‘জাস্ট অ্যা ওয়াটার’ বা ‘বেশি করে পানি খাও’
মুজাদ্দিদে আযম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন- কেউ যদি দৈনিক ১৬বাটি পানি পান করেন তাহলে তার দেহে ৮০% রোগমুক্ত থাকবে। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
كُلُوْا وَاشْرَبُوْا مِنْ رِّزْقِ اللهِ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার দেয়া রিযিক থেকে খাও ও পান করো।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬০)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالَثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ كَانَ اَحَبُّ الشَّرَابِ اِلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْـحُلْوُ الْبَارِدُ.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট খাবার পানির মধ্যে সর্বাধিক প্রিয় ছিল ঠান্ডা ও মিষ্টি বা সুস্বাদু পানি।” (তিরমিযী শরীফ: কিতাবুশ শারাবাহ: হাদীছ শরীফ নং ১৮৯৫; আবূ ইয়ালা শরীফ ৪র্থ খণ্ড ২৯৯ পৃষ্ঠা: হাদীছ শরীফ নং ৪৫১৬)
আমাদের শরীরে প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগই পানি। সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে তাই পানি পানের বিকল্প নেই। পানির অপর নাম জীবন। তাই নিয়মিত পানি খাওয়া খুব জরুরী। কিন্তু শীতকালে গরমকালের তুলনায় পিপাসায় কিছুটা কম থাকার কারণে অধিকাংশ সময় পানি খাওয়া হয় না অথবা খেলেও পরিমাণ মতো খাওয়া হয় না। ফলে দেখা দেয় নানান সমস্যা।
যার যত ওজন সেই হিসেবে পানি পান করা প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া কাজের ধরন, পরিবেশ ইত্যাদির ওপরেও পানি পানের পরিমাণ নির্ভর করে।
প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় স্বাস্থ্যকর খাবার, শরীরচর্চা, ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম এবং প্রচুর পানি পান করুন। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় যে, খাবারের ২০ থেকে ৩০ মিনিট আগে দুই বাটি পানি পান করা দেহকে সুস্থ রাখে, বিপাক প্রক্রিয়া বাড়ায় ও ক্ষুধার চাহিদা কমায়।
দৈনিক যতটা পানি প্রয়োজন: সুস্থ থাকার জন্য একজন মানুষের প্রতিদিন অন্তত চার লিটার পানি খাওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করেন বেশির ভাগ চিকিৎসক। পানি দিনের যে কোনও সময়েই নির্দ্বিধায় খাওয়া যায়। তাতে উপকারই হয়। কাজের ধরন এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা বুঝে পানি পান করা উচিত। অনেক গবেষণাতেই দেখা গেছে দৈনিক চার লিটার পানি পান করা জরুরি। কতটুকু পানি পান করতে হবে তা আপনার ওজনের উপর নির্ভর করে। যার ওজন যতবেশি তার পানির চাহিদা তত বেশি। আমাদের শরীরের ৭০ শতাংশ পানি। সুস্থ থাকলে একজন মানুষের পানি পানের বিকল্প নেই।
প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের দিনে ১২ গ্লাস বা ৩ লিটার পানি পান করা দরকার। অন্যদিকে পুরুষদের প্রায় ১৬ বাটি বা ৪ লিটার পানি পান করতে হবে।
তথা সাধারণ অবস্থায় একজন পূর্ণবয়স্ক নারী ও পুরুষের দৈনিক জন্য মিনিমাম ৪ লিটার বা ১৬ বাটি পানি পান করা প্রয়োজন। এ ছাড়া মহিলাদের গর্ভকালীন অবস্থায় বেশি পানি পান করতে হবে। দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমান পানি পান করলে ৮৫ভাগ রোগ থেকে নিরাপদ থাকা যায়।
অনেকে মনে করে থাকে, শিশুদের কম পানি পান করলেও চলবে। এটি ঠিক নয়। ১-১০ কেজি ওজনের শিশুকে প্রতি কেজি ওজন হিসাবে ১০০ সিসি তরল পান করাতে হবে। ১১-২০ কেজি ওজনের জন্য প্রতি কেজি ওজন হিসাবে ১ লিটার ও ২০ কেজির বেশি ওজনের শিশুর জন্য প্রতি কেজি ওজন হিসাবে ১.৫ লিটার তরল পান করাতে হবে। এ ক্ষেত্রে পানি পান করানোই ভালো।
