পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দলীল অনুযায়ী হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের স্বপ্ন মুবারকও যেখানে পবিত্র ওহী মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত সেখানে উনাদের জাগ্রত অবস্থার বিষয়গুলো কি পবিত্র ওহী মুবারক উনার বাইরে ছিল? কখনই নয়। যদি তাই হয় তাহলে পবিত্র ওহী মুবারক উনার ফায়সালাকৃত বিষয়ের জন্য উনাদেরকে দোষারোপ করা কি করে শুদ্ধ হতে পারে?
কাজেই, উনাদের সাথে যদি ভুল বা গুনাহর বিষয়টি সম্পৃক্ত করা হয় তাহলে একইসাথে এটাও সম্পৃক্ত হয়ে যায় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনিই পবিত্র ওহী মুবারক নাযিলে ভুল করেছেন এবং তিনিই উনাদেরকে গুনাহ করিয়েছেন। নাঊযুবিল্লাহ! যা চিন্তা-কল্পনা করাও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
মানুষ সঠিক ইতিহাস না জানার কারণে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝার কারণে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারকে বেয়াদবিমূলক কুফরী কথা-বার্তা বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে কতটুকু আদব রক্ষা করতে হবে, সে প্রসঙ্গে কিতাবে ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হযরত ইমাম সাররি সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ঘটনা উল্লেখ করা হয়, যিনি উনার যামানায় মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ ছিলেন। যিনি ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত ছিলেন। তিনি একবার স্বপ্নে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত নবী হযরত ইয়া’কুব আলাইহিস সালাম উনাকে দেখেন। দেখে তিনি পরিপূর্ণ আদবের সাথে প্রশ্ন করেছিলেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত নবী হযরত ইয়া’কুব আলাইহিস সালাম! আপনার অন্তরে মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত সত্যিকারভাবেই প্রবল রয়েছে তা সত্বে আপনি কি করে আপনার ছেলে হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার জুদায়ীর (বিচ্ছেদের) কারণে উনার মুহব্বতে চল্লিশ বছর যাবৎ কেঁঁদে কেঁদে আপনার চক্ষু মুবারক নষ্ট করেছিলেন? একথা বলার সাথে সাথে গইব থেকে নেদা (আওয়াজ) হলো, “হে সাররি সাকতী! সতর্কতার সাথে হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারকে কথা বলুন।” এরপর হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার সামনে পেশ করা হলে তিনি বেহুঁশ হয়ে পড়ে যান এবং এভাবে একাধারা তের দিন তের রাত বেহুঁশ থাকার পর হুঁশ ফিরে পান। তখন গইব থেকে পুনরায় নেদা হয়, “মহান আল্লাহ পাক উনার নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারকে এ ভাবে কথা বললে এরূপই অবস্থা হয়ে থাকে।” সুবহানাল্লাহ! (তাযকিরাতুল আউলিয়া)
উপরোক্ত ওয়াকিয়ার দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে কি পরিমাণ আদবের সাথে কথা বলতে হবে এবং উনাদের সাথে বেয়াদবির কি পরিণতি? সত্যিই তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়। বেয়াদব সম্পর্কে হযরত জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
بے ادب محروم گشت از لطف رب.
অর্থ: “বেয়াদব মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে বঞ্চিত।” (মসনবী শরীফ)
উল্লেখ্য যে, হযরত ইমাম সাররি সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত ও মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল ওলী হওয়া সত্বেও উনার প্রতি সতর্কবাণী ও সাবধানবাণী উচ্চারিত হয়েছে। উনার ওয়াকিয়া বা ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি কি পরিমাণ আদব রক্ষা করা উচিত।
মূলত, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ভুল করা তো দূরের কথা, কোন প্রকার অপছন্দনীয় কাজও উনারা করতেন না। বরং সর্বপ্রকার অপছন্দনীয় কাজ থেকেও উনারা বেঁচে থাকতেন বা পবিত্র থাকতেন, সে প্রসঙ্গে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সীরত মুবারক থেকে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়- “একবার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুজরা শরীফে বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাত মুবারক করার অনুমতি চাইলেন। এ সংবাদ উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছালেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, সে ব্যক্তিকে অপেক্ষা করতে বলুন। একথা বলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার পাগড়ী মুবারক, জামা বা কোর্তা মুবারক ইত্যাদি গুছগাছ করে নিলেন। এমনকি হুজরা শরীফ থেকে বের হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে পানির গামলাতে নিজের চেহারা মুবারক দেখে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। তা দেখে সে সময় উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিও কি এরূপ করেন? তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “কিরূপ করি?” উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, “এরূপ পরিপাটি।” এর জাওয়াবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নবী। আমাদের কোন কাজ কারো অপছন্দ হলে, সে ঈমান হারা হয়ে যাবে।” (আল্ মুরশিদুল আমীন)
অতএব, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যে কতটুকু অপছন্দনীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকতেন, এ হাদীছ শরীফ উনার বর্ণিত ঘটনা তারই প্রমাণ। তাহলে কি করে এ কথা বলা যেতে পারে বা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ভুল-ত্রুটি করেছিলেন? বস্তুতঃ এরূপ আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী।
কাজেই, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারকের খিলাফ কোন অর্থ গ্রহণ করা যাবেনা বরং এমন অর্থ ব্যবহার বা গ্রহণ করতে হবে, যাতে উনাদের শান মুবারক সমুন্নত থাকে।
যেমন পবিত্র সূরা আনআম ৭৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তরজমা বর্ণনায় অনেকে মূর্তিপূজক আযর নামক ব্যক্তিটিকে হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পিতা বলে উল্লেখ করে থাকে। যা সম্পূর্ণরূপে ভুল ও কুফরী। কেননা তা মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার এবং সর্বোপরি সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পবিত্রতম শান বা মর্যাদা মুবারক উনার প্রকাশ্য বিরোধী।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وتقلبك فى الساجدين
অর্থ : মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে) সিজদাকারীগণ উনাদের মধ্যে স্থানান্তরিত করেছেন। (পবিত্র সূরা শুআরা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২১৯)
এ পবিত্র আয়াতে কারীমা দ্বারা প্রতীয়মান হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ব পুরুষ আলাইহিমুস সালাম এবং পূর্ব মহিলা আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সকলেই পরিপূর্ণ ঈমানদার ও দ্বীনদার ছিলেন। উনাদের কেউই কাফির মুশরিক ছিলেন না।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لـم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات
অর্থ : আমি সর্বদা পূতঃপবিত্র পুরুষ ও মহিলা উনাদের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছি। (তাফসীরে কবীর)
এছাড়া আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা হচ্ছে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কারো পিতা ও মাতা উনারা কেউই কাফির-মুশরিক ছিলেন না। তাহলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ব পিতা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা তিনি কি করে মূর্তিপূজক তথা মুশরিক হতে পারেন!
অতএব বলার অপেক্ষা রাখেনা, উক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আযর নামক ব্যক্তিটি আসলে উনার পিতা ছিলো না; বরং উনার চাচা ছিল। সুতরাং উক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ابيه অর্থ উনার পিতা নয় বরং উনার চাচা। আর উনার পিতা হচ্ছেন হযরত তারাহ আলাইহিস সালাম।
অনুরূপভাবে সূরা ত্ব-হা শরীফ উনার ১২১নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার শেষাংশে
وعصى ادم ربه فغوى
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তরজমা বর্ণনায় অনেকে বলে থাকে যে, হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম তিনি উনার পালনকর্তার আদেশ লঙ্ঘন করলেন, ফলে তিনি পথভ্রান্ত হয়ে গেলেন। নাউযুবিল্লাহ!
এ তরজমা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রথম নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ হওয়ার কারণে প্রকাশ্য কুফরী। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা হচ্ছে সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা পবিত্র ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। উনারা পবিত্র ওহী মুবারক ছাড়া কোন কথা বলেননি এবং কোন কাজ করেননি। তাই উনারা সমস্ত গুনাহখতা, ভুল-ভ্রান্তির উর্ধ্বে। উনারা মা’ছূম বা নিষ্পাপ। তাছাড়া হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নবী-রসূল হিসেবেই সৃষ্টি করা হয়েছে। কাজেই, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানী বা অবাধ্যতাজনিত কাজ সংঘঠিত হয় কি করে এবং তিনি পথভ্রান্ত বা পথহারা হন কি করে?
প্রকৃতপক্ষে উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ছহীহ অর্থ হচ্ছে, হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম তিনি উনার রব তায়ালা উনার আদেশ মুবারক পালন করলেন অতঃপর যমীনে তাশরীফ আনলেন। অর্থাৎ ফরমাবরদারী করে জমিনে তাশরীফ মুবারক আনলেন।
একইভাবে সূরা দ্বুহা শরীফ উনার ৭নং পবিত্র আয়াত শরীফ-
ووجدك ضالا فهدى
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তরজমা বর্ণনায় অনেকেই বলে ও লিখে থাকে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পথহারা পেয়েছেন অতঃপর পথ প্রদর্শন করেছেন। নাউযুবিল্লাহ!
এ তরজমা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে জঘণ্য কুফরীর শামিল। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো সৃষ্টিই হয়েছেন মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হিসেবে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে; যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে।
সুতরাং যিনি সৃষ্টিই নবীউল্লাহ, রসূলুল্লাহ, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে তিনি পথহারা, বিভ্রান্ত হন কি করে! এ তরজমা কোন মুসলমান করতে পারেনা। কেউ করলে তাকে খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। অন্যথায় জাহান্নাম ব্যতীত তার জন্য কোন জায়ঠিকানা থাকবে না।
প্রকৃতপক্ষে উক্ত আয়াত শরীফ উনার সঠিক অর্থ হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে কিতাববিহীন পেয়েছেন অতঃপর কিতাব প্রদান করেছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী উনাদেরকে রাবী বলা হয়। এই রাবীগণ উনাদের মধ্যে যাঁরা প্রথম শ্রেণীর রাবী, উনাদেরকে বলা হয় ছেক্বাহ রাবী।
পবিত্র হাদীছ শরীফ বিশারদগণ উনারা ছেক্বাহ্ রাবী হওয়ার জন্য যে মানদ- নির্ধারণ করেছেন, তার মধ্যে মূল বিষয় হচ্ছে- (১) আদালত ও (২) জব্ত। জব্ত হচ্ছে- প্রখর স্মরণশক্তি। তা এমন যে, একবার শুনলে আর ভুলেনা। আর আদালত-এর মধ্যে যে শর্তসমূহ রয়েছে, তার মধ্যে প্রধান হলো দু’টি। যথা- (ক) তাক্বওয়া, (খ) মুরুওওয়াত। (ক) তাক্বওয়া হচ্ছে- কুফর-শিরক, বিদ্য়াত ও ফাসিকী কাজ থেকে বেঁচে থাকার সাথে সাথে কবীরাহ গুণাহ থেকে, এমনকি ছগীরাহ গুণাহও বার বার করা থেকে বেঁচে থাকা। পবিত্র হাদীছ শরীফ সম্পর্কে মিথ্যা না বলা। সাধারণ কাজে মিথ্যা না বলা। অজ্ঞাতনামা না হওয়া, অপরিচিত না হওয়া। গাফলতী না থাকা। বদ আক্বীদা সম্পন্ন না হওয়া। বে-আমল না হওয়া। (খ) আর মুরুওওয়াত হচ্ছে- অশ্লীল-অশালীন, অশোভনীয়, অপছন্দনীয় আচার-আচরণ, উঠা-বসা, চাল-চলন, যেখানে-সেখানে ইস্তিঞ্জা করতে বসা, হাট-বাজারে গিয়ে চিৎকার করা, রাস্তা-ঘাটে লোকজনের সাথে অনর্থক ঝগড়া-ঝাটি করা ও তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হওয়া এমনকি দৃষ্টিকটু কাজ থেকে বিরত থাকা। যেমন- রাস্তায় হেঁটে হেঁটে খাদ্য খাওয়া, রাস্তায় অট্টহাস্য করা, চিৎকার করা ইত্যাদি। (তাদরীবুর রাবী, মুকাদ্দামাতুশ শায়েখ, মীযানুল আখবার, নূরুল আনোয়ার, মুকাদ্দামাতুল মিশকাত)
এখন ফিকিরের বিষয় এই যে, পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী ছেক্বাহ্ রাবী যদি এত গুণ ও যোগ্যতাসম্পন্ন এবং তাক্বওয়াধারী হন অর্থাৎ পবিত্র হাদীছ শরীফ বিশারদ এই উম্মতের নিকট যদি ছেক্বাহ রাবী হিসেবে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী হওয়ার জন্য ছগীরাহ্ গুণাহ্ বার বার না করা ও দৃষ্টিকটু সাধারণ অপছন্দনীয় কাজও না করা শর্ত হয়, তাহলে যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হবেন এবং মহান আল্লাহ্ পাক উনার কালাম বর্ণনা করবেন, উনাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি কি মানদ- নির্ধারণ করেছেন বা উনাদের ক্ষেত্রে কি পরিমান মা’ছূম ও মাহ্ফূজ হওয়া নির্দিষ্ট করেছেন তা অনুধাবনীয়।
অতএব, যে কোন লোকের জন্যই হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের শান মুবারক উনার বিন্দুমাত্র খিলাফ কথাবার্তা বলা সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরী। এ ধরণের কুফরী আক্বীদা থেকে বেঁচে থাকা সমস্ত মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয।