মিসওয়াক কি:
মিসওয়াক (سِوَاكُ) সিওয়াক থেকে নির্গত। অর্থ মাজা, ঘষা। মুখগহ্বর, দাঁত ও জিহ্বাসহ মুখের অভ্যন্তর ভাগ পরিষ্কার করার জন্য গাছের যে ডাল বা শিকড়ের নরম ও মসৃন অংশ ব্যবহার করা হয় তাকে মিসওয়াক (مِسْوَاكٌ) বলে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য যে তিনটি বিধান দিয়েছেন তার মধ্যে ওযূ একটি, আর ওযূর সৌন্দর্য বর্ধণের কয়েকটি বিধানের মধ্যে মুখগহ্বর পরিস্কার করা একটি বিধান। মিসওয়াক করা খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারী এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে পছন্দ করেন।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২২২)
কাজেই প্রতিটি ক্ষেত্রে অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আর পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।
মিসওয়াক ব্যবহারের দলীল:
(১) মিসওয়াক সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ ام المؤمنين الثالثة الصديقة عليها السلام قَالَتْ قَال رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ.
অর্থ : সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মিসওয়াক হল মুখ পরিষ্কারকারী এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের উপায়।” (নাসাঈ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
(২) অন্য বর্ণনায় এসেছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْكُمْ بالسِّوَاكِ فَاِنـَّـهَا مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ.
অর্থ : “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের জন্য মিসওয়াক ব্যবহার করা অপরিহার্য। কারণ এতে মুখের পবিত্রতা হাছিল হয় এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জিত হয়।” (বুখারী শরীফ)
(৩) মিসওয়াক করার প্রতি জোর তাকীদ প্রদান করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي لَأَمَرْتُـهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ وُضُوءٍ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যদি আমি আমার উম্মতের উপর কঠিন মনে না করতাম তাহলে প্রত্যেক ওযূর সাথে তাদেরকে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।” (বুখারী শরীফ)
(৪) অন্য বর্ণনায় এসেছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَوْلاَ اَنْ اَشُقَّ عَلَى اُمَّتِيْ اَوْ عَلَى النَّاسِ لَاَمَرْتُـهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ صَلٰوةٍ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার উম্মতের জন্য যদি কঠিন মনে না করতাম, তাহলে প্রত্যেক ছলাতের সাথে তাদেরকে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
সময়:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়ের জন্য যেমন নামাযের পূর্বে ওযূর সাথে মিসওয়াক করতেন ঠিক তেমনি রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামায আদায়ের জন্যও মিসওয়াক করতেন। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عنْ حَضْرَتْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ اِذَا قَامَ لِلتَّهَجُّدِ مِنَ اللَّيْلِ يَشُوْصُ فَاهُ بِالسِّوَاكِ.
অর্থ : “হযরত হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রাতের বেলা যখন তাহাজ্জুদ নামাযের জন্য উঠতেন, তখন মিসওয়াক দ্বারা উনার মহাপবিত্র নূরুস সালাম (মহাপবিত্র মুখ মুবারক) মিসওয়াক করে নিতেন।” (বুখারী শরীফ)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু নামাযের আগেই মিসওয়াক করতেন তা কিন্তু নয় বরং তিনি যখন পবিত্র হুজরা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করতেন তখন সর্বপ্রথম মিসওয়াক করতেন।عَنْ حَضْرَتِ الْمِقْدَامِ بْنِ شُرَيْحٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ سَاَلْتُ حَضْرَتْ ام المؤمنين الثالثة الصديقة عليها السلام قُلْتُ بِاَىِّ شَىْءٍ كَانَ يَبْدَاُ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا دَخَلَ بَيْتَهُ قَالَتْ بِالسِّوَاكِ.
অর্থ : “হযরত মিকদাম ইবনে শুরাইহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করে বলেন, আমি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র হুজরা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করতেন তখন কোন্ আমল মুবারকটি সর্বপ্রথম করতেন? সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, সর্বপ্রথম মিসওয়াক করতেন।” (মুসলিম শরীফ)
হযরত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের থেকেও মিসওয়াকের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা রয়েছে। তন্মধ্যে হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, সবসময় মিসওয়াক করা মুস্তাহাব। তবে পাঁচ সময়ে অত্যন্ত জরুরী-
১) নামাযের সময়!
২) ওযূর সময়!
৩) পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের সময়!
৪) ঘুম থেকে উঠলে ও!
৫) মুখে দুর্গন্ধ হলে !
মূলত মিসওয়াক করার ফলে নামাযের ফযীলতও বহুগুণে বেড়ে যায়। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكْعَتَانِ بِالسِّوَاكِ اَفْضَلُ مِنْ سَبْعِيْنَ رَكْعَةً بِغَيْرِ سِوَاكٍ.
অর্থ : “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মিসওয়াক করে দু’রাকায়াত নামায পড়া মিসওয়াকবিহীন সত্তর রাকায়াত নামায পড়ার চেয়ে উত্তম।” (মিরকাত শরীফ) (অসমাপ্ত)
#90DaysMahfil
বিস্তারিত জানুন: SM40.com