যারা মসজিদ ভাঙ্গবে তাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। তারা তারাদের কথিত উন্নয়ন রাস্তা-ঘাট নির্মাণের জন্য ভাঙ্গুক অথবা নদী উদ্ধারের নামে ভাঙ্গুক।
এদের প্রসঙ্গেই যিনি খালি মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللَّهِ أَن يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَىٰ فِي خَرَابِهَا ۚ أُولَٰئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَن يَدْخُلُوهَا إِلَّا خَائِفِينَ ۚ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ
অর্থ: ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় জালিম আর কে? যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানীত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে। (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাসে করে তা'যীম-তাকরীম করে না) তাদের জন্য ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় অর্থাৎ খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করা ব্যতীত মহাসম্মানিত ও মসজিদ মোবারক সমূহের প্রবেশ করা জায়িয নেই। তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি। সুবহানাল্লাহ ।
(সুরা বাকারা শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ১১৪)।
এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় তাফসীরে জালালাইন শরীফ এবং তাফসীরে মাযহারী শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
لا أحد أظلم ممن من مساجد الله أن يذكر فيها اسمه
অর্থ: “ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে বড় যালিম, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক সমূহ উনাকে জিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক স্মরণ করতে বাধা দেয়।" (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না তাযীম তাকরীম করে না)
(তাফসীরে জালালাইন ১/২৪, তাফসীরে মাযহারী ১/১১৬) ।
‘তাফসীরে সমরকন্দী শরীফ, তাফসীরে খাযিন শরীফ ও তাফসীরে বাগবী শরীফ উনার মধ্যে وَمَنْ أَظْلَمُ, “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে?” এই অংশের ব্যাখ্যায় উল্লেখ রয়েছে,و من اكفر “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় কাফির আর কে?
অর্থাৎ ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক সমূহ উনার জিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে।” (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না, তা'যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করে না) নাউযুবিল্লাহ!
(তাফসীরে সমরকন্দী শরীফ ১/৮৬, তাফসীরে খাযিন শরীফ ১/৭২, তাফসীরে বাগবী শরীফ ১/১৫৭)।
আল্লামা কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে মাযহারী শরীফ' উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
.......لهم في الدنيا خِزْيٌ قتل وسبى وذلة بضرب الجزية ولهم في الأخرة عذاب عَظِيمٌ النار المؤبدة بكفرهم وظلمهم.
অর্থ: “তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়ার যমীনে লাঞ্ছনা। (অর্থাৎ) কতল (হত্যা, মৃত্যুদণ্ড). বন্দিত্ব (জেল-হাজত) ও জিজিয়া কর প্রদানের অবমাননা। আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। (অর্থাৎ পরকালে) তাদের জন্য রয়েছে তাদের কুফরী ও জুলুমের কারণে চিরস্থায়ী জাহান্নাম।" নাউযুবিল্লাহ!
(তাফসীর মাযহারী শরীফ ১/১১৬)।
দশম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত বিশ্ব বিখ্যাত ও সর্বজন মান্য তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীরে জালালাইন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
.....{لهم في الدنيا خِزْيٌ} هوان بالقتل والسبي والجوية { ولهم في الأخيرة { ولهم في الأخرة عذاب عَظِيمٌ } هو النار
অর্থ: “তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়ার যমীনে লাঞ্ছনা। (অর্থাৎ) কতল (হত্যা, মৃত্যুদণ্ড), বন্দিত্ব (জেল-হাজত) ও জিজিয়া কর প্রদানের অবমাননা। আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি । (অর্থাৎ পরকালে) তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম।" নাউযুবিল্লাহ!
(তাফসীরে জালালাইন শরীফ ১/২৪)।
বিশ্ব বিখ্যাত মুফাসসির ও ইমাম আল্লামা আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ-৩১০ হিজরী শরীফ) উনার লিখিত বিশ্বখ্যাত ও সর্বজন মান্য তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে তাবারী শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
وتأويل الأية لهم في الدنيا الذلة والهوان والقتل والسبى على منعهم مساجد الله أن يذكر فيها اسمه وسعيهم في خرابها ولهم على معصيتهم وكفرهم بربهم وسعيهم في الأرض فسادا عذاب جهنم وهه العذاب العظيم
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক সমূহ উনার জিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক উচ্চারণ করতে বাধা দেয়ার কারণে এবং সেগুলোকে উজাড় বা বিরান করার কোশেশ করার কারণে অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহকে হাকীকীভাবে তা’যিম-তাকরিমের সাথে সংরক্ষণ না করার কারণে তাদের জন্য দুনিয়ার যমীনে রয়েছে অবমাননা, লাঞ্চনা, কতল তথা হত্যা, মৃত্যুদণ্ড, জেল'-হাজত, গ্রেফতারী ।
আর তাদের পাপাচারী, মহান আল্লাহ পাক উনার ব্যাপারে কুফরী করা এবং দুনিয়ার যমীনে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করে দেয়ার কোশেশ করার কারণে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব বা শাস্তি। এটাই হচ্ছে العذاب العظيم তথা কঠিনআযাব বা শাস্তি।" নাউযুবিল্লাহ!
(তাফসীরে তাবারী শরীফ ২/৪৪৮)
বিশ্বখ্যাত মুফাসসির ও ইমাম আল্লামা আবুল হাসান আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাবীব বসরী বাগদাদী মাওয়ারদী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৪৫০ হিজলী শরীফ) উনার লিখিত বিশ্বখ্যাত ও সর্বজন মান্য তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে মাওয়ারদী শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
{ ولهم في الآخرة عذاب عظيم} هو أشد من كل علهاب لأنهم أظلم من كل ظالم
অর্থ: “আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন আযাব বা শাস্তি (অর্থাৎ) তা হচ্ছে সমস্ত আযাব বা শাস্তি হতে সবচেয়ে কঠিন আযাব বা শাস্তি। কেননা তারা হচ্ছে সমস্ত যালিমদের থেকে সবচেয়ে বড় যালিম কারণ তারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহকে হাক্বীকৃীভাবে তা'যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করেনি।”
(তাফসীরে মাওয়ারদী শরীফ ১/১৭৪)।
বিশ্ব বিখ্যাত মুফাসসির ও ইমাম আল্লামা কাযী নাসিরুদ্দীন আবু সাঈদ আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর ইবনে মোহাম্মদ সিরাজী বায়যাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৬৮৫ হিজরি শরীফ) উনার লিখিত বিশ্বখ্যাত ও সর্বজন মান্য তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে বায়যাভী শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
لهم في الدنيا خزی قثل وسبى او ذله بضرب الجزية ولهم في الآخرة عذاب
عظيم بكفرهم وظلمهم.
অর্থ: “তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়ার যমীনে লাঞ্ছনা। (অর্থাৎ) কতল (হত্যা, মৃত্যুদণ্ড), বন্দিত্ব (জেল-হাজত) অথবা জিযিয়া কর প্রদানের লাঞ্ছনা । আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে তাদের কুফরী ও যুলুমের কারণে কঠিন আযাব বা শাস্তি কারণ তারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহকে হাকীকীভাবে তাযীম-তাকরিমের সাথে সংরক্ষণ করেনি।”
(তাফসীরে বায়যাবী শরীফ ১/১০১)
এখন বলার বিষয় হচ্ছে, যদি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মোবারক সমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত যিকির মুবারক করতে, উনার নাম মুবারক উচ্চারণ করতে বাধা দেয়ার কারণে এবং সেগুলোকে উজাড় বা বিরান করে দেয়ার কোশেশ করার কারণে অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহকে হাকীকীভাবে তা'যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ না করার কারণে সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির, চির মালউন ও চির জাহান্নামী হতে হয় এবং দুনিয়ার যমীনে অবমাননা, লাঞ্ছনা, জেল-হাজত, গ্রেফতার ও কতল তথা মৃত্যুদণ্ডের শিকার হতে হয়, তাহলে যারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য সহযোগীতা করবে এবং সমর্থন করবে তাদের ফায়ছালা কী?
সম্মানিত কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও কিয়াস শরীফ উনাদের সম্মানিত ফতওয়া মুবারক অনুযায়ী- “নিঃসন্দেহে তারা সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফের, চির মালাউন ও চির জাহান্নামী হবে।
তাদের প্রত্যেককে অবশ্যই অবশ্যই গ্রেফতার করে জেল-হাজতে প্রবেশ করাতে হবে। অতঃপর তওবা করার জন্য তিন দিন সময় দিতে হবে। যদি তারা তওবা করে ভালো; অন্যথায় তাদের প্রত্যেককেই মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।