মুবারক হো ২৩শে জুমাদাল উখরা শরীফ
❤️উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবি‘য়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম অর্থাৎ সপ্তম তম উম্মুল মু'মিনীন আলাইহাস সালাম উনার মহাপবিত্র সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক বা পরিচিতি মুবারক।
🕋নাম মুবারক: আত্বওয়ালু ইয়াদান সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাইনাব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম।
🌹সম্মানিত গোত্র: বনু আসাদ।
🌹বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ: সম্মানিত রিসালত মুবারক প্রকাশের ২০ বছর পূর্বে ১৯শে রবীউছ ছানী শরীফ ইয়াওমুল জুমু’য়াহ।
🌹নিসবাতুল আ’যীমা শরীফ: সম্মানিত রিসালত মুবারক প্রকাশের ৮ই যিলক্বদ শরীফ ৫ম হিজরী ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম।
🌹বিছালী শান মুবারক প্রকাশ: ২৩শে জুমাদাল উখরা শরীফ ২০ হিজরী শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম।
🌹সম্মানিত দুনিয়াবী হায়াত মুবারক: ৫২ বছর ২ মাস ৪ দিন।
ঐতিহাসিক ২২শে জুমাদাল উখরা শরীফ। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুক্বে আ'যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারক গ্রহণ দিবস । সুবহানাল্লাহ!
🌹এক নজরে আমিরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি মুবারক-
🌹নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মুহব্বত ঈমান এবং উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা কুফরী।”
🌹সম্মানিত মুবারক নসবনামা: পিতা উনার দিক দিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নবম পুরুষ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নসবনামা উনার সাথে সংযুক্ত হয়েছেন। আর মাতা উনার দিক দিয়ে অষ্টম পুরুষ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নসবনামা উনার সাথে সংযুক্ত হয়েছেন।
🌹পবিত্র বিলাদত শরীফ: সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ মুবারক গ্রহণের পৌনে ১৩ বছর পর শামসী পূর্ব ৫০ সনে এবং হিজরী পূর্ব ৪০ কুরাইশ বংশের আদী গোত্রে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। (তারীখুল খুলাফা)
🌹নাম মুবারক: হযরত ‘উমর’ আলাইহিস সালাম।
🌹বিশেষ লক্বব মুবারক: ফারূক্বে আ’যম, আশাদ্দু ফি আমরিল্লাহ ও আশিদ্দাউ আলাল কুফফার।
🌹যেভাবে সম্বোধন মুবারক করা আদব: সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম।
🌹সম্মানিত শাহাদাত: ২৩ হিজরী সনের ২৭শে যিলহজ্জ শরীফ ইয়াওমুস সাবত তিনি সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তোমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গোলামী মুবারক করো, উনাকে সম্মান করো ও উনার ছানা—ছিফত মুবারক বা আলোচনা মুবারক করো সকাল—সন্ধ্যা অর্থাৎ দায়েমীভাবে।’ সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক বা মহাপবিত্র জীবনী মুবারক জানা ও বেশি বেশি সর্বত্র আলোচনা করা এবং প্রতিক্ষেত্রে উনাকে পরিপূর্ণরূপে অনুসরণ—অনুকরণ করার মাধ্যমে দায়িমীভাবে অনন্তকালব্যাপী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা ফরয।
আর মুসলিম—অমুসলিম সব সরকারের জন্য দায়িত্ব—কর্তব্য হচ্ছে— সমস্ত পাঠ্যপুস্তকে অর্থাৎ মাদরাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সর্বপ্রকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিলেবাসে উনার পবিত্র জীবনী মুবারক অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা এবং দায়িমীভাবে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ জারী করা।
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র সাওয়ানেহ উমরী বা জীবনী মুবারক আলোচনা করা এবং উনার অনুসরণ—অনুকরণ মুবারক করা ফরয সাব্যস্ত। মহান আল্লাহ পাক উনার মা’রিফত—মুহব্বত ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উভয়ের রেযামন্দি মুবারক হাছিলের প্রধান ও একমাত্র মাধ্যম— নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র সাওয়ানেহ উমরী বা জীবনী মুবারক জানা ও বেশি বেশি আলোচনা করা এবং উনাকে পরিপূর্ণভাবে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম, পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ—অনুকরণ করা। কেননা তিনিই হচ্ছেন জিন—ইনসানসহ সকল মাখলুকাতের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় এবং উত্তম আদর্শ মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, যদি তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত কর বা মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত হাছিল করতে চাও, তবে তোমরা আমার অনুসরণ কর। তাহলেই মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের মুহব্বত করবেন এবং তোমাদের গুনাহখাতা ক্ষমা করবেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি অত্যধিক ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” সুবহানাল্লাহ!
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যারা অনুসরণ—অনুকরণ করবে না মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে মুহব্বত ও ক্ষমা করবেন না এবং তাদের প্রতি দয়ালু ও ক্ষমাশীলও হবেন না; বরং তারা জাহান্নামী হবে। নাউযুবিল্লাহ! এ প্রসঙ্গে মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে, একমাত্র তারা ব্যতীত যারা আমাকে অস্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসা করা হলো— কে আপনাকে অস্বীকার করলো ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন যে, যারা আমাকে অনুসরণ করেছে, তারা জান্নাতে যাবে, আর যারা আমাকে অনুসরণ করেনি তারা আমাকে অস্বীকার করেছে (তারা জাহান্নামী হবে)।” নাউযুবিল্লাহ!
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, সম্মানিত হাম্বলী মাযহাব উনার ইমাম ও প্রতিষ্ঠাতা, ইমামুল মুহাদ্দিছীন, ফখরুল ফুক্বাহা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ সকলেই ফতওয়া দিয়েছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পরিপূর্ণ বা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম, পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ—অনুকরণ করা সকলের জন্যই ফরয। যেহেতু তিনি জিন—ইনসানসহ সকল মাখলুকাতের জন্যই প্রেরিত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, আমি তোমাদের সকলের জন্যই রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।” সুবহানাল্লাহ!
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, ইলম হচ্ছেন আমলের ইমাম। অর্থাৎ উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী বা জীবনী মুবারক জানা থাকলেই মূলত উনাকে পরিপূর্ণভাবে সম্মান করা ও অনুসরণ, অনুকরণ করা সম্ভব। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিন—ইনসানসহ সকল মাখলুকাতের জন্য রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। জিন—ইনসানসহ সকল মাখলুকাতের জন্যই উনাকে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ—অনুকরণ করা ফরয। আর সেজন্য উনার বরকতময় মহাপবিত্র সাওয়ানেহ উমরী বা জীবনী মুবারক পড়া ও জানা এবং বেশি বেশি সর্বত্র ও দায়েমীভাবে আলোচনা করা জিন—ইনসানসহ সকল মাখলুকাতের জন্য ফরয। তাই সরকারের জন্যও সমস্ত পাঠ্যপুস্তকে অর্থাৎ মাদরাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সর্বপ্রকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিলেবাসে উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী বা জীবনী মুবারক অন্তর্ভুক্ত করাও ফরয।
গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ: সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- বিশ্বকাপ ফুটবলসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, দেখা, সমর্থন করা, খেলার জন্য খুশি প্রকাশ করা হারাম ও নাজায়িজ হওয়া সম্পর্কে ফতওয়া
সুওয়াল:
বর্তমানে চলছে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা। এতে দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাই ব্যাপকভাবে মেতে উঠেছে। বাড়িতে বাড়িতে যার যার প্রিয় দলের বিশাল বিশাল পতাকা উড়িয়েছে। বিশ্বকাপ খেলা উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবেও ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। জায়গায় জায়গায় বড় স্ক্রীনে খেলা দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবার রাজনৈতিক নেতা, পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রমূখদের পক্ষ থেকেও খেলা দেখানোর ব্যাপারে ব্যাপক সহযোগিতা করা হচ্ছে। এমনকি অনেকে প্রিয় দলের বিজয়ে উল্লাস করে খাসি-গরু যবাই করেও খাইয়েছে।
অনেকে প্রিয়দল ও প্রিয় খেলোয়াড়ের জন্য নফল নামাজ পড়েছে, রোজা রেখেছে, দান-খয়রাত করেছে, মুনাজাত করেছে। আবার অনেকেই খেলায় জয়লাভের কারণে খুশীও প্রকাশ করেছে, হাতে তালি দিয়েছে, এমনকি খুশি হওয়ার কারণে রং পর্যন্ত ছিটিয়েছে, আতশবাজি করেছে। অনেক ইমাম, মুয়াজ্জিন রাত্রে খেলা দেখার কারণে ফজরে জামাত পিছিয়ে দিয়েছে।
বিশেষ করে কোন দুর্বল দেশ বা দল কোন কারণে হঠাৎ জয়লাভ করায় অনেকে বলেছে যে, স্বয়ং আল্লাহ্ পাক নিজ হাতে দুর্বল দেশ বা দলকে জিতিয়ে দিয়েছেন। আর কোন মুসলমান দেশ বা দলের খেলার দিন অনেকে বলেছে- ‘ছওয়াবের নিয়তে খেলা দেখতে যাব। আর খেলা দেখার সময় দোয়া করব যাতে মুসলমান দেশ বা দল জয়লাভ করে।’
এখন আমাদের সুওয়াল হচ্ছে- (১) খেলাধুলা সম্পর্কে শরীয়তের ফায়ছালা কি? অনেকে বলে, ‘কিছু কিছু খেলা জায়িয।’ প্রকতৃপক্ষে কোন খেলা জায়িয আছে কি? (২) মাঠে গিয়ে বা টিভিতে খেলা দেখা এবং খেলা দেখার জন্য টিভি কেনা কতটুকু জায়িয? (৩) কোন দলকে সমর্থন করা বা কোন দলের জয় কামনা করে দোয়া করা বা রোযা রাখা, নামাজ পড়া, হাতে তালি দেয়া, রং বা কাদাপানি ছিটানো, শুকরিয়া আদায় করা শরীয়ত সম্মত কিনা? (৪) বিশ্বকাপ ফুটবলের নামে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি ইত্যাদি দেশের সমর্থন করা, প্রশংসা করা ও পতাকা উড়ানোর ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি? (৫) কোন দুর্বল দেশ বা দল কোন কারণে হঠাৎ জয়লাভ করায় অনেকে বলেছে যে, ‘স্বয়ং আল্লাহ্ পাক নিজ হাতে দুর্বল দেশ বা দলকে জিতিয়ে দিয়েছেন।’ এ কথাটি কতটুকু শরীয়ত সম্মত? (৬) ‘ছওয়াবের নিয়তে খেলা দেখতে যাব। আর খেলা দেখার সময় দোয়া করব যাতে মুসলমান দেশ বা দল জয়লাভ করে।’ এ কথাটি কতটুকু শরীয়ত সম্মত? (৭) নামধারী মাওলানাদের বিশ্বকাপ ফুটবল দেখা ও সমর্থন করার ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি? তারা হক্কানী আলিম কি? তাদের পিছনে নামায পড়া জায়িয কি? দয়া করে উল্লিখিত বিষয়গুলো দলীল-আদিল্লার মাধ্যমে বিস্তারিত জাওয়াব দানে দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর ঈমান হিফাযতে সাহায্য করুন।
জাওয়াব:
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার ফতওয়া অনুযায়ী বিশ্বকাপ ফুটবলসহ সমস্ত খেলাধুলাই হারাম। কোন প্রকার খেলাই জায়িয নেই। মাঠে গিয়ে হোক আর টিভিতে হোক সর্বাবস্থায়ই খেলা দেখা হারাম ও কবীরাহ গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। টিভিতে খেলা দেখা বা অন্যান্য অনুষ্ঠান দেখা আরো কঠিন ও অধিক গুণাহর কারণ।
খেলা সম্পর্কিত কোন দলকে সমর্থন করা, প্রশংসা করা, পতাকা উড়ানো, দলের জয় কামনা করে দোয়া করা, নামাজ পড়া, রোযা রাখা, জামাত পিছানো, দলের জয়ে খুশি প্রকাশ করা, হাতে তালি দেয়া, রং ছিটানো ও শুকরিয়া আদায় করাও সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী। ‘দুর্বল দেশকে আল্লাহ পাক নিজ হাতে জিতিয়ে দেন’- একথা বলা এবং ‘ছওয়াবের নিয়তে খেলা দেখা বা খেলা দেখলে ছওয়াব হয়’ মনে করা সুস্পষ্ট কুফরী।
যে সকল মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, খতীব, আমীর, পীর নামধারী ব্যক্তিরা খেলা দেখে ও খেলাকে সমর্থন করে তাদের পিছনে নামায পড়া, তাদেরকে ইমাম নিয়োগ করা হারাম। কেননা, হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম মনে করা উভয়টি কুফরী।
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে যারা কুফরী করে তারা মুরতাদ। মুরতাদের হুকুম হলো কোন মুসলমান কুফরী করলে সে মুরতাদ হয়ে যায়। মুরতাদের শাস্তি হচ্ছে- তার যিন্দিগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। বিয়ে করে থাকলে তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। হজ্জ করে থাকলে তা বাতিল হয়ে যাবে। তার ওয়ারিছ সত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তার তওবার জন্য সময়সীমা হচ্ছে তিনদিন। এর মধ্যে তওবা না করলে ইসলামী খিলাফতের তরফ থেকে তার একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদ-। সে মারা গেলে তার জানাযা, দাফন, কাফন কোনটিই জায়িয নেই। বরং তাকে কুকুর-শৃগালের মত গর্তে পুঁতে রাখতে হবে।
কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিখ্যাত কিতাব, মুস্তাদরিকে হাকিম শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
كل لعب حرام إلا ثلاث: ملاعبة الرجل أهله ورميه عن قوسه وتأديبه فرسه.
“সর্ব প্রকার খেলা নিষিদ্ধ তিনটি বিষয় ব্যতীত- যা খেলার অন্তর্ভূক্ত নয়। (১) নিজ স্ত্রীর সাথে শরীয়তসম্মত হাসি-খুশী করা। (২) তীর ধনুক চালনা করা। (৩) অশ্বকে প্রশিক্ষণ দান করা।”
“আবু দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসাঈ শরীফ, ইবনে মাজাহ্ শরীফ” ইত্যাদি পবিত্র হাদীছ শরীফের কিতাবেও হযরত ওকবা ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে অনুরূপ পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। তবে শব্দের কিছু তারতম্য রয়েছে।
কাজেই, খেলাধুলার ফিতনা থেকে ঈমান আমল হিফাজত করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ-ওয়াজিব।
(পূর্বপ্রকাশিতের পর)
খেলাধুলা সম্পর্কে শরীয়তের ফায়ছালা কি?
এর জবাবে বলতে হয় যে, পবিত্র হাদীছ শরীফের বিখ্যাত কিতাব, “মুস্তাদরিকে হাকিম”-এর মধ্যে হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “সর্ব প্রকার খেলা নিষিদ্ধ তবে তিনটি বিষয় যায়েজ যা খেলার অন্তর্ভূক্ত নয়- (১) তীর ধনুক চালনা করা, (২) অশ্বকে প্রশিক্ষণ দান করা, (৩) নিজ স্ত্রীর সাথে শরীয়তসম্মত হাসি-খুশী করা।”
“আবু দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসাঈ শরীফ, ইবনে মাজাহ্ শরীফ” ইত্যাদি পবিত্র হাদীছ শরীফের কিতাবেও হযরত ওকবা ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে অনুরূপ পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। তবে শব্দের কিছু তারতম্য রয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে রেওয়ায়েত আছে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “মু’মিনের শ্রেষ্ঠ আমল অর্থাৎ প্রশিক্ষণ হচ্ছে সাঁতার কাটা, আর নারীর শ্রেষ্ঠ আমল অর্থাৎ কাজ হচ্ছে সূতা কাটা।”
“সহীহ্ মুসলিম” ও “মুসনদে আহমদ শরীফে” হযরত সালমান ইবনে আকওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, “আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দৌড় অনুশীলনে এজাযত দিয়েছেন।” (তবে অবশ্যই খেলা হিসেবে নয় বরং জিহাদের প্রশিক্ষণ হিসেবে।)
“আবূ দাউদ শরীফে” বর্ণিত আছে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রোকনা পাহ্লোয়ানকে কুস্তিতে ধরাশায়ী করেছিলেন।” (তবে তা অবশ্যই খেলা হিসেবে নয় বরং রিসালতের প্রমাণ ও মু’জিযা হিসেবে তিনি রোকনা পাহলোয়ানের সাথে কুস্তি করেছেন এবং তাকে পরাস্ত করেছেন।)
প্রকৃতপক্ষে পবিত্র হাদীছ শরীফে অর্থাৎ শরীয়তে যেসব বিষয়ের অনুমোদন রয়েছে, তা খেলা নয়। কাজেই যত প্রকার খেলা রয়েছে তার প্রত্যেকটির মধ্যেই, না-কোন দ্বীনী ফায়দা রয়েছে এবং না-কোন দুনিয়াবী ফায়দা রয়েছে। বরং প্রতিটি খেলা তিনটি অবস্থার কোন এক অবস্থা থেকে খালি নয়। ১. হয় তা কুফরী হবে, ২. অথবা হারাম হবে, ৩. আর না হয় তা মাকরূহ্ হবে।
(১) যে খেলা বিধর্মীদের সাথে তাশাব্বুহ্ বা সাদৃশ্য রাখে অথবা দ্বীন ইসলাম থেকে সরিয়ে দেয় বা কুফরীতে নিমজ্জিত করে তা সম্পূর্ণ কুফরী।
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,
عن عمرو بن شعب عن ابيه عن جده ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ليس منا من تشبه بغيرنا
অর্থ: হযরত আমর বিন শুয়াইব উনার পিতা থেকে এবং তিনি উনার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ঐ ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে বিজাতীয়দের সাথে সাদৃশ্য রাখে।” (মিশকাত)
(২) যে খেলা ইসলামী আক্বীদা থেকে সরিয়ে নেয়না কিন্তু হারাম ও গুণাহ্র কাজে লিপ্ত করে দেয়, তা কুফরী নয়, তবে কবীরা গুণাহ কারণ। অর্থাৎ হারাম। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ মুবারক করেন-
تعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الاثم والعدوان
অর্থ: তোমরা পরস্পর পরস্পরকে নেক কাজ ও পরহিযগারীর মধ্যে সাহায্য কর, পাপ ও শত্রুতার মধ্যে সাহায্য করনা। (সূরা মায়িদা-২)
(৩) আর যে সমস্ত খেলা কুফরী ও হারাম কোনটিই নয় কিন্তু প্রকাশ্যে তা পাপ বলেও মনে হয়না, মানুষ সাধারণভাবে সে সমস্ত খেলাকে জায়িয মনে করে থাকে, প্রকৃতপক্ষে তাও পাপেরই অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ মাকরূহ। এতে যেমন ইবাদত-বন্দিগীর ব্যাঘাত ঘটে এবং স্বাস্থ্য, সময় ও টাকা-পয়সার অপচয় হয়, তদ্রুপ পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষও পয়দা হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,
.ان المبذرين كانوا اخوان الشيطين
অর্থ: নিশ্চয়ই (সর্বপ্রকার) অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। (সূরা বণী ইসরাঈল-২৭)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে-
عن على بن حسين عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من حسن اسلام المرء تركه ما لايعنيه.
অর্থ: হযরত আলী ইবনে হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন ব্যক্তির জন্য দ্বীনের সৌন্দর্য হলো অহেতুক বা অপ্রয়োজনীয় কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকা। (তিরমিযী, মিশকাত)
উল্লেখ্য যে, শরীয়তের ফতওয়া হচ্ছে- যে কাজ হারাম ও কুফরী, তাকে হালাল মনে করা কুফরী। অর্থাৎ যে হালাল মনে করবে, সে কাফির বা মুরতাদ হয়ে যাবে। আর যে কাজ হারাম ও কুফরী নয় কিন্তু পাপের কারণ, আর সে পাপকে হালকা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য মনে করা অর্থাৎ এ ধরণের পাপ করলে কিছু হয়না ইত্যাদি মনে করাটাও কুফরী।
উল্লেখ্য, পবিত্র হাদীছ শরীফ বা শরীয়তে যে সমস্ত বিষয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, সে সমস্ত বিষয়গুলি প্রকৃতপক্ষে খেলা বলতে যা বুঝায় তার অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ সেগুলো খেলার অন্তর্ভূক্ত নয়। পবিত্র হাদীছ শরীফে তীর ধনুক চালনা করা, অশ্বকে প্রশিক্ষণ দেয়া, স্ত্রীর সাথে শরীয়ত সম্মত হাসিখুশী করা, সাঁতার কাটা, সূতা কাটা, দৌড় অনুশীলন করা ইত্যাদি বিষয়গুলো খেলা নয়। কারণ, উল্লিখিত বিষয়ের মধ্যে যেমন দ্বীনী ফায়দা রয়েছে, তেমনি দুনিয়াবী ফায়দাও নিহিত রয়েছে। যেমন- তীর চালনা করা, অশ্বকে প্রশিক্ষণ দেয়া, সাঁতার কাঁটা, দৌড় অনুশীলন ইত্যাদি জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের অন্তর্ভুক্ত এবং স্বাস্থ্যকে সুঠাম ও বলিষ্ঠ রাখার কারণ। (চলবে)
(গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ কর্তৃক প্রকাশিত ফতওয়া হতে সংকলিত)
সুওয়াল জাওয়াব : মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনাদের ছবি সম্বলিত জায়নামাজে নামাজ আদায় করার হুকুম আহকাম (২)
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
পবিত্র কা’বা শরীফ ও মহাসম্মানিত রওযা শরীফ উনাদের নকশা বা ছবিকে পা দিয়ে মাড়ানো বা পায়ের নীচে রাখার অর্থই হচ্ছে মূল অর্থাৎ আসল কা’বা শরীফ ও রওযা শরীফের সম্মান বিনষ্ট করা ও সেগুলোকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। অথচ তা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী। তাই কা’বা শরীফ ও রওযা শরীফের ছবি পায়ের নীচে রাখা অবশ্যই আদবের খিলাফ ও স্থান বিশেষে হারাম ও কুফরী।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, কদু খাওয়া সুন্নত, আর কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে স্পষ্ট উল্লেখ নেই যে, কদুকে তা’যীম করা ওয়াজিব। কিন্তু আক্বাইদের কিতাবে উল্লেখ আছে যে, কদুকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অবজ্ঞা করা কুফরী। তাই এক্ষেত্রে কদুকে তা’যীম করা ওয়াজিব। কাজেই মহাসম্মানিত কা’বা শরীফ ও মহাসম্মানিত রওযা শরীফ উনাদের নকশাকে অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যেহেতু কুফরী, সেহেতু মহাসম্মানিত নিদর্শন মুবারক উনাদের তা’যীম-তাকরীম করা ওয়াজিব।
আরো উল্লেখ্য যে, আমভাবে একথা বলা কখনো শুদ্ধ হবে না যে, ফটোকে তা’যীম করার বাধ্যবাধকতা নেই। কারণ এরূপ অনেক বস্তু বা বিষয়ের ছবি রয়েছে যেগুলোকে তা’যীম-তাকরীম করা ফরয-ওয়াজিব। যেমন-সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ও সংযুক্ত যে কোন ছবি যেমন: ব্যবহৃত মহাসম্মানিত সুন্নতি দ্রব্য-সামগ্রী যথা- পাগড়ী মুবারক, জুব্বা মুবারক, লাঠি মুবারক, না’লাইন শরীফ ইত্যাদি। মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছবিও হতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, তাওহীদ কর্তৃপক্ষ- “এগুলো ফটোই মাত্র” একথা বলে উল্লেখিত বস্তু সমূহের ছবি বা ফটো পা দ্বারা মাড়ানো জায়িয ফতওয়া দিবে কি? তাদের ফতওয়া মুতাবেক যদি কা’বা শরীফ ও রওযা শরীফের নকশা পা দ্বারা মাড়ানো জায়িয হয়, তবে কুরআন শরীফ এবং মহাসম্মানিত মহাপবিত্র রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যবহৃত মহাসম্মানিত সুন্নতি দ্রব্য-সামগ্রীর ছবি বা ফটোও পা দ্বারা মাড়ানো জায়িয হবে। (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক)। অথচ তা সম্পূর্ণই হারাম ও কাট্টা কুফরী।
মূলত: মজমুয়ায়ে ফতওয়ার উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা মূল মহাসম্মানিত কা’বা শরীফ ও মহাসম্মানিত রওযা শরীফ উনাদের সাথে তার নকশার কতটুকু পার্থক্য রয়েছে অর্থাৎ নকশা যে মূল কা’বা শরীফ নয় এবং এর তাওয়াফ বা যিয়ারতের দ্বারা যে হাক্বীক্বী ফযীলত হাছিল হয় না তা বর্ণনা করা হয়েছে। তাই বলে উক্ত নকশাকে তা’যীম করা যাবে না বা তা পা দ্বারা মাড়িয়ে অবমাননা করা জায়িয, তা বলা হয় নাই। কাজেই এ ব্যাপারে মজমুয়ায়ে ফতওয়ার দলীল পেশ করা তাওহীদ কর্তৃকপক্ষের জিহালত ও প্রতারণা বৈ কিছুই নয়।
তাছাড়া আত-তাওহীদ পত্রিকার জাওয়াব নাক্বেছ বা অসম্পূর্ণ হয়েছে কারণ তাদের প্রশ্ন করা হয়েছে কা’বা শরীফ ও মদীনা শরীফ উভয়টির সম্পর্কে, কিন্তু তারা জবাবে শুধুমাত্র কা’বা শরীফের কথা বলেছে। প্রশ্নকারীদের আরেকটি প্রশ্ন ছিল………এটা বিধর্মীদের ষড়যন্ত্র কিনা? এ প্রশ্ন তাওহীদ কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণই এড়িয়ে গেছে, যা স্পষ্ট প্রতারণা ও অজ্ঞতা।
মূলকথা হলো- মহাসম্মানিত কা’বা শরীফ ও মহাসম্মানিত রওযা শরীফ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার শেয়ার তথা নিদর্শন মুবারক উনাদের অন্তর্ভূক্ত, কাজেই উনাদের ছবি সম্বলিত জায়নামাযে নামায পড়া মাকরূহ, আদবের খেলাফ ও স্থান বিশেষে কাট্টা কুফরী। আর এ ব্যাপারে মাসিক আত-তাওহীদ ও পৃথিবীর বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল ও গুমরাহীমূলক।
এ ব্যাপারে মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা শরীফ ও ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার ফযীলত:
প্রথমত: উল্লেখ্য যে, মহাপবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থিত পবিত্র কা’বা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফে অবস্থিত মসজিদে নববী শরীফ মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে সম্মানিত ও মর্যাদা সম্পন্ন স্থান। মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার মর্যাদা ও ফযীলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
ان اول بيت وضع للناس للذى بيكة مباركة وهدى للعالمين وفيه ايات يينات مقام ابراهيم ومن دخلها كان امنا.
অর্থ: “নিশ্চয়ই (পবিত্র কা’বা শরীফ যমীনে অবস্থিত) প্রথম মহাসম্মানিত ঘর, যা বরকতময় মক্কা শরীফে মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে এবং সমস্ত আলমের জন্য হিদায়েত স্বরূপ। আর তন্মধ্যে মাক্বামে ইবরাহীম শরীফ স্পষ্ট নিদর্শন, যে ব্যক্তি পবিত্র কা’বা শরীফে (হেরেম শরীফে) প্রবেশ করলো, সে ব্যক্তি নিরাপত্তা লাভ করলো।”
আর পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ফযীলত ও মর্যাদা সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهقال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله فى كل يوم وليلة ينزل على هذا البيت مأة وعشرين رحمة ستون للطانفين واربعون للمصلين وعشرون للناظرين.
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রতিদিন ও প্রতিরাতে পবিত্র কা’বা শরীফ উনার উপর ১২০টি রহমত মুবারক নাযিল করেন। তন্মধ্যে তাওয়াফকারীদের জন্য ৬০টি, নামাযীদের জন্য ৪০টি ও দর্শনার্থীদের জন্য ২০টি রহমত নাযিল করেন।”
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র মক্কা শরীফ, কা’বা শরীফ, মদিনা শরীফ, রওযা শরীফ, বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ, মসজিদে কুবা শরীফ ও তৎসংলগ্ন স্থান ও বস্তুসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে বিশেষভাবে সম্মানিত ও মর্যাদাপ্রাপ্ত। শুধু তাই নয়, সেগুলো মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শন মুবারকের অন্তর্ভুক্ত।
মূলত: কা’বা শরীফ উনার এ ফযীলত ও মর্যাদার কারণেই আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া মুতাবিক পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ছাদে উঠা মাকরূহ তাহরীমী। শুধু তাই নয়, ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ আছে, বিনা জরুরতে সাধারণ মসজিদের ছাদে উঠাও মাকরূহ। তাই যে সকল জায়নামাযে পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ছবি রয়েছে, তাতে নামায পড়া আদব ও তাক্বওয়ার খেলাফ বা মাকরূহ। শুধু তাই নয় কাট্টা কুফরী চির জাহান্নামী হওয়ার কারণ। কেননা সেই মহাসম্মানিত জায়নামাজসমূহ মাটিতে বিছানোর কারণে পদদলিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর যদি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অবজ্ঞা করে কা’বা শরীফের নকশা পা দ্বারা মাড়ায় বা দলিত করে তবে স্পষ্ট কুফরী হবে।
এজন্য বেয়াদবদের প্রসঙ্গে মসনবী শরীফে উল্লেখ আছে যে-
بے ادب محروم گشت از لطف رب
Subscribe to:
Posts (Atom)