সাইয়্যিদু সাইয়্যিদুশ শুহূরিল আযম রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার ১১ তারিখ। ইমামুন নাহু ওয়াছ ছরফ, উস্তাদুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ, ফখরুল আউলিয়া আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ উম্মিল উমাম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার সুমহান দিবস ৷

ইমামুন নাহু ওয়াছ ছরফ, উস্তাদুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ উম্মিল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি ১৪৩৪ হিজরী সন উনার পবিত্র ১১ রবীউল আউওয়াল শরীফ পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তিনি বিশ্ববিখ্যাত ও বিশ্বসমাদৃত হক্ব সিলসিলা রাজারবাগ শরীফ সিলসিলা উনার মহাসম্মানিত নানা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম নামে মশহুর।

উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ:
তিনি ১৯২৭ ঈসায়ী সালে মহাসম্মানিত কুরাইশ বংশে পবিত্রতম ‘আহলে বাইত শরীফ’ উনাদের মহাপবিত্রতম পরিবারে মহান ওলীআল্লাহ হিসেবে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তিনি দুনিয়াতে ৮৫ বৎসর হায়াতে জিন্দেগী মুবারক-এ ছিলেন।

সম্মানিত ইলমে শরীয়ত ও মা’রিফাত:
তিনি সম্মানিত ইলমে শরীয়ত ও মা’রিফাতের পূর্ণ কামালিয়ত হাছিল করেন। সম্মানিত ইলমে মা’রিফাতের সর্বোচ্চ মাক্বামে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য তিনি সর্বকালের, সর্বযুগের, সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, জামিউল আলক্বাব, আওলাদে রসূল রাজারবাগ শরীফ উনার সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে বায়াত হয়ে নকশাবন্দীয়া তরীক্বার ছবক নিয়মিত আদায় করে উহার পূর্ণ নিয়ামত হাছিল করে কামিয়াবীর চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটান। সুবহানাল্লাহ!
তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, জামিউল আলক্বাব, আওলাদে রসূল রাজারবাগ শরীফ উনার সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত শ্বশুর এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল উমাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম।
তিনি বিভিন্ন মাদরাসার পাঠ্যপুস্তক ও আরবী, উর্দূ, ফারসী, কাওয়ায়েদের উপর অনেক কিতাব রচনা করেছেন। তিনি নিজেই প্রকাশ করে গেছেন যে, তিনি ও উনার পূর্বপুরুষসহ সকলেই আরাবী কুরাইশী তথা আওলাদে রসূল উনাদের অন্তর্ভুক্ত। উনি বেমেছাল ইলমের অধিকারী ছিলেন। উনার ইলমের প্রভাবের কারণে বর্তমান দুনিয়ার যারা আলিম-ওলামা দাবি করে থাকে, তারা উনার নাম শুনলে ভয় পেয়ে যেত। উনাকে নাহু ছরফের ইমাম বলা হয়। বাংলাদেশে ছাপানো পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উনার নাম মুবারক শুরুতে অথবা শেষে কভার পেজে দেখা যায়। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনাদের পবিত্র নিসবাতুল আযীম মুবারক উহার বিষয়টা পবিত্র ইলহামের মাধ্যমে সম্মানিত আবূ উম্মিল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি জানতে পারেন। এবং তখন থেকে তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান ছিলেন- কবে কখন সেই যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, গাউছূল আ’যম উনার সাথে উনার পবিত্রতমা আদরের আওলাদ তিনি সেই পবিত্র পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হবেন।
এদিকে কুতুবুজ্জামান, কুতুবুল ইরশাদ, মুসতাজাবুদ দাওয়াত আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকেও মহান আল্লাহ পাক তিনি ইলহাম করেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও বিষয়টা জানিয়ে দেন।
অতঃপর সম্মানিত দাদা হুযূর কিবলা আলাইহিস সালাম তিনি একদিন সম্মানিত আবূ উম্মিল উমাম আলাইহিস সালাম উনাকে এ মুবারক বিষয়টি বলেন। তখন তিনি বলেন, “হ্যাঁ, এটাতো আমিও জেনেছিলাম অনেক আগেই এবং তখন থেকেই আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম।
অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ উম্মিল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি অতি আনন্দ চিত্তে খুশি প্রকাশ করেন এবং ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে শুকরিয়া জ্ঞাপন করে বললেন, আজ থেকে আমি ইতমিনান হলাম, আমার অনেক দিনের স্বপ্ন পূর্ণ হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ!

উনার ক্বওল শরীফ:
তিনি একদিন যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ মুজাদ্দিদে আ’যম ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার শান-মান আলোচনা করতে গিয়ে এক প্রসঙ্গে বলেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন- দুনিয়াতে আপনি কি আমল করে এসেছেন? আমি এর জবাবে বলবো, আয় আল্লাহ পাক! আমি তেমন কিছুই করতে পারিনি, তবে আমি যামানার যিনি ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার খাছ লক্ষ্যস্থল ওলী, আপনার প্রেরিত যিনি মহান খলীফা সেই মহান মুজাদ্দিদ আয’ম উনার মুবারক ছোহবতে কিছু সময় আমি অতিবাহিত করে এসেছি।” এরপর তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, আমি যদি এতটুকুই বলি তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার কবরে কোনো সুওয়াল-জওয়াবই করবেন না ইনশাআল্লাহ এবং আমার নাজাতের জন্য এটাই যথেষ্ট হবে। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র রাজারবাগ দরবার শরীফ-এ উনার পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস উপলক্ষে পবিত্র কুরআন শরীফ, খতমে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম পাঠসহ অনেক দোয়া ও দুরূদ শরীফ পাঠ করা হবে এবং উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস উপলক্ষে, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা উনার মুয়াল্লিমগণ, ছাত্রবৃন্দ ও সিলসিলাভুক্ত অন্যান্য মুরীদগণ পবিত্র কুরআন শরীফ খতম, যিকির-আযকার ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগী করে ছওয়াব রেসানী করবেন। সুবহানাল্লাহ!

পুরুষদের ন্যায় মহিলাদেরও দ্বীনী তা’লীম গ্রহণ করা ফরযে আইনের অন্তর্ভুক্ত

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলার জন্য ইলম অর্জন করা ফরয।”
বর্তমানে দেখা যায়, দেশে-বিদেশে পুরুষরা বাইয়াত গ্রহণ করে, যিকির-ফিকির করে আমল করে। কিন্তু মেয়েদেরকে কিতাবাদি পড়তে বা যিকির-ফিকির করতে খুব একটা দেখা যায় না। বরং মেয়েদেরকে বেশি বেশি পড়ানো উচিত এবং যিকির করতে দেয়া উচিত। কেননা, একজন মেয়ে হচ্ছেন একজন মা। একজন মায়ের কাছে সন্তান যত তা’লীম নিতে পারে বাবার কাছে ততটুকু পারে না।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাবা জাহিরীভাবে যিকির-ফিকির, আমল করে তথাকথিত ছূফী হয়েছেন অথচ তার ছেলেমেয়েগুলো হয়েছে আশাদ্দুদ্্ দরজার জাহিল। এর কারণ হচ্ছে, মাকে তা’লীম দেয়া হয়নি। মাকে ছোট অবস্থায় তার পিতা-মাতা তা’লীম না দেয়ায় মা জাহিল বিধায় তার ছেলেমেয়েগুলোও জাহিল হয়েছে। কাজেই মেয়েদেরকে আগে তা’লীমের তাগিদ দিতে হবে। পুরুষ যতটুকু তা’লীম নিবে তার চেয়ে বেশি তা’লীম দিতে হবে মেয়েদেরকে। তাহলেই ছেলেমেয়েরা তা’লীম পাবে, আল্লাহওয়ালা-আল্লাহওয়ালী হতে পারবে।
বর্তমানে যারা ‘মহিলা দিবস’ পালন তথা ‘মহিলা মুক্তির’ শ্লোগান দিয়ে চরম বেপর্দা মহিলাদের বদ আদর্শকে তুলে ধরতে চায় তারা মূলতঃ চরম জাহিলের অন্তর্ভুক্ত। মহিলা মুক্তির নাম দিয়ে অসংখ্য, অগণিত পর্দানশীন মহিলাদের জাহিলিয়াতের যুগের মতো বেপর্দা হয়ে সৌন্দর্য প্রদর্শন করে চলতে শিখাচ্ছে। 
উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে বেপর্দা-বেহায়া হয়ে দুনিয়াবী শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য পাঠাননি। মহান আল্লাহ পাক তিনি পাঠিয়েছেন আল্লাহওয়ালা ও আল্লাহওয়ালীদের ছোহবত ইখতিয়ারের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুবারক মুহব্বত-মা’রিফত হাছিল করার জন্য।
সারা জাহানের কুল-মুসলিমাদের অত্যন্ত সুনছীব যে, তাদের জন্য রয়েছে বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, হাবীবুল্লাহ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা ছহিবাতুল মুকাররমাহ সাইয়্যিদাতুন নিসা, উম্মাহাতুল মু’মিনীন, হাবীবাতুল্লাহ হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার মুবারক ছোহবত এবং নূরানী তা’লীম। বেপর্দা, পথহারা, বেদিশা, বেহায়া, বিভ্রান্ত মহিলারা আজ হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার মুবারক ছোহবত ও নূরানী তা’লীম-তালক্বীনের মাধ্যমে নিজেদের পবিত্র ঈমান-আমল, আক্বীদা, হিফাযতের পাশাপাশি খাছ শরয়ী পর্দা করতে পারছে। সারাদেশ থেকে লক্ষাধিক মহিলাগণ সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার মুবারক ছোহবত ইখতিয়ারের মাধ্যমে নিজেরা যেমন তাছাউফপন্থী তথা আল্লাহওয়ালী হচ্ছেন তেমনি তাদের ছেলেমেয়েদেরকেও সে অনুযায়ী গড়ে তুলতে পারছেন। বর্তমান ফিতনা-ফাসাদের যুগে মহিলাদের পবিত্র ঈমান, আমল, আক্বীদা, পর্দা, ইজ্জত, আবরু হিফাযত করার লক্ষ্যে প্রত্যেক পুরুষদের উচিত তাদের মা-বোন, মেয়ে-স্ত্রীদের হাবীবাতুল্লাহ হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার মুবারক ছোহবত এবং নূরানী তা’লীমী মজলিসে পাঠানো। কেননা মেয়ে একদিন মা হবেন। মেয়ে যদি আল্লাহওয়ালী হয়, তাহলে তার আল-আওলাদও আল্লাহওয়ালা-আল্লাহওয়ালী হতে পারবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদেরও দ্বীনী তা’লীমী মজলিসে অংশগ্রহণ করা যে ফরযে আইন সে বিষয়টা হাক্বীক্বীভাবে উপলব্ধি করে সে অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
উল্লেখ্য, পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ ও রমাদ্বান শরীফ উভয় সম্মানিত মাসে মাসব্যাপী রাজারবাগ দরবার শরীফ-এ খাছ পর্দার সাথে মহিলাদের তালিম অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া প্রতিদিনই ফালইয়াফরাহু শরীফ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট