১১ জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪১
উসদুল গবাহ’তে উল্লেখ রয়েছে,
فَلَمَّا اَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ {تَبَّتْ يَدَا اَبِـىْ لَـهَبٍ} قَالَ اَبُوْ لَـهَبٍ لِّاِبْنَيْهِ رَأْسِىْ مِنْ رُءُوْسِكُمَا حَرَامٌ اِنْ لَّـمْ تُطْلِقَا اِبْنَتَىْ سيدنا نبينا حبيبنا شفيعنا مولانا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি নাযিল করলেন, ‘আবূ লাহাবের দু’হাত ধ্বংস হোক’। অর্থাৎ সম্মানিত ও পবিত্র লাহাব শরীফ নাযিল মুবারক করলেন, তখন আবূ লাহাব সে তার দুই পুত্রকে বললো, আমি পুনরায় তোমাদের চেহারা দেখবো না, যদি তোমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা দুই বানাত (মেয়ে) আলাইহিমাস সালাম উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক থেকে মাহরূম হয়ে না যাও।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (উসদুল গবাহ)
আর তাদের মা উম্মে জামীল বলেছিলো,
فَطَـلِّـقَاهُـمَا فَفَعَلَا فَطَلَّقَاهُـمَا قَبْلَ الدُّخُوْلِ بِـهِمَا.
অর্থ: “তোমরা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের থেকে জুদা হয়ে যাও। তারা তাদের মায়ের কথা অনুযায়ী কাজ করলো। ফলশ্রুতিতে সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক থেকে উতবা মাহরূম হয়ে গেলো এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক থেকে উতাইবাহ মাহরূম হয়ে গেলো। উনারা তখনও তাদের ঘরে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রাখেননি।” সুবহানাল্লাহ! (উসদুল গবাহ)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,
وكانت قد تزوجها عتيبة بن أبي لهب أخو عتبة الذي تزوج أختها رقية ولم يدخلا بهما فأمره أبوه وأمه أن يفارقها كما أمرا أخاه أن يفارق أختها وجاء إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال له كفرت بدينك وفارقتُ ابنتك لا تحبني ولا أحبك ثم سطا عليه فشق قميص النبي صلى الله عليه وسلم.
অর্থ: “সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে উতাইবার এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে উতাইবার ভাই উতবার সম্মানিত আক্বদ শরীফ হয়েছিলো। কিন্তু উনারা তখনও তাদের গৃহে তাশরীফ মুবারক রাখেননি। এর পূর্বেই উতাইবার বাবা-মা তাকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক থেকে মাহরূম হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলো, যেমনিভাবে সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক থেকে মাহরূম হয়ে যাওয়ার জন্য উতবাকে নির্দেশ দিয়েছিলো। উতাইবাহ তার বাবা-মার নির্দেশ পেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ উপস্থিত হয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললো,
كَفَرْتُ بِدِيْنِكَ وَفَارَقْتُ ابْنَتَكَ لَا تُـحِبُّنِـىْ وَلَا اُحِبُّكَ ثُـمَّ سطا عَلَيْهِ فَشَقَّ قَمِيْصَ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “আমি আপনার সম্মানিত দ্বীন উনাকে অস্বীকার করলাম এবং আপনার মহাসম্মানিতা বানাত সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক থেকে মাহরূম হয়ে গেলাম। আপনি আমাকে মুহব্বত করেন না, আমিও আপনাকে মুহব্বত করি না। নাঊযুবিল্লাহ! অর্থাৎ আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। না‘ঊযুবিল্লাহ! অতঃপর সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং উনার সম্মানিত কোর্তা মুবারক ছিঁড়ে ফেলে। না‘ঊযুবিল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উতাইবার এই অচরণে চরম অসন্তুষ্ট হন এবং তার বিরুদ্ধে বদদোয়া করেন,
اَمَا اِنِّـىْ اَسْأَلُ اللهَ اَنْ يُّـسَـلِّـطَ عَلَيْكَ كَلْبًا مِّنْ كِلَابِهٖ .
অর্থ: “সাবধান! নিশ্চয়ই আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সম্মানিত দোয়া মুবারক করছি, তিনি যেন উনার কুকুরসমূহ থেকে একটি কুকুরকে তোমার উপর গালিব বা প্রবল করে দেন।” সুবহানাল্লাহ!
অপর বর্ণনায় এসেছে,
فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَللّٰهُمَّ سَـلِّـطْ عَلَيْهِ كَلْبًا مِّـنْ كِلَابِكَ.
অর্থ: “অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আপনি আপনার কুকুরসমূহ থেকে একটি কুকুরকে তার উপর গালিব বা প্রবল করে দিন।” সুবহানাল্লাহ! (দালাইলুন নুবুওওয়াহ লিল বাইহাক্বী, যখায়েরুল ‘উক্ববাহ)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
اَللّٰهُمَّ سَـلِّـطْ عَلَيْهِ اَسَدًا
অর্থ: “আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আপনি একটি সিংহকে তার উপর গালিব বা প্রবল করে দিন।”সুবহানাল্লাহ!
অপর বর্ণনায় এসেছে,
اِنَّ عُتْبَةَ ابْنَ اَبِـىْ لَـهَبٍ كَانَ يَسُبُّ الرَّسُوْلَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيُؤْذِيْه وَيسخر مِنَ الرَّسُوْلِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمِنَ الْقُرْاٰنِ فَدَعَا عَلَيْهِ الرَّسُوْلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ اَللّٰهُمَّ سَـلِّـطْ عَلَيْهِ كَلْبًا مِّـنْ كِلَابِكَ
অর্থ: “উতবাহ ইবনে আবূ লাহাব সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গালি দিয়েছিলো, উনাকে কষ্ট দিয়েছিলো এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনাদেরকে নিয়ে উপহাস করেছিলো, ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করেছিলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! ফলশ্রুতিতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উতবার বিরুদ্ধে বদদোয়া মুবারক করেছিলেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,
اَللّٰهُمَّ سَـلِّـطْ عَلَيْهِ كَلْبًا مِّـنْ كِلَابِكَ.
অর্থ: “আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আপনি আপনার কুকুরসমূহ থেকে একটি কুকুরকে তার উপর গালিব বা প্রবল করে দেন।” সুবহানাল্লাহ!
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
اَللّٰهُمَّ سَـلِّـطْ عَلَيْهِ اَسَدًا
অর্থ: “আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আপনি একটি সিংহকে তার উপর গালিব বা প্রবল করে দিন।” সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুস সালাম মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র যবান মুবারক) নিঃসৃত উপরোক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালাম মুবারক শুনে উতবাহ ও উতাইবার মনে ভীষণ ত্রাসের সঞ্চার হলো। এমনকি তাদের পিতা আবূ লাহাবের মনেও সেদিন থেকে একটি প্রবল ভীতির সৃষ্টি হলো। সেদিন থেকে উতবাহ, উতাইবাহ এবং আবূ লাহাবের চেহারায় সেই ত্রাস ও ভীতির নিদর্শন এমনভাবে ফুটে উঠলো যে, যেকোনো লোক তাদেরকে দেখেই মনে করতো যে, নিশ্চয়ই আবূ লাহাব ও তার দুই পুত্র উতবাহ ও উতাইবাহ কোনো অশুভ চিন্তায় আক্রান্ত হয়েছে। এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর আবূ লাহাব তার দুই পুত্রকে নিয়ে সিরিয়ায় বাণিজ্য যাত্রার জন্য প্রস্তুত হলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করার পর তারা যে ত্রাস ও ভীতির শিকার হয়েছিলো, তা তখনও তাদের মধ্যে পূর্ণরূপে বিরাজমান ছিলো। সিরিয়ায় বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে পথিমধ্যে একস্থানে রাত যাপনের জন্য তাঁবু খাটালো। কেউ কেউ উক্ত স্থানের নাম যারক্বা’ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এ সময় তাদের সেই ভীতি ও ত্রাস আরো প্রবল আকার ধারণ করলো। যার কারণে তারা নিরাপত্তার জন্য তাঁবুর চারদিকে তাদের ব্যবসায়িক পণ্যসমূহ উঁচু করে স্তূপাকার করে রাখলো এবং তার মাঝখানে উতবাহ ও উতাইবার জন্য শোয়ার ব্যবস্থা করলো। যাতে করে কোনো জীবজন্তু তা অতিক্রম করে উতবাহ ও উতাইবাহর উপর হঠাৎ করে হামলা করতে না পারে। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি কাউকে নিশ্চিহ্ন করতে চান, ধ্বংস করতে চান, তাহলে কায়িনাতের বুকে দ্বিতীয় কেউ নেই তাকে রক্ষা করে। গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমে অচেতন, তখন অত্যন্ত ভয়ঙ্কর গর্জন করে দুইটি সিংহ লাফ দিয়ে পণ্যের উঁচু স্তূপ ডিঙ্গিয়ে উতবাহ ও উতাইবাহর ঘাড়ের উপর যেয়ে পড়লো এবং চোখের পলকে তাদের ঘাড় মটকিয়ে তাদেরকে পিঠে নিয়ে উধাও হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ! কাফিলার যেসব লোক তাঁবু প্রহরায় নিযুক্ত ছিলো তারা সবাই ভীত চকিত নয়নে এই ভয়ানক দৃশ্য দেখলো; কিন্তু তাদের কিছুই করার ছিলো না। মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে যখন গযব আসে, তখন এভাবেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে হয়। মুহূর্তের মধ্যে কাফিলার লোকজনের মাঝে হুলুস্থ’ল পড়ে গেলো। কান্নার রোল উঠলো। কিন্তু করার কিছুই অবশিষ্ট থাকলো না। আবূ লাহাবের এ যাত্রায় আর সিরিয়া গমন করা হলো না। সে সেখান থেকেই বিষাদ ভারাক্রান্ত চিত্তে বাড়িতে ফিরে এলো।
মূলত, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে কষ্ট দেয়ার কারণেই তাদের এই ভয়াবহ কঠিন পরিণতি হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি খাছ গযব নাযিল করে তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!