যারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অবমাননা করে, কটুক্তি করে তারা কাফির ও মুরতাদ। এই শ্রেণীর লোকদের সর্ম্পকে মহান আল্লাহ পাক ফয়সালা মুবারক দিয়েছেন,
مَّلْعُونِينَ ۖ أَيْنَمَا ثُقِفُوا أُخِذُوا وَقُتِّلُوا تَقْتِيلًا ﴿٦١﴾ سُنَّةَ اللَّـهِ فِي الَّذِينَ خَلَوْا مِن قَبْلُ ۖ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّـهِ تَبْدِيلًا ﴿٦٢﴾
“অর্থ: অভিশপ্ত অবস্থায় তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে, ধরা হবে এবং ক্বতল করা হবে। যারা পূর্বে অতীত হয়ে গেছে, তাদের ব্যাপারে এটাই ছিল মহান আল্লাহ পাক উনার রীতি। আপনি আল্লাহ পাক উনার রীতিতে কখনো পরিবর্তন পাবেন না।” (পবিত্র সূরা আহযাব ৬১-৬২)
বিখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা দলিল দিয়েছেন, যে ব্যক্তি পবিত্র ইসলাম বা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বিরুদ্ধে খারাপ মন্তব্য করে, অথবা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যাপারে মন্দ কথা বলে ওই ব্যক্তিকে শাস্তিস্বরূপ মৃত্যুদ- দিতে হবে। (মাহাসিনুত তাওয়ীল-৫/১৪২)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে,
من سب نبيًّا فاقتلوه
আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, ইমামুল আউওয়াল মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস উনার থেকে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবরাক করেছেন, যে ব্যক্তি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গালি দেয়, তার শাস্তি মৃত্যুদ-। (জামেউল আহাদীস: হাদীস নং-২২৩৬৬, জমউল জাওয়ামে: হাদীস নং-৫০৯৭, দায়লামী শরীফ ৩/৫৪১, হাদীস নং-৫৬৮৮)
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রদি¦য়াল্লাহু আনহু তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
من لى بكعب إبن الأشرف فإنه قد أذى الله و رسوله
কাব বিন আশরাফের ব্যাপারে কে আছো? কেননা সে মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়। নাউযুবিল্লাহ। তখন হযরত মুহাম্মদ বিন মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ,আপনি চান আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৮১১)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে শাস্তিস্বরূপ ক্বতল করার নির্দেশ দিলেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَامَ الْفَتْحِ ، وَعَلَى رَأْسِهِ الْمِغْفَرُ فَلَمَّا نَزَعَهُ جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ إِنَّ ابْنَ خَطَلٍ مُتَعَلِّقٌ بِأَسْتَارِ الْكَعْبَةِ فَقَالَ اقْتُلُوهُ
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের বছর পবিত্র মক্কা শরীফ প্রবেশ করেন, তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শির মুবারকে ছিল শিরস্ত্রাণ। তিনি তা খুললেন। সে সময় একজন এসে বললেন যে, ইবনে খাতাল পবিত্র কা’বা শরীফ উনার গিলাফ ধরে বসে আছে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তাকে শাস্তিস্বরূপ ক্বতল কর। (সহীহ বুখারী: হাদীস নং-১৮৪৬, মুসলিম শরীফ ৩৩৭৪, সুনানে আবু দাউদ ২৬৮৭, তিরমিযী শরীফ ১৬৯৩, সুনানে নাসাঈ ২৮৬৭, ইবনে হিব্বান ৩৭১৯, সুনানে দারেমী ১৯৯০, মুসনাদে বাযযার ৬২৯০, বায়হাক্বী সুনানে কুবরা ৩৮৩৬, মুসনাদে আবু ইয়ালা ৩৫৩৯, সুবহুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফি সীরাতে খাইরুল ইবাদ ৫/২২৪, বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৪/৩৩৪)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’বা শরীফ উনার গিলাফ ধরা অবস্থয়ও ইবনে খাতালকে কেন ক্বতল করার নির্দেশ দিলেন এর ব্যাখ্যায় হাফিজুল হাদীছ আল্লামা হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বুখারী শরীফ উনার ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ফাতহুল বারীতে” বিস্তারিত ঘটনা উল্লেখ করে বলেন যে, লোকটি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গালাগাল করতো। নাউযুবিল্লাহ! (ফাতহুল বারী-২/২৪৮)
ইবনে খাতালের দুই বাঁদী ছিল, যারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে কুৎসামূলক গান গাইতো। নাউযুবিল্লাহ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বিজয়ের দিন তাদেরও শাস্তিস্বরূপ ক্বতল করার নির্দেশ দেন (আসাহহুর সিয়ার ২৬৬, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৪/৪৯৮)
হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা হযরত আব্দুল্লাহ বিন আতিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে আমীর বানিয়ে আবু রাফে ইহুদীকে শাস্তিস্বরূপ ক্বতল করতে পাঠালেন। আবু রাফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দিত এবং অন্যদেরকেও কষ্ট দিতে সাহায্য করতো। নাউযুবিল্লাহ! হযরত আব্দুল্লাহ বিন আতিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি তাকে প্রচ- আঘাত করলাম। কিন্তু প্রথমেই ক্বতল করতে পারিনি, তারপর তরবারীর ধারালো ডগা তার পেটে ঢুকিয়ে দিলাম এমনকি তা তার পিঠ ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তখন আমি বুঝলাম যে, আমি তাকে ক্বতল করতে সক্ষম হয়েছি। সুবহানাল্লাহ! (সহীহ বুখারী: হাদীস নং-৩৮১৩)
এমনিভাবে মক্কা শরীফ বিজয়ের দিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়ার কারণে হুরায়াইস বিন নাকীজ নামের এক কুলাঙ্গারকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৪/২৯৮)