে মাছফূহা বা প্রবাহিত রক্ত যা হারাম, (২) গুটলী বা গোদুদ সারা দেহে হয়ে থাকে। লাল, কালো, খয়েরী রংয়ের, ভিতরে চাট্টা নামক পোকা থাকে। এই গুটলী বা গোদুদ খাওয়াও হারাম, (৩) অ-কোষ, (৪) মূত্রথলী, (৫) পিত্ত, (৬) ছোট ইস্তিঞ্জার রাস্তা বা লিঙ্গ, (৭) বড় ইস্তিঞ্জার রাস্তা বা গুহ্যদ্বার, এ ৫টি অংশ খাওয়া মাকরূহ তাহরীমী এবং (৮) শিরদাড়ার ভিতরের মগজ, এটা কেউ মাকরূহ তাহরীমী, আবার কেউ মাকরূহ তানযীহী বলেছেন। (শামী, মাতালিবুল মু’মিনীন, উমদাতুল কালাম, কিতাব- শাইখুল ইসলাম)
কুরবানী করার পূর্বে কুরবানী উনার
পশুর দ্বারা ফায়দা লাভ করা জায়িয নেই
সাধারণত কুরবানী করার পূর্বে কুরবানী উনার পশুর দ্বারা কোন প্রকারের ফায়দা লাভ করা জায়িয নেই। যেমন- (১) কুরবানী উনার পশুর উপর আরোহণ করে চলাচল করা, (২) কুরবানী উনার পশুর পশম কেটে বিক্রয় করা, (৩) কুরবানী উনার পশু হাল চাষের কাজে ব্যবহার করা, (৪) কুরবানী উনার পশু দ্বারা বোঝা বহন করানো, (৫) কুরবানী উনার পশুর দুধ পান করা, (৬) কুরবানী উনার পশুর গোবর দ্বারা ফায়দা লাভ করা, (৭) কুরবানী উনার পশুর রশি, নাক বন্ধ, পায়ের খুরাবৃত, গলার ঘন্টা, জিনপোষ, লাগাম ইত্যাদি দ্বারা ফায়দা লাভ করা।
উল্লেখ্য, (১) কুরবানী উনার পশুর উপর আরোহণ করে চলাচল করা জায়িয নেই, তবে যদি কুরবানী উনার পশুর পানীয় ও ঘাসের বন্দোবস্ত করানোর জন্য আরোহণ করে কোথাও যায়, তাতে কোন ক্ষতি নেই। অথবা পালিত পশু যদি হয়, যার উপর মালিক পূর্ব থেকেই আরোহণ করতো এখন মালিক তা কুরবানী দেয়ার নিয়ত করেছে, তাতে আরোহণ করলেও ক্ষতি হবে না। তবে কুরবানী উনার দিন উপস্থিত হলে কুরবানী করে দিতে হবে, আরোহণ করার জন্য রাখা যাবে না।
(২) কুরবানী উনার পশুর পশম কেটে বিক্রয় করা জায়িয নেই। যদি কেউ বিক্রি করে, তবে তার মূল্য ছদ্কা করে দিতে হবে। তা কুরবানী উনার পূর্বে হোক বা কুরবানী উনার পরে হোক। আর কুরবানী উনার পর কুরবানী উনার পশুর পশম থেকে ফায়দা হাছিল করতে পারবে অর্থাৎ নিজ কাজে ব্যবহার করতে পারবে অথবা কাউকে হাদিয়াও দিতে পারবে। যেমন পশমী কম্বল ও চাদর ইত্যাদি।
(৩) কুরবানী উনার পশুকে হালের কাজে ব্যবহার করা জায়িয নেই। হ্যাঁ, যদি কেউ হালের গরুকে কুরবানী দেয়ার নিয়ত করে যে, আমি হালের এই গরুটি আগামী ঈদের দিনে কুরবানী করবো, তাহলে কুরবানী উনার দিনের পূর্ব পর্যন্ত হালের কাজে ব্যবহার করতে পারবে। কুরবানী উনার দিন উপস্থিত হলে, হালের কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে আর রাখা যাবেনা।
(৪) কুরবানী উনার পশুর দ্বারা বোঝা বহন করা জায়িয নেই। তবে উক্ত পশু পালিত হলে বোঝা বহন করাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে কুরবানী উনার দিন উপস্থিত হলে তখন আর বোঝা বহনের জন্য রাখা যাবেনা। কুরবানী করে দিতে হবে।
(৫) কুরবানী উনার পশুর দুধ পান করা বা বিক্রি করা জায়িয নেই। যদি কেউ পান করে বা বিক্রয় করে তবে তার মূল্য ছদকা করে দিতে হবে। কিন্তু যদি উক্ত প্রাণীর দুধ মালিক পূর্ব থেকেই পান করে বা বিক্রয় করে আসছে অর্থাৎ পালিত পশু যদি হয়, তাহলে দুধ পান করতে বা বিক্রয় করতে কোন অসুবিধা নেই। তবে কুরবানী উনার দিন উপস্থিত হলে তা কুরবানী করে দিতে হবে।
(৬) কুরবানী উনার পশুর গোবরের হুকুমও দুধের অনুরূপ।
স্মরণীয় যে, কুরবানী উনার পশু যদি আইইয়ামে নহরের মধ্যে কিনে এনে সাথে সাথে কুরবানী করে, তাহলে তা থেকে কোন প্রকার ফায়দা হাছিল করা জায়িয নেই। যদি কুরবানী পশুর দুধ, পশম ইত্যাদি দ্বারা ফায়দা হাছিল করে, তাহলে তার মূল্য ছদ্কা করে দিতে হবে। তবে যদি আইইয়ামে নহরের দু’চারদিন আগে কিনে এনে পশুকে খাওয়ায় বা পান করায়, তাহলে উক্ত পশু দুধ দিলে তাও পান করতে পারবে খাদ্যের বিনিময়ে।
(৭) পবিত্র কুরবানী উনার পশুর রশি, নাক বন্ধ, পায়ের খুরাবৃত, গলার ঘন্টা, জিনপোষ, লাগাম ইত্যাদি দ্বারা কোন প্রকার ফায়দা হাছিল করা জায়িয নেই। যদি এ সমস্ত দ্রব্য দ্বারা কোন প্রকার ফায়দা হাছিল করে, তবে তার মূল্য ছদকা করে দিতে হবে। (শামী, আলমগীরী, বাহ্রুর রায়িক, কাজীখান)
কুরবানীকৃত পশুর চর্বি, গোশত, ভুঁড়ি, হাড্ডি ও খুরা বিক্রিত অর্থের বিধান
পবিত্র কুরবানী উনার পশুর চর্বি যদি কুরবানীদাতা বিক্রি করে, তবে উক্ত মূল্য বা টাকা কুরবানীদাতা ভোগ করতে তথা খেতে পারবে না বরং উক্ত টাকা সম্পূর্ণটাই গরীব মিসকীনকে ছদক্বা করে দেয়া ওয়াজিব। এমনকি কুরবানীদাতা যদি পবিত্র কুরবানী উনার গোশত, হাড্ডি, ভুঁড়ি ও খুরা ইত্যাদি বিক্রি করে, তবে তার মূল্য ছদক্বা করে দেয়াও ওয়াজিব। যদি কেউ কাউকে কাজের পারিশ্রমিক বাবদ গোশত, হাড্ডি, ভুঁড়ি, খুরা ইত্যাদি দিয়ে দেয়, তবে তার সঠিক মূল্য ছদকা করে দেয়াও ওয়াজিব। অন্যথায় তার কুরবানী শুদ্ধ হবে না। (ফতওয়ায়ে শামী ও অন্যান্য ফিক্বাহ্্র কিতাব)
পবিত্র কুরবানী উনার গোশত দিয়ে কর্মচারীকে খাদ্য খাওয়ানোর বিধান
যে কোন কর্মচারীকে কুরবানী উনার গোশত দিয়ে খাদ্য খাওয়ানো জায়িয আছে। তবে শর্ত হচ্ছে পারিশ্রমিক বা মজুরি বাবদ কুরবানী উনার গোশত দেয়া বা খাওয়ানো জায়িয নেই। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি কোন শ্রমিককে কোন কাজে এই শর্তে নিয়োগ করে যে, তাকে কিছু টাকা-পয়সা দেয়া হবে সাথে সাথে খাওয়ানো হবে। তখন এই শ্রমিককে যদি কেউ তার পরিশ্রমের বিনিময় স্বরূপ খাদ্য হিসেবে কুরবানী উনার গোশত খাওয়ায় তবে মালিকের উচিত হবে, উল্লিখিত শ্রমিককে ওই পরিমাণ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে দেয়া যে পরিমাণ টাকার খাদ্য খাওয়ানো তাকে শর্ত ছিল তা ভাত হোক, রুটি হোক অথবা তরি-তরকারী হোক না কেন। (ফতওয়ায়ে শামী)
গোশত অথবা চামড়া দিয়ে যবেহ করানো বা
গোশত বানানোর উজরত দেয়া জায়িয হবে না
গোশত বা চামড়া অথবা চামড়া বিক্রয়ের পয়সা দিয়ে যবেহ করানো, চামড়া ছিলানো অথবা গোশত বানানোর উজরত (পারিশ্রমিক) দেয়া জায়িয হবে না। দিলে কুরবানী বাতিল হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, নিজের কুরবানীকৃত পশুর চামড়া নিজে ব্যবহার করতে পারবে অথবা হাদিয়াও দিতে পারবে কিন্তু বিক্রি করলে তার মূল্য সম্পূর্ণটাই ছদক্বা করে দেয়া ওয়াজিব। (সমূহ ফিক্বাহের কিতাব)
পবিত্র কুরবানী উনার পশু যবেহ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়িয নেই
কুরবানী উনার পশু অথবা অন্য যে কোন হালাল পশুই হোক না কেন, তা যবেহ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়িয নেই। এমনিভাবে বাঁটে দুধ থাকতে, ঝিনুকে মুক্তা থাকতে, মেষের পিঠে লোম থাকতে, সেই দুধ, মুক্তা, লোম বিক্রি করা নাজায়িয। (ফতওয়ায়ে শামী)
কুরবানীকৃত পশুর চামড়া দান করা মুস্তাহাব এবং তার বিক্রিত মূল্য দান করা ওয়াজিব
সাধারণভাবে কুরবানীকৃত পশুর চামড়া দান করা মুস্তাহাব তবে কুরবানীদাতা যদি খেতে চায় তবে তা খাওয়া জায়িয রয়েছে। কিন্তু পশু কুরবানী দিয়ে কুরবানীদাতা নিজেই তার চামড়া বিক্রি করে, তবে উক্ত চামড়ার মূল্য ছদকা করে দেয়া তার জন্য ওয়াজিব।
পবিত্র কুরবানী উনার পশুর চামড়া বিক্রয় করে নিজের বা পরিজনের জন্য খরচ করা যাবে না : যেহেতু কুরবানীদাতার জন্য বিক্রিত চামড়ার মূল্য ছদকা করে দেয়া ওয়াজিব, তাই কুরবানীকৃত চামড়ার টাকা নিজের বা পরিবারের কাজে ব্যয় করা নাজায়িয। কেউ যদি চামড়া বিক্রি করে তার মূল্য নিজের কাজে বা পরিবারের কাজে ব্যয় করে তবে তার কুরবানী শুদ্ধ হবে না এবং মকবুলও হবে না। (হিদায়া, তাবঈন, আলমগীরী, মাজালিসুল আবরার)
কুরবানীকৃত পশুর বিক্রিত চামড়ার টাকা মসজিদ কিংবা ঈদগাহের ইমামকে দেয়া জায়িয নয় : মসজিদ ও ঈদগাহে ইমামতি করা বাবদ কুরবানীকৃত পশুর বিক্রিত চামড়ার টাকা মসজিদের ইমাম ছাহিবকে দেয়া জায়িয হবে না। অবশ্য ইমাম ছাহিব যদি ফিতরা ও কুরবানী উনার ছাহিবে নিসাব না হন, তাহলে দান হিসেবে উক্ত টাকা নিতে পারেন। কিন্তু পারিশ্রমিক হিসেবে নয়। কিন্তু ছাহিবে নিসাব হলে, তা নিতে পারবেন না। আর চামড়া বিক্রয় না করে পুরো চামড়াটিই যদি ইমামকে হাদিয়া হিসেবে দেয়া হয়, তবে ইমাম ধনী হলেও তা নিতে পারবেন। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)
যে সমস্ত ব্যক্তিকে বা প্রতিষ্ঠানে কুরবানীকৃত পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থ প্রদান করা জায়িয নেই
পবিত্র কুরবানী করার জন্য কুরবানী উনার পশু যেমন বিভিন্ন শরয়ী খুঁতমুক্ত হতে হয় তেমনি কুরবানীকৃত পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থও শরয়ী খুঁতমুক্ত ব্যক্তিকে বা প্রতিষ্ঠানে প্রদান করতে হয়, নতুবা কুরবানী কবুল হবে না। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্দেশ মুবারক প্রদান করেন-
“তোমরা পরস্পর পরস্পরকে নেকী ও পরহেযগারীতে সাহায্য সহযোগিতা করো; আর পাপ ও নাফরমানীতে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য সহযোগিতা করো না। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)
সুতরাং কুরবানীকৃত পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থ কোন ব্যক্তিকে বা প্রতিষ্ঠানে প্রদানের পূর্বে নি¤œলিখিত ৪টি বিষয় অবশ্যই যাচাই করতে হবে।
১. তাদের ঈমান-আক্বীদা বিশুদ্ধ কিনা, ২. সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার নামে দ্বীন উনাকে ক্ষতি করার কাজে লিপ্ত কিনা, ৩. নেককার-পরহেজগার কিনা, ৪. রিয়া বা ইহানত করে কিনা।
মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্দেশ মুবারক প্রদান করেন-
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করো অর্থাৎ আক্বীদা বিশুদ্ধ করো এবং আক্বীদা বিশুদ্ধ করো উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ও উনার প্রতি নাযিলকৃত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার প্রতি এবং মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে নাযিলকৃত পূর্ববর্তী পবিত্র আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের প্রতি।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩৬)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছে যে, যারা ঈমান এনেছে তাদের আক্বীদা বিশুদ্ধ হতে হবে অর্থাৎ তাদের ঈমান খুঁতমুক্ত হতে হবে। নতুবা তারা ঈমান আনার পরও মুসলমান উনাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না। তাই যারা ঈমান আনার পরও আক্বীদা বিশুদ্ধ করতে পারেনি অর্থাৎ যাদের ঈমান খুঁতমুক্ত নয় এমন ব্যক্তি বা এমন ব্যক্তি কর্তৃক পরিচালিত কোন প্রতিষ্ঠানে কুরবানী পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থ প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। আমাদের সমাজে এমন সম্প্রদায়ের সংখ্যা এখন অনেক বেশি। যেমন- কাদিয়ানী সম্প্রদায়, খারিজী সম্প্রদায়, ওহাবী সম্প্রদায়, দেওবন্দী সম্প্রদায়, দেওবন্দী সিলসিলাভুক্ত সমস্ত ক্বওমী মাদরাসা ইত্যাদি।
সুতরাং যাদের ঈমানে খুঁত বা ত্রুটি রয়েছে তাদেরকে কুরবানীকৃত পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থ প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। তাদেরকে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা করার অর্থই হলো গরীব মুসলমান উনাদের হক্ব নষ্ট করে মুসলমান উনাদের শত্রু কাফিরদের সাহায্য-সহযোগিতা করা। নাঊযুবিল্লাহ!
ঈমানী খুঁতযুক্ত ব্যক্তিকে বা প্রতিষ্ঠানে যেমন কুরবানীকৃত পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থ প্রদান করা হারাম তেমনি যারা গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকে তাদেরকেও কুরবানীকৃত পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থ প্রদান করা হারাম। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- “হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে কেউ একটা বদ কাজের সূচনা করলো যতজন তাতে শরীক হলো তাদের সবার গুনাহই যে বদকাজের সূচনা করেছে তার উপর গিয়ে পড়বে।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
বর্তমান সমাজে প্রচলিত মাদরাসাগুলো একদিকে যেমন ঈমানী খুঁতযুক্ত তথাকথিত আলিম তৈরী করছে অন্যদিকে তাদের আমলেও রয়েছে অনেক গলদ। ইসলামী শরীয়ত উনার দ্বারা নিষিদ্ধ বা হারামকৃত বিষয়গুলো যেমন প্রাণীর ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, খেলাধুলা করা ও দেখা, গান-বাজনা করা, শোনা ও দেখা, গণতন্ত্রের চর্চা করা, মৌলবাদের চর্চা করা, সন্ত্রাসবাদের চর্চা করা ইত্যাদিকে তারা হালাল জেনে ও মেনে নিজেরা যেমন সে অনুযায়ী আমল করছে তেমনি মুসলমান উনাদেরকেও সে হারাম আমলগুলো করতে উদ্ধুদ্ধ করছে। নাঊযুবিল্লাহ! তাই ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে অর্থাৎ সন্ত্রাসী তৈরিকারী মাদরাসাগুলোতে কুরবানীকৃত পশুর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না।
পত্রিকার প্রতিবেদনে পাওয়া যায়, জামাতী-খারিজীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদরাসায় সংগৃহীত যাকাত, ফিতরা, কুরবানী পশুর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে, যা মূলত তাদের বাতিল আক্বীদা ও বদ আমল তথা ধর্মব্যবসার কাজেই ব্যয়িত হয়।
এছাড়াও নিকটাত্মীয়দের মধ্যে যাদের আক্বীদা ত্রুটিযুক্ত ও হারাম কাজে লিপ্ত থাকে তাদেরকে কুরবানীকৃত পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থ প্রদান করার মাধ্যমে আর্থিকভাবে সাহায্য সহযোগিতা করা যাবে না। কেননা যার ঈমান-আক্বীদা-আমল ত্রুটিযুক্ত সে যত নিকটাত্মীয়ই হোক না কেন তার কোন হক্ব নেই। এই ব্যাপারে প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ কিনান। কিনানের শরীরে নুবুওওয়াতি খান্দানের রক্ত প্রবাহিত হওয়ার পরও তার আমলের ত্রুটির কারণে তাকে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত নয় বলে ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- “মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম! নিশ্চয় সে আপনার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চয়ই তার আমল আমলে ছলিহ বা নেক আমলের পরিপন্থি।” (পবিত্র সূরা হুদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৬)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- “হযরত উরস্ বিন উমাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন পৃথিবীতে কোথাও কোন পাপ কাজ সংঘটিত হয়, তখন যে ব্যক্তি উক্ত স্থানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও উহাকে ঘৃণা করে, সে ব্যক্তি এরূপ যেন উহা হতে দূরে ছিল। আর যে ব্যক্তি দূরে থেকেও উক্ত পাপের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, সে এরূপ যেন তথায় উপস্থিত ছিল।” (আবূ দাঊদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অর্থাৎ গুণাহের কাজ যে স্থানেই সংঘটিত হোক না কেন, তাতে যে ব্যক্তি সম্মতি পেশ করবে অথবা সমর্থন করবে, সে ব্যক্তিই সেই গুণাহে গুণাহ্গার হবে। সেখানে তার উপস্থিত থাকা বা না থাকা উভয়টাই সমান। তাই বাতিল আক্বীদা বা বদ আমলসম্পন্ন নিকটাত্মীয়ের বা নিকটবর্তী এলাকার মাদরাসার হক্ব বেশি- এ ধরনের কথা বলে বাতিল আক্বীদা বা বদ আমলসম্পন্ন নিকটাত্মীয়ের বা নিকটবর্তী এলাকার মাদরাসায় কুরবানীকৃত পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থ প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম।
অনুরূপভাবে কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকেও যাকাত, ফিতরা ও কুরবানীকৃত পশুর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না। কারণ- (১) তারা তা ধনী-গরীব, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে খরচ করে থাকে। যেমন রাস্তা-ঘাট, পানির ব্যবস্থা, বেওয়ারিশ লাশ দাফন করার কাজে। অথচ কুরবানীকৃত পশুর চামড়া মুসলমান গরীব-মিসকীন উনাদের হক্ব। (২) মুসলমান গরীব-মিসকীন উনাদের হক্ব ধনীদেরকে প্রদানের মাধ্যমে মুসলমান ধনীদেরকে হারাম খাওয়ানোর মাধ্যমে তাদের ইবাদত-বন্দেগী বিনষ্ট করছে। নাঊযুবিল্লাহ! (৩) মুসলমান গরীব-মিসকীন উনাদের হক্ব মুসলমান উনাদের শত্রু কাফির-মুশরিকদের উপকারার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ! (৪) এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান ইসলামী শরীয়ত নির্ধারিত যাকাত, ফিতরা, মানত, কুরবানী পশুর চামড়া বা বিক্রিত অর্থ প্রদানের কোন খাতের আওতাভুক্তই নয়।
যেমন: (১) আনজুমানে মফিদুল ইসলাম, (২) কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, (৩) জাকির নায়েক ওরফে কাফির নায়েক ও পিস টিভি ইত্যাদি।
কুরবানীকৃত পশুর চামড়ার বিক্রিত টাকা
মাদরাসার খরচের খাতে ব্যবহারের বিধান
পবিত্র কুরবানীর পশুর চামড়া বা তার মূল্য, যাকাত, ফিতরা ইত্যাদি গরীব, মিসকীন ও ইয়াতীমদের হক্ব অর্থাৎ ওয়াজিব ছদকা (আদায় হওয়ার জন্য) গরীব, মিসকীন ও ইয়াতীমদের জন্য দিয়ে দেয়া শর্ত। তাই যে সকল মাদরাসায় লিল্লাহ বোডিং অর্থাৎ গরীব, মিসকীন ও ইয়াতীম ছাত্র রয়েছে, সে সকল মাদরাসায় যাকাত, ফিতরা ও কুরবানীর পশুর চামড়া বা তার মূল্য দেয়া যেরূপ জায়িয, তদ্রুপ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের জন্য তা লিল্লাহ বোডিংয়ে গ্রহণ করাও জায়িয।
উল্লেখ্য, উক্ত ছদকার টাকা দিয়ে শুধুমাত্র ছাত্রদেরকে খাওয়ালেই চলবেনা বরং ছাত্রদেরকে তা’লীম দেয়ার জন্য উস্তাদ বা শিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে এবং ছাত্রদের থাকার জন্য ঘরের দরকার রয়েছে, আর তার জন্যে টাকা-পয়সারও জরুরত রয়েছে। তাই সম্মানিত ফুক্বাহ্ েকিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এরূপ ছদকার ব্যাপারে একটি সুন্দর সমাধান বা ফায়ছালা দান করেছেন। অর্থাৎ উনারা বলেছেন, “ছদকার টাকা হিলা করা হলে, তা দ্বারা উস্তাদদের বেতন দেয়া, খাওয়ার ব্যবস্থা করা ও মাদরাসার জন্য ঘর তৈরী করা সবই জায়িয।”
আর হিলার পদ্ধতি হলো- মাদরাসা কর্তৃপক্ষ কোন গরীব, মিস্কীন বা ফকীরকে উক্ত ছদ্কার টাকাগুলোর মালিক করে দিবে। অতঃপর উক্ত গরীব, মিসকীন ও ফকীর সে টাকাগুলো মাদরাসায় দান করে দিবে।
অতএব, শুধুমাত্র উক্ত ছূরতেই ছদকার টাকা দিয়ে উস্তাদদের বেতন দেয়া, খাওয়ার ব্যবস্থা করা ও মাদরাসার জন্য ঘর তৈরী করা জায়িয ও শরীয়তসম্মত। (শামী, দুররুল মুখতার, আলমগীরী, আইনুল হিদায়া, নাওয়াদিরুল ফতওয়া)