তাই শীতকালের চেয়ে গরমকালে শরীরে পানির চাহিদা বেড়ে যায় আবহাওয়ার কারণেই। আর যারা কায়িক পরিশ্রম বেশি করে, তাদের বেশি পানি পান করতে হয়। যারা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঘামে, তাদের জন্য একটু বেশি পানি পান করা জরুরী। তবে মহিলাদের চেয়ে পুরুষরা পরিমাণে বেশি পানি পান করে থাকে। সাধারণভাবে যখনই পানির তৃষ্ণা তৈরি হবে, তখনই পানি পান করে শরীরের ঘাটতি মেটানো উচিত। দিনের কোনও একটা সময়ে একসঙ্গে অনেকটা পানি না খেয়ে বরং সারাদিন ধরেই সমান তালে পানি খেতে পারেন। শরীরে যেন পানির ঘাটতি কোনও ভাবেই না হয়, সেটা খেয়াল রাখুন।
পর্যাপ্ত পানি পানের সুফল: পানি সমস্ত রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো ওষুধ। তবে সে পানি হতে হবে বিশুদ্ধ। পানি আমাদের শরীর কে সতেজ রাখে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। পানি পান করলে তা দেহ থেকে টক্সিন (বিষ) তাড়ায়, চামড়ার আর্দ্রতা রক্ষা করে, হজম শক্তি বাড়ায়। এক কথায়, স্বাস্থ্যের প্রভূত উপকার করে। কিডনীর কার্যকারিতা সঠিক ভাবে পরিচালনা করার জন্য পানি অনেক সাহায্য করে। ত্বক ও শরীর হাইড্রেট রাখে ফলে ত্বক উজ্জ্বল দেখায়। শরীরের ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদান যেমন :ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন, ইত্যাদি দুর করে।
পর্যাপ্ত পানি পানের উপকারিতা নিম্নরূপ-
১. শরীরের কোষগুলোকে সবল ও স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
২. শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে।
৩. কিডনি, যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্ক ভালো থাকে।
৪. মাথার যন্ত্রণা, অম্বল, শরীরের ব্যথা এবং ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
৫. খাবার হজমে সহজ হয়।
৬. সবচেয়ে সহজে শরীরের ওজন কমানো যায়।
৭. শরীর থেকে সমস্ত বিষাক্ত পদার্থ বা টক্সিন দূর করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৮. পেশী ও হাড় সুস্থ থাকে।
৯. ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে সহায়ক ও ত্বকের শুষ্কতা রোধে উপকারী।
১০. শরীরে শক্তির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
অপর্যাপ্ত পানি পানের সমস্যা: পানি কম খেলে যেমন ভুগতে হয় পানিশূন্যতায় তেমনই দেখা যায় কিডনির সমস্যার মতো বড় সমস্যাও। এজন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা। পর্যাপ্ত পানি না খেলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন- প্রথমত ডিহাইড্রেশন হয়ে থাকে। পানি শূন্যতার কারণে শরীর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। শরীর তার স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে না। তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়া,মুখের ভেতরে শুকনো ভাব, মাথাব্যথা এবং মাথা ঘোরা, পেশির দুর্বলতা, শরীরের দুর্বলতা অনুভব করা। কোষ্ঠকাঠিন্য, শারীরিক শক্তির মাত্রা হ্রাস পাওয়া ইত্যাদী। এমনভাবে চলতে থাকলে এসব নানা রোগ বাসা বাধে শরীরে।
১. শরীরের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২. শরীরে রক্ত চলাচল কমে যায় ফলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
৩. ইউরিন ইনফেকশন এবং কিডনির জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি কিডনি অকেজো হয়ে পড়ারও আশঙ্কা থাকে।
তাই শরীরে পানির ঘাটতি মেটাতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা উচিত।
পানি পানের মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক:
১. ডান হাতে পানি পান করা।
২. বসে পানি পান করা।
৩. ‘বিসমিল্লাহ’ বলে পানি পান শুরু করা।
৪. পানি পানের পূর্বে পানির পাত্রে ক্ষতিকারক কিছু আছে কিনা দেখে পান করা।
৫. তিন ঢোকে বা শ্বাসে পানি পান করা।
৬. পানি পান শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পাঠ করা।
৭. কাঠের পেয়ালাতে পানি পান করা।
সুতরাং কাজের প্রয়োজনে বাহিরে যেতেই হয় এজন্য সাথে অবশ্যই পানির বোতল রাখার অভ্যাস করুন। নির্দিষ্ট মাপের বোতল থেকে পানি খান তাহলে দিনে কতটুকু পানি খেলেন তার পরিমাপ বোঝা যাবে। পরিমানমত পানি পান করুন এবং সুস্থ থাকুন।
শত ব্যস্ততার মাঝেও অনেকে দৈনিক ১৬-ষোল বাটি পানি পানের অভ্যাস ধরে রাখেন। আর নিয়মিত সু্সথ থাকেন।