যেদেশে জনগণকে সব ক্ষমতার উৎস ধরা হয়, সেদেশের জনগণ থেকে ভেজালশূন্যতা আশা করা যায় না

ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্রের অপতৎপরতা রোধে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় কোনো উদ্যোগ নেই। কালেভদ্রে ভেজালবিরোধী অভিযানে ভেজাল মিশ্রণকারীরা গ্রেফতার হয়। কঠিন আইন না থাকায় আইনের ফাঁক গলিয়ে জামিনে বের হয়ে আবার তারা ভেজাল মিশ্রণের কাজে নেমে পড়ে।
মূলত শুধু আইনের বল প্রয়োগেই এ ভেজাল প্রবণতা রোধ করা যাবে না। কারণ মানুষের তৈরি আইনের গোলকধাঁধায় মানুষ সহজেই পার পেয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকীয় হলো- মানুষের সৃষ্টিকর্তা খালিক্ব মালিক রব আল্লাহ পাক উনার প্রতি অনুগত হওয়া ও উনার ভয় লালন করা এবং এ সম্পর্কিত মূল্যবোধ ও চেতনা জাগ্রত করা।
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার পরিভাষায় বান্দা হিসেবে প্রত্যেককে দুটি হক্ব আদায় করতে হয়। একটি হলো ‘হক্কুল্লাহ্্’। যার অর্থ হলো- মহান আল্লাহ পাক উনার হক্ব। যথা- পবিত্র নামায, পবিত্র রোযা, পবিত্র হজ্জ, পবিত্র যাকাত ও আনুষাঙ্গিক ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত ইত্যাদি বিষয়। অপরটি হলো- ‘হক্কুল ইবাদ’ বা বান্দার হক্ব। অর্থাৎ কোনো বান্দার প্রতি অপর বান্দার যে হক্ব রয়েছে তা যথাযথভাবে আদায় করা বা নষ্ট না করা। যেমন কোনো দোকানির কাছ থেকে জিনিস কেনা বা কোনো খাদ্য বিক্রেতার কাছ থেকে খাদ্য কেনা হলে সেক্ষেত্রে বিক্রেতা যদি তা যথাযথভাবে বিক্রি না করে অর্থাৎ যদি কোনো ভেজাল বা পঁচা খাদ্য বা জিনিস বিক্রি করে বা মাপে কম দেয়, তাহলে তাতেও হক্কুল ইবাদ বিশেষভাবে নষ্ট হয়। কারণ এতে যত বান্দা সে ভেজাল খাবার খাবে, তাতে তাদের মস্তিষ্ক, চোখ বা অন্য কোনো অঙ্গ-প্রতঙ্গ বা গোটা দেহের যত ক্ষতি হবে এবং সে কারণে আরো যত ক্ষতি হবে সব ক্ষতির দায়ভার বর্তাবে ওই ভেজাল বিক্রেতার উপর। 
আবার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সবচেয়ে গরীব কে? অতঃপর তিনি বলেন, সবচেয়ে গরীব ওই ব্যক্তি- যে ক্বিয়ামতের দিনে পাহাড় পরিমাণ নেকি নিয়ে উঠবে। মানুষ মনে করবে সে নিশ্চিত জান্নাতী। কিন্তু এরপর তার একের পর এক পাওনাদাররা আসবে। যাদের হক্ব সে নষ্ট করেছে। তখন তার নেকী দ্বারা তাদের সে হক্ব আদায় করা হবে। এরপরও বাকি থেকে যাবে। তখন পাওনাদারদের গুনাহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। কিছুক্ষণ পূর্বে যে ব্যক্তি ছিল নিশ্চিত জান্নাতী এখন সে ব্যক্তি হয়ে পড়বে নিশ্চিত জাহান্নামী।” পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এ ব্যক্তিকেই সবচেয়ে গরীব বলা হয়েছে।
মূলত, আজকের যুগে ধর্মব্যবসায়ী তথা উলামায়ে ‘সূ’দের প্রাদুর্ভাব থাকায় এহেন পবিত্র ইসলামী চেতনা কারো মাঝে নেই বললেই চলে। বরং উলামায়ে ‘সূ’রাও যেভাবে অসততায় আর দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়েছে- তা দেখেই ভেজালকারী ও দুর্নীতিবাজরা আরো সাহসী ও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তার পরিণতিতেই সারাদেশব্যাপী এত ভেজাল আর দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে।

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট