নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ।


নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হওয়ার অকাট্য দলীলসমূহ

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক

النبى اولى بالـمؤمنين من انفسهم وازواجه امهاتهم

অর্থ: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মু’মিনদের প্রাণ হতেও অধিকতর নিকবর্তী আছেন অথবা মু’মিনগণ উনাদের নিজেদের অভিভাবক এবং উনার পবিত্র আযওয়াজুম মুত্বাহহারাত আলাইহিন্নাস সালামগণ উনারা হচ্ছেন মু’মিনগণের সম্মানিতা মাতা। (পবিত্র সূরাতুল আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا كَانَ لَكُمْ أَن تُؤْذُوْا رَسُولَ اللّـهِ وَلَا ان تَنكِحُوا ازْوَاجَهُ مِن بَعْدِهِ ابَدًا ۚ إِنَّ ذلِكُمْ كَانَ عِندَ اللّـهِ عَظِيمًا

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত রসূল উনাকে কষ্ট দেয়া এবং উনার সম্মানিত আযওয়াজুম মুত্বাহহারাত আলাইহিন্নাস সালামগণ উনাদেরকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য কখনোই বৈধ নয়। মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট এটা গুরুতর অপরাধ। (পবিত্র আহযাব শরীফ:পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৩)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ওহাবী দেওবন্দীদের মুরুব্বী মুফতী শফী তার ‘মায়ারিফুল কুরআনে’ লিখেছে, “এরূপ বলাও অবান্তর নয় যে, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রওযা শরীফে পবিত্র হায়াত মুবারকে (জীবিত) রয়েছেন। উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ কোনো জীবিত স্বামীর আড়াল হয়ে যাওয়ার অনুরূপ। এজন্যই উনার ত্যাজ্য সম্পত্তি বণ্টন করা হয়নি এবং এর ভিত্তিতেই উনার আহলিয়াগণ উনারা অন্যান্য নারীদের মতো নন।”

হযরত কাজী ছানাউল্লাহ পানি পথি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার তাফসীরে মাযহারী নামক কিতাবে লিখেছেন –

بل حياة الانبياء عليهم السلام اقوى منهم واشد ظهور اثارها فى الخارج حتى لا يجوز النكاح ازواج النبى صلى الله عليه وسلم بخلاف الشهداء.

অর্থ: বরং হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র হায়াত মুবারক শহীদগণ উনাদের হায়াত মুবারক হতেও বহু বেশি শক্তিশালী এবং অত্যধিক তড়িৎ গতিতে প্রকাশিত হওয়াতে শ্রেষ্ঠতর। আর এ কারণেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আযওয়াজুম মুত্বাহহারাত আলাইহিন্নাস সালামগণ উনাদেরকে বিবাহ করা জায়িয নেই। পক্ষান্তরে শহীদগণ উনাদের আহলিয়াগণকে বিবাহ করা জায়িয রয়েছে। (তাফসীরে মাযহারী ১৫২, যিকরে জামীল ৪২পৃ:) এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে-

لا عدة لانه صلى الله عليه وسلم حى فى قبره وكذالك سائر الانبياء.

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আযওয়াজুম মুত্বাহহারাত আলাইহিন্নাস সালামগণ অর্থাৎ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের উপর কোন ইদ্দত নেই। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ন্যায় অন্যান্য হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনারাও উনাদের রওজা মুবারকে যিন্দা আছেন। (শরহুশ শিফা ১ম খ- ১৫২ পৃষ্ঠা)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে –

قالت ام الـمؤمنين حضرت عائشة الصديقة عليها السلام كنت ادخل بيتى الذى فيه رسول الله صلى الله عليه وسلم وانى واضع ثوبى واقول انما هو زوجى وابى فلما دفن حضرت عمر الفاروق عليه السلام معهم فوالله ما دخلته الا وانا مشدودة على ثيابى حياء من حضرت عمر الفاروق عليه السلام

অর্থ : সাইয়্যিদাতুনা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি আমার হুজরা শরীফে প্রবেশ করতে পর্দার প্রস্তুতি নিতাম না, যেহেতু সেখানে শুধু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আমার পিতা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনারা দুজন অবস্থানরত ছিলেন। আর উনারা আমার মাহরাম হওয়ায় পর্দার কোন প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু যখন সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ফারূক আলাইহিস সালাম উনাকে আমার হুজরা শরীফে দাফন মুবারক করা হলো, তখন থেকে আমি উনাকে লজ্জা করতঃ খাছ শর’য়ী পর্দা ব্যতীত তথায় গমন করতাম না। কারণ সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন গাইরে মাহরাম। (মিশকাত শরীফ-১৫৪ পৃ.)

অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার আক্বীদা মুবারক ছিল এই যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনারা উনাদের পবিত্র রওযা শরীফে শুধু যিন্দাই নন বরং উনারা সবকিছু দেখেন। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-

عن حضرت ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه قال ان الله تعالى حرم على الارض ان تأكل اجساد الانبياء فنبى الله حى يرزق

অর্থ : হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের জিসিম মুবারক যমীনের উপর ভক্ষণ করা হারাম করেছেন। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক উনার হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা জীবিত ও রিযিকপ্রাপ্ত। (ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ, জালাউল আফহাম ৬৩ পৃ:)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে –

قال حضرت فضل بن عباس رضى الله تعالى عنه اذا رأيت شفتيه يتحرك فادنيت اذنى عندها. فسمعت وهو يقول اللهم اغفر لامتى فاخبر تهم بهذا بشفقته على امته

অর্থ: হযরত ফযল বিন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন- যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র রওযা শরীফে তাশরীফ মুবারক নিলেন, তখন আমি শেষ বারের মত পবিত্র চেহারা মুবারক যিয়ারত করত: দেখতে পেলাম যে, উনার পবিত্র ঠোট মুবারক নড়ছে, তখন আমি আমার কর্ণ পবিত্র ঠোট মুবারকের নিকটস্থ করে শুনতে পেলাম যে, তিনি ইরশাদ মুবারক করছেন, ইয়া আল্লাহ পাক! আমার উম্মতদেরকে ক্ষমা করুন। আমি উম্মতের প্রতি দয়ালু। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুভ সংবাদ উপস্থিত সবাইকে শুনিয়েছি। (মাদারিজুন্নাবুওয়াত ২য় খ-, ৪৪২ পৃ.)

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে রাখার পরও পবিত্র ঠোট মুবারকের কম্পন ছাবিত হলো। আর কম্পন মুবারক দেয়া “হায়াত” মুবারক ব্যতীত সম্ভব নয়।

সুলত্বানুল আরিফীন, মুজাদ্দিদে যামান আল্লামা হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন-

قالت ام الـمؤمنين حضرت عائشة الصديقة عليها السلام لما مرض ابى اوصى ان يوتى به قبر النبى صلى الله عليه وسلم ويستأذن له ويقال هذا ابو بكر الصديق عليه السلام يدفن عندك يا رسول الله صلى الله عليه وسلم فان اذن لكم فادفنون وان لم يؤذن لكم فاذهبوا بى الى البقيع فاتى به الى الباب فقيل هذا ابو بكر الصديق عليه السلام قد اشتهى ان يدفن عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وقد اوصانا فان اذن لنا دخلنا وان لم يؤذن لنا انصرفنا فنودينا ادخلوا وكرامة سمعنا كلاما ولم نر احدا.

وقال حضرت على كرمه الله وجهه عليه السلام فى رواية اخرى رأيت الباب قد فتح فسمعت قائلا يقول ادخلوا الحبيب الى حبيبه فان الحبيب الى الحبيب مشتاق.

অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, যখন আমার পিতা অসুস্থ হয়ে যান, তখন তিনি ওসিয়ত করলেন যে আমার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর আমাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওযা মুবারকের নিকটে নিয়ে গিয়ে অনুমতি প্রার্থনা করতঃ একথা বলবেন যে, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এই যে, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে সমাধিস্থ হওয়ার ইচ্ছুক। আর তিনি আমাদেরকে অসিয়ত মুবারক করেছেন যে, যদি আপনি আমাদেরকে অনুমতি মুবারক দান করেন তবে আমরা প্রবেশ করবো। নতুবা আমরা ফিরে যাবো। এরূপ করার পর আমাদেরকে শুনানো হলো যে, আপনারা উনাকে প্রবেশ করিয়ে দিন অর্থাৎ দাফন মুবারক করুন। আমরা এ পবিত্র কালাম শরীফ শুনলাম কিন্তু কাউকে আর দেখলাম না। অন্য এক রিওয়ায়েতে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি দেখলাম দরজা মুবারক এমনিভাবেই খুলে গেছে। আর আমি একথা বলতে শুনলাম যে, বন্ধুকে বন্ধুর সঙ্গে মিলিয়ে দিন। একথা নিশ্চিত যে, বন্ধু বন্ধুর সঙ্গে মিলনের আশিক্ব হন। সুবহানাল্লাহ! (আল খাছাইছুল কুবরা ২য়, খ-, ২৮২ পৃষ্ঠা)

উপরোল্লিখিত রিওয়ায়েত দ্বারা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহি ওয়া সালাম উনার বিশ্বাস স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হলো যে, তিনি অসিয়ত মুবারক করেছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আালাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফে গিয়ে আরয করার পর যে হুকুম মুবারক হবে তার উপর আমল করবেন।

وقال حضرت سعيد بن الـمسيب رضى الله تعالى عنه وما يأتى وقت صلوة الا سمعت الاذان من القبر الشريف.

অর্থ: হযরত সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়াব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আইয়ামে হাররার দিনগুলোর অবস্থা বর্ণনা করেন যে, এমন কোন নামাযের ওয়াক্ত অতিবাহিত হয়নি, যে ওয়াক্তে আমি পবিত্র রওযা মুবারক হতে আযানের ধ্বনি শুনিনি। (আলহাভী ২৬৬, যিকরে জামীল ৪৭ পৃ:)

وقال حضرت زبير بن بقاء رضى الله تعالى عنه فى اخبار الـمدينة لم ازل اسمع الاذان والاقامة من قبر رسول الله صلى الله عليه وسلم ايام حرة حتى عاد الناس.

অর্থ: হযরত যুবাইর ইবনে বাক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি আইয়্যামে হাররার সময় পবিত্র মদীনা শরীফে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওযা মুবারক থেকে আযান ও ইক্বামতের ধ্বনি অনবরত শ্রবণ করতে থাকি যতক্ষণ না জনগণ প্রত্যাবর্তন করেছে। (মিশকাত শরীফ)

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, আপনার নিকটবর্তী, দূরবর্তী এবং পরবর্তীতে আগন্তুকদের পবিত্র দুরূদ শরীফসমূহের অবস্থা কি হবে? তদুত্তরে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اسمع صلوة اهل محبتى واعرفهم

অর্থ: আমার সঙ্গে মুহব্বত ধারণকারীদের পবিত্র দূরূদ শরীফ আমি স্বংয় নিজে শুনি এবং আমি তাদের পরিচয় পাই। সুবহানাল্লাহ! (দালাইলুল খায়রাত, মাতালিউল মুসাররাত)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন –

فِي رِوَايَةِ الْحَنَفِيِّ قَالَ: عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” مَنْ صَلَّى عَلَيَّ عِنْدَ قَبْرِي سَمِعْتُه،

অর্থ : “যে ব্যক্তি আমার পবিত্র রওযা মুবারকের নিকটে এসে আমার প্রতি পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করবে আমি অবশ্যই উনার পবিত্র দরূদ শরীফ শুনতে পাই।” (বাইহাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ/৮৭)

অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে –

اصحابى اخواتى صلوا على فى كل يوم الاثنين والجمعة فانى اسمع صلوتكم بلا واسطة.

অর্থ : “হে আমার ছাহাবীগণ, হে আমার উম্মতগণ! আপনারা আমার প্রতি প্রত্যেক ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার ও ইয়াওমুল জুমুয়া বা শুক্রবার পবিত্র দরূদ শরীফ পাঠ করুন। নিশ্চয়ই আপনাদের সেই পবিত্র দরূদ শরীফ আমি বিনা মধ্যস্থতায় শুনতে পাই।” (মিশকাত শরীফ)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে –

سمعته سمعا حقيقيا بلا واسطة.

অর্থ: “(নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন), আমি হাক্বীক্বীভাবে বিনা মধ্যস্থতায় তা শুনতে পাই।” (মিরকাত শরীফ ২য় খন্ড, ৩৪৭ পৃষ্ঠা)

কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে –

ان النبى صلى الله عليه وسلم فى قبره حى

অর্থ : “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রওযা মুবারকে জীবিত অবস্থায়ই আছেন।” (মিরকাত শরীফ ২য় খন্ড ২২৩ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত বর্ণনায় এটাই প্রমাণিত হলো যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রওযা মুবারকে স্বীয় উম্মতের দরূদ ও সালাম শুনতে পান। যদি তিনি হায়াতুন্ নবী না-ই হন তবে কি করে তা শুনতে পান? অবশ্যই তিনি হায়াতুন্ নবী।

قال حضرت ابراهيم بن شيبان رضى الله تعالى عنه حججت فجئت المدينة فتقدمت الى القبر الشريف فسلمت على رسول الله صلى الله عليه وسلم فسمعت. من داخل الحجرة يقول وعليك السلام.

অর্থ: হযরত ইবরাহীম বিন শায়বান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি পবিত্র হজ্জ শেষে পবিত্র মদীনা মুনাওয়ারায় হাজির হলাম। তারপর পবিত্র রওযা মুবারকের নিকটস্থ হয়ে সালাম শরীফ পেশ করলাম। তখন পবিত্র রওযা শরীফ উনার ভিতর থেকে “ওয়া আলাইকাস সালাম উনার ধ্বনি শ্রবণ করলাম। (আল কাউলুল বাদী’)

ليس من عبد يصلى على الابلغنى صوته حيث كان قلنا وبعد وفاتك قال وبعد وفاتى ان الله عزوجل حرم على الارض ان تأكل اجساد الانبياء.

অর্থ: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার উপর দুনিয়ার যে কোন স্থান থেকে পবিত্র দূরূদ শরীফ পাঠ করুক আমি তার দুরূদ শরীফের আওয়াজ শুনতে পাই। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আরয করলেন আপনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পরেও কি শুনতে পাবেন? তদুত্তরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ ফরমান, হ্যাঁ পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পরও। কারণ একথা নিশ্চিত যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যমীনের উপর হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র শরীর মুবারক ভক্ষণ করা হারাম করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (জালাউল আফহাম, হুজ্জাতুল্লাহিল আলামীন)

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবারে দূরূদ শরীফ পৌঁছে থাকে বলে ছাবিত হলো। এতে দূরবর্তী এবং নিকটবর্তীর কোন বাধ্যবাধকতা নেই এবং কাউকে পরিচয় করার শর্তও নেই। বরং স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শ্রবণ করা প্রমাণিত হয়েছে যাতে হায়াতুন নবী উনার সঙ্গে সঙ্গে উনার চরম উচ্চমানের শ্রবণ শক্তির সুস্পষ্ট দলীল রয়েছে।

روى حضرت ام المؤمنين عائشة الصديقة عليها السلام انها كانت تسمع صوت الوتد والمسمار يضرب فى بعض الدور المطنبة لمسجد رسول الله صلى الله عليه وسلم فترسل اليهم لا تؤذوا رسول الله صلى الله عليه وسلم.

মহাসম্মানীত সুন্নত মুবারক প্রচার Sacred Sunnat mubarok promotion, [07.09.21 17:24]
[In reply to সাইয়্যিদুল আ'ইয়াদ শরীফ তথ্য কেন্দ্র]
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি মসজিদে নববী শরীফ উনার সংলগ্ন ঘরসমূহ হতে পেরেকের শব্দ শুনলে মিস্ত্রীর নিকট পয়গাম পাঠিয়ে দিতেন যে, এরকম শব্দ করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দিবেন না। (শিফাউস সিক্বাম- ১৫৫ পৃষ্ঠা)

অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার আক্বীদা মুবারক ছিল এই যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রওযা শরীফে শুধু যিন্দাই নন বরং তিনি সবকিছুই দেখেন এবং অনুভব করেন যা উনার হায়াতুন নবী হওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ। সুবহানাল্লাহ!

হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মন্ধে একটি ঐতিহাসিক সত্য ঘটনা

অলিকুল শিরোমণি হযরত শায়খ সাইয়্যিদ আহমদ কবীর রিফায়ী রহমতুল্লাহি তিনি যখন ৫৫৫ হিজরীতে পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে তাশরীফ নিয়ে যান তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওযা শরীফ যিয়ারতের জন্যও তাশরীফ নেন। পবিত্র রওযা শরীফ উনার নিকটে পৌঁছে তিনি উচ্চেস্বরে বললেন, “আসসালামু আলাইকা ইয়া জাদ্দী।” সাথে সাথে পবিত্র রওযা শরীফ থেকে আওয়াজ মুবারক আসলো- “ওয়া আলাইকুমুস সালাম ইয়া ওলাদী।” এ মুবারক আওয়াজ শুনে উনার উপর তন্দ্রাভাব এসে গেল। তিনি ব্যতীত যত লোক সেখানে উপস্থিত ছিলেন সবাই এ পবিত্র আওয়াজ মুবারক শুনতে পান। কিছুক্ষণ পর তিনি দু’টি কাছীদা শরীফ পাঠ করলেন যার অনুবাদ এই-

“বিচ্ছেদ এবং দূরত্বের অবস্থায় স্বীয় রূহকে দস্তবুছীর মর্যাদা লাভের জন্য পবিত্র রওযা মুবারকে প্রেরণ করতাম। বর্তমানে প্রকৃত প্রস্তাবে যখন আমার পবিত্র দীদার মুবারক নছীব হয়েছে। তাই দয়া বিতরণে আপনার পবিত্র দস্ত মুবারক দান করুন। তাহলে উহাতে চুম্বন করে সম্মানিত হবো।” সুবহানাল্লাহ!

তৎক্ষণাৎ রওযায়ে আত্বহার শরীফ থেকে পবিত্র হাত মুবারক নূর চমকিয়ে বের হলে তিনি উহাতে চুম্বন দিলেন তখন রওযায়ে আক্বদাস উনার পার্শ্বে প্রায় ৯০,০০০ নব্বই হাজার আশিক্বানে জামালে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নূরানী হাত মুবারক উনার পবিত্র যিয়ারত মুবারক দ্বারা মর্যাদাবান হলেন তন্মেধ্যে গাউছুল আ’যম বড়পীর হযরত শায়েখ আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমুতল্লাহি আলাইহি তিনি, হযরত শায়েখ আদভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক হুসাইনী ওয়াসিতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের ন্যায় মহান বুযুর্গানে দ্বীন উনারা উপস্থিত ছিলেন। ঘটনাকে এত প্রচুর পরিমাণ উলামায়ে কিরাম বর্ণনা করেছেন যে, তাতে ভুল ভ্রান্তি হওয়ার কোন অবকাশ নেই। (বুরহানুল মুয়াইয়্যাদের অনুবাদ বুনইয়ানুল মুশাইয়্যাদ ৩৫পৃ, আরকানে ইসলাম ৩২৬ পৃ:)

উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত ঘটনা দ্বারা চাক্ষুষভাবে হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রমাণিত হলো। কারণ পবিত্র রওযা শরীফ হতে উচ্চস্বরে সালাম উনার জবাব দেয়া এবং পবিত্র হাত মুবারক বের করে দেয়া পবিত্র হায়াত মুবারকে থাকার পূর্ণ নিদর্শন, পবিত্র হায়াত মুবারকে না হলে সালামের জবাব দেয়া এবং পবিত্র হাত মুবারক বের করা সম্ভব নয়।

#12shareef
#Saiyidul_Aayaad_Shareef
#সাইয়্যিদুল_আইয়াদ_শরীফ

সুন্নতি সামগ্রী সংগ্রহ করুনঃ https://sunnat.info
সরাসরি আজিমুশ শান ৬৩দিনব্যাপী মাহফিল শুনতে ভিজিট করুনঃ http://al-hikmah.net/

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট