আপনি কি চান আপনার সন্তান আল্লাহওয়ালা আল্লাহওয়ালী হোক?

খালিক, মালিক, বর মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-”তোমরা সকলে আল্লাহওয়ালা-আল্লাহওয়ালী হয়ে যাও”। 
আল্লাহওয়ালা-আল্লাহওয়ালী হওয়া পুরুষ-মহিলা, ছেলে-মেয়ে, ছোট-বড় সকলের জন্যেই ফরজ। তবে সাধারণ একটি উছূল হচ্ছে, মা যদি আল্লাহওয়ালী হয়, তাহলে সন্তানদের জন্য আল্লাহওয়ালা-আল্লাহওয়ালী হওয়াটা সহজ হয়। এ বিষয়ক ওয়াকেয়া ইসলামী কিতাবাদীতে হরহামেশাই দেখা যায়। তারপরও একটি ওয়াকেয়া বেশি মশহুর হয়েছে। ওয়াকেয়াটি হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে নিয়ে। উনি ১৮ পারা সম্মানিত কুরআন শরীফ মুখস্ত অবস্থায় দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনাকে এ বিষয়ে সুওয়াল করা হলে তিনি বলেন, আমার সম্মানিত মাতা ১৮ পারা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হাফেজা ছিলেন। সম্মানিত মাতা উনার রেহেম শরীফে অবস্থানকালীন সময়ে উনার তেলোওয়াত শুনে শুনে সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার ১৮ পারা মুখস্ত করেছি। এই ওয়াকেয়া থেকে স্পষ্টতই বোঝা গেল, মায়ের নেক আমল সন্তানের উপর প্রভাব ফেলে। বিশেষতঃ সন্তান রেহেমে থাকাকালীন মায়ের নেক আমল সন্তানের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে এবং সন্তানের আল্লাহওয়ালা-আল্লাহওয়ালী হওয়ার ক্ষেত্রে বুনিয়াদী ভূমিকা পালন করে। 
হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লহি আলাইহি উনার সম্মানিতা মাতা সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার ১৮ পারার হাফেজা ছিলেন বলে উনার পক্ষে ১৮ পারা সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার হাফেজ হয়ে সম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করা সহজ এবং সম্ভব হয়েছে। ঠিক একইভাবে, কোন মা যদি বেশি বেশি যিকির-ফিকির করে তাহলে সন্তানের জন্য আল্লাহওয়ালা-আল্লাহওয়ালী হওয়াটা অত্যন্ত সহজ হয়। যিকিরের গুরুত্ব উল্লেখ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয় সম্মানিত যিকির উনার দ্বারাই অন্তর ইতমিনান হয়”। কাজেই সম্মানিত যিকির হচ্ছেন একটা মূল ইবাদত। যিকির করে অন্তর ইছলাহ করা ব্যতীত খালিছভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া উনাদের সন্তুষ্টি মোতাবেক ইবাদত-বন্দেগী করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। আল্লাহওয়ালা-আল্লাহওয়ালী হওয়ারতো প্রশ্নই আসে না। তবে এই যিকির-ফিকির অবশ্যই তরতীব অনুযায়ী করতে হবে। সেই তরতীবটা হচ্ছে-একজন কামেল শায়েখ উনার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করে ছবক নিয়ে সেই অনুযায়ী যিকির-ফিকির করতে হবে। অন্যথায় কস্মিনকালেও নিজে যেমন আল্লাহওয়ালা-আল্লাহওয়ালী হওয়া সম্ভব নয়, তেমনি রেহেমে অবস্থানরত সন্তানের উপরও এর কোন তাছির পড়বে না। 
মেছালস্বরুপ, রাস্তার অনেক ফকিরকেই দেখা যায় দিন-রাত যিকির করতে। তাদের কিন্তু ক্বলব জারী হয় না। আবার অনেককেই দেখা যায়, সারাদিন তসবীহ জপতে। কিন্তু ঠিকই আবার বেপর্দা হচ্ছে, ছবি তুলছে, টিভি দেখছে, গান-বাজনা করছে-শুনছে। অর্থাৎ কামেল শায়েখ উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ ব্যতীত এই যিকিরের মাধ্যমে সে নিজেকে ইছলাহ করতে পারছে না-যার কারণে তার দ্বারা ইচ্ছা-অনিচ্ছায় হারাম কাজ সংঘঠিত হচ্ছে। 
সম্মানিত কুরআন শরীফ তেলোওয়াত শুনে শুনে যদি মুখস্ত করে সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার হাফেজ হয়ে দুনিয়াতে আগমন করা যায়, তাহলে যিকির করলেও তো সন্তান মায়ের যিকির শুনে শুনে যিকির করবে। স্বাভাবিকভাবেই সন্তান আল্লাহওয়ালা হয়েই দুনিয়ায় তাশরীফ আনবে। তাই কোন মা যদি চায় তার সন্তান আল্লাহওয়ালা-আল্লাহওয়ালী হোক তাহলে অবশ্যই একজন কামেল শায়েখ উনার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করতঃ সবক নিয়ে যিকির-ফিকির করতে হবে। 
সতর্কতা! সব পীর ছাহেবই নিজেকে কামেল শায়েখ দাবী করে, আবার দেখা যায় ছবি তোলে, বেপর্দা হয়, তন্ত্র-মন্ত্র করে অর্থাৎ হাজারো হারাম কাজে লিপ্ত থাকে। কাজেই এরা কখনো কামেল শায়েখ হতে পারে না। লেখা বাহুল্য, একজন কামেল শায়েখ উনার সবগুলো খুছুছিয়ত একসাথে পাওয়া যায় সম্মানিত রাজারবাগ দরবার শরীফ উনার সম্মানিত শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে। উনার বরকতময় জীবন সম্মানিত সুন্নত মুবারক দ্বারা সুশভিত। এছাড়া তিনি সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার প্রত্যেকটি বিষয় সুক্ষাতিসূক্ষভাবে অনুসরণ করে থাকেন। ছবি তোলেন না, বেপর্দা হোন না,  তন্ত্র-মন্ত্র করেন না; বরং সব হারাম-নাজায়েজ কাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার কন্ঠস্বর। তাই প্রত্যেক পুরুষ-মহিলা, ছেলে-মেয়ে, ছোট-বড় সকলেরই উচিত উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে সবক নিয়ে যিকির-ফিকির করে আল্লাহওয়ালা-আল্লাহওয়ালী  হওয়ার কোশেশ করা। সাথে সাথে নিজের অনাগত সন্তানকে আল্লাহওয়ালা-আল্লাহওয়ালী হওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া। একটি কথা সকলেরই মুখস্ত রাখা উচিত, ওলীআল্লাহ উনার ঘরেই ওলীআল্লাহ আগমন করেন। যেমনটি দেখেছি রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ক্ষেত্রে। উনার সম্মানিত পিতা-মাতা উনাদের বেমেছাল তাকওয়া-পরহেযগারীর কারণেই উনাদের ঘর আলোকিত করে (মূলত পৃথিবী আলোকিত করে) রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ন্যায় জগৎবিখ্যাত ওলীআল্লাহ আগমন করেছেন। সুবহাআল্লাহ!

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট