বাতিলদের কথা : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নিয়ে দু’ঈদ ব্যতীত সব ঈদ বাতিল ঘোষণা করেছেন।



জওয়াব : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নিয়ে দুইটি কুফরী দিবসসহ সমস্ত কুফরী দিবসকে বাতিল ঘোষণা করেছেন। কিন্তু মুসলমানদের জন্য অন্যান্য বিশেষ দিবস বা আইয়্যামুল্লাহ বাতিল ঘোষণা করেননি। এমনকি একথাও বলেননি যে, মুসলমান উনাদের জন্য দু’ঈদ ছাড়া আর কোন ঈদ নেই। বরং তিনি মুসলমান উনাদের জন্য আরো অনেক বিশেষ দিন ও সময় সম্পর্কে ঘোষণা মুবারক দিয়েছেন।
দলীল
‘নওরোজ’ বা নববর্ষ ও ‘মিহিরজান’ নামক ২টি কুফরী দিবস বাতিল করে মুসলমানদের জন্য ইয়াওমুল আদ্বহা ও ইয়াওমুল ফিতরের ঘোষণা :
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَدِمَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وَلَـهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُوْنَ فِيْهِمَا فَقَالَ‏ مَا هٰذَانِ الْيَوْمَانِ‏،‏ قَالُوا كُنَّا نَلْعَبُ فِيْهِمَا فِي الْـجَاهِلِيَّةِ،‏ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اللهَ قَدْ اَبْدَلَكُمْ بِـهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا يَوْمَ الْاَضْحٰى وَيَوْمَ الْفِطْرِ‏.‏
অর্থ : “হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নিয়ে দেখতে পেলেন সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার অধিবাসীরা দু’দিন খেলাধুলা করেন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এ দু’টি দিন কি? উনারা বলেন, আমরা এ দু’দিন জাহিলি যুগ থেকেই খেলাধুলা করে আসছি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই দু’দিনের পরিবর্তে তার চেয়ে উত্তম দু’টি দিন দিয়েছেন- ঈদুল আদ্বহা ও ঈদুল ফিতর।” (আবূ দাঊদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১৩৪, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৩২১০, মুস্তাদরাক লি হাকিম শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১২৪)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ খানা দ্বারা যে দুটি কুফরী দিবস বাতিল ঘোষণা করা হয় তাহলো-
(১) ‘নওরোজ’ বা নববর্ষ। অর্থাৎ বছরের প্রথম দিন এবং (২) ‘মিহিরজান’।
এই দুটি দিবস সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ تَنَافٰى اَرْضَ الْاَعَاجِمِ فَصَنَعَ نَيْرُوزَهُمْ وَمَهْرِجَانِـهِمْ حُشِرَ مَعَهُمْ.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে অনারব দেশ বিচরণ করে, অতঃপর তাদের নওরোজ ও মিহিরজান উদযাপন করে, তাদের সাথে তাকে হাশরে উঠানো হবে।” (সুনানে বায়হাক্বী শরীফ ২য় খ-, ৩২৫ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, নওরোজ ও মিহিরজান নামক দু’টি কুফরী দিবসের পরিবর্তে মুসলমানদের জন্য দুই বিশেষ দিন- ঈদুল আদ্বহা ও ঈদুল ফিতর প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এ কথা উল্লেখ করেননি যে, উক্ত দুইটি বিশেষ দিবস ছাড়া আর কোন বিশেষ দিবস নেই।
আরো স্মরণীয় যে, ঈদুল আদ্বহা ও ঈদুল ফিতর এই দুইটি দিবসকে কুফরী দিবসের পরিবর্তে মুসলমানদের প্রদান করা হলেও প্রাথমিক অবস্থাতেই এই দুইটি বিশেষ দিবসকে ঈদের দিন ঘোষণা করা হয়নি। বরং পরবর্তীতে ঈদের দিন ঘোষণা করা হয়েছে। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে-
يَوْمَ الَاضْحٰى وَيَوْمَ الْفِطْرِ
অর্থাৎ আদ্বহার দিবস ও ফিতরের দিবস।

এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আদ্বহার দিবস ও ফিতরের দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আর এই দুটি দিবস যে ঈদের দিন সেটা পরে ঘোষিত হয়েছে। তাই দু’ঈদ ব্যতীত সব ঈদ বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে বলাই মূর্খতার পরিচায়ক।

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট